নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন
স্বনামধন্য ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় যোদ্ধা, বিশিষ্ট বাগ্মী ও ইন্দো-অ্যাংলিয়ান কবি বিক্রমপুর কন্যা সরোজিনী নাইডু। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে সরোজিনী নাইডু অনেকবার কারাবরণ করেছেন, কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে পিছু হটেননি। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি। স্বাধীন ভারতে তিনি উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজ্যপালও হয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে এশীয সম্পর্ক সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির পৌরহিত্য করেন সরোজিনী নাইডু। এ বছরের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতার পর সরোজিনী নাইডু যুক্তপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। তিনিই ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা রাজ্যপাল। এছাড়াও সরোজিনী ছিলেন এক বিশিষ্ট বাগ্মী এবং ইংরেজি ভাষার যশস্বী কবি। তাঁর প্রিয কবি ছিলেন পি. বি. শেলি। সরোজিনী নাইডু চমৎকার বক্তৃতা দিতে পারতেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে। ভারতীয় কোকিলা বা দ্য নাইটেঙ্গেল অব ইন্ডিয়া নামে পরিচিত সরোজিনি নাইডু ১৯৪৯ সালের আজকের দিনে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। মহাত্মা গান্ধীর "মিকি মাউস" সরোজিনি নাইডুর মৃত্যুদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সরোজিনী চট্রোপাধ্যায় ভারতের হায়দরাবাদ শহরের একটি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও কবি বরদাসুন্দরী দেবীর জ্যেষ্ঠা কন্যা। অঘোরনাথ ছিলেন নিজাম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি ও তাঁর বন্ধু মোল্লা আব্দুল কায়ুম ছিলেন হায়দরাবাদের ভারতীয জাতীয কংগ্রেসের প্রথম সদস্য। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য তাঁকে কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদচ্যুত করে হয। সরোজিনীর ভাই বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যাযও ছিলেন এক বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী। সরোজিনীর অপর ভাই হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায ছিলেন এক বিশিষ্ট নাট্যকার, কবি ও অভিনেতা। বারো বছর বযসে সরোজিনী মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায উত্তীর্ণ হয। অত্যন্ত মেধাবী এই নারী মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় গোটা মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। ১৮৯১ সাল থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত পডাশোনা বন্ধ রেখে তিনি নানা বিষয অধ্যযন করেন। ১৮৯৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজ ও পরে কেমব্রিজের গার্টন কলেজে পডাশোনা করেন।
সরোজিনী উর্দু, তেলুগু, ফারসি ও বাংলা ভাষা শিখেছিলেন। সরোজিনী নাইডু ইংরেজি ভাষায় কবিতাও লিখতেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঃ
1| The Golden Threshold (১৯০৫)
2| The Bird of Time: Songs of Life, Death & the Spring (১৯১২)
3| The Broken Wing: Songs of Love, Death and the Spring (১৯১৭)
4| The Sceptred Flute: Songs of India (১৯৪৩)
5| The Feather of the Dawn (১৯৬১)
6| The Gift of India
১৭ বছর বয়সে সরোজিনী চট্রোপাধ্যায় ড. মুথ্যালা গোবিন্দরাজুলু নাইডুর প্রেমে পরেন এব্ং ১৯ বছর বয়সে পডাশোনা সমাপ্ত করে তাঁর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। উল্লেখ্য, সেই যুগে অসবর্ণ বিবাহ সমাজে নিষিদ্ধ ছিল। সরোজিনী ব্রাহ্মণ হলেও গোবিন্দরাজুলু ছিলেন অব্রাহ্মণ। ১৮৯৮ সালে মাদ্রাজে ১৮৭২ সালের আইন অনুযাযী তাঁদের বিবাহ হয়।বিয়ের পরে তার নামের সাথে স্বামীর উপাধী ধারণ করে সরোজিনী নাইডু নামে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁদের চারটি সন্তান হয়ে ছিলঃ জয় সূর্য, পদ্মজা, রণধীর ও লীলামণি। কন্যা পদ্মজা পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হন।
