নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

থ্রিলার উপন্যাসিকাঃ চারুলতা - পর্ব এক

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:০০

০১

আমি যদি আপনাকে বলি যে আমি একজন চৌকস শিকারি তাহলে প্রথমে কি মাথায় আসবে আপনার? বাঘ, সিংহ, হাতি, চিতাবাঘ এরকম কোন জন্তুর কথা? ভুল! ভুল পথে ভাবছেন আপনি। আমি শিকারি, তবে আমার শিকার হল মানুষ। সত্যি বলতে কি মানুষ শিকার করাটা সবচাইতে সহজ কাজ। বাঘ-সিংহের মতন মজবুত চোয়াল-শ্বদন্ত, ছুড়ির মতন ধারালো নখ-ওয়ালা পাঞ্জা নেই মানুষের। নেই হাতির মতন মত্ত শক্তি কিংবা চিতার ক্ষিপ্রতা। অনেকেই ভাব নিয়ে বলবে মানুষের আছে বুদ্ধি। ভুলে গেলে চলবে না আমিও কিন্তু মানুষ। আর বুদ্ধি আমারও কম না। বরং সত্যি বলতে আর দশজনের চাইতে মাথাটা আমার খেলে বেশি। আর তাই আরেকজন মানুষের চিন্তাভাবনা পড়তে কখনো অসুবিধা হয় নি আমার। আপনার আশেপাশে তাকান। কয়জন মানুষ দেখছেন? ধরুন একশ জন। এই একশজনের মধ্যে নব্বই জন মানুষের চিন্তাই একেবারে সরল-সোজা। একমুখী, যেন নাক বরাবর না হেঁটে উপায় নেই তাদের। একটাই লক্ষ্য, উদ্দেশ্য যাই বলুন না কেন এদের জীবনে - আর সেটা হল কোনভাবে বেঁচে থাকা। আগামীকালের কথা ভাবা। আর এতকিছু ভাবতে ভাবতে নিজেদের ডানে-বামে তাকাতেই ভুলে যায় বোকাগুলো। একেবারে কাছে পৌঁছে মরণ আঘাত করার আগে বেকুবটা বুঝতেও পারে না যে অনেক দিন ধরেই সে পরিণত হয়েছিল একজন শিকারির লক্ষ্যে। আপনাকে খুব একটা কসরতও করতে হবে না, ঐ যে বললাম না যে মানুষের মধ্যে অন্য জন্তুদের মতন প্রখর অনুভূতির ক্ষমতা বা আত্মরক্ষার প্রকৃতি-প্রদত্ত কোন উপাদান নেই। যদি না সে লোকটা স্পাইডার-ম্যান হয়ে থাকে; সেক্ষেত্রে স্পাইডার-সেন্স নিয়ে একটু চিন্তার ব্যাপার থাকতো আর কি!

