নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাভারত - পূর্বকথাঃ সর্পযজ্ঞ

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭

ভারতের রাজধানী হস্তিনাপুর। সেই হস্তিনাপুরে সগৌরবে রাজত্ব করছে কুরু বংশ। কিন্তু, কুরুবংশের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী রাজা পরীক্ষিত নিজেকে রাজধানীর মধ্যস্থলে অবস্থিত এক সুউচ্চ মিনারে আবদ্ধ করে রেখেছেন। মন্ত্রীরা ছাড়া তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, এমনকি তার কোন প্রজাদের কারোরই সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। কোন কারণে ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে আছেন তিনি। সারারাত-সারাদিন তার কেটে যাচ্ছিল ঘরের এইমাথা হতে ওইমাথা পায়চারি করতে করতে। চারণকবি, গায়ক, নর্তকীদের তার নিকট পাঠানো হয়েছিল তার অস্থির হৃদয়কে শান্ত করার জন্য, কিন্তু কিছুই তার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করা আশঙ্কাকে নির্মূল করতে পারে নি। অবশ্য তারা কেউ সেই মিনারে প্রবেশই করতে পারে নি।

রাজ্যজুড়ে প্রজারা কানাকানি করছিল, "আমাদের রাজার পিতামহ ছিলেন বীর-শ্রেষ্ঠ অর্জুন, যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের পরাজিত করতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন। তার পিতা অভিমন্যু অভেদ্য যুদ্ধ-বলয় চক্রব্যূহ ভেদ করে নিজেকে ইতিহাসে অমর-অক্ষয় করে গিয়েছেন। সেই বংশের উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের রাজারও নির্ভীক হওয়ার কথা ছিল। তবে কেন তিনি এমন ভীত হয়ে দুর্গে আত্মগোপন করে রয়েছেন?"

একসময় রাজা সকল গুজবের অবসান করতে বলতে বাধ্য হলেন, "আমাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে যে আমি সাত দিনের মধ্যে সাপের কামড়ে মৃত্যুবরণ করবো। কাজেই কেউ যেন এই মিনারে প্রবেশ করতে না পারে। কোন উপায়েই যেন কোন সাপ, নাগজাতির কোন সদস্য যেন আমার কাছে এসে পৌঁছাতে না পারে। আমি এখনই মৃত্যুবরণ করতে চাই না।" রক্ষীরা মিনারের প্রতিটা জানালা, প্রতিটা দরজায় সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে পাহারা দিতে শুরু করলো। কোন সাপ যদি ঘুণাক্ষরেও রাজার কক্ষের দিকে আগানোর চেষ্টা করে তবে তার আর রক্ষীদের তলোয়ার থেকে নিস্তার নেই। কুটিল স্বভাবের নাগেরা যেকোনো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জায়গাতেই লুকিয়ে থাকতে পারে; আর তাই মিনারে প্রবেশ করা প্রতিটা জিনিস তল্লাসি করে দেখা হচ্ছিল।

ছয় রাত এভাবেই কেটে গেল। সপ্তম দিনে ক্ষুধার্ত রাজা পরীক্ষিত কক্ষে থাকা ফলের ঝুড়ি থেকে একটা ফল নিয়ে খেতে শুরু করলেন। সেই ফলের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকা একটি ছোট্ট পোকা মুহূর্তেই বিষধর সাপের আকৃতি ধারণ করলো। সে আর কেউ নয়, নাগ তক্ষক!

তক্ষক চোখের পলকে তার বিষদাঁত দিয়ে পরীক্ষিতকে দংশন করলো। রাজার সারাদেহে বিষ ছড়িয়ে পড়লো। পরীক্ষিতের আর্তনাদ শুনে রক্ষীরা ছুটে আসলো কিন্তু ততক্ষণে রাজা মৃত্যুবরণ করেছেন আর তক্ষকও পালিয়ে গিয়েছে।

পরীক্ষিতের ছেলে জন্মেজয় দুঃখে-ক্ষোভে অন্ধ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন, "আমি অবশ্যই আমার নিরপরাধ পিতার এই অন্যায় হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেব।" তিনি রাজ্যের সকল ব্রাহ্মণদের সর্প-যজ্ঞ আয়োজনের নির্দেশ দিলেন। এ এমন এক যজ্ঞ, যার মাধ্যমে পৃথিবীতে থাকা সকল সাপকে বিনাশ করা সম্ভব।

