নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছুটে চলো অগ্রপথিক তোমার আপন পথে

অগ্রপথিক...

পথিক পথে পথে চলে, আর পথ পথিকের কথা বলে............

অগ্রপথিক... › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রগতি - বুঝি না তোমার মতি-গতি!!

০১ লা মার্চ, ২০১২ সকাল ১০:১৩





'প্রগতি' এমন একটি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ গ্রহণযোগ্য হলেও তার মতলব এখন খারাপ । অভিধানে দেখতে পাই 'গতি' শব্দের অর্থ- যাত্রা,গমন,চলন,বেগ ইত্যাদি। আর তারা সাথে 'প্র' উপসর্গ যোগ হয়ে ( যা গতি,খ্যাতি,নিরবিচ্ছিন্নতা,পশ্চাতগামীতা,প্রকৃষ্ঠতা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়) সৃষ্টি হয়েছে প্রগতি। অবশেষে জোড়াতালির পর শব্দটির অর্থ দাঁড়িয়েছে অগ্রগতি,উন্নতি,যে গতি অন্যের পশ্চাদানুসরণ করে চলে অর্থাৎ পরিবর্তনশীল জগতের সাথে সমান তালে পা ফেলে চলা, আধুনিক রীতি-নীতির যথেচ্ছা প্রবর্তন ইত্যাদি। আভিধানিক অর্থে এই প্রগতির প্রয়োজনীয়তা ও অপ্রিহার্যতা অনস্বীকার্য। জীবন প্রবাহে যদি স্রোত না থাকে, তাহলে বদ্ধ জলাশয়ের পানির ন্যায় শৈবাল দাম ঘিরে পচন ধরবে তাতে। পরিবেশ পরিস্থিতি যুগ ও প্রেক্ষিতের পরিবর্তনই গতিশীলতাকে অনিবার্য করে তোলে। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে চাহিদার বিভিন্নতা ঘটা একটা প্রাকৃতিক বিধান। মানব জীবনের সমাজ-সামাজিকতা,রুচি ও মনের ক্ষেত্রে এই গতিশীলতা ও বেগময়তা; এই অর্থে যদি ব্যবহৃত হয় 'প্রগতি' তাহলে তার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। ইসলামেও এরূপ গতিশীলতার নীতি স্বীকৃত এবং উৎসাহিত হয়েছে।



চিন্তাধারা ও মনের ক্ষেত্রে ইসলাম যে গতিশীলতার নীতি প্রবর্তন করেছে,পরিভাষায় তাকে বলা হয় 'ইজতিহাদ' অর্থাৎ,নিত্য নতুন সৃষ্ট সমস্যা,যার সমাধান ইতিপূর্বে কখনো হয়নি,সেক্ষেত্রে কুরআন ও হাদিসের আলোকে গভীর সাধনার মাধ্যমে সমাধান বের করা। মূল নীতিধারার সাথে সামাঞ্জস্য বিধান করে যুগের চাহিদা ও প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে ইসলামের উপস্থাপন ও ব্যাখ্যা প্রদানের বিষয়টি শরীয়তে নন্দিত।



আর সমাজ-সামাজিকতা ও বৈষয়িক জীবনের বিষয়াবলীকে ইসলাম স্থান,কাল ও পাত্রের উপর ছেড়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে ঈমান-আকীদা ও নিজস্ব তাহজীব বা তামাদ্দুনের সীমানায় থেকে বৈচিত্র বিধান করা ইসলামে অবৈধ নয় অর্থাৎ; তা আদর্শিক কাঠামো ও স্বকীয়তা পরিত্যাগ করে না। কিন্তু হালে প্রগতির নামে যে গড্ডালিকা প্রবাহ চলছে,এই প্রগতির দোহাই দিয়ে যে বেলেল্লাপনা ও নগ্নতার কসরত দেখানো হচ্ছে তা কখনো বৈধ প্রগতির সীমানায় থাকছে না। একে প্রগতি না বলে নির্ঘাত অধঃগতি বলাই সমীচীন হবে। 'গতি'র সাথে 'প্র' উপসর্গ যোগ হয়ে গড়ে উঠেছে এমন একটা জীবন দর্শন, যা আদর্শ বর্জিত ও লাগামহীন। আর তার সাথে বাদি বা বাদিনী যোগ হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে এমন এক আজব চিড়িয়া যে চিড়িয়া গতির সাথে 'প্র' উপসর্গের পুচ্ছ লাগিয়ে অলিতে-গলিতে,ক্লাবে,পার্কে,আর সিনেমা টেলিভিশনে নগ্ন অর্ধনগ্ন অবস্থায় ধেই ধেই করে নাচে; কিংবা পাতলা ফিনফিনে শাড়ী পরে,পেটের মেদভুল তলদেশ উন্মুক্ত করে,হাতাকাটা ব্লাউজ পরিধান করে রাস্তায় রাস্তায় ও হাটে বাজারে রূপের বিজ্ঞাপন বের হয়, আর নারী-পুরুষের ও পুরুষ-নারীর বেশ ধরে রুচির গতিশীলতা প্রদর্শন করে। আর তাই সেই নাচে (কিন্তু 'কাকের ময়ূর নাচ') নিজস্ব সভ্যতা-সংস্কৃতি,তাহজীব-তামাদ্দুন ও রুচি বলতে তাদের কিছু নেই।