এই রফিকের কথাই ভাবুন না। একটা ঢালাই করা ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তার দ্রুতগতির পায়ের শব্দটা যে আরেকজন মানুষের পায়ের শব্দ আলগোছে ঢেকে দিচ্ছে সেটা টেরই পাচ্ছে না। অবশ্য না পাওয়ারই কথা। গতকাল মাত্র নতুন কালো ভেঞ্চুরিনি জুতাগুলা কিনল এপেক্স থেকে। এখনও হাঁটলে খট খট শব্দ হচ্ছে। সেটা আবার রফিকের বেশ পছন্দও হচ্ছে যা বুঝলাম। আবার আজকের রাতটা বেশ ভ্যাপসা একটা ভাব ধরে রেখেছে। কোথাও একফোঁটা বাতাস নেই। আর তাই এই এত কাছ থেকেও আমার গায়ে দেয়া গ্যাস-বিহীন(!) 'ফগ' সেন্টের গন্ধটাও তার নাকে পৌঁছায়নি। আর পৌঁছাবেই বা কিভাবে? যা বলেছি, সব মানুষের মাথায় একটা সময় শুধু একটা চিন্তাই ঘুরতে থাকে। এই যেমন, রফিকের মাথায় ঘুরছিল কখন সে তার দুই হাজার সাত মডেলের টয়োটা করোলা গাড়ির দরজা খুলবে। গাড়িটা সুপার শপ থেকে এই মিনিট তিনেকের দূরত্বে রাস্তার উপরেই পার্ক করে রাখা। রাত বাজে দশ-টা বেজে এগারো। দশটায় সুপার শপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তাও এক দুইটা সেল বাড়ানোর জন্য আধ ঘণ্টা বাড়তি সময় খোলা থাকে এই দোকানগুলো। আর ওভারটাইম করে অফিস ফেরতা মানুষ সেই সুযোগে ন্যাতানো সবজি, ঠাণ্ডায় জমানো মাছ-মাংস, বেশী পেকে যাওয়া ফলমূল, ফ্রোজেন ফুড, আর অন্য মুদির বাজার কিনে নিয়ে যায় বাসার জন্য। রফিকের দুই হাত ভর্তি বাজার। এই দোকানটা আবার জালি ব্যাগ দেয় বাজার নিয়ে যাওয়ার জন্য। দুই হাতের চারটা ওজনদার ব্যাগের নাইলন-দড়ি কেটে কেটে বসে যাচ্ছে হাটে। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠতে হবে এই চিন্তাটাই রফিকের মাথায় ঘুরছিল।

রফিক ড্রাইভিং সীটের দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, রাস্তার দুই দিকে ভালো করে নজর বুলিয়ে। রাত অনেক হয় নি, তবে রাত দশটা বাজে এই রাস্তায় ততটা গাড়ি দেখা যায় না। ব্যবসার জন্য একটা বিচ্ছিরি লোকেশন বেছে নিয়েছে সুপার শপটা, অবশ্য সেটা আমার জন্য ভালো হয়েছে। অনায়াসে আপাত ফাঁকা রাস্তার মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়ে ডান হাতের ব্যাগ দুইটা মাটিতে নামিয়ে রাখল রফিক। হাত ঢুকালো প্যান্টের ডান পকেটে। ইয়া গাবদা এক চাবির গোছা বের হল পকেট থেকে। ঝনঝন করে উঠলো চাবিগুলো। একটা আরেকটার সাথে বাড়ি খাচ্ছে। এই সময়টারই অপেক্ষা করছিলাম আমি। আরেকটা গাড়ি পার্ক করা রফিকের গাড়িটার পিছনে। সেটার মালিক অবশ্য এখনো সুপার শপের ভেতরে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত - হাতের কার্টে তেমন কিছুই ভরে নি। এখনই বের হয়ে আসার কোনরকম সম্ভাবনা নেই। আমি আমার হুডিটা টেনে দিলাম তাও। কেউ যেন এক দেখায় মুখ চিনতে না পারে। আশেপাশে সিসিক্যামেরা থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই এই বাড়তি সতর্কতা। মুখ ঢেকে, চাবির শব্দে পা ফেলার আওয়াজ ঢাকা দিয়ে; এক মুহূর্তে আমার আর আমার শিকারের মধ্যেকার দূরত্ব পার হয়ে গেলাম আমি। এসে দাঁড়ালাম রফিকের ঠিক পিছনে। ও দরজার তুলে রাখা গ্লাসে আমার প্রতিচ্ছবি দেখে সতর্ক হয়ে যাওয়ার আগেই আঘাত হানলাম আমি।

০২

বছরে দুই ঈদে নামাজ আদায় করা রফিক "আল্লাহ গো" বলে নিজের মাথার পিছনটা ধরতে নিলো। ঐখানেই গায়ের জোড়ে ঘুষিটা মেরেছি আমি। বাম হাত থেকে ব্যাগ দুইটা পরে গেছে মাটিতে। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ আসলো সেখান থেকে। জেলি, কফি কিংবা মালটোভার বয়াম হবে হয়তো। রফিক চট করে ঘুরে দাঁড়াতে গিয়ে নিজেই হুড়মুড় করে পরে গেলো গাড়ির গায়ে। ধাক্কা খেয়ে, বসে পড়লো মাটিতে। দুই হাত তুলে রেখেছে মাথার উপরে, নিজেকে বাঁচানোর একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

