নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্প: শেষ চাল

০৯ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ৮:৩২

শরীরটা থর থর করে কাঁপছে তার। এতটাই জোড়ে কামড়ে ধরেছে ঠোঁট, কেঁটে বসে গেছে দাঁতগুলো। কয়েক ফোটা রক্ত চিবুক বেয়ে নীচে পড়েছে, সে টেরও পায় নি। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিল সে, ভীরু চোখে তাকালো চারপাশে। আছে ওটা, এখানেই আছে। এই ঘরেই, অন্ধকারে, ছায়ায়। নিঃশব্দে হাঁটছে। অপেক্ষা করছে। যে কেউ এমন অবস্থায় পাগল হয়ে যেত, সেও প্রায় উন্মাদ হওয়ার পথে। তার চারপাশে মোটা করে লবণ ছড়িয়ে আকা বৃত্তটাই এখন পর্যন্ত তাকে মানসিক ভাবে শক্ত রেখেছে। তা না হলে...

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে সে। খুব একটা ধার্মিক সে কখনোই ছিল না, কিন্তু ব্যাখার অতীত কোন পরিস্থিতির সামনে পড়লে সেই একজনের দিকে মুখ তুলে তাকানো ছাড়া আর কিইবা করার থাকতে পারে অসহায় মানুষের। দুই হাত একসাথে মুঠ করে শক্তভাবে বুকের কাছে এনে জমিয়ে রাখা। মনে মনে তার জানা যতগুলো সুরা, দোয়া আছে আউড়ে যাচ্ছে সে। ঐ জিনিসটার কাছে এটা শুধুই যেন একটা খেলা। খেলছে ওটা, তাকে নিয়ে। প্রতি শনিবার রাতে, তিন বছর হতে চলল। সারারাত খেলা শেষে সুবহে সাদিকের সময় উধাও হয়ে যায় ওটা। আতঙ্কময় তিনটা বছর। কি না করেছে সে। কবিরাজ - পীর - ফকির - দরবেশ - সাইকোলজিস্ট কার কাছে না গিয়েছে সাহায্যের জন্য। কেউ পারে নি কোন সমাধান করতে। ইন্টারনেটে বিদেশের এক ডেমনলজিস্ট তাকে লবণের এই উপায়টা না বাতলে দিলে এতদিনে হয়তো তার জায়গা হত মানসিক হাসপাতালের কোন সেলে। কিংবা ছয় হাত মাটির নীচে।

কখনো কখনো রাতের অন্ধকারে হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছে সে। হাত বাড়িয়েও দিয়েছে। লবণের বৃত্তটা মুছে দিতে চেয়েছে। আসুক ওটা, একেবারে শেষ করে দিক তাকে। এই পিশাচের রাহুগ্রাস থেকে একবারেই মুক্তি পাক সে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সাহসে কুলায় না। এ তো একরকম আত্মহত্যাই। আর আত্মহত্যা যে মহাপাপ। আজীবন জাহান্নামের নিঃসীম অন্ধকারে ডুবে থাকবে সে। সেইখানেই হয়তো এই পিশাচগুলোর নিত্য বসবাস।

