নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্যান্টাসি নভেলাঃ অবিরল অন্ধকারের ভিতর ০১

০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩

শেষের শুরু

বঙ্গোপসাগরের মৃদুমন্দ ঢেউয়ে হালকা চালে দুলে চলছে ইয়টটি।

মার্চ মাস। মাত্র গরম পড়া শুরু হয়েছে। ইয়টের মালিকের আবার এই উপমহাদেশীয় গরমে বাস করার অভ্যাস নেই। সেটা অবশ্য কেউ জানলে ভ্রু কুঁচকে তাকাবে। ছয় বছর ধরে এই উপমহাদেশেই, কিংবা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে এই ইয়টেই বাস করছে লোকটি। এই মুহূর্তে ইয়টের সামনের প্রশস্ত ডেকে টাঙ্গানো শামিয়ানার নীচে রাখা বিশালাকৃতির চেয়ারে আরাম করে বসে আছে সে। মার্চের হালকা গরম হাওয়া তার ঘর্মাক্ত দেহে শীতল পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। রোদে পুড়ে লোকটার গায়ের চামড়া এখন বাদামী বর্ণ ধারণ করলেও এক পলক তাকালেই বুঝা যায় লোকটা যে সম্পূর্ণ শাদা গাত্রবর্ণের অধিকারী ছিলো একসময়। প্রায় ছফুট লম্বা লোকটার দেহে এখন একটা শর্টস ছাড়া আর কিছুই নেই। লোকটার উন্মুক্ত গায়ের চামড়া হাজারো কাঁটা-ছেড়া-আঘাতের চিহ্ন বহন করছে। সেগুলোর কোনও কোনোটা দেখলে সাধারণ মানুষের মনে শীতল একটা ভীতিকর অনুভূতির সৃষ্টি হবে। কয়শো, কিংবা কয় হাজার লড়াইয়ের চিহ্ন এগুলো? লোকটা আসলে কে?



লোকটার পাশেই ছোট টেবিলে রাখা আছে একটা আস্ত জগ-ভর্তি শরবত। গ্লাসের তোয়াক্কা না করে জগটাকেই হাতে তুলে মুখের কাছে এনে এক লম্বা টানে অর্ধেকটা শরবত শেষ করে থামলো সে।

"আহহ... দারুণ। আজকের দিনটাও ভালোই কাটবে বলে মনে হচ্ছে। কি বলো, অভি?" আলেকজেই পোপভ বা হাত দিয়ে ঠোঁটের উপর লেগে থাকা শরবত মুছে ফেলতে ফেলতে জিজ্ঞাসা করলো।

জগের পাশেই একটা বোলে উঁচু করে রাখা মৌসুমি ফলগুলোর উপর ছড়িয়ে থাকা বীট লবণ আর চটপটা মশলার সূক্ষ্ম ঘ্রাণ তার ক্ষুধা বাড়িয়ে দিচ্ছে। হাত বাড়িয়ে বোলটা হাতে নিতে নিতে পিছন ফিরে তাকালো আলেকজেই। যাকে উদ্দেশ্য করে এই প্রশ্ন সেই অভিষেক সাহা অবশ্য নির্বিকার ভাবে কোলের উপর থাকা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের ইয়টটা এখন শ্রীলংকার দিকে মুখ করে আছে। পেছনেই বঙ্গদেশ। দীঘা থেকে প্রায় ২৫০ কিলো দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে তাদের এই ইয়ট গত ছয় বছর ধরে একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ডানদিকে সাগরের বুকে মুক্তোর মতন জ্বলজ্বল করছে মোতিদ্বীপ। সেই দ্বীপেরই একটা ত্রিমাত্রিক চিত্র ফুটে আছে অভিষেকের হাতে থাকা ল্যাপটপে। বিশেষ ভাবে প্রস্তুত করা এই ল্যাপটপ দ্বীপের ভেতরে থাকা জাদুশক্তির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উত্থান-পতনও শনাক্ত করতে পারে। একদৃষ্টিতে দ্বীপের বর্তমান অবস্থা যাচাই করছিলো অভিষেক। এক পর্যায়ে সন্তুষ্ট হয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করতে করতে আলেকজেইকে উদ্দেশ্য করে জবাব দিলো সে, "দিনটা ভালো গেলেই ভালো। নাকি চাও, দিনটা খারাপ যাক।"