"প্লিজ...প্লিজ ভাই, আমার পকেটে যা আছে আপনি নিয়ে যান। এই পকেটে মোবাইল আছে আমিই বের করে দিচ্ছি।"

"তুই আগে উঠে দাঁড়া," আমি হাতের ইশারা করে বললাম।

"আমি সব দিচ্ছি, দরকারে গাড়ির চাবিটাও নিয়ে যান তাও আমাকে ছুড়ি-টুরি মারবেন..."

"খুব চমকে দিলাম নাকি তোকে? কেউ তোকে কখনো দরজার আড়াল থেকে এসে হাউউউ করে ভয় দেখায় নাই?"

রফিক খুব দ্রুত কয়েকটা জিনিস বুঝতে পারলো। এক, এইটা কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা না। কাজেই নিজের জানের উপর কোন হামলার আশঙ্কা করার তার দরকার নেই। দুই, আমি কোন নেশাখোর, রাস্তার মাস্তান, পেশি-ফুলানো "ব্যাটা মানুষ" না। আমি একজন মেয়ে। আর তিন, এর আগেও সে কোথাও না কোথাও আমার গলার আওয়াজ শুনেছে।

রফিক গুটিয়ে থাকা অবস্থা থেকে একটু সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। আমার হুডের নীচের জমাট অন্ধকারের দিকে চোখ সরু করে তাকাচ্ছে। আমি মাথাটা হালকা নিচু করলাম। সুপার শপের বাইরের হোর্ডিং-এর আলোটা এতদূর আসছে না। আর এখানের যেই ল্যাম্পপোস্ট তার বাতিটা পিট পিট করে অন্ধকারকে চোখটিপ মেরেই চলছে। জ্বলছে নিভছে, নিভছে জ্বলছে। আমার বয়কাট চুলের দিকে তাকিয়ে আছে রফিক, চোখে এতক্ষণ ভর করে থাকা ভয়টা উধাও হয়ে গিয়েছে।

"আ...আমি...," রফিক তোতলাতে তোতলাতে বলল, এক হাত দিয়ে আমাকে দেখাচ্ছে। "...আপনাকে চিনি।"

"চিনিস তো বটেই।"

"আপনি ঐ যে ঐ পুলিশটা।" আমার দিকে তাক করে রাখা আঙ্গুলটা হালকা হালকা ঝাঁকাচ্ছে। কণ্ঠস্বর থেকেও ভয়টা উবে গেছে আমাকে চিনতে পারায়, সেই জায়গায় অদ্ভুত একটা আত্মবিশ্বাস এসে জায়গা করে নিয়েছে। "আপনি ঐ পুলিশটা যে আমার মামলার দিন কোর্টে এসেছিল।"

"একদম ঠিক," আমি বললাম। হাততালি দেওয়া থেকে বহুকষ্টে নিজেকে সামলালাম। "ইন্সপেক্টর চারুলতা চৌধুরী। তোকে যেই সাজা কোর্ট দিতে পারে নাই, আজকে সেই সাজা আমি দিব। দোয়া দরুদ পড়া শুরু কর।"

