নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তদন্ত পন্থা - একটি হ্যারি বশ ছোট গল্প (১)

২৭ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০৪



তখন

"ম্যানসনের (১) জন্য এখনও এইসব ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে," একার্সলি বললো।

বশ অপর সিটে বসে থাকা নিজের প্রশিক্ষণ-কালীন সহকর্মীর দিকে তাকালো, নিশ্চিত না সে ঠিক কি বুঝাতে চাইছে।

"চার্লস ম্যানসন?"

"আরে হ্যাঁ। ওই যে হেল্টার স্কেলটার (২) আর কিসব হাবিজাবি," একার্সলি বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলো। "সবাই এখনও ভয়ে ভয়ে আছে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে।"

বশ মাথা নাড়লো, অবশ্য ব্যাপারটা এখনও ঠিক বুঝতে পারেনি সে। উইণ্ডশিল্ড দিয়ে বাইরে তাকালো বশ। এই মুহূর্তে তারা ভারমন্টের মধ্য দিয়ে দক্ষিণদিকে যাচ্ছে, আশেপাশের এলাকা তার কাছে সম্পূর্ণই অপরিচিত। একার্সলির সাথে প্যাট্রলে বের হওয়ার দ্বিতীয় দিন মাত্র, অবশ্য এই নতুন চাকরিতেই মাত্র দ্বিতীয় দিন হলো তার। কাজেই, উইলশায়ারের আশেপাশের সব জায়গাই তার কাছে অপরিচিত লাগাটা স্বাভাবিক। তবে সেটা নিয়ে চিন্তিত না সে। একার্সলি চার বছর ধরে পুলিশের প্যাট্রল বিভাগে কাজ করছে। আশেপাশের এলাকাগুলোর অন্ধিসন্ধি ভালো করেই চেনা আছে তার।

"কেউ একজন ফোন না ধরলেই হলো, উত্তরের ওরা ভেবে বসে যে স্কুইকি-সহ (৩) চার্লসের অন্যসব মেয়েরা ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকেছে আর ওদের স্বজনদের কেটে টুকরো টুকরো করে বা অন্য কোনো ভাবে মেরে ফেলেছে," একার্সলি বলতেই থাকলো। "ইদানীং এসব 'দেখে আসুন সবকিছু ঠিক আছে নাকি' ধরনের ফোন প্রচুর আসছে। চার বছর হতে চললো অথচ এখনও লোকজন ভাবে লস এঞ্জেলস-এর সব বাসিন্দাই বুঝি ওরকম খুনি-রক্তলোভী হয়ে গিয়েছে।"

ম্যানসন আর তার দলবল যখন অপকর্মগুলো করেছিলো তখন বশ এসব থেকে অনেক দূরে। কাজেই, খুনগুলো এই শহরটার উপর কি প্রভাব ফেলেছে তা সে ঠিকমতন বুঝতে পারছে না এখনও। ভিয়েতনাম থেকে ফিরে আসার পর অবশ্য লস এঞ্জেলসের বাতাসে একটা অদ্ভুত অস্থিরতার উপস্থিতি টের পেয়েছে সে, যখন সে গিয়েছিলো তখন এই ব্যাপারটা ছিলো না। কিন্তু, সেই অস্থিরতার উৎস কি তার নিজের মধ্যে ঘটা পরিবর্তনগুলো নাকি শহরের মধ্যে ঘটে যাওয়া সব পরিবর্তনের কারণে, সেটা বশ জানে না।

সান্তা মনিকা ছাড়িয়ে দক্ষিণে এসে চার নাম্বার রাস্তায় বামে মোড় নিলো গাড়িটা আর সেইসাথে বশ ডাকবাক্সে লেখা নাম্বারগুলো পড়তে শুরু করলো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই একটা ছোট বাংলোর সামনে একার্সলি দাঁড় করালো স্কোয়াডের গাড়িটাকে। বাংলোটার পিছনে একটা ছোট্ট গ্যারেজ আর পাশেই একটা ড্রাইভওয়ে। গাড়ি থেকে বের হলো দুজনই। দরজার প্লাস্টিক পাইপের মধ্যে আটকে রাখা তার নাইটস্টিকটা বের করে কোমরের ইকুইপমেন্ট বেল্টের আংটায় ঢুকিয়ে নিলো বশ।

"আরে, ওটার কোনো দরকার পরবে না," একার্সলি বললো। "অবশ্য যদি না তুমি ঐ লাঠিটা দিয়ে দরজায় ঠকঠকাতে চাও।"