(ডান্ডি পদযাত্রায গান্ধীজির সঙ্গে সরোজিনী নাইডু)
সরোজিনী নাইডু ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সক্রিয় যোদ্ধা। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরোজিনী যোগ দেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৯০৩ সাল থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি গোপালকৃষ্ণ গোখলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহম্মদ আলি জিন্না, অ্যানি বেসান্ত, সি. পি. রামস্বামী আইযার, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন। ১৯১৫ সাল থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি ভারতের নানা স্থানে যুবকল্যাণ, শ্রমের গৌরব, নারীমুক্তি ও জাতীযতাবাদ বিষয়ে বক্তৃতাদান করেন। ১৯১৬ সালে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি চম্পারণে নীলচাষীদের হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন জারি করে সকল প্রকার রাজদ্রোহমূলক রচনা নিষিদ্ধ করে। এর প্রতিবাদে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করলে সরোজিনী সর্বপ্রথমেই আন্দোলনে যোগ দেন। পরে ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলনের উপর ব্যাপক দমননীতি প্রয়োগ করে। ১৯১৯ সালের জুলাই মাসে সরোজিনী ইংল্যান্ডে হোমরুল লিগের দূত মনোনীত হন। ১৯২০ সালের জুলাই মাসের তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করার পর ১ অগস্ট গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেন। ১৯২৪ সালের জানুযারি মাসে তিনি পূর্ব আফ্রিকান ভারতীয কংগ্রেসের দুই জাতীয কংগ্রেস প্রতিনিধির অন্যতম রূপে নির্বাচিত হন।
(চার্লি চ্যাপলিন ও গান্ধীজির সঙ্গে সরোজিনী নাইডু)
১৯২৫ সালে যে সময়ে নারীদের জীবন ছিল পরিবারের গৃহে বন্দি সে সময় তিনি ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি যোগ দেন ঐতিহাসিক ডান্ডি পদযাত্রায়। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধানতম নেতা গান্ধীজি, আব্বাস তয়েবজি ও কস্তুরবা গান্ধী গ্রেপ্তার হলে তিনি ধারাসন সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন। ১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি নিউ ইযর্ক সফর করেন। এই সময যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকান ও আমেরিইন্ডিযানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা করেন তিনি। ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কংগ্রেস ওযার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুযারি জাতীয কংগ্রেস ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ৫ মে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয। এর অনতিকাল পরেই গ্রেফতার হন সরোজিনী। এই সময কয়েক মাস তিনি কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৩১ সালের ৩১ জানুযারি, গান্ধীজির সঙ্গে সঙ্গে তাঁকেও মুক্তি দেওযা হয। সেই বছরেই পরে আবার তাঁদের গ্রেফতার করা হয। স্বাস্থ্যহানির কারণে অল্পদিনের মধ্যেই ছাডা পেয়ে যান সরোজিনী। গান্ধীজি মুক্তি পান ১৯৩৩ সালে। ১৯৩১ সালে গান্ধীজি ও পণ্ডিত মালব্যের সঙ্গে তিনিও গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য তাঁকে পুনরায গ্রেফতার করা হযিেছল। এই সময গান্ধীজির সঙ্গে ২১ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন সরোজিনী। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সরোজিনী নাইডুর সম্পর্ক এতটাই অন্তরঙ্গ ছিল যে গান্ধীজি তাকে "মিকি মাউস" বলে ডাকতেন।
১৯৪৯ সালের ২ মার্চ ই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই মহীয়সী নারী। তার মৃত্যুর পর যুগ যুগ ধরে এই অতি অসামান্য বিদুষী নারী সমগ্র মহিলাজাতির পথপ্রদর্শিকা হিসেবে সম্মানিত হযে আসছেন। বিক্রমপুর কন্যা সরোজিনী নাইডুর মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
২| ১০ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৪
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব নূর
আপনার এলাকার মহিয়সী নারীকে
স্বশ্রদ্ধ স্বরণ।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১০
রাজীব নুর বলেছেন: মহিয়সী নারী।
আমাদের অঞ্চলের।