রাজার আদেশে বিশাল এক যজ্ঞবেদি প্রস্তুত করা হলো। রাজ্যের সর্বত্র থেকে পুরোহিতেরা এসে জড়ো হলেন হস্তিনাপুরে। তাদের কন্ঠনিঃসৃত মন্ত্রের শব্দে চারপাশের সকল শব্দ ঢাকা পরে যাচ্ছিল। তাদের অর্পণ করা ঘিয়ের প্রভাবে যজ্ঞের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠছিল। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল হস্তিনাপুরের আকাশ। এই সর্প-যজ্ঞের তীব্রতা এমনই ছিল, মাটির নীচে নিরাপদ আলয়ে লুকিয়ে থাকা নাগজাতির সকল সদস্য সেই যোগবলে বেদীর আগুনে এসে উড়ে উড়ে পরছিল। হস্তিনাপুরের অধিবাসীরা অবাক হয়ে দেখছিল কিভাবে হাজারো সাপ আকাশপথে দৈবশক্তিতে ভেসে এসে যজ্ঞের বেদীতে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। জীবন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হতে থাকা নাগেদের আর্ত-চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠছিল। অনেকেই এই নৃশংসতা সহ্য করতে পারছিল না। তারা চিৎকার করে বলছিল, "এই অমানবিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হোক। নাগেরাও রাজার প্রজা। তাদের উপর অন্যায় করা হচ্ছে।" অপরদিকে অনেকেই এই যজ্ঞ দেখে খুশী হয়ে রাজার প্রশস্তি গাইছিল, "উচিত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে শয়তান সাপগুলোকে। আমাদের মহানুভব রাজাকে হত্যা করার জন্য এই শাস্তি ওদের পাওনা ছিল।"

দূর থেকে তরুণ কণ্ঠে কেউ একজন চিৎকার করে বলে উঠলো, "রাজা, এখনই এই যজ্ঞ থামান। আপনি আসলে অধর্মের কাজ করছেন।"

"কার এত বড় সাহস যে আমাকে অধর্ম করার নামে অভিযুক্ত করে," জন্মেজয় হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন। "কে তুমি?"

"আমি আস্তিক, বাসুকির ভগ্নী-পুত্র, নাগদের রাজা।"

"তাহলে তুমি যে সাপদের বাঁচাতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। তুমিও তো তাদের মতই একজন।"

"আমার পিতা হলেন ঋষি জরৎকারু, আপনার মতনই একজন মানুষ। আমার মা ছিলেন একজন নাগ-রমণী (মতান্তরে দেবী মনসা)। আমি একজন মানুষ, আপনার বন্ধু। আবার আমি একজন নাগ, আপনার শত্রু। মানুষ আর নাগদের মিলিত সত্তা আমার মধ্যে বিরাজ করছে। আমি কোন পক্ষ নিচ্ছি না। আমি আপনাকে শুধু অনুরোধ করতে পারি যে আমি কি বলতে চাইছি তা একটু শুনুন। তা না হলে, আপনি কিন্তু আপনার অজ্ঞাতেই নিজ বংশের উত্তরপুরুষদের কাঁধে এই অধর্মের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন।"

"ঠিক আছে, বলো কি বলতে চাও।"

"রাজা পরীক্ষিতের মৃত্যুর সাত দিন আগের কথা," আস্তিক বলতে শুরু করলো। "আপনার পিতা শিকার করতে জঙ্গলে গিয়েছিলেন। শিকারে অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর তিনি খুব পিপাসার্ত হয়ে পড়লেন। সেই জঙ্গলে তিনি দেখলেন একজন ঋষি (ঋষি শমীক) এক বিশাল বটগাছের নীচে বসে একমনে ধ্যান করছেন। রাজা তার কাছে গিয়ে একটু পানি চাইলেন। কিন্তু, ঋষি তখন গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। আর তাই তিনি রাজার আদেশ পালন করতে পারলেন না। বিরক্ত, অপমানিত হয়ে রাজা পরীক্ষিৎ কাছেই পরে থাকা একটা মৃত সাপ নিয়ে ঋষির কাঁধে পেঁচিয়ে দিলেন। ঋষির একজন ছাত্র (মতান্তরে ঋষি শমীকের পুত্র শৃঙ্গী) দূর থেকে তার শিক্ষকের এরকম অবমাননা হতে দেখে সহ্য করতে না পেরে রাজাকে অভিশাপ দিলেন যে তিনি সাত দিনের মধ্যে সাপের কামড়ে মারা যাবেন। কাজেই, রাজা জন্মেজয়, আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন যে আপনার পিতা রাজা পরীক্ষিত আসলে নিরপরাধ ছিলেন না। তিনি নিজেই তার এই অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী।"

"আর তক্ষক? সে কেন আমার পিতাকে দংশন করলো?"