বশ ঘুরে দাঁড়িয়ে লাঠিটা আবার গাড়ির দরজায় রাখতে গেলো।

"আরে আসো, চলে আসো তো," একার্সলি বললো। "আমি তোমাকে লাঠিটা রেখে আসতে বলি নি। শুধু বললাম যে, লাঠিটা এখানে কোনো কাজে আসবে না।"

সদর দরজা পর্যন্ত ফ্ল্যাগ-স্টোন বিছানো রাস্তাটায়, বশ তাড়াহুড়া করে একার্সলির পিছু নিলো। দুই হাত দিয়ে নিজের বেল্টটা ধরে হাঁটতে হচ্ছিলো তাকে। এখন পর্যন্ত সে এটার ভারী ওজন আর বিশাল আকারের সাথে অভ্যস্ত হতে পারেনি। ভিয়েতনামে তার কাজ ছিলো সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করা। সে কারণে প্রথমেই সব বাড়তি বোঝা ঝেড়ে ফেলতে হতো। কোনো ইকুইপমেন্ট বেল্টের বালাই ছিলো না। সব সরঞ্জাম- একটা ফ্ল্যাশলাইট আর একটা ফরটি ফাইভ- হাতেই বহন করতে হতো বশকে। (৪)

একার্সলি যুদ্ধের সময়টা গাড়িতে বসে প্যাট্রল করেই কাটিয়ে দিয়েছিলো। বশের চাইতে আট বছরের বড় আর একই সাথে পুলিশের চাকরিতে বশের আট বছরের সিনিয়রও বটে। বশের তুলনায় বেশ খানিকটা লম্বা ও ওজনদার একার্সলি তার ইকুইপমেন্ট বেল্টের আকার আর ভারটাকে দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততায় বিনা আয়াসে পড়ে থাকে। বশকে সদর দরজায় নক করার জন্য ইশারা করলো সে, এমন ভাব যেনো এটারও প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। বশ হাত মুঠো করে দরজায় তিনবার নক করলো।

"এভাবে নক করবে," একার্সলি নিজে করে দেখালো।

দরজার মধ্যে পর পর কয়েকবার জোড়ে ধাক্কা দিলো সে।

"পুলিশ, মিসেস উইলকিন্স। দয়া করে এসে একটু দরজাটা খুলতে পারবেন কি?"

একটা সুনিশ্চিত কর্তৃত্বের ভাব ছিলো তার হাতের বাড়ি আর গলার স্বরে। এমন একটা টান যার মধ্যে পুলিশের অধিকার-ভঙ্গি ফুটে ওঠে। সেটাই সে তার রুকি সহকর্মীকে শেখাতে চেষ্টা করছিলো।

বশ মাথা নাড়লো। জিনিসটা বুঝতে পেরেছে সে। চারপাশে নজর বুলালো, সেই সাথে লক্ষ্য করলো দারুণ সুন্দর আর ঠাণ্ডা সকাল হওয়া সত্ত্বেও সবগুলো জানালা তখন পর্যন্ত বন্ধ। দরজা খুলতেও কেউ আসলো না।

"কোনো গন্ধ পাচ্ছো নাকি?" সে একার্সলিকে জিজ্ঞাসা করলো।

"কিসের গন্ধ?"

এমন একটা বিষয় যদি থাকে যেখানে একার্সলির থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার প্রয়োজন নেই বশের তবে সেটা হলো মৃত্যুর গন্ধ খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে। মৃত্যু উপত্যকায় দুইবার ঘুরে এসেছে সে। সুড়ঙ্গের মধ্যে শত্রুরা খুন করে প্রতিপক্ষের মৃতদেহটাকে দেয়ালে দাফন করে দিতো। সেখানে বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ ভেসে বেড়াতো সারাক্ষণ।

"কেউ একজন মারা গিয়েছে," বশ বললো। "আমি পিছনদিকটা দেখে আসছি।"

সামনের বারান্দা থেকে নেমে আসলো সে আর বাংলোটার পেছনে যাওয়ার জন্য ড্রাইভওয়েটা ধরে হাঁটতে থাকলো। এদিকে গন্ধটা আরও বেশি প্রকট। অন্তত, বশের কাছে। রেডিওতে ডিসপ্যাচার বলেছিলো যে, জুন উইলকিন্স একাই থাকেন বাসায় আর গত সাতদিন ধরে ফিলাডেলফিয়ায় থাকা তার মেয়ের করা ফোনগুলো তিনি ধরেন নি।