আলেকজেই তখন মুখ ভর্তি আনারস সামলাতে ব্যস্ত। মুখের খাবার শেষ করে সে মৃদুহাস্যে বললো, "নাহ, আসলে সেটা বুঝাই নি। যার যা দায়িত্ব তা পালন করতেই হবে কিন্তু, মাঝে মাঝে এমন বিরক্ত লাগে না।" অভিষেক অবশ্য আলেকজেই-এর বিরক্তির কারণ কিছুটা বুঝতে পারছে। গত সপ্তাহেই আলেকজেই-এর দুই ছেলে সহ, তার স্ত্রী লুদমিলা এসেছিল। বছরে বার ছয়েক লুদমিলা আসে আলেকজেইকে সঙ্গ দিতে। নিজের পরিবারের সাথে সময়টা তখন ভালোই কাটে আলেকজেই-এর। কিন্তু, মোতিদ্বীপের বিভীষিকা সম্পর্কেও সে সম্যক অবগত। কাজেই, নিজের পরিবারকে সর্বোচ্চ পাঁচদিনের বেশি সে ইয়টে থাকতে দিতে চায় না। মন তো চায়, দিনের পর দিন, মাস কিংবা সারা বছরই তার পরিবারকে সাথে রাখতে। কিন্তু আলেকজেই জানে, তার যেই ক্ষমতার কারণে আজকে এখানে সে অবস্থান করছে, সেই ক্ষমতার কারণেই নিজের পরিবার থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততই ভালো। একটা ভুল সিদ্ধান্ত তার পরিবারকে প্রচণ্ড দুর্যোগের সম্মুখীন করার পাশাপাশি সমস্ত বঙ্গদেশকেই অকল্পনীয় ধ্বংসলীলার সামনে ফেলে দিতে পারে।

অভিষেক একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে নিজে বিয়ে করেনি। বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখতে বছরে চারবার নদীয়া যায় সে। তাও, তিনদিন করে সাকুল্যে বারো দিন। নিজের পরিবারকে আরেকটু সময় দেয়ার ইচ্ছাটা তারও কম না। কিন্তু, আলেকজেই-এর মতন সে নিজেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। সাধারণ মানুষদের ভীরে পৃথিবীজুড়ে তাদের মতন অসাধারণ মানুষের সংখ্যা খুবই কম। আর তাই, পৃথিবীকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়ে তারা হেলাফেলা করতে পারে না। একটু চোরা দৃষ্টিতেই উদাস আদিগন্ত সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকা আলেকজেই-কে দেখলো অভিষেক। সত্যি বলতে, সে নিজেও আলেকজেই-এর এই কাজে কম বিস্মিত না। ছয় বছর ধরে তার মতন একজন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রক্ষক এই সমুদ্রের মাঝে ভাসমান ইয়টে একাকী থাকছে শুধু ওই মোতিদ্বীপকে পৃথক করে রাখার জন্য। এই কারণেই আলেকজেইকে, সবসময় "সেইন্ট আলেক" নামে ডাকা হয়। যখন পৃথিবীর যেকোনো দেশ যেকোনো মূল্যে একজন বিশেষ শ্রেণীর প্রক্ষককে নিজেদের দলে ভেড়াতে আগ্রহী সেখানে বঙ্গদেশের মতন একটা সদ্য উন্নত দেশের আহ্বানে অধিক পারিশ্রমিকের কিংবা আরাম-আয়েশের জীবন ছেঁড়ে এভাবে চলে আসতে পারে যে প্রক্ষক, তাকে সেইন্ট না বললে চলে না। আলেকজেইকে একটু খুশী করার জন্য বলে উঠলো অভিষেক, "চলো দেখি। একটু সাঁতার কেটে আসা যাক। একেবারে সমুদ্রের তল থেকে কিছু মাছও ধরে আনা যাবে। ওঠো।"