০৩

যেরকম ভেবেছিলাম, সেরকম কিছু ঘটলো না। সত্যি বলতে আমি একটু হতাশই হলাম। তার চাইতে বেশি হল মেজাজ খারাপ। যেন, মেজাজ খারাপ হওয়ার জন্য কখনো কোন অজুহাতের দরকার হয়েছে আমার! আমি ভেবেছিলাম, যত যাই হোক রফিক এক দেখাতেই আমাকে চিনে ফেলবে। চিনলেও আমার নামটা যে তার মাথায় আসবে না সেটা আসলে ভাবি নি। অবশ্য রফিককে খুব একটা দোষ দেয়া যায় না। আমার দৈহিক গড়ন সানী দেওলের মতন হাট্টা-কাট্টা না হলেও আমার এই ব্যায়াম করা হতের ঘুষির ওজন সানীর আড়াই কিলো ওজনের হাতের ঘুষির চাইতে কম হবে না জোড়ে সেটা আমি নিশ্চিত। আর সেই ঘুষি একটা এই মাত্র রফিক নিজের মাথার পিছনে খেয়েছে। তার ঐ মাথার ভেতরের বিশাল গর্তের মধ্যে অল্প কিছু 'মগজ' নামের যে জিনিস আছে তা এখনো বন-বন করে ঘুরছে আর সুস্থির হওয়ার নিদারুণ চেষ্টা চালাচ্ছে। স্বাভাবিক হতে আরও মিনিট দশেক লাগবে রফিকের। কিন্তু, কথা সেটা না। কথা হল, রফিক আমাকে খুব ভালো করেই চেনে। নিজের প্রাক্তন প্রেমিকা আয়েশাকে ধর্ষণের জন্য যখন রফিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল তখন আমার নামটা রফিকের মাথায় চিরস্থায়ী ভাবে ঢুকানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি আমি। দেখা যাচ্ছে, সেটা যথেষ্ট ছিল না।

আমি যখন আয়েশাকে খুঁজে পাই, মেয়েটা ওর নিজের বাথরুমেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল। শাওয়ারের নীচে ওর হালকা দেহটাকে কোলে করে এনে পুরো গতিতে কল ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। যা একটু সূত্র পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল আমাদের, এই এক কাজেই সেই ঝামেলা থেকে বেঁচে গিয়েছিল হারামিটা। আমি কোর্টে পুরো ঘটনাটাই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বলেছিলাম। সেই সাথে আমার কি কি ধারণা আর ঘটনাটা কিভাবে ঘটেছে বলে আমার মনে হয় - তাও। কিন্তু, মামলাটা খুব দুর্বল ছিল। যেটা বললাম - জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের স্পষ্ট কোন চিহ্ন ছিল না। রফিক জন্ম থেকেই জেদি, বদমেজাজি। পাঁচ বছরের সম্পর্কের ইতি এইভাবে হঠাৎ টেনে দিবে আয়েশা সেটা সে মানতেই পারে নি। এর জন্য আয়েশার উপর রফিকের একটা অন্ধ ক্রোধ জন্মায়। সেই থেকেই সে তক্কে তক্কে ছিল, কখন ও কিভাবে আয়েশার উপর প্রতিশোধ নেয়া যায়। আর কি সেই প্রতিশোধ? পাঁচ বছরে অনেক বার চেয়েও যেই দাবী সে মিটাতে পারেনি - আয়েশার শরীরটাকে ভোগ করা, জোর করে, মেয়েটার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ও জানোয়ারের মতন পাশবিকতায়। ঐ যে প্রথমে বলেছিলাম, মানুষের সাথে জানোয়ারের পার্থক্যের কথা। মানুষই মনে হয় একমাত্র জীব যে সময় ও পরিস্থিতি সাপেক্ষে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জন্তুতে রূপান্তরিত হতে পারে।

রফিক জানতো, মামলা হবে। এত সহজে ওকে ছেড়ে দেবে না আয়েশা। সেরকম মেয়েই ও না। আর তাই, প্রেমের সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আয়েশার সাথে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রেখেছিল ও। ঘটনার দিন রাতে রফিকের জন্মদিন ছিল, আর এই শহরে একলা থাকার অজুহাত তুলে একটা কেক আর দুই প্যাকেট সেট চাইনিজ ডিনার নিয়ে সে আয়েশার বাসায় চলে আসে। সেখানে একসাথে কেক কেটে আর ডিনার করার পর সে ধর্ষণ করে আয়েশাকে। যে কেউ ব্যাপারটা এক নজরে দেখলে ভাববে, পুরাতন প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেদের মধ্যে আপোষ করেছে আর সবশেষে নির্জন বাসায় যা ঘটানোর তাই ঘটিয়েছে। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আমি যখন রফিকের নিয়োগ দেয়া ঝানু উকিলের জেরা সামলাচ্ছিলাম আমার চোখ ঐ পাশের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো রফিকের দিকেই বারবার যাচ্ছিল। আমি এইধরনের মামলার সাথে বেশ পরিচিত। বুঝতে পারছিলাম, আরও অনেক ধর্ষকের মতন রফিকও বেকসুর খালাস হয়ে যাবে। কিন্তু, আমার হাত থেকে ওর নিস্তার নেই।

