নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্প: জবানবন্দী

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০০

ওদের বুঝাতেই পারছি না, কিংবা ওরা হয়তো বুঝতেই রাজি না। অথচ আমি সত্যি কথা বলছি। কসম! যেসব অপরাধের জন্য আমাকে এখানে বন্দী করে রাখা হয়েছে তার কোনোটাই আমি করি নি।



আচ্ছা, আপনিই বলুন না; আমাকে দেখলে কি একজন খুনি বলে মনে হয়? আপনার উত্তর দিতে হবে না, আমি জানি। আমি দেখতে-শুনতে এবং বিশ্বাস করুন চরিত্রের দিক থেকেও কোনোভাবেই একজন খুনি নই। অথচ আমাকে কি না একটা-দুটা নয়, সাত-সাতটা খুনের জন্য গ্রেফতার করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। আমাকে নিয়ে দারুণ হইচই এখন এদেশে। এমনিতেই রসু খাঁর পর আর এমন কোনো খুনির কথা খুব একটা শোনা যায় নি। তাই আমার কথা জানাজানি হয়ে যেতে আগুনের গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে প্রিন্ট আর টিভি মিডিয়ায়, সোশ্যাল সাইটে, ইন্টারনেটে। অথচ কেউ একবার আমার কথাটা শুনতে চাইলো না। এই যে আমি চিৎকার করে করে বলছি, আমি খুনি নই; সব দোষ আসলে আমার এই দুই হাতের। না, সে কথা শোনার সময় কোথায় অন্যদের।

সবার আগে নাকি আমি আমার স্ত্রীকে খুন করেছি। কিন্তু, কেন আমার স্ত্রীকে খুন করলাম সে প্রশ্নের উত্তর মনে হয় স্বয়ং শার্লক হোমসও দিতে পারবেন না। আরে, আমার মোটিভ কোথায়? কেন খুন করবো আমি আমার নিজের স্ত্রীকে? যাকে কি না ভার্সিটির প্রথম ক্লাসে দেখেই প্রেমে পড়লাম, দ্বিতীয় বছরে গিয়ে যার মনে জায়গা করে নিলাম, ভার্সিটিতে যার সাথে চুটিয়ে প্রেম করে মাস্টার্স শেষে পরিবারের সম্মতি নিয়ে বিয়েও করলাম তাকে সেই বিয়ের সাত মাসের মাথায় আমি খুন করবো কেন? টাকা-পয়সার সমস্যা আমাদের ছিল না। দুইজনই ব্যাংকের আইটি বিভাগে একই রকম পোস্টে আছি, কাজেই প্রফেশনাল জেলাসিও হতে পারে না। পাগলের মতন ভালবাসতাম… না না, ভালবাসতাম বলি কেন, এখনও ভালোবাসি আমার স্ত্রীকে আমি; কাজেই সে সমস্যাও নেই। কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আমার কিংবা ওর দিক থেকে আমাদের বিবাহিত জীবনে অনুপ্রবেশ করতে পারে নি। এর আগে আমরা কেউই প্রেম করতাম না, কাজেই এক্স-কে নিয়ে ঈর্ষান্বিত হওয়ারও কিছু নেই। মোদ্দা কথা, কোনও মোটিভই নেই। অথচ পত্রিকার পাতায় দেখুন কিভাবে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা, “স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা করেই সিরিয়াল কিলিং এর দুনিয়ায় খুনি কবির-এর যাত্রা শুরু।”

বিশ্বাস করুন, খুনটা আমি করিনি। আমার এই দুটো হাতই আসলে দোষী। আমি থামাতে চেয়েছি, অনেক চেষ্টা করেছি। আমার ঈশ্বর জানেন, কতবার আমি আমার অসহায়ত্বে চিৎকার করে উঠেছি, কেঁদেছি, অনুরোধ করেছি আমার হাত দুটোকে। দেখুন, এই যে দেখছেন। ভাবতেই আমার দু'চোখ বেয়ে কিভাবে পানি পড়ছে, এরপরও বলবেন আমিই খুনি। যখন আমার এই খুনে হাত দুটো কাঁকনের গলা টিপে ধরেছিল, ওর নরম-পেলব দেহটা যখন ঐ মরণ-পাশ থেকে বের হতে মুচড়ে যাচ্ছিল বারংবার, ওর নীল হয়ে আসা মুখ, একফোঁটা বাতাসের জন্য ফুলে ওঠা নাকের ফুটো, ওর খোলা মুখ থেকে বের হয়ে আসা ফেনা, ঝুলে পড়া জিহ্বা – ওহহ, আমি ভুলতে পারি না। পারি না ভুলতে। আমি আমার হাত দুটোকে থামানোর জন্য অনেক চেষ্টাই করছিলাম আর তখনই সর্বপ্রথম আমি জানতে পারলাম যে আমার শরীরের সাথে সংযুক্ত থাকলেও আমার হাত দুটো আসলে পৃথক এক সত্তা, নিজেরা এক আলাদা অস্তিত্ব বহন করে। ওদের ক্ষমতা, ওদের দাপট, ওদের শয়তানির সামনে আমি মাথা কুটে কুটে মরেছি। নিজ চোখে আমাকে দেখতে হয়েছে আমার প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর প্রয়াণ।