আস্তিক প্রত্যুত্তরে আরেকটি কাহিনী বলতে শুরু করলো।

"অনেক আগে আপনার পিতামহ অর্জুন তাদের নবগঠিত রাজ্যের রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থ স্থাপনের জন্য খাণ্ডব নামের এক বনে অগ্নিসংযোগ করেন। ঐ বনে নাগজাতির অনেক সদস্যই বাস করতো। তক্ষকের বাসও সেখানেই ছিল। ঐ খাণ্ডবদাহনে, তক্ষক-সহ নাগজাতির আরও অনেক সদস্য গৃহহীন হয়ে যায়। এমনকি তাদের পরিবার-পরিজন অনেকেই সেই অগ্নিকান্ডে মারা যায়। তক্ষক তখন প্রতিজ্ঞা করে যে সে আজ হোক কিংবা কাল, অর্জুন কিংবা তার কোন উত্তরপুরুষকে এই খাণ্ডবদাহনের জন্য শাস্তি দেবে। আপনার পিতাকে হত্যা করে সে নিজের প্রতিশোধ গ্রহণ সম্পন্ন করেছে। আর এখন আপনি তার বদলে, এই যজ্ঞের মাধ্যমে আবার হাজারো নাগজাতির সদস্যদের আগুনে পুড়িয়ে মারছেন। আরও অনেক নাগজাতির সদস্য এর ফলে অনাথ হয়ে পরবে, তাদের মনেও আপনার মতন, তক্ষকের মতন, প্রতিশোধ নেয়ার দুর্মর আকাঙ্ক্ষা জমে উঠবে। আপনার পূর্বপুরুষরা যেই ভুল করেছিলেন, আপনিও সেই একই ভুল করছেন। আর, তারা যেরকম নিজেদের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন এবং নিজেদের ভুলের ভার নিজ বংশধরদের ঘাড়ে চাপিয়ে গিয়েছিলেন - আপনিও কি তাই করছেন না? আবারো একজনের হাতে আরেকজনের মৃত্যু হবে, রক্তের বদলে রক্ত প্রবাহিত হবে। কেউ অনাথ হবে, কেউ বিধবা। রক্তের মতন, অশ্রুও প্রবাহিত হবে সমান তালে; ঠিক যেমনটা হয়েছিল কুরুক্ষেত্রে। আপনি কি তাই চান, রাজা জন্মেজয়?"

আস্তিকের প্রশ্ন সেই যজ্ঞস্থলে উপস্থিত সবার কানে গিয়ে পৌঁছেছিল। মন্ত্রোচ্চারণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আগুন স্তিমিত হয়ে আসছিল। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। সবার চোখ তখন রাজা জন্মেজয়ের উপর। রাজা এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন? কি করবেন এখন তিনি?

জন্মেজয় সকলের এই প্রশ্নবোধক দৃষ্টির সামনেও কিন্তু নত হলেন না। ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ গলায় তিনি বললেন, "আমি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করছি। আর এটাই ধর্ম।"

আস্তিক মৃদুহাস্যে তার এই কথার উত্তরে বলল, "তক্ষক আপনার পিতাকে দংশন করেছিল কারণ সে আপনার পিতামহ অর্জুনের খাণ্ডবদাহনের বদলা নিয়ে, ন্যায়বিচার করতে চেয়েছিল। আপনি নাগজাতিকে যজ্ঞের বেদিতে উৎসর্গ করছেন কারণ আপনার মনে হচ্ছে আপনার পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়ে আপনি ন্যায় করছেন। আজকে নিহত নাগজাতিদের কারও উত্তরসূরি হয়তো আপনার বংশধরদের উপর প্রতিহিংসা-বশত ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে। কে ঠিক করবে যে ন্যায় কি? সুবিচার কি? এই চক্রাকারে অনন্তকাল-ব্যাপী চলতে থাকা প্রতিশোধের খেলায় ন্যায়ের স্থান কোথায়? সকলেই যেখানে বলছে সেই ন্যায় করছে, ঠিক করছে, আর প্রতিপক্ষ ভুল - সেখানে ন্যায় কোথায়, রাজন?"

