নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বকখালির দিনগুলি ০১

১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ২:১২

ধুস! রবিবার দিনটা যে কেন আসে প্রত্যেক সপ্তাহে! সানী চোখ পিটপিট করে তাকাল। দুই হাত দিয়ে আচ্ছা মতন চোখ কচলে, আড়মোড়া ভেঙ্গে নিলো। আচ্ছা, এই যে সপ্তাহে পর পর শুক্রবার আর শনিবারের মতন দুইটা ভালো ভালো, দারুন দিন আর এর ঠিক পর পরই রবিবার নামক এই অত্যাচার - এটার কোন মানে হয়? এরকম ভাবে কাজ আর নিয়ম কানুন, এত্ত শৃঙ্খলার মধ্যে ঢুকে পড়তে তাও আবার ছুটির আমেজ ফুরাতে না ফুরাতে; সেটা কারও ভালো লাগে? উফ! ঐ হলদে রঙের দুইতলা স্কুল বিল্ডিংটার কথা মনে হতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল সানীর। ঐটাই যত নষ্টের গোঁড়া। তা না হলে সব দিনই হত শুক্কুরবার। আর স্কুল মানেই ক্লাস টিচার শফিক স্যারের কুঁচকানো চোখ আর হেডমাস্টার স্যারের চিকন বেতের সপাং বাড়ির শব্দ... বাবারে!

সাতটার মধ্যেই সানীকে দেখা গেল তার টেবিলে গিয়ে বসে পরতে। নিজের চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে আজকের কি কি হোমওয়ার্ক আছে একবার ভেবে নিতে থাকলো। কাজের কি আর শেষ আছে বল? প্রথমে পাটিগণিত করো রে। লাভ আর ক্ষতি বের করো, সুদ কত হল বের করো। ইংরেজির একটা প্যারাগ্রাফ খাতায় তুলো আবার সাথে দশটা শব্দার্থও। সব শেষে আবার সমাজ বই থেকে ইতিহাসের কচকচানি মুখস্থ কর। এই এতটুকু বয়সেই জীবনটা যেন তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে। টেবিলের উপর এলোমেলো পড়ে থাকা খাতা-কলম আর বইয়ের স্তূপের দিকে হতাশ চোখে তাকাল সানী। মাত্র দুই ঘণ্টায় এই এতগুলো হোমওয়ার্ক শেষ করে তবে স্কুলে যাওয়া! মা প্রতি বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বলতে থাকেন পড়াটা আগে শেষ করতে। কে শোনে কার কথা। সপ্তাহের মাত্র দুইটা আরাম আয়েশের দিনে পড়াটা কি ঠিক নাকি আপনারাই বলুন তো?

প্রথম ক্লাসটাই ছিল শফিক স্যারের। তার কুঁচকানো চোখ আরও কুঁচকিয়ে স্যার বাংলা বই থেকে একটা কবিতা আগা টু গোঁড়া মুখস্থ করালেন। এর কোন মানে হয়? ঐ যে দেখা যাচ্ছে সোজা রেললাইন। আর মাত্র ঘন্টাখানেক পরই মেল ট্রেন ছুটে যাবে রেললাইন দিয়ে। বকখালির ব্রিজটা পারি হয়ে কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে। এই এত্ত দূর থেকেও যেন রেলগাড়ির কুঁউউউ ঝিক ঝিক শব্দ শুনতে পায় সানী। রেললাইন পর্যন্ত যতদূর চোখ যায় ধানী জমি। সবুজ সবুজ ধানের কচি চারাগুলো একবার ডানে একবার বামে দোল খাচ্ছে বাতাসে। দোতলা থেকে ঠিক ডানদিকে আড়াআড়ি প্রাইমারির একতলা স্কুল বিল্ডিংটা দেখা যায়। তার সামনে ধুলো মাখা মাঠ, ফুটবলের বার আর মাঠের কোনে তিন তিনটা কাঁঠাল গাছ। এগুলা দেখার মটন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে কাউকে যদি কবিতা পড়তে হয় তাহলে সেটা একদম জোর জবরদস্তি হয়ে যায় না?

দ্বিতীয় ক্লাসটা গণিতের। আমাদের গণিত স্যার আবার প্রায় মাস তিনেক হল চাকরি ছেঁড়ে উধাও। নতুন স্যার আসারও কোন নামগন্ধ নেই। শফিক স্যারই তাই ক্লাস টিচার হিসেবে গণিতের দায়িত্বটা নিজের কাঁধে নিয়েছেন। কিন্তু গণিতের ক্লাস বাংলা শিক্ষক করালে যা হয় আর কি। প্রথমে আমার চোখ ঢুলু ঢুলু হয়ে আসে, কানের মধ্যে শব্দ আর ঢুকতে পারে না, শুধু শোঁ শোঁ বাতাস আসে যায়, কেমন যেন ঝিমুনি আসে আর হাই ওঠে। মাথার ডান দিয়ে অনুপাতের হিসাব ঢুকে আর বাম দিয়ে শতকরা হয়ে বের হয়।

