নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফ্যান্টাসি নভেলাঃ অবিরল অন্ধকারের ভিতর ০২

১৪ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৫২

শুরুর শেষের শুরু

ঘোর-লাগা দৃষ্টিতে তন্ময় নিজের হাঁটুর দিকে তাকিয়ে আছে।

একরাশ রক্তের মধ্যে ডুবে আছে হাঁটুটা। হাঁটুর জায়গাটা এমন নিখুঁত ভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে, মনে হচ্ছে কোনো ধারালো করাত কলে কেটে আলাদা করা হয়েছে পা-টাকে। বিচ্ছিন্ন পা-টা পরে আছে সামনেই। রক্তে পিচ্ছিল হওয়া পা-টা একহাতে কোনক্রমে তুলে হাঁটুর সাথে লাগালো সাদিয়া। মুখ থেকে বের হতে থাকা ফোঁপানোর আওয়াজকে বহু কষ্টে চাপা দিয়ে নিজের সমস্ত মনোযোগ একত্রিত করলো সামনের কাজটাতে। অপর হাতটা এনে হাঁটুর জোড়াটার উপর রাখলো সে। হাতের নীচে জড়ো হতে থাকলো হালকা নীলচে বর্ণের কুহককণাগুলো, ঘিরে ধরলো তন্ময়ের পা-টাকে।



নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ভালোই জানে সাদিয়া। দিনশেষে সে একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর, নিম্ন ধাপের প্রক্ষক ছাড়া কিছুই না। আর প্রথম শ্রেণীর, প্রথম ধাপের প্রক্ষক ছাড়া আর কারো পক্ষে এরকম দ্বিখণ্ডিত হওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া লাগানোর নজির নেই। এই কথার প্রমাণ দিতেই যেনো, নীলচে রঙ্গের কুহককণাগুলো কেঁপে কেঁপে উঠে জমাটবদ্ধ অবস্থা থেকে গুড়ো হয়ে মিলিয়ে গেলো। চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়ছে সাদিয়ার। ফোঁপাতে শুরু করেছে আবার। এমন সময় নিজের কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ টের পেয়ে মাথা তুলে তাকালো। তন্ময়। মৃদু হেসে সাদিয়াকে আশ্বস্ত করলো সে, "আমি ঠিক আছি। ধন্যবাদ। তুমি সময়মত এসে রক্তপাত না থামালে মারাই যেতাম বোধহয়।' সাদিয়ার কণ্ঠ আর বাঁধ মানলো না। ডুকরে কেঁদে উঠলো সে। "আরে আরে, এখন কান্নাকাটি করার সময় নাকি। বেঁচে তো আছি। সেটাই অনেক বড় ব্যাপার। কান্না থামাও দেখি।" তন্ময় একটু বিব্রত হয়েই সাদিয়াকে অনুরোধ করলো। মাথা তুলে সাদিয়ার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লুৎফুর স্যার, সাকিব স্যার, রওনক ভাই আর নিজাম-এর দিকে তাকালো তন্ময়।

সাদিয়া আর সে সহ সব মিলিয়ে মাত্র ছয়জন। একটা বিষণ্ণ হাসি ফুটে উঠলো তন্ময়ের চেহারায়। এই মাত্রাগহ্বরে প্রবেশ করেছিলো তারা বিশজন। বাকি চৌদ্দ জনই প্রাণ হারিয়েছে এর মধ্যে। শেষ পর্যন্ত কয়জন এখান থেকে জীবিত ফিরতে পারবে বেঁচে কিংবা আদৌ কেউ জীবিত থাকবে কিনা কে জানে। সাদিয়ার কুহককণাগুলো তার হাঁটুর রক্তপাত বন্ধ করার পাশাপাশি পা বিচ্ছিন্ন হওয়ার তীব্র ব্যথাটাকেও চাপা দিয়েছে। তবে এখনও হাঁটুর জায়গাটা দপদপ করছে। সেই সাথে মাথাটাও যেনো ছিঁড়ে যাবে এমনভাবে ব্যথা করছে। নিজের পা কাটা যাওয়ার অনুভূতিটা যেনো মাথার মধ্যে স্থায়ী আসন গেঁড়ে বসেছে। দুয়েকবার জোড়ে জোড়ে মাথাটা ঝাঁকি দিলো তন্ময়। এখন এসব ব্যথা নিয়ে ভাবার সময় নেই। এখান থেকে বের হতে হবে। যেকোনো মূল্যে। এখানে মারা যাওয়ার জন্য তার জন্ম হয় নি। দাঁড়াতে গয়েই বুঝতে পারলো, এক পায়ে দাঁড়ানোর কাজটা সহজ না। এককথায় অসম্ভব। নিজের বাঁ কাঁধের নীচে কারো শক্ত হাতের উপস্থিতি টের পেলো সে। সাকিব স্যার একরকম টেনেই তাকে দাঁড় করালেন। "আমার উপর ভর দিয়ে দাঁড়াও," সাকিব স্যারের কণ্ঠে ভীষণ চাপা কষ্ট টের পেলো তন্ময়। এখানে আসার সিদ্ধান্তটা তো দিনশেষে সাকিব স্যারই নিয়েছিলেন। দাঁড়িয়ে একবার নিজের চারপাশে তাকালো তন্ময়। সবাই যেনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। পঞ্চম শ্রেণীর, নিম্ন মাত্রার একজন প্রক্ষকের দিকে। হাসিই পেলো তন্ময়ের। এখন পর্যন্ত এই ভয়ংকর মন্দিরের দুর্যোগ থেকে যতটা সম্ভব সেই রক্ষা করেছে দলটাকে। এখনও সবার দৃষ্টিতে সেই প্রত্যাশা। হয়তো, তন্ময় এবারো বাঁচিয়ে দিতে পারবে সবাইকে।