আলেকজেই অভির দিকে ফিরে তাকালো, বুঝতে পেরেছে হঠাৎ করে অভিষেকের সাঁতার কাটতে যাওয়ার কারণ কি। তবে সেটা নিয়ে আর কথা বাড়ালো না আলেকজেই। "আমি তো রেডিই। চলো। দেখি, এইবার সমুদ্রের নীচের বালু ছুঁতে তোমার কয় মিনিট সময় লাগে।" হাটতে হাটতে ইয়টের একেবারে কিনারার রেলিঙয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আলেকজেই। হালকা ডানে-বামে বেঁকিয়ে শরীরের পেশীগুলোকে একবার পরখ করে নিলো সে। অভিষেক ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। হাতে একটা ঘড়ির মতন ছোট্ট যন্ত্র পড়ে নিলো সে। যন্ত্রটা ল্যাপটপের সাথে সিনক্রোনাইজ করা আছে। মোতিদ্বীপের পরিস্থিতির প্রতিমুহূর্তের খবর ল্যাপটপ থেকে এই ছোট্ট যন্ত্রে এসে পৌঁছাবে। নিজের শার্টটা খুলে ফেলতে ফেলতেই অভিষেক দেখলো আলেকজেই লাফ দেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। সাঁতারু হিসেবে আলেকজেই-এর তুলনা নেই। সেই সাথে বিশেষ শ্রেণীর প্রক্ষক হিসেবে তার অমানুষিক ক্ষমতাবলে অভিষেককে প্রতিবার হারিয়ে দেয় আলেকজেই। তবে অভিষেক জানে, একটু একটু করে তার ক্ষমতাও বাড়ছে। আজ থেকে ছয় বছর আগে সে ছিলো দ্বিতীয় শ্রেণীর সর্বোচ্চ ধাপের প্রক্ষক। এখন সে প্রথম শ্রেণীর, মধ্যম ধাপে আছে। তাও, আলেকজেইয়ের সামনে সে কিছুই না। আর এ ধরনের তুলনা নিয়ে মাথা ঘামায় না সে। হাফপ্যান্ট পরা ছিলো অভিষেক, সেটা বদলের ঝামেলায় আর গেলো না। এই গরম দিনে, সমুদ্রের শীতল পানির স্পর্শ দারুণ লাগবে নিঃসন্দেহে।