একটা ছোট্ট বেড়া দেয়া উঠান, গ্যারেজের এক প্রান্ত থেকে বাসার এক প্রান্ত পর্যন্ত লম্বা কাপড় শুকোনোর তার টানা। তারে কয়েকটা কাপড় ঝুলছিলো, সিল্কের দুটো রুমাল আর কিছু মেয়েদের অন্তর্বাস। তারের চাইতে বেশী কাপড় ছিলো মাটিতে, হয় পড়ে গিয়েছে কিংবা বাতাস ফেলে দিয়েছে। রাতের বেলা বাতাসের বেগটা বেশ বেড়ে যায়। আর তাই, এখানে লোকজন রাতের বেলা কাপড় বাইরের তারে রেখে দেয় না।

বশ প্রথমে গ্যারাজের কাছে গেলো এবং পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে কাঠের দরজার বেশ উপরে থাকা দুই জানালার একটা দিয়ে ভেতরে তাকালো। তার চোখে অচিরেই ধরা পড়লো ভেতরের ভক্সওয়াগন বিটলের বাঁকানো ছাদের আকৃতিটা। গাড়িটা আর তারে ঝুলতে থাকা কাপড়গুলা তাকে সেই কথাটাই নিশ্চিত করে জানালো যা সে জেনেছিলো গন্ধটা নাকে আসার পরপরই। ভুলক্রমে পশ্চিমে থাকা নিজের মেয়েকে কিছু না জানিয়ে জুন উইলকিন্স কোথাও ঘুরতে চলে যান নি। তিনি এখনও এই বাড়ির ভেতরেই আছেন। তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

বশ বাড়িটার দিকে ফিরে গেলো আর তিন ধাপ সিঁড়ি টপকে পেছনের দরজাটার সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজার কিয়দংশ কাঁচের তৈরি হওয়াতে তা দিয়ে ভেতরের রান্নাঘর আর একটা হলওয়ের অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছিলো। হলওয়েটা ধরে হেঁটে গেলে বাসার সামনের দিকের ঘরগুলোতে যাওয়া যায়। এক নজরে কোনো অসংগতি চোখে পড়ছিলো না। টেবিলে পচে যাওয়া খাবার নেই। মেঝেতে জমাট বেঁধে থাকা রক্তও নেই। তারপর বশের চোখে পড়লো ময়লার ঝুড়ির পাশেই মেঝেতে রাখা কুকুরের খাবারের বাটির দিকে। বাটির মধ্যে পচে যাওয়া উচ্ছিষ্টের উপর মাছি উড়ে বেড়াচ্ছে।

বশের হৃদপিণ্ড জোড়ে জোড়ে স্পন্দিত হতে শুরু করলো। সে দরজার কাঁচে কয়েকবার বাড়ি দিলো তার লাঠিটা দিয়ে । কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও কারও কোনো জবাব পাওয়া গেলো না বাড়ির ভেতর থেকে। সে শুনতে পাচ্ছিলো, তার সহকর্মী আবারো সামনের দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে আর ঘোষণা করছে যে তারা পুলিশ হিসেবে সব ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে এসেছে।

সে পেছনের দরজার নব ধরে মোচর দিলো আর বুঝতে পারলো সেটা খোলা আছে। আস্তে করে দরজাটা খুলে ফেললো সে আর এতক্ষণ ভেতরেই বন্দী হয়ে থাকা গন্ধটা এমনভাবে তাকে ধাক্কা দিলো যে দরজার সামনে থেকেই সড়ে যেতে হলো বশকে।

"রন!" সে চিৎকার করে ডাক দিলো। "পেছনের দরজাটা খোলা আছে।"

এক মুহূর্ত পরেই তার সহকর্মীর ইকুইপমেন্ট বেল্টটার জোরালো শব্দ কানে আসলো তার। জোড় কদমে, তাড়াহুড়ো করে এদিকে হেঁটে আসছে একার্সলি। পেছনের দরজার সামনে থাকা সিঁড়িগুলোর কাছে এসে থামলো সে।

"তুমি কি- ওহ, শিট! কি বিচ্ছিরি পচা গন্ধ! এর মানে হলো, ঘটনা আসলেই খারাপ। ভেতরে নিশ্চিত একটা ডিবি আছে।" বশ মাথা নাড়লো। ডিবি মানে যে 'ডেড বডি' সেটা আন্দাজ করে নিলো সে।

"আমাদের ভেতরে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?" সে প্রশ্ন করলো।