জন্তুটা সরে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে জানালার দিকে। ভয় নেই। সে অনেক আগে থেকেই জানতো জানালার সমস্যাটা। তাই তো, এই গলি-উপগলি-তস্যগলি পার হয়ে শহরের এক প্রান্তে বাসা ভাড়া নিয়েছে। ঐদিকে খোলা মাঠ ছাড়া আর কিছু নেই। তবে দিনের বেলায়ও তা দেখতে পায় না, জানালাই তো নেই। আসলে ছিল, কয়েক সপ্তাহ আগে সেই কাঁচের ঠুনকো জানালা পালটে স্টীলের পাত দিয়ে আগাগোড়া মুড়ে দিয়েছে সে চারকোনা ফাঁকটাকে। জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো প্রাণীটা। একটা পা সামনে বাড়িয়ে আঁচড় কাটলো স্টীলের গায়ে। গা শিড়শিড় করা তীক্ষ্ণ আওয়াজ ছড়িয়ে পড়লো ঘরটাতে। জন্তুটা এদিক সেদিক তাকিয়ে কি যেন বুঝার চেষ্টা করলো, তারপর জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে মৃদু ঘর্ঘর শব্দ বের করতে থাকলো বুকের গভীর থেকে। এক পর্যায়ে গর্জনে রূপ নিল সেটা। শেষ হল, থুতুর মতন শব্দ সৃষ্টি করে। মুখের ভেতর থেকে একগাদা তরল বেড়িয়ে এসে ভিজিয়ে দিল জানালার পাতটাকে। তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে ভরে গেল ঘরটা, তীব্র অম্লীয় সেই গন্ধ তার মাথার মধ্যে পাগলাঘন্টি বাজিয়ে দিল। জন্তুটা কিছুক্ষন অপেক্ষা করলো, স্টীলের পাত ফিজ ফিজ শব্দ তুলে গলে যাচ্ছে, সেখানে আবারো থাবা তুলে ধাক্কা দিল জন্তুটা। আর বেশ কিছুটা অংশ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে খুলে পড়লো বাইরের দিকে।

ঘরের ভেতর থেকে কিছুই বুঝা যায় নি। বাইরে প্রবল ঝড় ছুটেছে। আকাশের এইপাশ থেকে ঐপাশ পর্যন্ত ছুটে গেলো নীলচে বজ্র। শব্দ আসার আগেই আলোর হামলায় জানালার সামনে স্পষ্ট দেখতে পেল সে জন্তুটাকে। টের পেল, গলাটা শুকিয়ে গিয়েছে। ঢোক গিলল বারংবার সে। বৃষ্টি, সেই সাথে দমকা হাওয়া। ছুটে আসছে জানালার সদ্য উন্মুক্ত গহবর থেকে। আবারও বাজ পড়ল, সেই আলোয় সে দেখতে পেল প্রাণীটা তার দিকে অদ্ভুতভাবে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখছে। দেখছে বলাটা কি ঠিক হবে? কারণ কোন চোখ নেই জিনিসটার। জিনিসটার মুখমন্ডলের কালো গভীর গর্তগুলো একভাবে ওর দিকেই মেলে আছে। তিন বছরে এই প্রথম জিনিসটা ওর দিকে ফিরলো। তবে কি খেলা শেষ? আর যথেষ্ট বিনোদন দিতে পারছে না সে এই অন্ধকারের দূতকে? বাইরে ঝড়ের প্রকোপ অনেক বেড়েছে, ছুটে ছুটে এসে বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে জানালার পাতে। ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে না চাইতেও আর হামলা চালাচ্ছে তার লবণের বৃত্তের উপর। সেই হামলায় বৃত্তটা যেন কাঁপছে, নড়ছে, সরে সরে যাচ্ছে। তার এত কষ্ট করে বানানো চক্র আজ ভেদ হওয়ার পথে। একটু নীচু হয়ে মেঝে থেকে ছুড়িটা তুলে নিল সে।

জিনিসটা নড়লও না। বৃত্তটা প্রায় ভেঙ্গে গিয়েছে। অথচ জন্তুটার মধ্যে কোন হেলদোল নেই। একভাবে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে একই ভাবে তার দিকে মুখ করে রইলো সেটা। কিছুর জন্য কি অপেক্ষা করছে? সে নড়ে উঠবে? দৌঁড়াবে? চিৎকার করবে? প্রাণভিক্ষা চাইবে? এমন কিছু। সেই শক্তিটুকুও যেন তার মধ্যে আর নেই। তারপর সে বুঝতে পারলো, না এসব কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে না দানবটা। জিনিসটা একটা ঘোষণা দিল এইমাত্র। সে হেরে গেছে। তিন বছর ধরে চলে আসা এই খেলায় সে হেরে গেছে। জিতার সম্ভাবনা কখনো ছিল না আসলে, যেই আশাকে মনের মধ্যে তাসের ঘরের মত গড়ে তুলেছিল; সেটা ভেঙ্গে পড়েছে। সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছে সে। এখন সাহস দরকার তার, অনেক অনেক সাহস। শেষবারের মত কাপুরুষতা থেকে মুক্তি চাইলো সে।