"কি করা যাইতে পারে এখন?" সবার মনের প্রশ্নটা শব্দে প্রকাশ করলো নিজাম।

"কি যে করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।" হতাশা প্রকাশ পেলো লুৎফুর স্যারের কথায়।

রওনক ভাই অবশ্য সবসময়ই বাস্তববাদী, কাজেই এককথায় নিজের মতটা জানিয়ে দিলো সে, "আমার মনে হয় না এই মন্দির থেকে আমরা কেউ জীবিত বের হতে পারবো।"

"রওনক...," ধমকে উঠলেন সাকিব স্যার। "এসব আলতু-ফালতু চিন্তা করা বন্ধ করে নিজের মাথাটা খাটাও।"

কষ্টের মধ্যেও হাসি পেলো তন্ময়ের। রওনকের মতন একই চিন্তা তার মাথাতেও খেলা করছে। কিন্তু সে হার মানতে প্রস্তুত না। এখন পর্যন্ত নিজের বুদ্ধির বলে সবাইকে বাঁচাতে পেরেছে সে। শুধু বুদ্ধি না অবশ্য। সেই সাথে...

তার এই চিন্তার সাথে সাথেই সেই রহস্যময় কণ্ঠটা মাথার মধ্যে বলে উঠলো, "সামনে তাকাও।"

সে তো সামনেই তাকিয়ে আছে।

"মন্দিরের কেন্দ্রে লুকিয়ে আছে তোমার প্রশ্নের উত্তর।"

অবাক চোখে মন্দিরের বিশাল চত্বরের মাঝখানে তাকালো তন্ময়। এতক্ষণ এখানে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য ছুটে বেরিয়েছে সে। নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারে বিশাল চত্বরের মাঝখানে ঐ বেদীটা একটু আগ পর্যন্ত ছিলো না। ওর বিস্মিত চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে সবাই তাকালো বেদীটার দিকে। সবাই যে কমবেশি অবাক হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে।

"আমাদের ওই বেদীতে উঠতে হবে। এখনই।" তন্ময় স্থির কণ্ঠে বললো।

এর আগেও তন্ময়ের কথাতে দুই দুইবার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তারা। কাজেই, সকলেই কোনো দ্বিতীয় কথা না বলে পা চালালো। নিজাম এগিয়ে সাদিয়াকে আস্তে করে টেনে দাড় করালো। সাদিয়ার গায়ে হয়তো কোনো আঁচরও পরে নি। কিন্তু, তার মনের ভেতর ভীষণ আতঙ্কের একটা প্রলেপ পড়ে গিয়েছে। সত্যি বলতে কি, ঠিকমতন দাঁড়াতেও পারছিলো না সাদিয়া। পা দুটো যেনো আর ওই ছোট্ট শরীরটার ভার নিতে পারছে না। নিজাম অনেকটা টেনেই নিয়ে চললো তাকে। ছয়-বাহু বিশিষ্ট বেদীটা মন্দিরের চত্বরের একেবারে কেন্দ্রে উঠে গেছে। ছোট ছোট চারটা ধাপ বেয়ে উপরে উঠে আসলো সবাই। সব শেষে উঠলো অবশ্য সাকিব স্যার আর তন্ময়। নিজেকে বোঝা বলে মনে হচ্ছে তন্ময়ের। পঙ্গু, অসহায় একটা বোঝা। "এখন? এরপর কি করতে হবে?" লুৎফুর স্যার প্রশ্ন করলেন তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে। নাহ, হতাশ হওয়ার সময়ও নেই এখন। নিজের চোখ বন্ধ করে সেই অদৃশ্য বন্ধুর নির্দেশ শুনতে চাইলো যেনো তন্ময়।

"তোমরা সবাই একজন, আরেকজনের হাত ধরে চক্রাকারে দাঁড়াও। মাথা নত করো, আর দয়া প্রার্থনা করতে থাকো অন্ধকারের উপদেবতা রুকাসের কাছে।" মাথার ভেতর কে যেনো বলে উঠলো কথাগুলো।