আলেকজেইয়ের ঋজু দেহটা লাফ দেয়ার জন্য টানটান হচ্ছিলো এমন অবস্থায় ঝট করে মোতিদ্বীপের দিকে ফিরে তাকালো সে। কি ছিলো এটা? তার পরিবর্তন লক্ষ্য করে অভিষেকও থমকে দাঁড়িয়েছে। আলেকজেই কোনদিকে তাকিয়েছে সেটা বুঝতে কষ্ট হলো না অভিষেকের কিন্তু কেন? হাতের শক্তি-নির্দেশক যন্ত্রের ছোট্ট পর্দায় তাকালো সে। পর্দা জুড়ে, ছোট ছোট হলুদ, লাল, কমলা, খয়েরি চিহ্ন নড়াচড়া করছে। তেমন কোনও পরিবর্তন তো চোখে পড়ছে না। কিন্তু, আলেকজেই অস্বস্তি বোধ করছিলো। এমন ভুল তার হওয়ার কথা না। তার ইন্দ্রিয়গুলোর অনুভব-ক্ষমতা আর দশজনের মত না। কাজেই এক মুহূর্তের জন্য হলেও একটা প্রচণ্ড শক্তিশালী কিছু একটার উপস্থিতি সে ঠিকই টের পেয়েছে। হঠাৎই অভিষেকের চোখ বড় বড় হয়ে উঠলো। অনেকগুলো লাল বিন্দু একত্রে ছিলো একটা জায়গায়, সেখানে মুহূর্তের মধ্যে একটা ছোট্ট বেগুনী বিন্দুর সৃষ্টি হলো। আলেকজেই এতক্ষণ মোতিদ্বীপের দিকে তাকিয়ে ছিলো, এবার সে বিড়বিড় করে বলে উঠলো, "অসম্ভব... এই পরিমাণ শক্তির বিচ্ছুরণ... ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করুক।" অভিষেকের দিকে ফিরে তাকালো সে। আজ থেকে ছয় বছর আগে, এখানে আসার পূর্বেই কেন্দ্রীয় প্রক্ষক সংস্থার কার্যালয়ে দিনের পর দিন তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কি করতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে, নিজেদের মধ্যেও আলোচনা করেছে এই ব্যাপারে। কাজেই এখন আর কোনও বাড়তি কথা বলার প্রয়োজন নেই। অভিষেক অবশ্য এমনভাবে নিজের পর্দায় তাকিয়ে আছে যেনো কেউ আঠা দিয়ে আটকে দিয়েছে তার দৃষ্টিকে। বেগুনী বিন্দুটা এখন ছোট্ট থেকে, অনেকটাই বড় হয়ে উঠেছে। কম্পিত হাতে নিজের স্ক্রিনটাকে জুম আউট করলো সে। ওই যে, দ্বিতীয় একটা বেগুনী বিন্দু। কিন্তু... মাথা তুলে আলেকজেই এর দিকে তাকালো সে। দুজনের চোখ একমুহূর্তের জন্য এক হলো, আলেকজেই আর অভিষেক ঠিকই বুঝে নিলো কে কি বলতে চাচ্ছে, কি বুঝাতে চাচ্ছে। দুটো বেগুনী বিন্দুর মধ্যে ছোটটা আলেকজেই-এর শক্তিমাত্রা বোঝাচ্ছে। কিন্তু, তার প্রায় দ্বিগুণ আকৃতির বিন্দুটা... সেটা কি হতে পারে? কিভাবে হঠাৎ করে এত বড়ো শক্তিমাত্রার কোনও কিছু উদয় হতে পারে মোতিদ্বীপে? এমনটা তো হওয়ার কথা না। হাতের যন্ত্র আর ল্যাপটপ যে এর মধ্যে বিপদ-সংকেত পাঠিয়ে দিয়েছে প্রধান কার্যালয়ে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আলেকজেই অভিষেকের উদ্দেশ্যে শেষবারের মতন বললো, "তাহলে বন্ধু, দেখা হবে হয়তো আবার কখনো। এখন জলদি দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেও। আমি এদিকে কি করা যায় দেখছি।" অভিষেক কিছু বলার আগেই লম্বা এক লাফে সমুদ্রের মধ্যে গিয়ে পড়লো আলেকজেই। তার হাত আর পা ছন্দবদ্ধ গতিতে চলতে শুরু করলো। সাবমেরিন থেকে বের হওয়া টর্পেডোর মতন একটা সরলরেখায়, একরাশ পানিকে বিভক্ত করে আলেকজেই এক পলকে উপস্থিত হলো মোতিদ্বীপের তীরে।

