নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহাভারত - তৃতীয় অংশ: জন্মলগ্ন (১)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:০৭

"রাজা জন্মেজয়, আপনার অক্ষম পূর্বপুরুষ তার পত্নীদের গর্ভে দেবতাদের দ্বারা সন্তান আনয়ন করেছিলেন।"

১৩ - পৌত্রবধূ

হস্তিনাপুর থেকে দক্ষিণ দিকে যেতে থাকলে একসময় সামনে পড়ে যমুনা নদী। আর সেই যমুনা নদীর তীরে এক অপূর্ব সুন্দর আর সমৃদ্ধশালী শহর হলো মথুরা। যাদব বংশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা একটা পরিষদ গঠন করে, মথুরায় শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। সেই পরিষদেরই একজন সদস্য ছিলেন শূরসেন আর তার মেয়ের নাম ছিল পৃথা। পৃথা শূরসেনের মেয়ে হলেও সে বর হয়েছিল শূরসেনেরই চাচাতো ভাই কুন্তিভোজের ঘরে যিনি পৃথাকে দত্তক নিয়েছিলেন। কুন্তিভোজের ঘরে পালিত বলেই পৃথার আরেক নাম ছিল কুন্তি।

যখন কুন্তির বিয়ের বয়স হলো, তার জন্য একটা স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করলেন কুন্তিভোজ। সেই সভাতে উপস্থিত হাজারো অতিথিদের মধ্যে কুন্তি পাণ্ডুর গলায় বরমাল্য পড়িয়ে দিলেন।

একই সময়ে, গান্ধার রাজ্যের রাজকন্যা গান্ধারীর সাথে বিয়ে হয়ে গেল ধৃতরাষ্ট্রের। বিয়ের সময় গান্ধারী জানতেন না যে, ধৃতরাষ্ট্র আসলে জন্মান্ধ। যখন জানতে পারলেন, তিনি তার স্বামীর এই দুর্দশায় সমব্যথী হয়ে নিজেও আজীবন চোখে পট্টি বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন।

অজানা কোন কারণে, পাণ্ডু পরবর্তীকালে মদ্র দেশের রাজা শল্যর বোন, মাদ্রীকে বিয়ে করেন। খুব সম্ভবত বিয়ের পর দীর্ঘকাল কেটে গেলেও কোন সন্তান না হওয়াতে সকলেই কুন্তিকে বন্ধ্যা মনে করতে শুরু করেছিল। কিন্তু, কুন্তি যে বন্ধ্যা ছিলেন না সেটা তো নিশ্চিত ছিল। কারণ বিয়ের আগেই গোপনে গর্ভপাত করেছিলেন কুন্তি। লুকিয়ে রাখলেও সেই বিবাহপূর্ব সম্পর্কের গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, আর তাতে কুন্তির চরিত্রে পড়ে যাওয়া দাগ হয়তো পাণ্ডুকে আরেকজন স্ত্রী গ্রহণ করার সুযোগ এনে দিয়েছিল।

ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডুর চাইতে বয়সে বড় ছিলেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত তিনি ছিলেন জন্মান্ধ। তাই শাস্ত্রমতে রাজসিংহাসনে বসার অনুপযুক্ত। যেভাবে দেবাপিকে বঞ্চিত করে শান্তনুকে রাজমুকুট পড়ানো হয়েছিল, সেভাবেই পাণ্ডু বয়সে ছোট হয়েও হস্তিনাপুরের রাজসিংহাসনে বসলেন। কিন্তু, ধৃতরাষ্ট্র দেবাপি ছিলেন না। তিনি, মনের ক্ষোভ মনেই চাপা দিয়ে অপেক্ষায় থাকলেন। শাস্ত্রের বাণী অমোঘ কাজেই তার প্রতিবাদের কোন সুযোগ ছিল না। শাস্ত্রের মতেই বিচিত্রবীর্যের সন্তান না হয়েও তিনি বিচিত্রবীর্যের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছিলেন, আবার শাস্ত্রের মতেই বড় ছেলে হয়েও সিংহাসন তার অধরা রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই শাস্ত্রই বলেছে, এভাবে বঞ্চিত রাজার পুত্ররা যদি আগে জন্ম নেয় তবে তারাই হবে পরবর্তীকালে যুবরাজ হওয়ার প্রধান দাবীদার। কাজেই ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারীকে বললেন, "প্রিয় পত্নী, এই সুযোগ হেলায় হারানো উচিত হবে না। যেভাবেই হোক তোমার গর্ভেই যেন কুরুবংশের পরবর্তী যুবরাজের জন্ম হয় সেটার চেষ্টা আমাদের করতে হবে। পাণ্ডুর আগেই আমার পুত্রসন্তানের জন্ম তোমাকে দিতেই হবে। তাহলে আমার ন্যায্য অধিকার ঐ সিংহাসন নাগালের বাইরে থেকেও আমারই হয়ে থাকবে।"

