নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আছি, আমি নেই। শত মানুষের ভিড়ে দৃশ্যমান থকেও যে অদৃশ্য আমি। ডুবে গেছি আপন বৃত্তে, মাঝে মাঝে তাই ডাক পেড়ে গল্প বলি। কারণ, আমাদের মৃত্যু সেদিনই হয় যেদিন আমরা গল্প বলা বন্ধ করে দেই। তা হোক সেটা আপনার সাথেই।
"ভাই ৫ টা টেখা", কথাটা না শুনার ভান করেই চলে যাচ্ছিলাম ছেলেটি হাত ধরে বসল। "ও ভাই দিয়া যাও"। কিছুটা বিরক্ত হয়েই হাত সরিয়ে নিয়ে হাটা শুরু করলাম। টিলাগড় থেকে আম্বরখানা ১৫ টাকা ভাড়া। প্রায়শই ২০ টাকা দেওয়ার পর ৫ টাকা ফেরত আসে এবং সেটা হাতে পাওয়া মাত্রই কেউ একজন সেটার জন্য হাত পাতে। এটা প্রায় রোজকার ঘটনা। কখনো কোনো কথা না বলেই দ্রুত পায়ে হেটে যাই , ওরাও পেছন পেছন আসে। কিছুদুর আসার পর হাল ছেড়ে দেয়। কখনো খুব কঠোর হয়ে ঠান্ডা স্বরে বলি "তোমাকে তো আমি টাকা দিব না"। কেউ ২য় বার বলে, বেশিরভাগই আর বলে না হয়ত বুঝে যায় আদায় করা যাবে না।
.
এই ঘটনাবলী খুবই নির্দয় মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। এক মুহুর্তের ভাবনায় আমাকে খারাপও ভাবতে পারেন। কিন্তু এ ঘটনা শুধু আমার নয়।এটি শহরের প্রায় প্রতিটি মানুষের গল্প। রাস্তা ঘাটে, পার্কে এরকম হাজার পথশিশুতে আজ পূর্ণ। একটুখানি জায়গা যাওয়ার পর এরকম একটি শিশুর সাথে আপনার দেখা হবে। খুবই মলিন মুখে আপনার কাছে এসে যখন হাত পাতে আপনি হয়ত না করতে পারেন না, কিংবা আমার মত নির্দয় হয়ে হয়ত সরে যান। অনেকেই আবার ধমক দিয়ে বিদায় করে দেয়।
.
শিশুশ্রম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে নানান ছবি। কিন্তু এই বাচ্ছা গুলোর কথা, তাদের হাত পাতার কথা কতজনের মনে আসে? এদের সবাই কি আসলেই অভাবের পীড়নে আজ পথে? ভেবে দেখেছেন কখনো?
.
বিষয়টা অনেকটা 'অপেন সিক্রেট' এর মতন। আমরা সবাই জানি বা বুঝি কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলি না বা বললেও সেটাকে কেউ বিশেষ 'পাত্তা' দিতে দেখা যায় না। নেই প্রশাসনের ও বিশেষ কোনো নজর। কি মনে হয় আপনার, কত ভাগ শিশু কোনো উপায় না পেয়ে নিজের পরিবারের জন্য এই পথে? ১০ শতাংশ? পনের শতাংশ? জরিপ করলে হয়ত আসল অঙ্কটা পাওয়া যাবে। কিন্তু এই জরিপটা করবে কে? খোজ নিয়ে দেখেন এই শিশুগুলোকে কখনো নিজের বাবা-মা'ই এ কাজে নামিয়ে দিচ্ছে কখনো সে স্বীকার অন্য একটি বড় চক্রের। এদের কারো কারো হয়ত ঘরে উপার্জনের কেউ নেই, বা যিনি ছিলেন তিনি অক্ষম । কিন্তু এর সংখ্যা খুব বেশি একটা হওয়ার কথা না। বাচ্ছা গুলোকে অনেকটা জোর করেই নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।
.
একবার রাস্তায় দাড়িয়ে কিছু খাচ্ছিলাম, হঠাৎ করে পেছন কে যেন শার্ট ধরে টান দিল, পেছনে ফিরে দেখি ছোট্ট একটা মেয়ে মলিন মুখে হাত পেতে দাড়িয়ে আছে। টাকা চেয়েছিল, কিন্তু টাকা তো আমি দেইনা। টাকা দেইনি, বললাম, চানাচুর খেতে পারো। টাকা তো পাবেনা চানাচুরই সই, তাই হয়ত সেও ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল। কি কি জানি কথা বলছিলাম ওর সাথে, একটা কথা মনে আছে এখনো। “ভাই টেখা না নিয়া গেলে মারবা”। কে মারবে জানতে চাইলে, উত্তর পাইনি। চুপ করে ছিল। আর কি বলব ভেবে না পেয়ে প্রস্থান করেছিলাম। চিন্তা করলে অনেক কিছুই মাথায় আসে। কে হতে পারে? বাবা? মা? নাকি অন্য কেউ? কোনো সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী?