স্যার একে একে সবার হোমওয়ার্ক ডেকে পাঠাচ্ছিলেন। এই করেই আসলে ক্লাস শেষ হয়ে যায়। আমার পালা আসাতে খাতা নিয়ে স্যারের টেবিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। স্যার ভ্রু কুঁচকিয়ে গভীর মনোযোগের সাথে আমার খাতা দেখতে থাকলেন আর আমি গভীর মনোযোগের সাথে স্যারের চেহারা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। আচ্ছা স্যারের চোখগুলো এত কুঁচকানো কেন? স্যারের বাবা বা মা কি জাপানী নাকি চাকমা? স্যারের চোখ দুটো এত্ত কাছাকাছি না হয়ে আরেকটু দূরে দূরে হলে বেশ হত। বা যদি মুরগীর মত মাথার দুই পাশে দুইটা চোখ হত, সাথে আমাদের ছাগল বল্টুর মত একগোছা দাড়ি থুতনিতে। ভাবতেই আমার মুখে একান ওকান হাসি ছড়িয়ে পড়লো। সংজ্ঞা ফিরল বাম হাতে একটা রাম চিমটি খেয়ে। স্যার এরপর একহাতে আমার বাম কানটা দলাই মলাই করতে করতে অন্যহাতে সবকটা অংক ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কেটে দিয়ে "ভেরি ব্যাড" লিখে দিলেন? বাহ, খুব ভালো। আমাকে আরেকটু ভালো করে শিখালে বুঝি আমি ঠিক ঠিক পারতাম না? সব আমারই দোষ? তাই না?

এরপরের পিরিয়ডটাই নাহার ম্যাডামের। নাহার ম্যাডাম হচ্ছেন আমাদের সবার, এক্কেবারে সবার ফেভারিট ম্যাডাম। ম্যাডামকে কেউ কোনদিন রাগ করতে দেখে নি, কেউ কোনদিন ম্যাডামের কাছে বকা খায় নি পড়া না পারার জন্য, আর বেত - কখনো ম্যাডামের হাতে এই এক বস্তু দেখা যায় নি। ম্যাডাম আমাদের সমাজ পড়ান। তার মধ্যে বিশেষ করে যখন ইতিহাস পড়ান আমাদের যে কি ভালো লাগে! একেবারে গল্পের মত করে বলতে থাকেন ইতিহাসের কথা। শুধু বই থেকে না। বইয়ের বাইরেও কত কাহিনী, কত দেশ বিদেশের কথা বলেন। চোখের সামনে সিনেমার মত করে যেন ছবিগুলো ভেসে ওঠে। সিরাজউদ্দৌলার দুঃখজনক পরাজয়ের কাহিনী, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার কাহিনী, ক্ষুদিরামের ফাঁসির কাহিনী, প্রীতিলতার সাহসিকতার কথা। আর মুক্তিযুদ্ধের গল্প, অনেক অনেক মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এই একটা ক্লাস করার জন্যেই এই বিচ্ছিরি স্কুলটায় আসা যায়। তা না হলে কে এত কষ্ট করতো শুনি?

ঠিক বারোটায় আমদের ধর্ম ক্লাস শুরু হয়। নাসিম হুজুর ভালোই পড়ান। কত নবী, পীর আউলিয়াদের জীবনী বলেন। সুরা তেলাওয়াতও করেন খুব সুন্দর করে, শানে নযুল সহ। মহানবী (সা:) এর কতশত কাহিনী, জীবনের কত কথা আমাদের শুনান। কিন্তু ক্লাস শেষে আমাদের সবাইকে নিয়ে জোর করে যোহরের নামাজ পড়তে যান। আমরা সবসময়ই তক্কে তক্কে থাকি ভাগার জন্য, অনেক সময় পালাতেও পারি। কিন্তু হুজুর ঠিকই হিসাব রাখেন আর পরের ক্লাসে কানে মোচর বা পেটে চিমটি বা বেতের বাড়ি পাক্কা। হুজুরের আরেকটা সমস্যা হল হুজুর আর কোন ধর্মের ব্যাপারে ভালো কথা - না বলতে পারেন, না শুনতে চান। আজকেই যেমন হঠাৎ ক্ষেপে গেলেন পড়াতে পড়াতে। "ঐ হিন্দু পাড়ায় দোকানে দোকানে খালি দেব দেবীর ছবি, আর মূর্তি, আর খালি নম: নম: করতেছে। একটা মূর্তির মইধ্যে না আছে জান, না আছে তার কোন পাওয়ার। সেইটার কি কাউরে রহমত-বরকত দিবার পারে। না। বেক্কলের দল সেইডারে লইয়াই পইড়া আসে। আরে তাইলে কি আর বেহেশতে যাইতে পারবো? পারবো না। আমগো মাহমুদ গজনীর কথা বাদই দিলাম, কালাপাহাড় যখন মন্দির ভাইঙ্গা গুড়া গুড়া কইরা ফেলছিল, একটা দেবতাও কি পারতো না নিজের ঘরটা রক্ষা করতে। আরে, সেই পাওয়ার থাকলে তো?"