রাজা জন্মেজয়ও এইবার চুপ করে যেতে বাধ্য হলেন। আস্তিকের বলা কথাগুলো তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। নিজের পিতার মৃত্যুর প্রতিফল দিতে গিয়ে তিনি কি অন্যায় করছেন? অবিচারকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন? আর আস্তিক যা বলছে, তবে কি... অস্বস্তি জড়ানো স্বরে জন্মেজয় আস্তিককে প্রশ্ন করতে বাধ্য হলেন, "কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কি ন্যায়ের জন্য হয় নি? ন্যায় রক্ষার্থেই কি আমার পূর্বপুরুষরা, পাণ্ডবরা, কৌরবদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন নি?"

আস্তিক কোন দ্বিধা ব্যতিরেকেই জবাব দিল, "না, রাজন। আপনি ভুল করছেন। ন্যায় আর ধর্ম এক জিনিস নয়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিল ধর্মযুদ্ধ, ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ। আর ধর্ম কিন্তু ন্যায়ের মুখাপেক্ষী না। ধর্মের মূলনীতির মধ্যেই আছে প্রজ্ঞা আর সহানুভূতি। ধর্মের মানে এই না যে অন্যকে পরাজিত করেই নিজের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। নিজের বিজয় নিশ্চিত করতে হলে নিজেকে, নিজের অন্তরাত্মাকে জয় করতে হবে। ধর্মের মূলনীতি তো এটাই, এটাই ধর্মের সারমর্ম - ন্যায়ে একপক্ষ পরাজিত হতে পারে কিন্তু ধর্মে সকলেই জয়ী হয়। কেউ হারে না, কেউ হারায় না। আপনি কি জানেন না, কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু কৌরবকুল গৌরবেরা সকলেই স্বর্গে প্রবেশ করেছিলেন।"

"কি বলছো তুমি?!"

'হ্যাঁ, কৌরবেরা - যারা কিনা আপনার পূর্বপুরুষদের শত্রু বলে আখ্যায়িত হতেন, যাদের খল-নীচ কিংবা শঠ বলে আখ্যায়িত করা হয় তারা সকলেই স্বর্গলাভ করেছেন। সেই স্বর্গ যেখানে দেবতারা আনন্দ-সুখ-সমৃদ্ধির সাথে বসবাস করেন।"

এই কথা শুনে রাজা জন্মেজয় বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পরেছিলেন। তিনি তাই প্রশ্ন করলেন, "আর আমার পূর্বপুরুষ - পাণ্ডবরা? তারা কি স্বর্গলাভ করেন নি? তারাই তো ধর্মযুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন।"

"তারা সকলেই নরক-বাসী হয়েছিলেন। দুঃখ-দুর্দশা-কষ্টে ভরা নরকেই তাদের স্থান হয়েছিল।"

"কিন্তু, আমি তো এই ব্যাপারে কিছুই জানতাম না!"

"ত্রিভুবনের অনেক জ্ঞানই আমি-আপনি জানি না রাজন। আপনি পাণ্ডবদের জয় করা এই রাজ্য ঠিকই পেয়েছেন, কিন্তু মহান রাজা যুধিষ্ঠির, কিংবা রাজা পরীক্ষিতের মতন প্রজ্ঞা আপনার মধ্যে অনুপস্থিত। এতে অবাক কিংবা লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই রাজন। পার্থিব সম্পদ বংশ পরম্পরায় আপনার হাতে আসতেই পারে, কিন্তু প্রত্যেকের অর্জিত জ্ঞান-প্রজ্ঞা-ধী তার প্রয়াণের সাথেই মিলিয়ে যায়। আপনি ধর্মের কথা, ন্যায়ের কথা বলছেন; অথচ যেই ধর্মের কথা ঈশ্বর আপনার পিতামহ অর্জুনকে বলেছিলেন, তার জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত করেছিলেন - সেই ধর্মের স্বরূপ সম্পর্কেই আপনি অবগত না।

"ঈশ্বর নিজে ধর্মের কথা আমার পিতামহকে বলেছিলেন?"