.
একবার এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করব বলে ঠিক করেছিলাম।একজন শ্রদ্ধাভাজনের সাথে কথা প্রসঙ্গে এ বিষয়ে আলাপও হয়েছিল। ব্যাপারটা বেশ উল্লেখযোগ্য কাজ হবে বলে এগিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলেও পরের কথাটি-- "দেখ আবার বিপদে না পড়" -- যেন পেছনে ঠেলে দিল। তাও ভেবেছিলাম করব, কিন্তু বিবিধ কারণে আর করা হয়নি। কিন্তু বিপদ কেন হবে?
.
এতক্ষণে এর উত্তর হয়ত আপনারাও পেয়ে গেছেন। এক 'অদৃশ্য শক্তি ' এদের দিয়ে এই কাজ গুলো করিয়ে নিচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতন যেন কেউ নেই। কারা এই মানুষ গুলো? এদের চিহ্নিত করা কি খুবই কষ্টের। আইনের ঠিকমতন ব্যাবহার করে এগুলো কি বন্ধ করা যায় না? আমাদের দেশে অনেক আইনের ন্যায় শিশুশ্রম নিয়েও আইন আছে যার প্রয়োগ দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'ভাইরাল' হওয়া কিছু ঘটনার সময়। কিন্তু এই যে এদের দিয়ে এভাবে এসব কাজ করানো হচ্ছে আর তা ধীরে ধীরে আরো ভয়ঙ্কর রুপ নিচ্ছে এর বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যাবস্থা নেয়া যায় না? দরকার প্রসাশনের একটু নজরদারির। ততদিন পর্যন্ত আমাদের কে নাহয় একটু অন্য পন্থা অবম্বন করতে হবে। অনেকেই বাচ্ছা গুলোকে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এভাবে ধমক না দেওয়াটাই ভালো। খুব ঠান্ডা স্বরে শক্ত ভাবে না করে দিন। বলে দিন সারাদিন জপলেও দিবেন না। ওরা চলে যাবে, এক সময় হয়ত এই রাস্তা ছেড়ে দিবে বা ওদের এই রাস্তায় নামানোটা থেমে যাবে।
.
ওদের টাকা দিয়ে যে দরদটা আপনি দেখাতে চাচ্ছেন সেটা যেনো আরো কয়েকটা শিশুর এই রাস্তায় নামার কারণ না হয়ে যায় । কয়টা টাকা হাতে দিয়ে নয়, পারলে এই শিশুটাকে যাতে অন্যের কাছে আবার হাত পাততে না হয় সে ব্যবস্থাটা করেন। ভেবে দেখবেন।
.
'Children shouldn't work in fields, but on dreams'-- theme, World Day Against Child Labour 2019.
১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:২৯
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: এটাই ভাবনায় ফেলে, সাধারণত বাচ্ছাদের দেই না। পাছে এই টাকাটা আরো কয়েকটা বাচ্ছাকে এই পথে নামানোর কারণ না হয়ে যায়।
২| ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ১২:২৭
আরোগ্য বলেছেন: হলিউডের স্লামডগ মিলিয়নিয়ার ও বলিউডের ট্রাফিক সিগন্যাল ছবির এ সম্পর্কে অনেক কিছু আছে।
১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:৩৮
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: ছবিগুলো দেখা হয়নি, এবার দেখব। জানানোর জন্য ধন্যবাদ।
৩| ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ৩:৫১
রাকু হাসান বলেছেন:
অদৃশ্য শক্তিকে অনেকটাই দৃশ্য করছেন । তা আরেকটু গভীরে গেলে বোধহয় ভালোই হতো । আমি এটা নিয়ে একটু অনুসন্ধান করেছিলাম । লিখি টকি নি তবে । বন্ধুদের নিয়ে শহীদ মিনারের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলাম । হঠাৎ এসব পথ শিশুদের বা শিশু ভিক্ষুকদের আনাগোনা বিষয়টা চোখে বেধে গেল । তারপর বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলাম । মিললো চমকপ্রদ তথ্য । শিশুগুলো কে একটি মহিলা খোলা আকাশের নিচে ভাত খাওয়ানোর দৃশ্যটা খারাপ লাগা দিয়েছিল । ভেবেছি কত না কষ্টে আছে । আরও ভেতরে গিয়ে জানলাম শিশুগুলো ঐ মহিলার না । ভাড়াটে । অনেকটা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে প্রতিদিন ভিক্ষা করে । ভিক্ষার পুরো অংশ ওরা কোনো সময়ই পায় না । তবে সবাই এমন না সেটাও স্বীকার করছি । এই চক্রটি ভীষণ বড় । সারা বাংলাদেশেই এটা আছে ,খেয়াল করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে । ওদের দৈনিক আয়টা নির্ভর করে কে কতটা আয় করতে পারলো সেটার উপর । তাই ওরা প্রায় সময়ই নাছোড়বান্দার মতো আচরণ করে বসে । তবে এটা ঠিক উক্ত শিশুগুলো খুব নিম্নবিত্ত পরিবারের । প্রায়গুলো গ্রাম থেকে উঠে আসা। বা শহরে বেড়ে উঠা । সরেজমিনে আরও জানছি ওরা ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে চাইলে চক্র ছাড়তেদেয় না ,হুমকি,দামকি দেয় । চক্র অনেক কৌশল ব্যবহার করে শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তিতে রাখতে ।
