নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে একজন ভীষণ খারাপ মানুষ। তবে ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করতে পারি বলে কেউ কিছু বুঝতে পারে না। সে হিসাবে আমি একজন তুখোড় অভিনেতাও বটে!!!

অজ্ঞ বালক

ভেঙ্গে যাওয়া স্বপ্নগুলো কুড়িয়ে এখানে নিয়ে এসে ছুঁড়ে ফেলা হয়!!!

অজ্ঞ বালক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রীক পুরাণের পাতা থেকেঃ প্রমিথিউস ০৩ - জীবনদাত্রী

১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:০৩

বিকাল ঘনাইয়া আসতেছিল। প্রমিথিউস উইঠা দাঁড়াইয়া আড়মোড়া ভাইঙা বিশাল এক হাই তুলল। সারাদিনব্যাপী গতর খাটানো শেষে তার সর্বাঙ্গে একরকম ক্লান্তি জড়ো হইছিলো, যদিও তার চাইতে বেশি ছিল নিজের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি।

অপরাহ্নের মৃদু সূর্যালোক তার হাতের কারুকাজগুলারে হালকা উত্তাপে একেবারে সঠিকভাবে পুড়াইছে। এই কৃতিত্বও পুরাটাই প্রমিথিউসের। মাটির মূর্তিগুলা যদি মধ্যাহ্নের কড়া রোদে রাখা হইতো তাইলে বেশি তাপ পাইয়া সেগুলা ভঙ্গুর ধরণের হইয়া যাইতো। অবশ্য আরেকটা কারণ ছিল এর পিছনে, প্রমিথিউস তার দোস্তের স্বভাব সম্পর্কে অন্যদের চাইতে বেশি জানে। তাই এমন তাপে রাখসে মূর্তিগুলারে যাতে শেষ মুহূর্তেও কিছু না কিছু পরিবর্তন করা যায়। দেখা গেলো শেষ মুহূর্তে জিউসের মনে হইলো কানগুলা আরেকটু লম্বা হইলে ভালো হয়, হাত দুইটা বেশি থাকা দরকার বা যৌনাঙ্গের আদৌ দরকারই নাই। দিনান্তে, দেবতাদের মতিগতি বুঝা দায়।

তার কান বিশ্বাসঘাতকতা না করলে, আগত পায়ের শব্দটা মনে হয় দেবতাদের রাজা জিউসেরই। কারও সাথে জোর গলায় কথা বলতে বলতে এইদিকে আসতেছে। দ্বিতীয় গলার স্বরটা মাপা, সংযত এবং কোনো এক রমণীর। একজনের কথাই মাথায় আসলো প্রমিথিউসের, জিউসের আদরের কইন্যা, এথেনা।

"সারা দুনিয়া জানে, তোমার বাপ হইলো দেবতাদের প্রধান।" জিউসের বাগারম্বর এইখান থিকাও শুনা যাইতেছিলো। "সর্বশক্তিমান জিউস, ত্রিলোক বিজয়ী জিউস, সর্বজ্ঞ জিউস..."
"অপরিসীম বিনয়ী জিউস, এটা কেমন লাগে শুনতে?"
"... সৃষ্টিকর্তা জিউস, এটা তার চাইতে বেশী ভালো শুনায়।"
"তা ঠিক।"
"আচ্ছা, নদীর তীর এই সামনেই। দাঁড়াও, ওরে ডাক দেই। প্রমিথিউস!"
আশপাশ থেইকা সেই গমগমে ডাক শুইনা বিশ্রামরত পাখিরা তটস্থ হয়ে উইড়া গেলো। "প্রওওওমিইইইথিইইইউউউস!!!"
"এদিকে," প্রমিথিউস উত্তর দিল, "আর সাবধানে, দেইখা শুইনা..."

একটু দেরী হইয়া গেসে সতর্ক করতে।

জঙ্গলের গাছপালার আড়াল থেকে জিউস উন্মুক্ত জায়গাটায় আসতে গিয়া সারিবদ্ধভাবে সাজানো সুন্দর মূর্তিগুলার কয়েকটারে পায়ে মাড়াইয়া দিল। ক্ষোভে হাউমাউ করতে করতে প্রমিথিউস ছুটলো সর্বনাশের পরিমাণ নির্ণয় করতে।

"গোদা গোদা পা নিয়া হাঁটার সময় ডান বাম দেখার কথা খেয়াল থাকে না?" প্রমিথিউস খেঁকিয়ে উঠলো। "দেখো কি দশা করসো মূর্তিগুলার।"

তামাম সৃষ্টির মইধ্যে দ্বিতীয় কারও ক্ষমতা নাই জিউসের সাথে এইভাবে কথা বলার! এথেনা অবাক হইলো দেইখা যে জিউস খানিকটা অপরাধীর মত মাথা নাইড়া ক্ষমাপ্রার্থনা করলো প্রমিথিউসের কাছে। পরিস্থিতি অবইশ্য অতটা খারাপ না, প্রমিথিউস যতটা বাজে ভাবছিলো। তিনটা মূর্তি অবশ্য একেবারে মেরামতের অযোগ্য হইয়া পরছিলো। সেগুলা জিউসের বিশাল পায়ের চাপে চ্যাপ্টা হইয়া কাদার দলায় পরিণত হইসে।