"হ্যাঁ। স্বয়ং ঈশ্বর। যাদবকুল শ্রেষ্ঠ - কৃষ্ণ।"

"আমাকে এই বিষয়ে আরও জানাও আস্তিক। আমি আরও শুনতে চাই।"

আস্তিক নির্মল হাস্যে বলল, "রাজা, আমার নিজের জ্ঞানেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আপনি বরং বৈশম্পায়ন-কে ডেকে পাঠান। তাকে অনুরোধ করুন তার শিক্ষক ব্যাসের রচনা করা ও দেবতা গণেশের দ্বারা লিখিত সেই মহান গাঁথা যেন আপনাকে বিবৃত করে। সেই মহাকাব্যে আপনার পূর্বপুরুষদের কথা, এমনকি যেসকল রাজারা তাদের পূর্বে এই পুণ্যভূমিতে রাজত্ব করে গিয়েছেন - সকলই বর্ণিত আছে। সেই মহাকাব্য শুনলে আপনি প্রকৃতার্থেই প্রজাপালক, মহান এক রাজা হয়ে উঠতে পারবেন।"

বৈশম্পায়নের খোঁজে দূত প্রেরণ করা হল। বৈশম্পায়ন কোন সাধারণ লোক ছিলেন না। তিনি ছিলেন মহর্ষি ব্যাসের সবচাইতে প্রিয় ছাত্র। ব্যাসের রচিত এই মহান কাহিনীর ধারক ও বাহক ছিলেন তিনি। রাজার আহ্বানে বৈশম্পায়ন অবশেষে হস্তিনাপুর এসে পৌঁছালেন। যজ্ঞের আগুন তখনও মিটমিট করে জ্বলছিল। আর সেই আগুনের উপরে হাজারো সাপ মন্ত্রের বাঁধনে আটকে ভেসে রয়েছে। শত শত পুরোহিত ধৈর্য-সহকারে যজ্ঞ সমাপ্ত করার জন্য অপেক্ষা করছেন। আর রাজা জন্মেজয় অপেক্ষা করছেন কখন তিনি তার পূর্বপুরুষদের কথা বিস্তারিত শুনতে পারবেন। ঋষি বৈশম্পায়ন তার জন্য প্রস্তুত করা হরিণের চামড়ার আসনে বসলেন। তার গলায় পড়িয়ে দেয়া হলো রাজার বাগান থেকে সদ্য প্রস্তুত করে আনা ফুলের মালা, সামনেই রাখা হল টলটলে খাবার পানি আর ফলের ঝুড়ি। আতিথেয়তায় অত্যন্ত খুশী হয়ে বৈশম্পায়ন তার দরাজ কণ্ঠে পাণ্ডব আর কৌরবদের গল্প বলতে শুরু করলেন। শুধু তাদেরই নয়, সেই সকল রাজাদের কাহিনী যারা ভারত নামের এই দেশকে নিজেদের যোগ্য শাসনে আজকের এই গৌরবান্বিত রূপ দান করেছেন। এই কাহিনীর নামই জয়া, আর ভবিষ্যতে এই কাহিনীকে সবাই চিনবে - মহাভারত নামে।

"মনোযোগ দিয়ে শুনুন, রাজা জন্মেজয়। এই কাহিনীর অলংকার আর রূপকে হারিয়ে যাবেন না যেন! এইসব কাহিনীর অন্তরালে, ইতিহাসের গোলকধাঁধায় জ্ঞানের অনন্ত ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। সেখানে অবগাহন করুন। সেটাই আপনার জন্য আপনার পূর্বপুরুষদের থেকে পাওয়া প্রকৃত উত্তরাধিকার, অমূল্য সম্পদ।"

(আশা করা যায় চলবে!!!)

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: বহুকাল ধরে চর্চা বহমান রয়েছে মহাভারতের ঐতিহাসিকতা নিয়ে। সত্যিই কি ঘটেছিল কুকক্ষেত্র যুদ্ধ?