সেখানেই থামলে কথা ছিল না। কিন্তু হুজুর বকবক করতেই থাকলেন, শেষমেশ বলে উঠলেন, "ঐ মালুগুলার তো পায়খানা - প্রস্রাবেরও ঠিক নাই, পানি পুনি লয় না ঠিকমতন আর আমাদের ধর্মে কওয়াই আসে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা হইলো ঈমানের অঙ্গ। তাইলে কোন ধর্মটা ভালা হইলো? কোনটা আসল ধর্ম? ইসলাম..." আমার চোখ চলে গেল মানসের দিকে। স্যার নিজের মনেই কথা বলে চলছেন আর বেচারা মাথা নীচু করে বসেই আছে। যেন পাপ কাজ করেছে ধর্ম ক্লাসে থেকে। কিছু করার নাই। আমাদের এমনিতেই টিচার সংকট। তাই মানসকে ঘরেই হিন্দু ধর্মের বই পড়া লাগে। আবার ক্লাস ছেড়ে আগে বের হওয়ারও নিয়ম নাই। তাই বাধ্য হয়ে হুজুরের হিন্দু ধর্ম নিয়ে যত বাজে কথাগুলা ওকে সহ্য করে যেতে হয়।

এরকম তো কতদিনই হয়েছে কিন্তু আজকে আমি হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে বললাম, "হুজুর, একটা কথা ছিল।" এমন গরম বক্তৃতার মাঝখানে বাধা পড়ায় হুজুর বিরক্ত হলেন ভীষণ, "আবার কি প্রশ্ন?" আমি বললাম, "আমার বাবা যে বলেন আমাদের ধর্মেই বলা আছে যার যার ধর্ম তার তার কাছে। সেইটা কি ভুল কথা? আর কোন ধর্মই নাকি আসলে খারাপ না? সব ধর্মই শেষ পর্যন্ত ভালো কথা বলে। জন্মের সাথে সাথেই তো ধর্ম ঠিক হয়ে যায় তাহলে আল্লাহ তায়ালা চাইছেন দেখেই তো হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাই মিলেই আমরা। আর হিন্দুদের এভাবে মালু বলাটা নাকি ঠিক না।? পাপ হয়।" হুজুর দাঁত মুখ খিচাইয়া একটা রাম ধমক মারলেন, "চুপ বেয়াদ্দব পোলা। আমার ক্লাসে আমার জ্ঞান দিবার আইসে। এইদিকে আয়, উইঠা আয় এইদিকে।"

হুজুরের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে যখন বেঞ্চিতে বসতে এলাম আমার কানের রং পালটে টকটকে লাল। বাসায় গিয়ে আগে ভালো করে দেখতে হবে কান দুটো আগের থেকে লম্বা হয়ে গেল কি না। (চলবে)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:১৯

করুণাধারা বলেছেন: লেখার স্টাইল ভালো, কোথাও বানান ভুল নেই। কিন্তু কাহিনী বড্ড ধীর। একটা ছেলের স্কুলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুভূতি, আবার ছেলেটি কখনো প্রথম পুরুষে আমি, কখনো তৃতীয় পুরুষে সানি। পাঠকপ্রিয় করতে গেলে আরেকটু তাড়াতাড়ি গল্প আগাতে হবে।শুভকামনা রইল।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৫

অজ্ঞ বালক বলেছেন: যাক, ভালো কিছু আসে তাইলে। আসলে হুদাই লিখসিলাম। কেল্লিগা যে লিখলাম এইডা নিজেও জানি না। মনের টান ছাড়া লেখা বাজে হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে, প্রথম আর তৃতীয় পুরুষের মতন ফালতু ভুল করায় আমি আসলেই লজ্জিত। নতুন লেখাটা পইড়া দেইখেন। ভালো লাগার কথা। ধন্যবাদ আপনেরে।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১:১১

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল ভাষায় লিখেছেন।
খুব ছিমছাম গুছানো লেখা।
চলুক।

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৬

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হুম। চেষ্টা ছাড়া লিখা। যা হইসে, হইসে। এইটা আর লিখুম না। ইন্টারেস্ট পাইতাসি না আর। মাঝখানে ঝুলাইয়া রাখার জন্য দুঃখিত।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:০২

খায়রুল আহসান বলেছেন: স্কুল থেকে অদূরের ধানক্ষেত, আর রেল লাইন দেখার দৃশ্যকল্পটা আমার খুব ভাল লেগেছে। আপনিও কি "কুউউঝিকঝিক" আমলের লোক? এখন তো কুউউঝিকঝিক নেই; আছে শুধু ভোঁ ভোঁ ভেঁপুর শব্দ।

মানস এর কষ্টটা আরেকটু গভীরভাবে হাইলাইট করা যেত।

১ নং মন্তব্য এবং প্রতিমন্তব্য, দুটোতেই 'লাইক'। আর পোস্টেও প্রথম 'লাইক'টা রেখে গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.