তন্ময় এই কথাগুলোই সবাইকে বললো। সেভাবে গোল বৃত্ত তৈরি করে দাঁড়িয়ে গেলো সকলে। একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছিল দেখে রওনক তার তলোয়ারটা এগিয়ে দিলো তন্ময়কে। তলোয়ারটার বাটের দিকটাকে বাম হাতের বাহুমূলে ঠেক দিয়ে নিজের ভারসাম্যটা ঠিক রাখার দুর্বল চেষ্টা করতে থাকলো তন্ময়। বাঁ দিকে সাকিব স্যার, তারপর লুৎফুর স্যার, সাদিয়া, নাজিম আর সবশেষে তার ডানে দাঁড়িয়েছে রওনক। সকলে এভাবে দাঁড়ানো মাত্র অদ্ভুত কোন মন্ত্রবলে তাদের সামনে, গোল জমায়েতের কেন্দ্রে লালচে আগুনের একটা ছোট্ট বলয় সৃষ্টি হলো। সেই বলয় থেকে বিন্দু বিন্দু করে ছিটকে বের হচ্ছিলো ছোট ছোট লাল আগুনের গোলা। একেকটার আকার হয়তো হাতের মুঠোয় আটকে যাওয়ার মত হবে। একেকবার সেই আগুনের বলয় থেকে লালচে আগুনের গোলাগুলো বের হওয়া মাত্র আগুনের রঙটা একটু একটু করে রঙ হারিয়ে একসময় ধূসর হয়ে, কালচে বর্ণ ধারণ করছিলো। আগুনের গোলকগুলো যখন বের হওয়া শেষ হলো, দেখা গেলো বৃত্তের কেন্দ্রে যেই জিনিসটা আছে তাকে আর ঠিক আগুন বলা যাচ্ছে না। কালচে একটা ধোঁয়া, একটা অন্ধকার অস্তিত্ব যেনো আগুনের মতন কেঁপে কেঁপে উঠছে কেন্দ্রে। কালচে সেই আগুন থেকে কোনো উত্তাপ ভেসে আসছিলো না। ঐদিকে লাল আগুনের গোলকগুলো তখন বেদীর উপর ছাদের কাছাকাছি মন্দিরের চত্বর জুড়ে ছড়িয়ে একটা বৃত্ত গঠন করেছে। আলো ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মন্দির জুড়েই। সেই লালচে আভায় দেখা যাচ্ছে মন্দিরের শেষ মাথায় একটা সিংহাসনে বসে থাকা দানবীয় আকারের মূর্তিটাকে। মাথার মধ্যে কেউ কিছু না বললেও, তন্ময় জানে ঐ মূর্তিটাই রুকাস। অন্ধকারের উপদেবতা। উপদেবতা, কি হাস্যকর! একজন উপদেবতার কি এতটা ক্ষমতা থাকতে পারে? লালচে আলোতে মন্দির জুড়ে পড়ে থাকা নিজের সঙ্গীদের মৃতদেহগুলোকে কেমন অবাস্তব, স্বপ্নদৃশ্যের অংশ বলে মনে হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় রক্ত জমে আছে। দুয়েকটা দেহ উদ্ধারের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে উপুর্যপুরি আঘাতে মাংসপিণ্ডতে রূপান্তরিত হয়ে। একজনের নারিকেলের মতন ভেঙে যাওয়া মাথার ভেতর থেকে ছিটকে বের হওয়া মগজ লেপটে আছে মন্দিরের একপাশের দেয়ালে।

কিছু একটা ঘটছে। কি সেটা? তন্ময় মুখটা হালকা উপরে তুললো। ঘর্ঘর একটা শব্দ শুরু হয়েছে। কেউ তাকালো না সেইদিকে। শুধু সাদিয়া হালকা ফুঁপিয়ে উঠলো আবারও। শব্দটা কিসের সবাই বুঝতে পেরেছে। মন্দিরের দরজাটা খুলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। অবশেষে মুক্তির পথ কি খুলে গেলো? তন্ময় এই কথা ভাবার সাথে সাথেই মাথার উপর জ্বলতে থাকা আগুনের গোলকগুলোর মধ্যে একটা গোলা ফস করে শব্দ তুলে নিভে গেলো।

(চলবে)

প্রথম পর্ব

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: দারুন ফ্যান্টাসি।

১৪ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩৭

অজ্ঞ বালক বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ নুর ভাই :D

২| ১৪ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৩

করুণাধারা বলেছেন: প্রক্ষক আর কুহক কণা ছাড়া দুই পর্বের মধ্যে এমন কিছু পেলাম না তাতে বুঝতে পারি এই দুই পর্বে উল্লিখিত ঘটনা আর মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কী! তবে আপনার গল্প বলার স্টাইল ভালো, একটানে শেষ পর্যন্ত পড়ে গেলাম। দেখি পরের পর্বে কিছু বুঝতে পারি কিনা! অপেক্ষায় রইলাম।

১৪ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২১

অজ্ঞ বালক বলেছেন: গত পর্বের কাহিনী তো আসলে শেষ অধ্যায়ের শুরু। এইটা হইলো প্রথম অধ্যায়ের শেষ। একটু ঘুরাইয়া প্যাচাইয়া লেখতাসি আর কি। পরের পর্বেই অনেক কিছু ক্লিয়ার হইয়া যাইবো। মনোযোগ দিয়া পড়সেন দেইখা ভাল্লাগলো।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিদিন লিখুন। লিখতে থাকুন।

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৪৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: একমাত্র আল্লাহই রক্ষাকর্তা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.