"তুমি আমার গায়ে হাত তুলেছ?" রফিক নিজের মাথার পিছনে হাত দিয়ে ব্যথায় মুখ কুঁচকল। "এবার তোমার খবর আছে। শুধু পুলিশ বলেই তুমি পার পেয়ে যাবে সেটা ভেবো না। আমারও কিন্তু পুলিশের উপর মহলে কম জানাশোনা নেই।"

"আসলে, এখন তোর খবর হবে রে হারামজাদা। বৈশাখী মেলায় যেইভাবে ডুগডুগি বাজায়, তোকে ওইভাবে বাজাবো আমি। তোর হাড্ডি আর মাংস আলগা করবো।" কথাটা বলতে বলতেই আমার ডান পা একটু পিছে নিয়ে গিয়েছিলাম এবার সেই পায়ে গায়ের পুরো ভর চাপিয়ে এক লহমায় পরপর কতগুলো ঘুষি মারলাম আমি রফিকের মুখে। এরপর দুই পা পিছিয়ে আসলাম। ঘুষির ওজনটা আগে টের পাক শালা। আমি জানি এখন রফিক মাথা গরম করবে। সামনে এগিয়ে এসে আমার গায়ে হাত তুলতে চাইবে। সেটার জন্যই অপেক্ষা করছি আমি আর ঠিক তাই ঘটলো। আমি একপাশে সরে দাঁড়ালাম। ওর ঘুষিটা ফসকে গেল। আমি আমার বাম হাঁটুটা সজোরে ওর পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম। বেচারা শরীরটা দুই ভাজ হয়ে গেল। রাস্তায় মুখ থুবড়ে পরে গেল রফিক। আমি আড়চোখে সুপার শপের দিকে তাকালাম, তারপর এক ঝলক রাস্তার দুইপাশে। কেউ দেখলে, ছুটে আসলে বা পুলিশ ডাক দিলে যাতে দ্রুত পালাতে পারি সেই রাস্তা আগেও দেখে রেখেছি তাও সাবধান থাকাটাই ভালো। সময় আমি খুব একটা বেশি যে পাবো না তা জানি। তবে এতটুকু সময় যথেষ্ট রফিকের মতন একটা ননীর পুতুলের স্ক্রু টাইট দেয়ার জন্য।

রফিক বিড়বিড় করে বলে উঠলো, "এটা তুমি করতে পারো না। তুমি পুলিশ..." মুখ থুবড়ে পড়াতে দাঁত এক দুইটা নড়ে গিয়েছে মনে হয়, ঠোঁটটাও কেটে গেছে। রক্ত পড়ছে সেখান থেকে। "...তোমার একটা..."

উঠে দাঁড়িয়েছিল, সেই সুযোগে মোক্ষম একটা লাথি মারলাম রফিকের পাঁজর বরাবর। মাটি থেকে তুলে এবার ওর গাড়ির বনেটের উপর আছড়ে ফেললাম ওকে। একাডেমীতে আমার এই হালকা পাতলা শরীর নিয়ে প্রায় নব্বই কেজি ওজনের ট্রেইনারকে অনেকবার আছাড় মেরেছি আমি। রফিক সেই তুলনায় একেবারেই চিকন। রফিকের চুলের মুঠি ধরে মুখটা কাছাকাছি নিয়ে আসলাম যাতে আমার কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পারে।

আবারও মুখ খুলল রফিক, ফোঁপাচ্ছে ব্যথায়, "তুমি পুলিশ..."