১৪ - কৌন্তেয়

দ্বিতীয় বিয়ের কিছুদিন পরের কথা। রাজা পাণ্ডু শিকার করতে বলে গেলেন। হতাশা তার হৃদয়কে গ্রাস করে ফেলেছিল। কুন্তিকে না হয় বন্ধ্যা বলে অপবাদ দেয়া হয়েছে, কিন্তু মাদ্রীও তাকে কোন সুসংবাদ দিতে পারেন নি তখন পর্যন্ত। তাহলে কি পিতা বিচিত্রবীর্যের মতন তিনিও শেষ পর্যন্ত তার দুই স্ত্রীকে সন্তানহীন অবস্থায় রেখে, কুরু বংশের উত্তরাধিকারীর জন্ম না দিয়েই মৃত্যুবরণ করবেন?

শিকারের এক পর্যায়ে পাণ্ডুর ছোড়া তীরে একটি হরিণ ধরাশায়ী হলো। কাছে গিয়ে পাণ্ডু বুঝতে পারলেন, মৃত হরিণটি ঐ সময় একটি হরিণীর সাথে সঙ্গম-রত ছিল। পুরো ব্যাপারটা আরও ঘোরালো রূপ নিলো যখন কিনা মৃত হরিণটি আকার বদলে একজন মানুষের রূপ নিলো। ওই হরিণটি আসলে ছিলেন ঋষি কিন্দম আর হরিণীটি ছিল তার স্ত্রী। মন্ত্রবলে ঋষি কিন্দম তাদের রূপ পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন যাতে এই বিস্তীর্ণ, উন্মুক্ত জঙ্গলে তারা দুইজন নির্বিঘ্নে মিলিত হতে পারেন।

মারা যাওয়ার আগে কিন্দম পাণ্ডুকে অভিশাপ দিলেন, "রাজা, আমি আমার পত্নীর সাথে মিলিত হওয়ার সময় তুমি তীর নিক্ষেপ করে আমাকে হত্যা করলে। আমিও তাই অভিশাপ দিচ্ছি, তুমি আজ থেকে কখনো কোন নারীর সাথে মিলিত হতে পারবে না। তুমি যদি কোন নারীর সাথে রমণে উদ্যত হও তবে তখনই তোমার মৃত্যু হবে।"

দুঃখে-কষ্টে উন্মাদ-প্রায় রাজা পাণ্ডুর মনে হল যেই ব্যক্তির পক্ষে কখনো নারী সংস্পর্শে আসা সম্ভব না, সন্তান জন্ম দেয়া সম্ভব না, বংশ রক্ষা করা সম্ভব না; সেই ব্যক্তির রাজসিংহাসনে বসার কোন অধিকার নেই। কাজেই তিনি হস্তিনাপুর ফিরে যেতে অস্বীকার করে সন্ন্যাস-ব্রত গ্রহণ করলেন। শতশৃঙ্গ নামের এক অরণ্যে বসে তিনি দেবতাদের তপস্যা আর ধ্যানে মগ্ন হলেন।

পাণ্ডুর এই সন্ন্যাস নেয়ার কথা হস্তিনাপুর এসে পৌঁছালে কুন্তি আর মাদ্রী সেই জঙ্গলে ছুটে গেলেন। গিয়ে দেখতে পেলেন রাজপোশাক ছুঁড়ে ফেলে গাছের বাকল দিয়ে তৈরি পোশাক পড়ে রাজা পাণ্ডু আরও অনেক ঋষিদের সাথে সেই জঙ্গলে ঈশ্বরচিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

নিজের স্ত্রীদেরকে দেখে পাণ্ডু দুঃখ-ভরা কণ্ঠে বললেন, "প্রিয়তমারা, তোমরা হস্তিনাপুর ফিরে যাও। আমি এখানেই, এই বনে তপ-ধ্যান করে বাকি জীবন কাটিয়ে দেব বলে ঠিক করেছি। আমার পক্ষে আর তোমাদের স্বামী-হিসেবে কোন কর্তব্য পালন করা সম্ভব হবে না।" কিন্তু, কুন্তী আর মাদ্রী নিজেদের কর্তব্যর ব্যাপারে সম্যক অবগত ছিলেন। স্বামী যেখানে, যেই অবস্থায় দিন কাটাবেন; শাস্ত্রমতে স্ত্রীর দায়িত্ব সেইখানে, সেই অবস্থায় স্বামীকে সঙ্গ প্রদান করা আর তাই তারা দুজনেও সেই জঙ্গলে রাজা পাণ্ডুর সাথে দিন কাটাতে লাগলেন।