"হ্যাঁ, আমাদের বাসাটা খুঁজে দেখা উচিত," একার্সলি একমত হলো। "তার আগে একটু দাঁড়াও।"

কাপড়ের তারের কাছে গিয়ে টান দিয়ে সিল্কের রুমাল দুটো খুলে নিয়ে আসলো একার্সলি। একটা বশের দিকে ছুঁড়ে দিলো সে।

"এটা কাজে লাগাও," সে বললো।

সিল্কের কাপড়টা দিয়ে নাক আর মুখ ভালো করে পেঁচিয়ে একার্সলি নিজেই প্রথমে ভেতরে ঢুকলো খোলা দরজা দিয়ে। বশও তার দেখাদেখি কাপড় পেঁচিয়ে পিছু নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।

"তাড়াতাড়ি কাজটা সেরে ফেলা যাক," একার্সলি কাপড়ের আড়াল থেকে চাপা গলায় বললো।

দ্রুতগতিতে বাড়ির মধ্যে খুঁজতে শুরু করলো তারা দুইজন আর শেষ পর্যন্ত ডিবিটা খুঁজে পাওয়া গেলো হলওয়ের পাশে থাকা বাথরুমটায়। চার পায়া বিশিষ্ট একটা বাথটাবের কানায় কানায় ভর্তি হয়ে আছে কালচে পানিতে। বাথটাবের দুই প্রান্তে পানির পৃষ্ঠতল ভেদ করে দুইটা গোলাকার আকৃতি ভেসে উঠেছে। সেই আকৃতি থেকে বের হওয়া চুলগুলো ছড়িয়ে আছে চারপাশে। মাছিগুলো সমুদ্রের মাঝে ভাসতে থাকা লাইফবোটের মতন এই দুই জায়গায় ভীর করে আছে।

"তোমার লাঠিটা কোথায়, দেখি," একার্সলি বললো।

এখানে লাঠির কাজটা কি হতে পারে, বুঝতে না পারলেও বশ তার বেল্ট থেকে বের করে নাইটস্টিকটা একার্সলির হাতে তুলে দিলো। লাঠির একপ্রান্ত টাবের কালো পানিতে নিমজ্জিত করে টাবের পায়ার দিকের গোল আকৃতিটাকে নাড়ানোর চেষ্টা করলো একার্সলি। মাছিগুলো উড়তে শুরু করায় বশ হাত নেড়ে সেগুলোকে নিজের মুখের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করতে থাকলো। পানিতে ভাসমান বস্তুটা লাঠির খোঁচায় উলটে গেলো পাক খেয়ে। একটা কুকুরের খিঁচিয়ে থাকা দাঁত আর নাকটাকে পানির উপর ভেসে উঠতে দেখলো বশ। নিজের অজান্তেই পিছিয়ে গেলো কয়েক পা।

একার্সলি অন্য আকৃতিটার দিকে মনোযোগ দিলো এবার। ভেসে থাকা গোল বস্তুটাকে লাঠি দিয়ে নাড়া দেয়া মাত্র বিরক্ত হয়ে মাছিগুলো উড়াল দিলো কিন্তু পানির নিচে ডুবে থাকা জিনিসটা এবার আর সহজে নড়লো না। কুকুরটার মতন ভারহীন হয়ে ভেসে নেই এই আকৃতিটা। বরং আইসবার্গের মতন পানির গভীরে বেশিরভাগ অংশ নিয়ে ডুবে আছে সেটা। লাঠিটাকে আরেকটু নীচে ডুবিয়ে জিনিসটাকে তুলে আনার চেষ্টা করলো একার্সলি। এবার পানির নীচ থেকে পচে গলে বিকৃত হয়ে যাওয়া একটা মানুষের মাথা উঠে আসলো। ছোটখাটো গড়ন আর লম্বা চুল দেখে মৃতদেহটা কোনো নারীর বলে প্রতীয়মান হলেও যেটুকু দৃশ্যমান তা থেকে বশের পক্ষে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব ছিলো না।

মৃত ব্যাক্তির থুতনিতে লাঠিটা আটকে ছিলো কিন্তু এক পর্যায়ে ভারসাম্য হারিয়ে মাথাটা পানির মধ্যে পড়ে নীচে ডুবে গেলো আবারো। টাব উপচে কালচে পানি ছিটকে পড়লো আর দুই পুলিশ অফিসারই এবার পিছু হটতে বাধ্য হলো।

"চলো, এখনই এখান থেকে বের হই," একার্সলি বললো। "তা না হলে এই গন্ধ জীবনেও নাকের ভেতর থেকে বের করা যাবে না।"