"চুপ মাদারচোদ, একদম চুপ। আমার কথা ভালো করে শুন।" চোখের কোন দিয়ে দেখলাম সুপার শপ থেকে বের হয়ে আসছে ভেতরের ক্রেতা। এদিকেই আসবে। "আমি যে একটা স্পেশাল ডিভিশনে আছে তা তো জানিসই। এই পুরো শহরের ছোট-বড় সব ঘটনা থানায় রিপোর্ট হয়ে আমাদের কাছে আসে। এর মধ্যে কাউকে আমাদের খুব পছন্দ হলে তার নামে আলাদা ফাইল খুলে রাখা হয়। সে অল্প একটু বেলাইনে গেলেও আমরা জানতে পারি। তা সে জীবনে কখনো জেলে যাক বা না যাক, সে অপরাধী হোক বা সাধু পুরুষ - সেইটা ব্যাপার না। আমার সেইরকম তোরে খুব পছন্দ হইছে।"

রফিকের মাথাটা গাড়ির বনেটে ধুপধাপ কয়েকবার ঠুকে দিলাম আমি। চুলটা ছেড়ে দেয়াতে রফিক গড়িয়ে আবারও রাস্তায় পড়ে গেল। শব্দে সুপার শপ থেকে বের হওয়া লোকটা সচকিত হয়ে এদিকে তাকাল। আমি রফিকের অণ্ডকোষের উপর নিজের শরীরের ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। এখন আমার কথা ও বাড়তি মনোযোগ দিয়ে শুনবে সন্দেহ নেই!

"আমি যদি কখনো কোন রিপোর্টে তোর নাম দেখি, তোর ব্যাপারে একটা উলটা সিধা কথা শুনি; তাহলে আবার আমাদের দেখা হবে। সেইবার তোর এই ডাণ্ডা আর বিচি আমি মাখনের মতন গলাইয়া দিয়া যাবো। কথাটা মনে রাখিস।"

হুডিটা একটু নড়ে গিয়েছিল, আবারো মাথার উপর ভালো করে টেনে দিয়ে কাছের উপগলিটার দিকে জোরে হাঁটতে শুরু করলাম আমি। গলিতে ঢুকেই জোড়ে ছুটলাম। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে উধাও হয়ে যেতে হবে।

(চলবে...)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৩:৪৪

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: ভয়ংকর, অমানবিক পুলিশের কাহিনী!

চলুক...

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৬

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হুম। ব্যাপারটা আসলে তা না। মাঝে মাঝে ভিজিল্যান্টি হওন লাগে। বাধ্য করে পরিস্থিতি।

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:২০

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ শিকার করা মোটেও সহজ কাজ নয়। মানুষ বড় রহস্যময় প্রানী।
আয়শা মেয়েটা রহস্যময়। দেখি সামনে কি হয়!!

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৬

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আয়েশা খুবই সাধারণ একটা মাইয়া। পরিস্থিতির শিকার।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:২১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন:
রোমাঞ্চ, অ্যাকশন, বিশেষ ডায়লগ সহ হরর সাসপেন্স । B-))

প্রথম অংশেই আপনি একটি সাসপেন্স তৈরি করেছেন ।

:(( আয়েশা কি রফিকের প্রেমে পড়ে গেছে :> ?

পরবর্তী অংশের জন্য অপেক্ষা ----

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৭

অজ্ঞ বালক বলেছেন: প্রেম এককালে ছিল। এখন নাই। ধন্যবাদ। সামনেই দেখবেন চমক কারে কয়। ভিলেন এন্ট্রি নিব।

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:০৪

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: ভাল লিখেছেন! পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৮

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ধন্যবাদ। অপেক্ষা যাদে জলদি শেষ হয় সেই দোয়া করি।

৫| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৪৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ভয়ঙ্কর !!
লেখা ভালো লেগেছে। আপনাকে অনেকদিন পর পেলাম। কেমন আছেন ?

৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫

নীল আকাশ বলেছেন: আপনি কী আমার শবনম সিরিজ এবং রেশমা কাহিনী পড়েছেন? এই দুইটাও পুলিশ নিয়ে লেখা।
পরের পর্বের পড়তে গেলাম। লেখা পছন্দ হয়েছে তবে হিংস্রতা বেশি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.