নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্পঃ জীবন্মৃত

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:২৫

শফিকের হাত কাঁপছিল থরথর করে। ঘেমে পিচ্ছিল হয়ে আছে হাতের তালু, পিস্তলটা ঠিকমতন ধরে রাখাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে কপালটা এমনই খারাপ, একটা কানা গলিতে ঢুকে পড়েছে।



গলির শেষ মাথার দেয়ালের কাছে গিয়ে উলটো দিকে ফিরে দাঁড়ালো সে। দেয়ালটাও দু-তালা সমান উঁচু। বেয়ে উঠার উপায় নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বুঝি একেই বলে। মনে মনে নিজেকে কয়েকটা বাছা বাছা গালি দিল শফিক। পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে কিন্তু তাও এভাবে তাকে ধাওয়া করে কানাগলিতে এনে ফেলবে ঐ জিনিসটা ভাবা যায় না। তারই দোষ। আগেই লক্ষ্য করা উচিৎ ছিল। এখন কিছুই করার নাই। বিড়বিড় করে বলল সে, "আজ বুঝবি না, বুঝবি কাইল/ পা* থাবড়াবি, পারবি গাইল।" থাবড়ানোই উচিত তাকে।

পিস্তলে আর একটাই গুলি বাকী আছে। কাজেই ঠিকঠাক মতন মারতে হবে গুলিটা। একেবারে মাথার মাঝ বরাবর যাতে গিয়ে লাগে, ঘিলু-টিলু সাথে করে বের হয়ে যাবে পিছন দিয়ে। এছাড়া আর বাঁচার উপায় নেই। ভুল করলে আফসোস করার সময়টাও পাওয়া যাবে না। যা থাকে কপালে।

জিনিসটা আসছে, সে জানে। পাশ কাটিয়ে এড়ানো যাবে না। দুর্ঘটনা ঘটেছে আজ এগারো নাম্বার দিন চলে। পুরো ঢাকা শহরে এখন বেঁচে থাকা মানুষের সংখ্যা হয়তো হাতেগোনা। শুধু ঢাকা কেন। সারা বাংলাদেশই হয়তো এতদিনে সংক্রমিত হয়ে গেছে। আর গত পরশু থেকে দেখা যাচ্ছে জিনিসগুলো বিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। কোন কোনটা দৌড়াতে পারছে, কয়েকটার গায়ের চামড়া শক্ত হয়ে উঠছে লোহার মতন, কয়েকটাকে মাথা কেটেও মারা যাচ্ছে না। এই জিনিসটাও তেমনই একটা বিবর্তিত জম্বি। কাজেই পালাবার পথ নেই। আসলে পালানোর মতন শক্তিও আর অবশিষ্ট নেই শফিকের। দৌড়ানো দূরে থাক, হাঁটতেও পারবে না আর এক ইঞ্চি।

ভয়ে জ্ঞান হারানোর দশা হয়েছে শফিকের। তবে ভয় ভালো জিনিস। তার সাথে থাকা অনেকেই হিরোগিরি দেখাতে গিয়ে খাবার হয়ে গিয়েছে জম্বিদের। সে টিকে আছে। সেটাই আসল কথা। মাথার ঘামটা শার্টের হাতায় মুছে নিলো সে। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসতে চাইছে, পা দুটা যেন শরীরের ভার আর নিতে পারছে না। শ্রান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে সে। কিন্তু এখনও হেরে যাওয়ার সময় হয় নি। একটা বুলেট আর একটা জম্বি, এখনও সুযোগ আছে আরেকটা দিন বেঁচে থাকার...

জম্বিটা রাস্তার মোর ঘুরে গলিতে ঢুকল। শফিকের চাইতেও আধা হাত লম্বা। বিশাল শরীর। কালো ইউনিফর্ম, মাথায় কালো ব্যান্ডানা লাগানো, চোখে কালো চশমা। এককালের দক্ষ র‍্যাব সদস্য, এখন জীবন্মৃত হয়ে মানুষের মাংসের খোঁজে ঘুরছে ঢাকা শহরে। শফিককে খেতে চায় ঐ জিনিসটা।

কেমন যেন যান্ত্রিকভাবে নিজের চোয়াল খুলছে, বন্ধ করছে জিনিসটা। মুখ বেয়ে নামছে লালার মতন ফ্যাকাসে সাদাটে তরল। কিছু দাঁত আছে, কিছু নেই। বাম পাঁ-টার জায়গায় এখন শুধু হাড় দেখা যাচ্ছে। কামড়ে খেয়ে ফেলা মাংসগুলো রক্ত শুকিয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। ডান হাতটা কনুইয়ের কাছ থেকে উধাও। ইউনিফর্মের হাতাটা বাতাসে দুলছে সেখানে। সারা গায়ে মাছি বসে আছে, কিছু উড়ছেও আশেপাশে। একটা বোটকা গন্ধ ভেসে আসছে ঐ জিনিসটার শরীর থেকে। এই গন্ধ অবশ্য এখন গোটা শহরজুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে। জিনিসটা স্থির পায়ে আগাচ্ছে, তাড়া নেই যেন। যেন কোন দৈব উপায়ে জেনে গিয়েছে, কলে আটকে পড়া ইঁদুরের দশা এখন শফিকের।

লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে হাতদুটোকে স্থির করার চেষ্টা করলো শফিক। এক চোখ বন্ধ করে নিশানা করার চেষ্টা করলো সুনিপুনভাবে। তার আর মৃত্যুর মধ্যে এখন কয়েক ফুটের দূরত্ব। মনে মনে বারবার নিজেকে শান্ত হতে বলল সে। "আরেকটু কাছে আয় বাইঞ্চোদ, আরেকটু। আয়, তারপর বুঝবি মজা কারে কয়। খাওয়ামু তোরে মাংস আইজকা," বিরবির করে বলছে আনমনে। যতটা কাছ থেকে সম্ভব গুলিটা করতে চায় সে। ফসকালেই সব শেষ।

জিনিসটার মাথাটা যেন বাতাসে ডান থেকে বামে দুলছে। নিশানা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবে অসম্ভব নয় শফিকের জন্য। গত কয়েকদিনে কম তো আর প্র্যাকটিস হয় নি। তবে জিনিসটা দৌড় শুরু করলেই সমস্যা। এখন পর্যন্ত তার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না অবশ্য।

এসে গেছে। যথেষ্ট কাছে এসে গেছে। এবার আর ফসকানোর চিন্তা নেই। মুখ দিয়ে "ফুউউউ" শব্দে বাতাস ছেঁড়ে পিস্তলের ট্রিগারটা সজোরে চেপে ধরল শফিক।

একটা ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত মেরুদণ্ড বেয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লো শফিকের। আতঙ্কে শরীরটাও হাল ছেঁড়ে দিয়েছে সেটা বুঝতে পারলো প্যান্টটা ভিজে যাওয়ায়। পিস্তলটা জ্যাম হয়ে গেছে। ট্রিগারটা আটকে আছে জায়গায়।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:৩৬

ঘরহীন বলেছেন: এই গল্পটা আগে পড়েছি আমি! কোথায়, কবে জানি না। কিন্তু পড়েছি। হয়তো আপনিই পোস্ট করেছিলেন কোথাও। যাই হোক, ভালো হয়েছে গল্পটা।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ফেসবুকে হয়তো পড়ছেন। এইডা অনেক আগের গল্প। ফেসবুকে দিছিলাম, এছাড়া ই-বুকও বাইরোইছিল। ধইন্যবাদ।

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ ভোর ৫:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনার গল্পলেখা শেখার ক্লাস শেষ?

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আরেহ না। এইডি কি একদিনে শেষ হয়। ক্লাস নেয়, বাড়ির কাজ দেয়, বিশাল লম্বা প্রসেস। চলতেয়াছে। দিমু আবার পোস্ট, সবাইরে ত্যক্ত করতে। এইডা অনেক আগের গল্প, কখনো ব্লগে দেই নাই। তাই ভাবলাম শেয়ার দেই। ভালা হইছে নি?

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:১৯

নীল আকাশ বলেছেন: গল্প পড়ে মজা পেলুম।
হলিউডের জম্বি মুভির মতো মনে হলো।
উপরের মন্তব্যের উত্তর কি দেন দেখতে আসবো।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৪০

অজ্ঞ বালক বলেছেন: হ, আসলে ভাবতেয়াছিলাম আমগো দেশের প্রেক্ষাপটে জোম্বি লইয়া লেখার কথা। তখন এইটা মাথায় আইসিলো। আমগো দেশের ব্যাকগ্রাউন্ডে ভ্যাম্পায়ার আর ওয়ারউলফ লইয়াও কুনু একদিন লিখমু, আশা রাখি! ধইন্যবাদ। মজা পাওনটাই আসল।

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: মুভিটা দেখেছি।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৪২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: এইডা কি কইলেন? কে করল এই কাম? আমার থেইকা সত্ত্ব না নিয়া মুভি বানাইয়া লাইছে আমার গল্প দিয়া! তার সান্ডে মান্ডে ক্লুজ না করলে নাম পালটাইয়া ফালামু। আপনে খালি লিংক দেন মুভির, বাকিটা আমি দেখতেয়াসি।

৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এমন জায়গায় কেউ শেষ করে?
পুরা দম বন্ধ অবস্থায় বলে- দা এন্ড ;)


গল্প ভাল হয়েছে। প্রতীকি প্রকাশেও দারুন।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩

অজ্ঞ বালক বলেছেন: এক্কেবারেই দ্য এন্ড। তারপর তারা দুইজনই জোম্বি হইয়া নরমাংসের খোঁজে ঘুরতে থাকলো যারে কয়। ধইন্যবাদ। অনেক আগের লেখা। খুঁইজা পাইলাম গতকাল। পইড়া দেখলাম, খারাপ লেখি নাই। তাই শেয়ার দেয়া।

৬| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:০৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো লাগল লেখা । ছবিটা দেখেছি

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:১৩

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আমি অখন পুরাই কনফিউজড। এইরকম কাহিনী নিয়া কোনো ছবি কি আসলেই হইসে? জোম্বি নিয়া অনেক ফিল্মই আছে, কিন্তু স্পেসিফিক এই কাহিনীটাই কোথাও দেখসেন? কোনো ছবিতে? মনে থাকলে জানাইয়েন। আমিও দেখবার চাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.