"যাক," ঞ্জিউস স্বস্তির শ্বাস ফেইলা বলল। "বাকিগুলা ঠিকঠাক আছে। যথেষ্ট। তাইলে পরের ধাপ শুরু করি।"
"এগুলার কি দশা করসো, দেখো।" প্রমিথিউস তার হাতে কাদার দলাগুলা তুইলা জিউসকে দেখাইলো। "এই ছোট্ট সবুজ, বেগুনী আর নীল মূর্তিগুলা আমার পছন্দ হইসিলো।"
"কালো, সাদা, বাদামী, হলদে, লালচে, আরও বেশ কয়েক রকমের তো এখনও আছে। এগুলা দিয়াই তো চলবো, তাই না?"
"ইশ, এই নীল রঙের মূর্তিটা আমার খুব মনে ধরসিলো।" প্রমিথিউস তবুও মুখ ভার কইরা বলল।
এথেনা তখন ঝুঁকে অস্তগামী সূর্যের আলোয় চকচক করতে থাকা বাকি মূর্তিগুলার দেখতেসিলো ভালো কইরা।
"প্রমিথিউস, অসাধারণ কাজ হয়েছে।" মৃদু স্বরে সে বলল। তার এই শান্ত স্বর অন্য দশ অলিম্পিয়ানের তর্জন-গর্জনের চাইতে বেশী মূল্য ধারণ করে। এথেনার থেইকা স্তুতি পাওয়া যেনতেন কথা না। প্রমিথিউসও তাই মুহূর্তেই খুশি হইয়া উঠলো।
"হওয়ারই কথা, আমি মন-প্রাণ দিয়া আমার জীবনের সেরা কাজটাই আজকে করছি।"
"তারিফ করতেই হয়," জিউসও আনন্দের সাথে বলল। "গায়ার শরীরের অংশ, মাটি দিয়া বানাইসে এক মহান টাইটান, প্রমিথিউস। মাটিটারে জোড়া লাগাইয়া রাখসে আমার লালা, তাপ দিসে সূর্য। এখন এদেরকে জীবন দিব আমার প্রিয় কইন্যা, এথেনা।"

জিউসের ভিতরে থাকা মেটিসের অংশবিশেষ তার মাথায় এই চিন্তাটা টাইনা আনছে যে এথেনা এই মূর্তিগুলোর মধ্যে নিজের শ্বাস প্রবেশ করাইয়া এদের জীবন দিব। কারণ শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে তার বিশেষ গুণগুলাও অংশ হইয়া উঠবো এই প্রাণীগুলার; তারা হইয়া উঠবো জ্ঞানী, সৃষ্টিশীল, বোধবুদ্ধি আর সহজাত প্রবৃত্তি সম্পন্ন।

(চলবে)

আগের পর্ব পইড়া আসতে চাইলেঃ

গ্রীক পুরাণের পাতা থেকেঃ প্রমিথিউস ০১ - জিউসের আবদার

গ্রীক পুরাণের পাতা থেকেঃ প্রমিথিউস ০২ - কাদামাটির কারিগর

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:৪৩

সোনাগাজী বলেছেন:



এখন যা চোখে দেখছেন, সেটা না'লিখে আদিকালের গ্রীক ফ্রিক নিয়ে এত উৎসাহ কেন?

১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৩:৫১

অজ্ঞ বালক বলেছেন: শেষ টিভিতে খবর দেখসি কবে মনে পরে না, শেষ পত্রিকা পড়সি গত সাপ্তাহে, তার আগে; কবে কে জানে। সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে আমার জানাশোনা অতি অল্প। যদিও খারাপ স্বভাব। অন্যদিকে মিথোলজি আমার খুবই পছন্দের বিষয়। গ্রীক, রোমান, নর্স, জাপানিজ, মিশরীয়, চীনা, এজটেক, মায়ান - এগুলা নিয়া আমার আগ্রহ ও জানার চেষ্টা অনেক। নির্দিষ্ট কারণ নাই, ভাল্লাগে। সেই থেকেই এই বিষয়ে লেখার চেষ্টা, এইটা আমার লেখার মধ্যে ফ্লো আনতে হেল্প করে।

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪:১৯

সোনাগাজী বলেছেন:




সভ্যতার বিবিধ কালে ( পিরিয়ডে ) মানুষের জীবন সম্পর্কে ধারণা থাকা ভালো; তবে, বাংলাদেশের তরুণদের উচিত নিজ জাতিকে সঠিকভাবে জানা ও বুঝা।

৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৩৫

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- উপস্থাপনার ভঙ্গিটা ভালো।

৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫৮

জুল ভার্ন বলেছেন: আপনি লিখছেন গ্রীক পুরাণ নিয়ে- ভালো হচ্ছে।

মহাভারত পড়ছি বারবার- আমার নিজের মতো কিছু লিখতে। অবশ্য ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটা পর্ব লিখেছি- বিতর্ক হতে পারে ভেবে প্রকাশ করছিনা।

৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: মজা করে লিখেছেন। কিন্তু কোনো রুপকথাতেই আমার কোনো আগ্রহ নেই।

৬| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৯

শেরজা তপন বলেছেন: অন্য ঢঙে গ্রীক পুরাণ বা রূপকথা বেশ আগাচ্ছে- আমার কাছেতো ভালই লাগছে।

৭| ১০ ই মে, ২০২৩ সকাল ৮:২৫

শেরজা তপন বলেছেন: বেশ কয়েক মাস ব্লগে নেই আপনি- শেষ মন্তব্যের উত্তর পাইনি!!
সব কুশলে আছে তো? খবর জানাবেন- ব্লগে আসবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.