পাণ্ডুর অবর্তমানে ভীষ্ম বাধ্য হয়েই হস্তিনাপুরের রাজসিংহাসনে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে বসালেন। এক অন্ধ শাসক আর তার স্বেচ্ছায় চোখ-বাঁধা-পত্নী হলেন ভারতের রাজা আর রানী, ভাগ্যে সেটাই বুঝি লেখা ছিল।

কয়েক মাস পরেই আরও একটা দুঃসংবাদ পেলেন পাণ্ডু। ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী, রানী গান্ধারী সন্তানসম্ভবা। এই খবর পাণ্ডুর মনে দাগ কেটে গেলো। ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসে তিনি নিজে রাজসিংহাসন থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন তো বটেই, সেই সাথে ঋষি কিন্দমের অভিশাপের কারণে আর পরিস্থিতি দেখে যা মনে হচ্ছে, তার সন্তানদের হস্তিনাপুরের রাজাসনে বসার স্বপ্নের এখানেই সমাপ্তি।

কুন্তি পাণ্ডুর মনের অবস্থা বুঝতে পারছিলেন। তিনি তার স্বামীকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বললেন, "স্বামী, একটা সময় ছিল যখন কোনও নারী তার ইচ্ছে মতন অন্য যে কোনও পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে পারতো। ঋষি শ্বেতকেতু যখন দেখলেন যে তার মা অন্য ঋষিদের সাথে তার পিতা ঋষি উদ্দলকের জ্ঞাতসারেই মিলিত হচ্ছেন তিনি পুরো বিষয়টা নিয়ে ভাবতে থাকলেন। এ এমন এক অনাচার যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া খুবই জরুরী ছিল। তা না হলে, সন্তানরা কখনোই জানতে পারবে না তাদের পিতা আসলে কে। কাজেই তিনি, বিয়ে নামক প্রথার প্রচলন করলেন, যার ফলে তখন থেকেই নারীরা একমাত্র সেই পুরুষ যার সাথে সে শাস্ত্রমতে বিয়ে করেছে, তার সাথেই কেবল সঙ্গম করতে পারবে। কোন নারীর ঔরসে আসা সন্তান তার স্বামীরই হবে, এমনকি যদি তার স্বামী সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয় সেক্ষেত্রে তার স্বামীর নির্বাচিত অন্য কোন পুরুষের দ্বারাও সে গর্ভধারণ করতে পারে কিন্তু সন্তানের প্রকৃত পিতা বলে স্বীকৃতি পাবে শুধুমাত্র তার স্বামী। এই চন্দ্রবংশের শুরুর কথাই ভেবে দেখুন। বুধ কিন্তু আসলে বৃহস্পতির সন্তান বলেই স্বীকৃত যদিও সকলেই জানে যে দেবী তারার গর্ভে জন্ম নেয়া এই ছেলের বাবা আসলে চন্দ্র দেব। এতদূরের উদাহরণেরই বা কি প্রয়োজন। আপনার পিতা নিজেও তো সন্তান জন্ম দেয়ার আগেই মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু, আপনি তবুও রাজা বিচিত্রবীর্যের সন্তান বলেই সম্মান লাভ করেন। কাজেই রাজা, আপনি সন্তানের জন্ম দিতে না পারলেও, হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। শাস্ত্র আমাদের পথ দেখাবে।"