দ্বীপটা পাথুরে। একপাশের একটা মাত্র বেলাভূমিতেই বালুর উপস্থিতি। সেখানেই এসে দাঁড়ালো আলেকজেই। তারপর নিজের অনুভবের ক্ষমতাকে ছড়িয়ে দিলো পুরো দ্বীপ জুড়ে। মুখের ভঙ্গিটা কঠোর হয়ে উঠলো তার। প্রায় হাজার খানেক কৃষুলের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু আছে একেবারে কম শক্তিমাত্রার, কিছু মাঝারি। কিন্তু বেশ কিছু কৃষুলের শক্তি একজন প্রথম মাত্রার প্রক্ষকের সমান। এরকম প্রায় দুইশো কৃষুলের উপস্থিতি টের পাচ্ছে আলেকজেই। তবে একটা, একটামাত্র কৃষুলের শক্তিমাত্রার সাথে যেনো আর কিছুর তুলনা চলে না। এই ভয়ংকর জিনিসটার সামনে তাকে প্রতিরোধের ঢাল হয়ে দাঁড়াতে হবে ভাবতেই মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল একটা অনুভূতি সরসর করে নেমে গেলো। কিন্তু, এটাই তার দায়িত্ব। এর জন্যই সে এই দ্বীপের কিনারায় একটা ইয়টে বসে এত দিন কাটিয়েছে। দ্বীপটাকে ঘিরে সৃষ্টি করা শক্তিবলয়ের সামনে এসে দাঁড়ালো সে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আটজন প্রক্ষকের একজন, কানাডার হার্ডিয়ান ব্রাউন এই শক্তিবলয় সৃষ্টি করেছিল। সাধারণ কোনও দানবের পক্ষে এই বলয় ভেদ করে বাইরে আসা সম্ভব না। কিন্তু, মোতিদ্বীপের এই কৃষুলগুলোর মধ্যে প্রত্যেক প্রজন্মেই বিবর্তিত হওয়ার বৈশিষ্ট্য থাকায় প্রক্ষক সংস্থা ভবিষ্যতে কোনও ভয়ংকর দানব সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে ভাবতে বাধ্য হয়েছিলো। তাই, শেষ ঢাল হিসেবে আলেকজেইকে নিয়োগ দিয়েছিলো তারা। দ্বীপের প্রায় কেন্দ্রে অবস্থিত পাতাল অভিমুখী গুহার ভেতর থেকে একটা চিকন বাঁশির মতন আওয়াজ ভেসে আসলো। সেই আওয়াজের সাথে দমকা হাওয়ার মতন ভেসে আসলো একরাশ জাদুশক্তির ধাক্কা। আলেকজেই শঙ্কিত চোখে দেখলো ছয় বছর ধরে টিকে থাকা শক্তিবলয় যেনো থরথর করে কাঁপছে সেই জাদুশক্তির প্রভাবে। তার অনুভব ক্ষমতার দ্বারা আলেকজেই বুঝতে পারলো, সেই ফাটল থেকে এক এক করে কৃষুলের দল বাইরে বেরিয়ে আসছে। এরপর হঠাৎ, ঝট করে একটা লালচে দেহের কৃষুল যেন ছুটে বের হলো সেই গুহার ভেতর থেকে। যেই আলেকজেই খালি চোখে বন্দুকের গুলির গতিকে দেখতে পারে তার চোখ এই কৃষুলের গতির কাছে ধোঁকা খেয়ে গেলো। সম্পূর্ণ নিজের সহজাত প্রতিক্রিয়ায় পরের কাজগুলো করলো সে।

নিজের ডানহাতকে সামনে নিয়ে এসে ট্রাফিক পুলিশ যেভাবে থামার নির্দেশ দেয় সেভাবে দাঁড়ালো আলেকজেই। হাতের সামনের বাতাস পাক খেয়ে খেয়ে সরে গেলো, আশেপাশের কুহককণাগুলো এসে জড়ো হলো আলেকজেইয়ের হাতের সামনে। এক স্তর, দুই স্তর করে তিন স্তরের হালকা হলুদাভ এক ঢাল তৈরি হলো সেখানে। কৃষুলটা ততক্ষণে দশ কিলো পাড়ি দিয়ে একেবারে শক্তিবলয়ের ওইপাশে, তীব্র শিসের মতন শব্দ করে নিজের হাত তুলে আঁচড় কাটার মতন করে বলয়ে আঘাত হানলো সে। গুড়ো কাঁচের মতন ভেঙে পড়লো ছয় বছর ধরে বঙ্গদেশকে রক্ষা করা বলয়টা। অবশ্য এই গুঁড়ো কাঁচগুলো কুহককণা হওয়াতে একরকম লাভই হলো আলেকজেইয়ের। তার ঢাল সেই কুহককণা শুষে নিয়ে আরও শক্তিশালী রূপ ধারণ করলো। তবে কৃষুলটার কাছে সেটা যেনো কোন বাধাই না। ঠিক সামনে এসে নিজের তীব্র গতি থামিয়ে চট করে দাঁড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে কৃষুলটা আলেকজেইয়ের ঢাল বরাবর সজোরে আঘাত হানলো।

