মেলায় যাইরে... (ফানপোস্ট লেখার একটি ব্যর্থ প্রয়াস )

০৪ ঠা জুন, ২০১১ রাত ৯:৩০

মেলা!!! শব্দটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মাটির পুতুল, বাঁশের বাঁশি, তালপাতার পাখা, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা আর নাগরদোলা। অনেকদিন হল মেলায় যাওয়া হয় না। তাই শেষপর্যন্ত দুই ফ্রেন্ড মিলে মেলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এই মেলা কিন্তু যেই সেই মেলা না...চাকরী মেলা (JOB FAIR )। মেলাটা হল কার্জন হলের অডিটরিয়ামে। কিন্তু আফসুস যে পাক্কা দুবছর তিনমাস এই ক্যাম্পাসে আমাদের অবাধ বিচরণ থাকলেও দুজনের কেউই জানি না যে কার্জন হলের অডিটরিয়াম কোনটা?



যাইহোক মেলা যখন হচ্ছে তখন চিনতে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা না। যেখানে অনেক মানুষজন থাকবে সেটাই হবে অডিটরিয়াম, সোজা হিসাব।







মেলাটার আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকা ভার্সিটির সায়েন্স ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্টদের জন্য। যাইহোক কার্জন হলে গেলাম। রাস্তার দুপাশের গাছ, বিল্ডিংয়ের দেয়াল সবখানে ব্যানার দিয়ে সাজানো হইছে। মেলা বলে কথা। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম অডিটরিয়ামের সামনে। দেখি এতো সেই বিভীষিকাময় “ডার্ক হাউস” থুক্কু একজাম হল। সেই দালান যার সামনে দিয়ে হাঁটতে সম্ভবত সায়েন্স ফ্যাকাল্টির সব স্টুডেন্টেরি গা ছমছম করে। প্রতি পরীক্ষার আগে এই প্রাসাদসম দালানটা যাতে ভেঙ্গে পড়ে তার জন্য সবাই কত দোয়া-দরূদ যে পড়ছি তার কোন হিসাব নাই। আর এই কিনা অডিটরিয়াম। যাইহোক প্রচুর পরিমাণে সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলাম। দেখি এক বড় ভাই দরজার সামনে একটা খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সবাই খাতায় নাম লিখে কিছু টাকা দিয়ে (টাকার পরিমাণটা দেখি নাই) ভেতরে যাচ্ছে। তার মানে ঘটনা দাঁড়ালো রেজিস্ট্রেশন করে ভেতরে যাইতে হবে। দুজনে মিলে ভাবতে লাগলাম টাকা-পয়সা খরচ করে ভেতরে যাওয়া কি ঠিক হবে(যদি না পোষায় )। অতঃপর দরজার সামনেই দুজনে ঘুরঘুর করতে লাগলাম।



দাঁড়ায় দাঁড়ায় যখন ভাবতেছিলাম কি করবো ঠিক তক্ষুণি একটা বিশাল গ্রুপের আগমন ঘটলো। গ্রুপে ছেলে দুজন, মেয়ে চার কি পাঁচজন। প্রত্যেকেই সেই রকম মাঞ্জা মেরে আসছে। তাদের ছবি তোলার সেই কি হিড়িক!!! আর সেই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হল একজাম হলের বিশাল দরজাখানা। এই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আর যেই হোক ক্যাম্পাসের কোন পোলাপানের ছবি তুলতে মন চাইবে না। অতএব বোঝা গেল যে এরা আগন্তুক।







ওদের দেইখা আমার ফ্রেন্ড আমারে কয়,



: দোস্ত, এরা এরকম সাইজাগুইজা ভেতরে যাইবো আর এরকম পাগল-ছাগলের মতো যামু? আমার লজ্জা করতেসে।

: আচ্ছা এইখানে কি সাইজা-গুইজা আসতে হয়?

: আমি কেমনে কমু? আমি কি আগে আইসি?

: তাইলে চল আমরাও সাইজা আসি।

: কেমনে সাজুম? কিছু আছে নাকি ব্যাগে?

: নাই ক্যান? কি করছ? ব্যাগে একটু কাজল-টাজল ও তো রাখতে পারোস।

: তুই নিজে মনে হয় কত রাখোস!!



ঝগড়ার তুমুল পর্যায়ে এসে হঠাৎ দুজনেই চুপ মেরে গেলাম। চোখ আটকে গেল সেই গ্রুপখানার পানে। দেখি দুইটা মেয়ে মিলে হাত দিয়ে একটা ছেলের চুল আঁচড়ে দিচ্ছে। আহা কেয়া সিন হ্যায়। চুল আঁচড়ানো শেষে ঐ ছেলেটার সাথে একটা মেয়ে পোজ দিয়ে কাপল ছবি তুললো (ব্যাকগ্রাউন্ড যথারীতি দরজা )। বুঝলাম তারা দুজন কাপল। কাপলটাকে মানালো নাকি মানালো না এই নিয়ে যখন আমরা তর্ক জুড়লাম তখন দেখি ঐ ছেলে আরেক মেয়ের সাথে পোজ দেয়। পরে বুঝলাম ওনারা আসলে কাপল না। ঐ ছেলে সবার প্রক্সি দিচ্ছে।

ছবিটবি তোলা শেষে যখন ওরা ভেতরে গেল তখন আমাদের মনে পড়লো আমাদের তো মেলায় যাবার কথা। যাবো কি যাবো না এই নিয়ে যখন ভাবছি, তখন দেখি সেই খাতাওয়ালা বড় ভাই কোন এক কারণে দরজা থেকে সরে গেছে। বাহ আর কে পায় আমাদের। সোজা মেলায় ঢুকে গেলাম।







বিঃদ্রঃ মেলায় যাওয়ার পর আমরা বুঝতে পারলাম যে ঐটা আসলে জব ফেয়ার ছিল না ছিল জব সেমিনার।

৩২ টি +৬/-০