সে বশের হাতে নাইটস্টিকটা ফিরিয়ে দিয়ে পাশ কেটে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলো।

"একটু দাঁড়াও দেখি," বশ বললো।

কিন্তু একার্সলি অপেক্ষা করলো না। বশ মৃতদেহের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো এইবার। পানির নীচে নিজের নাইটস্টিকটা ডুবিয়ে নাড়তে থাকলো যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা আটকে যাওয়ার মতন কিছু খুঁজে পেলো। লাঠিটা এবার আস্তে করে তুলে আনলো বশ, সেই সাথে মৃত ব্যক্তির হাত দুটো উপরে উঠে আসলো। কব্জির কাছে কুকুরের গলার বন্ধনী দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা। সে ধীরে ধীরে আবার পানিতে ডুবে যেতে দিলো হাতদুটোকে।

বাড়িটা থেকে বের হওয়ার সময় বশ নিজের নাইটস্টিকটাকে এক হাত দূরত্বে ধরে রাখলো। পিছনের উঠোনে গ্যারাজের দরজার কাছে একার্সলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো সে। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বাইরের বিশুদ্ধ বাতাস গিলছে যেনো। বশ নিজের মুখে বেঁধে রাখা রুমালটা খুলে কাপড়ের তারের উপর ছুঁড়ে দিয়ে হেঁটে একার্সলির পাশে এসে দাঁড়ালো।

"অভিনন্দন, বুট," রুকিদের যে ডাকনামে ডিপার্টমেন্টে ডাকা হয় সেটা ব্যবহার করে বশকে বললো একার্সলি। "তোমার প্রথম ডিবি-র সাথে সাক্ষাৎ হয়েই গেলো তাহলে। এই চাকরিতে লেগে থাকো আর একসময় অনেক মৃতদেহের মধ্যে একটা বলে মনে হবে এটাকে।"

বশ কোনো জবাব দিলো না। নিজের নাইটস্টিকটা ঘাসের উপর ফেলে দিলো সে- একটা নতুন দেখে নিয়ে নিতে হবে মনে মনে ঠিক করলো- সিগারেট বের করতে করতে।

"কি মনে হয় তোমার?" একার্সলি প্রশ্ন করলো। "আত্মহত্যা? নিজের সাথে বেচারা কুকুরটাকেও ডুবিয়ে মেরে ফেলেছে?"

"কুকুরটার গলার বন্ধনী দিয়ে মহিলার হাত দুটো বেঁধে নেয়ে হয়েছিলো," বশ জবাব দিলো।

একার্সলির মুখটা বিস্ময়ে একটু খুলেই আবার বন্ধ হয়ে গেলো কিন্তু এরপরই সম্বিত ফিরে পেয়ে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো সে।

"মাছ ধরার মত করে ঐ কালো পানিতে নাড়াচাড়া করে দেখাটা তোমার ঠিক হয় নি," সতর্ক করে দিয়ে বললো সে। "আত্মহত্যা কিংবা খুন যাই হোক না কেনো, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। তদন্ত কর্মকর্তাদের সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে দাও।" বশ সম্মতি জানিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো।

"আমি তো এটা বুঝতে পারছি না," তার সহকর্মী বললো, "যে সামনের দরজা থেকে তুমি এই গন্ধ টের পেলে কিভাবে?"

বশ কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলো, "ব্যাপারটার সাথে আমি অভ্যস্ত আসলে।"

মাথা নেড়ে পশ্চিম দিকে এমনভাবে ইশারা করলো বশ যেনো পাশের রাস্তাতেই যুদ্ধটা হয়েছিলো।

"আমিও তো বলি, আর সব রুকিদের মতন তুমি কেনো বমি করে পেটের সব খাবার উগড়ে দিচ্ছো না," একার্সলি বললো।

"তা তো বটেই।"

"আমার কি মনে হয় জানো বশ? তোমার খুব সম্ভবত এসব ব্যাপারে একটা সহজাত দক্ষতা আছে।"

"মনে হয় আছে।"

(চলবে...)

একঘেয়েমি কাটানোর জন্য কিছু রেফারেন্সঃ

১/ চার্লস ম্যানসন
২/ হেল্টার স্কেল্টার
৩/ স্কুইকি
৪/ টানেল র‍্যাট ও ভিয়েতনাম যুদ্ধ

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:০২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আগ্রহটা বেড়েই গেল....

তারপর?

২| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: লেখায় আকর্ষন বেশ ভালো আছে।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৪৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Excellent

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.