তারা পাশ্চাত্য ধর্মহীন কৃষ্টি-কালচারের সন্ধান পেলেই শুরু করে নিষ্ঠার সাথে তার অনুশীলনের কসরৎ। নিজস্ব আবিস্কার উদ্ভাবনের কোন শক্তি নেই তাদের। ওরা ক্ষুধার্ত শকুন-সকুনীর মত চেয়ে থাকে পাশ্চাত্যের দিকে;যেই দেখতে পায় প্রগতি(?)-র কোন নতুন মোড়ক,অমনি হুমড়ি খেয়ে পড়ে তার উপর। আর চোখ কান বুঁজে আত্মতৃপ্তির সাথে গোগ্রাসে গিলতে থাকে সেটা। ভাব খানা যেন-আহা মরি কি স্বাদ! কি অপূর্ব!! এই যে হালের প্রগতি; তার কোন নির্ধারিত গতি বা দিক নেই কিংবা কোথায় যে এর শেষ তাও জানা নেই কারো। কারণ ওরাই বলে থাকে যুগের হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে,তা সে হাওয়া যে দিকেই প্রবাহিত হোক না কেন। প্রগতির ডানা মেলে সে হাওয়ায়

উড়তে থাকতে হবে। কোন ডাস্টবিন কিংবা পঁচা নর্দমায় নিয়েও যদি ফেলে দেয় সে হাওয়া, কোন আপত্তি নেই তাতে। 'তথাস্থ গুরু' বলে দু'চারেক ঢোক গিলে নিতেই হবে। অন্যথায় যে প্রগতিশীল (?) হওয়া যাবে না।



প্রগতিশীল হওয়ার জন্য মোল্লা-মৌলভীকে ওরা ধর্মান্ধ,কুসংস্কারাছন্ন,কূপমন্ডুক ইত্যাদি গালি দেয়,অথচ প্রগতির নামে যে কোন কিছুর অন্ধ অনুকরণে পারদর্শী ওরা । তা তোমরা খুব প্রগতিশীল হও,অন্ধ অনুকরণে পাক্কা উস্তাদ হও,বাঁদরের স্বভাব যেমন অনুকরণ প্রিয়তা তেমনি অনুকরণ প্রিয় হও,স্বজাতির স্বভাব ভুললে চলবে কেন? তোমরা তো ডারউইনের শিষ্য! তোমরা আবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠ না,ডারউইন যাদের গুরু নয় তাদের কাছেই বিনা পারিশ্রমিকে তোমাদের পরিচয় পাবলিসিটি করছি।



এক ধরনের প্রগতিবাদী আছে,যারা প্রয়োজনে যে কোন রূপ ধরতে পারে। একেবারে 'বাহাত্তুরে ধারা' চোরের দলে মিশে চুরি করে,ডাকাতের দলে মিশে লুটতরাজ করা, আবার মুসল্লির দলে মিশে মসজিদে মাথা ঠোকানো এবং যিকিরের হাল্কায় বসে মাথা ক্বলব জারীর কসরৎ সবই করে থাকে ওরা। সাধু আর শয়তান সব দলেই পাক্কা শিষ্য সাজতে পারে ওরা। কারণ সব তালে তাল মিলানোই হল যুগের হাওয়া। 'বর্ণচোরা আম'- এর ন্যায় ওদের স্বরূপ নির্ণয় করা কঠিন। রাজনীতির মঞ্চে দূর্নীতির বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তৃতা ঝাড়া, আবার চোরাচালানীর নেতা সেজে কলকাঠি নাড়ানো সবকটাতেই সিদ্ধহস্ত এরা। সবকটাই নাকি যুগের হাওয়া। যখন যেদিকের হাওয়া আসে সেদিকে জীবন তরীর পাল খাটাও,তা সে হাওয়া অভিষ্ট মনযিলে মকসূদের প্রতিকূলে বয়ে চলুক না কেন। আর জীবনের অভিষ্ট লক্ষ্যই বা কি ছাই! খাও দাও,ফূর্তি কর-এইতো সার কথা। সুতরাং গাঙের পানি যে দিকে চলে ঢেউয়ের তালে তালে সে দিকে নেচে নেচে চল,দেখবে চলতে কোন