আপনার কথাই বলি অদৃশ্য শক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে । সরকারের অবশ্য কর্তব্য এঁদের নিয়ন্ত্রিত করা । সমস্যাটা দিনদিন বাড়ছেই ।
পোস্টের বিষয় বস্তু দারুণ । সুন্দর বিষয় তুলে আনার জন্য ধন্যবাদ । শুভরাত্রি ।
১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:২৬
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: লেখা অহেতুক বড় হয়ে যায় কিনা ভেবে কিছু বিষয় এড়িয়ে গিয়েছিলাম তবে আপনার নিজের পর্যবেক্ষন তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ওদের দিকে সরকারের তরফ থেকে নজর দেয়ার খুব দরকার।
৪| ১৩ ই জুন, ২০১৯ ভোর ৬:০৬
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
খারাপ তো । মানুষ তো অনেক খারাপ।
১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:১০
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: আজব দুনিয়া, তার চেয়ে আজব মানুষ!
৫| ১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ৯:০০
রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশটা খুব বেশি দরিদ্র।
প্রতিদিন রাস্তায় অসংখ্য ছোট ছোট শিশু দেখি। ভিক্ষা করছে। অতি নিম্মমানের কাজ করছে।
১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১০:৩৭
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: কিন্তু এসব দেখার সময় আমাদের কর্তা ব্যক্তিদের নেই।
৬| ১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:০৩
গরল বলেছেন: এটা তো শ্রম না, এটা হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি। শিশুশ্রম তাও ভালো শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি শেখানোর চেয়ে। সারা জীবন এরা আর কিছুই করতে পারবে না ছোট বেলায়ই যদি এই পেশায় ঢুকে যায়।
১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:০৯
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: ভিক্ষাবৃত্তিটা তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে, দিন মজুরের মত। দৈনিক তাদের একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দেয়ার বিনিময়ে তাদের দিয়ে এই ভিক্ষাবৃত্তিটা করানো হয়। সেই প্রেক্ষিতেই এটাকে শিশুশ্রম বলা যেখানে তাদের কাজ হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি করা।
৭| ১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:২০
রিফাত হোসেন বলেছেন: ভারতে পথশিশু নিয়ে মারাত্মক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। যার ভয় এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়।
১৩ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:১৭
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: সেই অভিজ্ঞতা কোন একদিন লিখবেন, রিফাত ভাই, আগ্রহ হয় জানার।
৮| ১৩ ই জুন, ২০১৯ সকাল ১১:২৫
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: এসবের একটা জড়িপ বা তদন্ত হওয়া দরকার। আমিও নির্দয় হই। এত ছোট বাচ্চা ভিক্ষা করতে নামছে দেখেই খারাপ লাগে।
১৩ ই জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:২০
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: ঠিক বলেছেন, প্রসাশনের দৃষ্টি দরকার, নচেৎ এর থেকে বাচার উপায় এ শিশুগুলোর নেই।
৯| ১৩ ই জুন, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৩
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ইদানিং এক উৎপাত শুরু হয়েছে পায়ে ধরলে টাকা না দেয়া পর্যন্ত ছাড়ে না...
১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ৯:১০
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: হ্যা, এবং মেয়েদের আরো বেশি জ্বালাতন করে।
১০| ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ১০:৪০
নাসির ইয়ামান বলেছেন: আশায় আছি ,কবে এক জবাবদিহিতার প্রশাসন কায়েম হবে!
ভালো বিষয় নিয়ে লেখেছেন!
১৬ ই জুন, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৯
ওদৃশ্য মানব বলেছেন: ধন্যবাদ। আশা একদিন প্রসাশনের সুনজর পড়বে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ১২:১০
শায়মা বলেছেন: জানি ছোট বাচ্চাগুলোকে মায়া লাগে তবে টাকা দিয়ে ভুল হচ্ছে নাতো?