হাতটা যন্ত্রের মতন উঠলো নামলো কয়েকবার। এতটাই জোরে চালিয়েছে, কব্জিটা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল হাত থেকে। ফিনকি দিয়ে বের হওয়া রক্তের স্রোত মুছে দিল লবণের বৃত্তটাকে। ব্যাথাটা তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নরকের ঐ অতন্দ্র প্রহরীর দিকে। চোখে বন্য উল্লাস। না, তুই জিততে পারিস নি। আমি জিতেছি, আমি। তোকে হারিয়ে দিয়েছি। আমার জীবন আমার নিজের। সেটা আমি নিজেই শেষ করবো। কোন পিশাচের খাদ্য হব না আমি, হব না। এই দুঃস্বপ্ন, এই পা টিপে টিপে এগিয়ে আসতে থাকা মৃত্যু, তিল তিল করে জমে পাহাড় হওয়া মানসিক চাপ, এই খেলা, নিষ্ঠুর রাত থেকে একবারেই মুক্তি নিল সে। খেলার শেষ চাল সেই দিয়েছে - মেঝেতে লুটিয়ে পড়ার আগে এই কথাটাই মাথায় ভেসে উঠলো তার।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: শেষের প্যারাতেই আসল চালটা দিয়েছে।

০৯ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:০১

অজ্ঞ বালক বলেছেন: সেইটাই ভাই। মানুষ ভাঙবো কিন্তু মচকাইবো না - যেমনটা গুরু হেমিংওয়ে কইসেন।

২| ১১ ই মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:২০

করুণাধারা বলেছেন: আমি অন্য ব্লগে একজনের অনুগল্প আগ্রহ নিয়ে পড়ি, কারণ আমাদের সামুতে অনুগ্রহ কম পাই। ইদানিং আপনি লিখেছেন, বেশ রুদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো। ++++

২৭ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:৪৫

অজ্ঞ বালক বলেছেন: অন্য ব্লগের লিংক এখানে না দিলে কিন্তু... কিচ্ছু হবে না তবে পাইলে ভাল্লাগতো। আর ধইন্যবাদ। প্রশংসা ভাল্লাগে। হে হে হে।

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: ভাঙবো কিন্তু মচকাইবো না - এ ধনুর্ভঙ্গ পণে অটল থাকতে পারে ক'জন, কতক্ষণ?
এমন শেষ চাল না চালাই ভাল।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:৪৬

অজ্ঞ বালক বলেছেন: মাঝে মাঝে আর উপায় থাকে না যে। মানুষ কখনো হারে না - এই থিমটা কিন্তু বেশ চলে। ধইন্যবাদ মন্তব্যের জইন্য।

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:০৫

পুলক ঢালী বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। ভাষার উপর আপনার দখল ভাল তবে অনুগল্পটায় কাহিনী বা গল্প খুবই কম কিন্তু বর্ণনা অনেক বেশী বলে মনে হল। অদ্ভুদ জিনিষটা কি দেও দানব নাকি এলিয়েন কিছুই বুঝতে পারিনি।
আমার মন্তব্য একান্তই আমার ব্যাক্তিগত অনুভূতির প্রকাশ কিছু মনে না করলে খুশী হবো।
লিখতে থাকুন ভাল থাকুন।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১০:৪৮

অজ্ঞ বালক বলেছেন: ভাষার উপরে দখল না থাকলে কারও কি লেখা উচিত? আপনার কি মনে হয়? আর বর্ণনা আসলে একটা বেইস। এর উপ্রেই তো অন্যসব দাঁড়াইয়া থাকে। কম-বেশি হইয়া যায় আর কি! আর অদ্ভুত জিনিসটা যে কোনো কিছু হইতে পারে, যেমনটা আপনার মন চায়, এইটা পাঠকের স্বাধীনতা বা লেখকের অক্ষমতা। ধইন্যবাদ। এমন মন্তব্য চাই, মনে করার কিছু নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.