আমি নাকি আমার ভাইকেও খুন করেছি। কিন্তু, কেন? এবারও সেই প্রশ্নের উত্তর নেই। প্রমাণের অপেক্ষায় কেউ বসে নেই। সবাই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারলেই যেন খুশী। সেই ছোটবেলা থেকে এই ভাইয়াই আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন। বাবা মারা গিয়েছিলেন যখন আমার বয়স তিন বছর, সারাজীবন ভাইয়াকেই বাবা বলে জেনেছি-মেনেছি। আমার ভাইয়া পৃথিবীর সবচাইতে অসাধারণ মানুষদের একজন ছিলেন, ভাই হিসেবে ছিলেন ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট। আমাদের পরিবারের গুরুদায়িত্ব অনায়াসে কাঁধে নিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিলেন, পদার্থবিজ্ঞানে দেশসেরা গবেষক ছিলেন তিনি। আমার ভার্সিটিতেই পড়াতেন, তার ক্লাসে বসে শুধু রসকষহীন পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা নয়; জীবন সম্পর্কে শিখেছি আমি। আমার শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যের প্রতিটা বিষয় যার সাথে ভাগাভাগি করেছি, যার থেকে সব শিখেছি, জেনেছি, যার চোখের সামনে মানুষের মত মানুষ হতে পেরেছি বলে গর্ববোধ করেছি তাকে আমি খুন করবো কেন কেউ বলতে পারেন? ওরা বলে আমি নাকি ভাইয়ার বাসায় ঢুকে ভাইয়াকে গলা কেটে হত্যা করেছি! পাশবিক, সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি নই, আমার এই পৈশাচিক হাত দুটোই ছিল আসল খুনি। কেউ সে কথা বিশ্বাস করলে তো? ছুরিতে নাকি আমার আঙ্গুলের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। যাবেই তো, আমাকে ফাঁসাতেই এই কাজ করেছে হাত দুটো। সেই সাথে আমার বাসায় পাওয়া গেছে ভাইয়ার রক্তে ভেজা আমার শার্ট-প্যান্টগুলো। আচ্ছা, আমি সত্যি সত্যি খুনি হলে কি ওগুলো অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখতাম না? আমি কি অতই বোকা? এসব যে আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য আমারই হাতের করা ষড়যন্ত্র এবার বুঝতে পারছেন তো?

এখানেই শেষ হলে একটা কথা ছিল। এই দুই খুনের মধ্যে আরও পাঁচ-পাঁচটা খুন। অন্তত যেগুলোর দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারছে অদক্ষ-অযোগ্য পুলিশগুলো। পড়ে দেখুন না পত্রিকায় কি লিখছে, “এছাড়াও এসময়ে সংঘটিত অন্যান্য কোনও খুনের সাথে খুনি কবিরের সম্পর্ক রয়েছে কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।” হাহ, লোক হাসানো ব্যাপার সব। খুনি নয় শুধু, সিরিয়াল কিলার। তাও আবার যেভাবে লেখা হচ্ছে; যেন আমি একটা খুন করবার যন্ত্রবিশেষ। সুইচে টিপ দিলাম আর একটা খুন হয়ে গেলো। সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি আমি। আমাকে গ্রেফতার করা পুলিশদের, জেরাকারী অফিসারকে, জেলের গার্ডগুলোকে, জেলারকে, আমার মানসিক অবস্থা যাচাই করতে আসা ডাক্তারকে – সবাইকে। কেউ আমার কথা বিশ্বাস করলো না, কেউ না। আমি বারবার বলেছি আমার এই হাত দুটোর উপর ভর হয়। স্বয়ং শয়তান এই হাতদুটোকে নিজের করে নিয়েছেন। পৈশাচিক, দানবীয় সব কাজ আমার এই হাতদুটো কি অনায়াসেই না করে ফেলে। আমি বারবার বলেছি যে আমি এখানে আমার হাতের করা নৃশংসতার শিকার, আই এম দ্য ভিকটিম। কিন্তু আমার কথা উড়িয়ে দিয়ে আমার মুখের উপর ঠা ঠা করে হেসেছে সবাই।