শক্তির প্রয়োজন হবেনা,ছন্দে ছন্দে জীবন তরী আন্দোলিত হতে থাকবে। আর বিপরীতে চলতে গেলে তো আদর্শিক শক্তির প্রয়োজন হবে।তাই আদর্শ আর স্বকীয়তার চিন্তা পরিত্যাগ করে যুগ ধর্মকে দু'বাহু বাড়িয়ে আলিঙ্গন কর।যুগ হাওয়া যেদিকেই ধাক্কা দেয় সে দিকেই বৈঠা বেয়ে চলো। প্রচুর ফায়দা লুটতে পারবে,জীবনে রোমাঞ্চের পরশ লাগবে। কেউ অর্ধনগ্ন হয়ে নেচে হাততালি কুড়াতে সক্ষম হলে তুমি দর্শকের তালে তাল মিলিয়ে বস্ত্রের জঞ্জাল মুক্ত হয়ে নাচ দেখাও; দেখবে সেই অতি প্রগতিশীল(?) নাচ দেখে দর্শকরা আসন ছেড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে তোমাকে ধন্যবাদ জানাবে।





নাচ,গান,বাজনা,রেডিও,টেলিভিশন এসবের কথা বলে আর পুরানো কাসুন্দি না হয় নাই ঘাটলাম; ফ্রি সেক্স,ভিডিও,ভসিয়ার ,লোনের টাকায় বড় বড় রকমারী দালান কোঠা তৈরি করা,বীমা,প্রাইজ বন্ড,লটারী ইত্যাদি যত ধরনের সূদী কারবারসহ যুগের যত হাওয়া চালু হয়েছে,নিষ্ঠার সাথে এই হাওয়ায় পাল খাটাও, এ যে যুগের দাবী! নইলে প্রগতিশীল হওয়া যাবে না,হাজার হাজার নতুন ডিজাইনের দালান কোঠা গড়ে উঠবে না,কসমেটিকের বাজার গরম হবে না, জীবনে কোন রোমান্স থাকবে না!





আর এর বিরুদ্ধে সেকেলে(?) আলেম মৌলভীরা যতই লক্ষিন্দরের কিচ্ছা শোনাক খবরদার! কাকস্য পরিবেদন-মোতেই কান দেবে না সে কদিকে! 'প্রগতি' 'যুগের হাওয়া' 'যুগধর্ম' এই ত্রিত্ববাদকে যক্ষের ধনের মত বুকে আগলে রাখবে, পরিত্রাণ(?) পাবে। নারী পর্দার বন্দীশালা(?) থেকে পরিত্রাণ পাবে,বারঙ্গনা পতিতালয়ের প্রাচীর ভেঙ্গে মুক্ত হাওয়ায় বেরিয়ে গোপনীয়তার ঝঞ্চাট থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর আদর্শের সব বাঁধা-বন্ধন থেকে পতিত্রাণ পাবে পুরুষ দল। আর এই ত্রিত্ববাদকে পতিত্যাগ করলে জীবন নরকময় হয়ে উঠবে,রঙে রসে আর ভরে উঠবেনা জীবন,আকাশ কুসুম জল্পনা বাদ দিতে হবে। ইবাদাত-বন্দেগী,পর্দা-পুশিদা আর হালাল-হারামের মধ্যযুগীয় শৃঙ্খলে জীবনটা তখন শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে উঠবে। আদর্শ,সত্য,ন্যায়-নীতি,ইনসাফ,ভদ্রতা ইত্যাদি যতসব বস্তাপঁচা ব্যাপার-স্যাপারে জীবনটা স্যাঁতসেঁতে হয়ে উঠবে আর কি।





নিজস্ব গতিতে না চলে তার সাথে 'প্র' উপসর্গ যোগ করার ফলেই যতসব উপসর্গ সৃষ্টি হয়েছে।আসলে এই 'প্র' উপসর্গই যত অনাসৃষ্টির মূল। এই 'প্র' উপসর্গ ন্যায়কে অন্যায় (অ+ন্যায়=অন্যায়) আর ভদ্রকে অভদ্র(অ+ভদ্র=অভদ্র) বানিয়ে ফেলে। শ্রীকে বিশ্রী(বি+শ্রী=বিশ্রী) আর রূপ রসকে অরূপ আর নিরস করার মত অকাণ্ডটা ঘটায়। আর তাতো ঘটাবেই,উপসর্গ উপসর্গই (রোগ-ব্যাধি) সৃষ্টি করে থাকে । তেতুলের বিচি বুনে মিষ্টি আমের আশা করা বাতুলতা নয় তো কি? সুতরাং এ উপসর্গ থেকে বাঁচতে হলে অভিধানের উপসর্গ অভিধানেই রাখুন, জীবনে টেনে আনা বোধ হয় ঠিক হবে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:৩৬

কলমবাঁশ বলেছেন: ভাই লেখাটা পড়বো না ভুতের নাচ দেখবো?

২| ০১ লা মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:০৩

মানবীরকস বলেছেন: কলমবাঁশ বলেছেন: ভাই লেখাটা পড়বো না ভুতের নাচ দেখবো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.