যেই ঢাল টি ৯০ এ ট্যাঙ্কের গোলার আঘাতকে তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দেয় সেই ঢাল মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙ্গে দুই টুকরো হয়ে গেলো। কুহককণাগুলো ছড়িয়ে পড়লো চারপাশে। প্রচণ্ড ধাক্কায় আলেকজেই বুঝতে পারলো সে যেনো উড়ে চলছে পিছনদিকে, ধাক্কার তীব্রতার ধারণা পাওয়ায় ঢালটাকে শেষ মুহূর্তে হাতের পৃষ্ঠ থেকে আলাদা করে দিয়েছিলো সে। একারণেই এযাত্রা হাতটা ভাঙে নি। কিন্তু, শুধুমাত্র ধাক্কার অভিঘাতে সে প্রায় কিলো-দুয়েক ছিটকে গিয়েছে তীর থেকে। নিজের ভারসাম্য খুঁজে নিয়ে সমুদ্রের পানির ওপরেই দুই পায়ে দাঁড়িয়ে পরার চেষ্টা করলো আলেকজেই। পিছলে আরও প্রায় আধা কিলো গিয়ে তবে থামলো। বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে কৃষুলটা যে তার দিকেই তাকিয়ে আছে সেটা আলেকজেই দেখতে পারছিলো। তার ডান আর বাম হাত ঘিরে ধীরে ধীরে জমাট বাঁধছিলো কুহককণা। একটা নিরেট, দস্তানার মতন আকার নিচ্ছিলো। খালি হাতে লড়াইয়েই আলেকজেই অধিক দক্ষ, তবে এই মুহূর্তে একটা হাতিয়ার হাতে থাকলে বোধহয় খারাপ হতো না। একটা দীর্ঘ শ্বাস বুকে টেনে নিয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের উপর দিয়েই দৌড়াতে শুরু করলো আলেকজেই, আড়াই কিলো পথ পাড়ি দিলো এক নিমিষে। কৃষুলটা তৈরিই ছিলো। আলেকজেইয়ের মুহুর্মুহু আঘাতকে একের পর এক এড়িয়ে যেতে থাকলো কৃষুলটা। দুই হাতের পর, আলেকজেইয়ের পাগুলোও এখন কুহককণার আবরণে ঢাকা। হাত আর পা সমান তালে চলছিলো আলেকজেইয়ের। বেশ কিছুক্ষণ পর সে বুঝতে পারলো, এই এতটা সময় ধরে কৃষুলটা নিজের জায়গা ছেঁড়ে একচুলও নড়ে নি। হয় তার আঘাত এড়ীয়েছে, কিংবা আটকে দিয়েছে অনায়াসে। এই কথাটা ভাবতে গিয়ে হঠাৎ থামায় সেকেন্ডেরও অর্ধভাগের মধ্যে কৃষুলটা একটা ফাঁক খুঁজে পেলো, আর তার সজোরে ছোঁড়া ঘুষি ঠেকাতে তোলা আলেকজেইয়ের ডান হাতটা ভেঙ্গে গেলো পাটকাঠির মতন। উড়ে গিয়ে দূরে ছিটকে পরা আলেকজেই ব্যথা দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ালো। এই লড়াই সে জিতবে না হয়তো। তবে হার মানারও প্রশ্ন ওঠে না। কারণ, অন্ধকারের গর্ভ থেকে উঠে আসা এইসব দানবদের সামনে মানুষরা মাথা নত করে নি কখনও। করবেও না।

(চলবে)

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চলুক । আরেকটু ছোট দিলে পড়তে সুবিধা হতো।

১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ছোট করে দিতে গেলে অস্বস্তি লাগে। একটা পুরা চ্যাপ্টার ভেঙ্গে দিলে পাঠকদের সাথে অন্যায় করা হয় মনে হয়!

২| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০১

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো পোষ্ট। চলুক।
আকর্ষন করার মতো জিনিস আছে।
সামনে দেখি কি হয়।

১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আপনার থেকে প্রশংসা পাওয়া তো বিশাল ব্যাপার। ধইন্যবাদ।

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০৫

সাগর শরীফ বলেছেন: পরের অংশের আশায়...

১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৪

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আসবে শীঘ্রই...

৪| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৮

একজন অশিক্ষিত মানুষ বলেছেন: ভালো লাগলো ।

১১ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩৭

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ৯:০৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আসুন করোনা ভাইরাসের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে আমরা নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করি ও যত পারি শেয়ার করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.