পাণ্ডু কুন্তির কথার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি তাই শাস্ত্রের এই নিয়মের সুবিধা নিতে চাইলেন। বনে যেই আশ্রমে পাণ্ডু আছেন, সেখানে থাকা কোন ঋষিকে অনুরোধ করলে নিশ্চয়ই তারা কুন্তির গর্ভে পাণ্ডুর সন্তানের জন্ম দেবেন। কুন্তি অবশ্য পাণ্ডুর ইচ্ছা জানতে পেরে রহস্যময় স্বরে বললেন, "রাজা, যখন কিনা আমি চাইলে দেবতারা এসে আমাকে সন্তান দিতে বাধ্য তখন ঋষিদের কাছে সন্তান প্রার্থনা করার কি দরকার?" পাণ্ডু এবার অবশ্য কুন্তির কথার মানে বুঝতে না পেরে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন। কুন্তি কাজেই পাণ্ডুকে বুঝিয়ে বললেন, "আমি যখন কিশোরী ছিলাম, ঋষি দুর্বাসা আমার পিতার বাসায় অতিথি হিসেবে কিছুদিন ছিলেন। তখন, আমিই তার সেবাযত্ন করেছিলাম। আমার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে ঋষি দুর্বাসা আমাকে একটি মন্ত্র শিখিয়ে দেন। সেই মন্ত্র পড়ে আমি কোনও দেবতাকে ডাকলে তিনি তখনই পৃথিবীতে এসে আমার গর্ভে একজন সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য থাকবেন। হয়তো, দুর্বাসা মুনি তার দিব্যদৃষ্টিতে বুঝতে পেরেছিলেন যে ভবিষ্যতে আমি এই মন্ত্রের জোরেই আমার স্বামীকে সন্তান উপহার দেব। কাজেই স্বামী, যদি আপনি চান ও আমাকে অনুমতি দেন, তবে আমি এই মন্ত্রের সাহায্য নিয়ে আপনার পছন্দসই যেকোনো দেবতাকে আহ্বান করে সন্তানের জন্ম দিতে পারি।"

কুন্তি অবশ্য একটা কথা পাণ্ডুর থেকে লুকিয়ে রাখলেন। মন্ত্র শিখিয়ে দিয়ে দুর্বাসা মুনি চলে যাওয়ার পর কুন্তি কৌতুহলবশত সূর্যদেবকে আহ্বান করেন। তার ফলে কুন্তির গর্ভে সূর্যদেবের মাধ্যমে এক পুত্রের জন্ম হয়। কিন্তু, কুমারী অবস্থায় সন্তান-ধারণের কথা কেউ জানতে পারলে তার সকল মর্যাদা ধুলায় লুটাবে আর তাই কুন্তি জন্ম নেয়া মাত্রই তার সন্তানকে একটা ঝুড়িতে করে নদীতে ভাসিয়ে দেন। এই ভীষণ কষ্টের ক্ষত তার হৃদয়ে অবিরাম রক্তক্ষরণ ঘটাতো।

কুন্তির দেয়া প্রস্তাবে পাণ্ডু ভীষণ খুশী হলেন। তিনি তাই কুন্তিকে বললেন, "এখনই ধর্মের দেবতা যমকে ডেকে আনো তোমার মন্ত্র দিয়ে আর এমন এক সন্তানের জন্ম দাও যে অনাগত কালের সব রাজাদের কাছে আদর্শ উদাহরণ হয়ে থাকবে।" কুন্তি তার মন্ত্র পড়ে যমের সাহায্যে নিজের ঔরসে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন, তার নাম রাখা হলো যুধিষ্ঠির। ধার্মিক, সৎ, ন্যায়পরায়ণ এক সন্তান।

এরপর পাণ্ডু কুন্তিকে বললেন বায়ুদেবকে মন্ত্র পড়ে ডেকে আনতে। মহাবলী হনুমানের পিতা পবন-দেব এসে কুন্তীর গর্ভে জন্ম দিলেন এক পুত্রের, ভীম। হনুমানের মতন এই ছেলেও একসময় বাহুবলের কারণে সুবিখ্যাত হবে।

কুন্তি এরপর পাণ্ডুর মতের অপেক্ষা না করে, নিজে থেকেই দেবতাদের রাজা ইন্দ্রকে আহ্বান করলেন। ইন্দ্রের মাধ্যমে কুন্তীর গর্ভে জন্ম নেয়া ছেলের নাম রাখা হল অর্জুন। অসাধারণ কুশলী তীরন্দাজ হিসেবে যার নাম ত্রিভুবনের সকলেই জানবে ভবিষ্যতে। সব্যসাচীদের মতন ডান আর বাম দুই হাতেই সমান তালে তীর ছুড়তে দক্ষ হবেন অর্জুন। আর কুন্তীর আদরের পুত্র হিসেবে তার আরেক নাম হবে পার্থ, পৃথার পুত্র।

"এবার আরেকজন দেবতাকে ডেকে আনো। আর কাকে ডাক দেয়া যায় বলো তো?" অর্জুনের জন্মের পর পাণ্ডু কুন্তিকে প্রশ্ন করলেন।