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৩

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ঐতিহাসিকতার দিকে যামু না। অনেক ঝামেলা। ফিকশন তখন নন-ফিকশন হইয়া যায়। রেফারেন্স দেয়া লাগে। যুক্তি দেয়া লাগে, খণ্ডন করা লাগে। প্যারা।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১০

অজ্ঞ বালক বলেছেন: পরের পর্ব এইখানেঃ মহাভারত - প্রথম অংশ: পূর্বপুরুষগণ (১)

২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর লেখনী।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৪

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ধন্যবাদ। চেষ্টা করতাসি আর কি।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১১

অজ্ঞ বালক বলেছেন: পরের পর্ব এইখানেঃ মহাভারত - প্রথম অংশ: পূর্বপুরুষগণ (১)

৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৯

আরিফ রুবেল বলেছেন: মহাভারত নিয়ে আগ্রিহ থাকলেও পাঠাভ্যাস থেকে যোজন মাইল দূরে অবস্থানের কারণে পড়া হয়ে ওঠেনি এখনও। আমাদের এই অঞ্চলের কাহিনী রামায়ন মহাভারত। এগুলো আমাদের সিলেবাসে না থাকলেও স্বেচ্ছায় পড়া উচিত কারণ এতে তখনকার মানুষের কল্পনার দৌড়টা বোঝা যায়। আগে পড়া না থাকায় মহাভারতের এই ভার্সনটা আপনার নিজের লেখা কি না বোঝা গেল না। তবে লেখার ধরন অবশ্যই পঠনসই। কাজেই আশা থাকবে চালাবেন।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৫

অজ্ঞ বালক বলেছেন: দুনিয়ার সকল মহাকাব্যই অতি অবশ্যই পড়া উচিত। সেইটা বেঊলফ হউক, গিলগামেশ কিংবা মহাভারত। আর মহাভারতের এইটা আমি যা করছি তা হইলো কাহিনীগুলারে সাইজ কইরা একটা ফরম্যাটে আনসি, কিছুটা ওভার ফিকশনালাইজ করছি। এই তো। জিনিস তো একটাই। সোর্স ম্যাটেরিয়াল ঐ ব্যাস-ই।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১১

অজ্ঞ বালক বলেছেন: পরের পর্ব এইখানেঃ মহাভারত - প্রথম অংশ: পূর্বপুরুষগণ (১)

৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: মহাভারত চমৎকার রুপকথা। বড় আণন্দদায়ক।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৭

অজ্ঞ বালক বলেছেন: রূপকথা বইলেন না, মহাকাব্য বলেন। দয়া কইরা ভুইলেন না এইটা সনাতন ধর্মের খুবই পবিত্র বইলা স্বীকৃত গ্রন্থ। কেউ কুরআনুল কারিম নিয়া উলটা পালটা বললে নিশ্চয়ই আমাদের ভাল্লাগে না।

৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৫৯

শের শায়রী বলেছেন: মহাভারত আমার প্রিয় একটি বই। কয়েকবার পড়ছি। সাথে আছি।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আমিও অসংখ্যবার পড়সি। রাজনীতি বুঝতে ও করতে চাইলে এই বই সেরা শিক্ষার জিনিস। যাই হোক, সাথে থাকেন।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১১

অজ্ঞ বালক বলেছেন: পরের পর্ব এইখানেঃ মহাভারত - প্রথম অংশ: পূর্বপুরুষগণ (১)

৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২০

নীল আকাশ বলেছেন: ফাটাফাটি লেগেছে। লেখার স্ট্যাইলও খুব ভালো লেগেছে।
আমি এই লেখার সাথেই আছি। চালিয়ে যান। খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম।

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩৩

অজ্ঞ বালক বলেছেন: স্টাইলটা কোনরকম। পরের পর্ব লিখসি, কিন্তু মনমত হয় নাই। অনেক পরিণত হওয়া বাকি। অতো জলদি লেখক হওয়ার তারা নাই। ভালো কিছু না হইলে এইটাও বই হিসাবে আনুম না। আমাই চালাইতাছি, আপনে গ্যাট মাইরা বইয়া থাকেন।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১১

অজ্ঞ বালক বলেছেন: পরের পর্ব এইখানেঃ মহাভারত - প্রথম অংশ: পূর্বপুরুষগণ (১)

৭| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৩৮

ঘুটুরি বলেছেন: দারুন, অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বগুলির জন্য

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৩

অজ্ঞ বালক বলেছেন: নতুন পর্ব এসে গেছে, পড়ে নিতে পারেন। :D

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: পরের পর্ব এইখানেঃ মহাভারত - প্রথম অংশ: পূর্বপুরুষগণ (১)

৮| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:১৫

ঘুটুরি বলেছেন: যাই গরম গরম পড়ে আসি।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২৬

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হা হা হা, পড়ে জানাইয়েন কেমন আগাইতাছে। B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.