এমনকি আমি এটাও অনুরোধ করেছিলাম যে আমার হাতদুটোকে যেন সারাক্ষণ হাতকড়া দিয়ে আটকে রাখা হয়। যাতে আর কোনো দুষ্কর্ম না করতে পারে এই ভয়ংকর হাতগুলো। কিন্তু, আমার কথাই কেউ শুনলো না। তাতে লাভটা কি হলো? এই যে সকালে আমার সাথের জেলমেটকে ঘাড়ভাঙ্গা অবস্থায় তার বিছানায় পাওয়া গেল, তার দোষ কার উপর দেয়া হচ্ছে। জ্বি, একদম ঠিক ধরেছেন। আমার। আর কাজটা আসলে কে করেছে? হ্যাঁ, এই তো; যাক অন্তত আপনি ঠিকই বুঝেছেন। আমার হাত দুটো। এখন আমাকে কারাগারের কাল কুঠুরিতে নির্জন কারাবাসে রেখে যাওয়া হয়েছে। আমি কত হাতে পায়ে ধরলাম, কান্নাকাটি করলাম যে এখানে রেখে যাও আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু আমার হাত দুটোকে অন্তত আটকে রেখে যাও। দড়ি দিয়ে, হাতকড়া দিয়ে যেভাবেই হোক না কেন। হাটুগেঁড়ে বসে মিনতি করলাম, ভিক্ষা চাইলাম যে, “আমাকে একা এই দুটো হাতের সাথে আটকে রেখে যেও না।” – পাত্তাই দিল না। আমি তো এখন ওদের মতে একজন খুনি। আমার আবার দাবী-দাওয়া কিসের? তাই তো এই নিকষ কালো অন্ধকারে আমাকে আমারই এই দুই খুনে হাতের সাথে বন্দী করে চলে গিয়েছে সবাই। আমার কান্না শোনার, আমার এই কাহিনীটা শোনার এখানে কেউ নেই। তাই আপনাকেই সব বলে যাচ্ছি। জানি, আমার আর খুব বেশি সময় বাকী নেই। জেগে উঠেছে, শয়তানের হাতগুলো জেগে উঠেছে। দেখুন কি ধীর-স্থিরভাবে এসে আমার গলায় এঁটে বসেছে আমারই হাতগুলো।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: খুন শব্দটাই ভয়ঙ্কর।
ভালো গল্প লিখেছেন। আকর্ষন বোধ করেছি পড়তে।
তবে আমি নরম মনের মানুষ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৪৯

অজ্ঞ বালক বলেছেন: আপনি যে নরম মনের মানুষ তাতে সন্দেহ নাই। ভালো লাগছে জাইনা ভালো লাগলো। ধইন্যবাদ নুর ভাই।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


ছবিটা দেখে আমি আগে পড়িনি; এখন পড়লাম, আমি কোন প্লট বা কিছু দেখছি না।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪৫

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ছবিটা আবার কি দুষ করলো! আর প্লট তো হইলো এক লোক, সিরিয়াল কিলার, নিজের হাতের উপর দোষ চাপাইয়া সাফাই গাইতাসে। কিন্তু, সে কি সত্যি কথাই কইতাসে কি না সেইটা পাঠকের উপর ডিপেন্ড করে।

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৫:৩৭

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: সুন্দর লিখার বুনন।
শুভ কামনা।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪২

অজ্ঞ বালক বলেছেন: অসংখ্য ধইন্যবাদ!

৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:০৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: একটা তথ্য শুনেছিলাম, মানুষ নাকি নিজেকে গলা টিপে হত্যা করতে পারে না। সত্যি কি না জানি না। আপনার গল্প ভালো লাগলো। শুরু থেকেই ধরে রেখেছিলো।

৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:১৪

ফয়সাল রকি বলেছেন: শেষ পর্যন্ত তাহলে কয়টা হলো? নয়টা?

৬| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩৩

এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো বলেছেন: কিন্তু এই গল্পটা কার হাত দিয়ে লেখা হল সেইডা আমারে কন।

৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫৫

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: প্রথমত আপনাকে ধন্যবাদ, একটা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার জন্য...
দ্বিতীয়ত আপনি আসলেই অনেক ভালো লেখেন...
ভালো লাগলো গল্পটা পড়ে...
শুভ দুপুর...

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৯

মা.হাসান বলেছেন: চরম সাসপেন্স তৈরি করছেন। দুর্দান্ত এন্ডিং।

৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:০৭

শায়মা বলেছেন: ভালো হইছে। হাতের মালিক এবার নিজের ফান্দে নিজেই পড়েছে। :)

১০| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:১৩

নূর আলম হিরণ বলেছেন: শেষটা সাদামাটা হয়েছে।

১১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৫৭

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: ব্যাপারটা কি অনেকটা মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার এর মত,আমি খুন করিনি আমার অল্টার ইগো করেছে।

১২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫২

করুণাধারা বলেছেন: দারুন!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.