কুন্তি অবশ্য রাজী হলেন না। "স্বামী, ধর্ম-শাস্ত্রে আছে চারের অধিক পুরুষের সাথে শয্যা-গ্রহণ করলে সেই নারীকে বেশ্যা বলা হয়। আমিও কিন্তু চারজন পুরুষ ও দেবতাদের সঙ্গ লাভ করেছি। কাজেই এখন আর কোন দেবতাকে মন্ত্রের জোড়ে ডেকে আনাটা উচিত হবে না।" পাণ্ডু মনে করলেন কুন্তি চারজন বলতে পাণ্ডু-সহ তিন দেবতার কথা বলছেন, কিন্তু কুন্তি আসলে চারজন দেবতার কথা ভেবে কথাটা বলেছিলেন। এই তিন পুত্রের পাশাপাশি তার আরও একজন পুত্রসন্তানও তো ছিল যাকে তিনি বিয়ের আগেই গর্ভে ধারণ করেছিলেন। লোকলজ্জা আর সম্মানহানির ভয়ে যাকে জন্ম দিয়েই পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার এই গভীর গোপন দুঃখের কথা আর কেউ জানে না, জানবেও না। (চলবে)

মহাভারত - পূর্বকথাঃ সর্পযজ্ঞ

মহাভারত - প্রথম অংশ: পূর্বপুরুষগণ (১)

মহাভারত - প্রথম অংশ: পূর্বপুরুষগণ (২)

মহাভারত - দ্বিতীয় অংশ: জনক-জননীরা (১)

মহাভারত - দ্বিতীয় অংশ: জনক-জননীরা (২)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: বইমেলায় এলে দেখা কি হবে? দুই ভাই মিলে চা খেতাম।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০১

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ইনশাআল্লাহ। আশা করি আপনাকে কালকের মধ্যে জানাতে পারবো এরপর কবে বইমেলা যাবো। সময় করে চলে আসবেন।

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২২

ঘুটুরি বলেছেন: চলছে সগৌরবে, পড়ছি মহা তৃপ্তি নিয়ে

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৪

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হা হা হা। ধন্যবাদ। সাথেই থাকবেন আশা করি।

৩| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:২০

নীল আকাশ বলেছেন: এইগুলি আসলে কী ভাবে ধর্ম গ্রন্থ হয় আমার মাথায় ঢুকে না?
তবে আমার ক্ষীণ ধারণা এইসব ধর্মের দোহাই দিয়ে আর্যরা মেয়েদের নিয়ে ইচ্ছে মতো ফুর্তি করতো। বিশেষ করে ইন্দ্রের যে চরিত্রের কথা পড়েছি! যাই হোক, লেখা চলুক। ধন্যবাদ।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ইন্দ্র কিন্তু একজন না। যুগে যুগে, কালে কালে অনেকেই ইন্দ্র হইসে। আর এইটা ধর্মগ্রন্থ হইলেও সময়ের সাথে সাথে এইসব নিয়ম সবই পাল্টাইসে। আপনে যেই মত দিছেন, এরকম মত অনেকেই দিছে। মহাভারত নিয়া প্রচুর আলোচনা-গবেষণা হয়।

৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
পড়ে যাচ্ছি।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৩০

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। পড়তে থাকবেন আশা করি।

৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৪৯

নীল আকাশ বলেছেন: যুগে যুগে, কালে কালে অনেকেই ইন্দ্র হইসে। আর্যদের রাজা বা নেতার নাম বা পদবী ছিল ইন্দ্র।

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: একদম ঠিক। সেইটা নিয়াই পরে দেবতাদের রাজা বানাইয়া দেয়া হইসে। এইটা একটা পদবি ছাড়া কিছুই না। আসলে ত্রিদেব য়ার তাদের সাথে সম্পর্কিত কয়েকজন ছাড়া অন্য দেবতারা সবাই ছোটোমোটো।

৬| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:১৭

নীল আকাশ বলেছেন: আমি আর্যদের এই ভারতে আসা নিয়ে বিস্তারিত পড়েছি। খুব আগ্রহ ছিল। আপনি দেখবেন, আর্যরা যতই কাবুল থেকে ভিতরের দিকে ঢূকছে এদের দেবতা ততই বাড়ছে, দেশীয় দেবতা আসছে এবং পুরাতন দেবতাদের কদর কমে যাচ্ছে। যেমন শীব হলো লোকাল দেবতা। এটা আর্যদের নয়।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৯

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হ্যাঁ। ইদানীং তো এই মতটা নিয়া অনেক জল ঘোলা হইলো। আবার অনেকগুলা উপন্যাসও বাইর হইলো হিস্টোরিকাল থ্রিলার টাইপের। যেমন তিন বাহু দশ মুখ। আবার শিব ট্রিলজিও অন্য একটা লুক দেয় শিবের চরিত্রের উপর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.