নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"আমি নজরুল জুয়েল, খেতে অনেক পছন্দ করি, মাঝে মাঝে টুকটাক লিখতে ভালোবাসি, বর্ষাকাল আমার অনেক পছন্দ, এবং কফির দারুণ ভক্ত...\"

অজানা তীর্থ

আমি যদি আমার সম্পর্কে অবগত হইতাম, তাহলে লিখতাম।

অজানা তীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয়জন

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:১০


যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য আপনার নিজের আদর্শ ও মূল্যবোধের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। যেমন, করোনার জন্য অনেকে চাকরি হারিয়েছে অথবা কাঙ্ক্ষিত বেতন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অথবা আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। এই রকম কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে সংসারের কথা ভেবে ঘরের কর্তার যে কোনো সময় মন-মেজাজ খারাপ হতে পারে।

আবার অনেক সময় দেখা যায়, যে কোনো প্রতিকূল অবস্থা বুঝে এবং স্বামীর মনের অবস্থার দিকে তাকিয়ে তার অর্ধাঙ্গিনী টুক টাক কাজ করে। যেমন, কেউবা সেলাই করে, কেউবা নকশিকাঁথা বোনে, কেউবা নিজের কোনো পূর্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে টুকটাক যা পারে তা দিয়ে ইনকাম করে, আবার হতে পারে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের উদ্দ্যেগে হাস-মুরগী পালন করা, কৃষি কাজ করা ইত্যাদি। মোট কথা হলো, যে যাই করুক না কেন, মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে যেন স্বামীর উপর কিছুটা হলেও চাপ কমে।

এর মধ্যে কিছু নারী আছে যারা কিনা স্বামীর অগোচরে টুকটাক ইনকাম করে,কারণ তিনি ভাবছে তার স্বামী যদি জানতে পারে যে, স্ত্রী নকশিকাঁথা সেলাই করে অথবা অন্যের জামাকাপড় সেলাই করে, তবে ব্যাপারটি স্বামীর আত্মসম্মানে লাগতে পারে। এমনই একজন স্ত্রী হলেন বিরাজ। যে সংসারের আর্থিক অবস্থা অবনতি হবার পর থেকে চাঁড়ালদের একটি মেয়েকে ডেকে ছাঁচ তৈরি করা শিখে নিয়েছিল।

সে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমতী এবং অসাধারণ কর্মপটু হবার কারণে, দু'দিনেই এ বিদ্যা আয়ত্ত করে সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট বস্তু প্রস্তুত করতে লাগল যা ব্যাপারীরা এসে নগদ মূল্য দিয়ে কিনে নিয়ে যেত। আর রোজ এমন করে সে আট আনা উপার্জন করছিল, অথচ, স্বামীর কাছে লজ্জায় তা প্রকাশ করতে পারতো না। স্বামী ঘুমিয়ে পড়লে, অনেক রাত্রে নিঃশব্দে শয্যা হতে উঠে এসে সে এই কাজ করতো।

একদিন রাত্রে তা করতে গিয়ে এবং ক্লান্তিবশতঃ কোন এক সময়ে উঠানে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার স্বামী নীলাম্বরের হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যাবার কারণে শয্যায় বিরাজকে দেখতে না পেয়ে বাহিরে গিয়ে দেখলো যে, কাদা মাখা হাতে, আশেপাশে তৈরীকৃত ছাঁচ এর একধারে, ঠাণ্ডার মধ্যে ভিজা মাটির উপরে পড়ে বিরাজ ঘুমাচ্ছে।

তার কিছুদিন পর কি করে সংসার চলছে এমন কথা নিয়ে বিরাজ তার স্বামী কে খোঁটা দিয়ে কথা বলে, ফলে তাদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। বিরাজের স্বামীও তাকে খোঁটা দিয়ে বলে,

“তুই আমাকে কি কুকুর-বেড়াল মনে করিস যে, যখন তখন সব কথায় ঐ খাবার খোঁটা তুলিস! কোন্ দিন তোর দুবেলা ভাত জোটে না?”

এরপর নীলাম্বর, বিরাজ কি করে সংসার চালাচ্ছে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করলো আর তার আত্মত্যাগের কথা মনে করতে লাগলো। আর যতই সময় যাচ্ছিল ততই বিরাজের প্রতি ক্ষোভ শুধু যে মিলে আসতে লাগল তা নই, ধীরে ধীরে শ্রদ্ধায় বিস্ময়ে রূপান্তর হয়ে দেখা দিতে লাগল নীলাম্বরের চোখে।

তাই মাঝে মাঝে আপনার প্রিয়জনের তিক্ত ভাষার আচরণে মন ক্ষুণ্ণ করতে নেই। একটি বার এর পিছনের কারণ নিয়ে ভাবলে আপনার প্রিয়জনের উপর আপনার রাগ থাকবেনা। এই প্রিয়জন হতে পারে আপনার সহধর্মিনী, বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অথবা যে কোনো গুরুজন।

অনেক সময় বাবা-মা, শিক্ষক বকা দিলে আমরা তাদের উপর রাগ করি, দুঃখ দিয়ে কথা বলি,গালাগাল দেয়। অথচ আমরা এই ভাবিনা যে তারা আমাদের সাথে কখনো এমন আচরণ করতে চাইনা, এমনটা তাদের স্বভাব নই; যারা বেশিরভাগ সময় ধরে আমাদের শুধু ভালোই বাসে। হইতো মাঝে মাঝে পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে তাদের আচরণের একটু ভারসাম্য নষ্ট হয় কিন্তু ক্ষণিক বাদে আবার আপনাকে কাছে টেনে নেই, সব ভুলে গিয়ে বুকে জড়িয়ে নেই।

……………”বিরাজ একমুহূর্ত স্বামীর মুখের পানে স্থিরভাবে চাহিয়া থাকিয়া বলিল, দেখ, মাথাটা একটু ঠাণ্ডা কর। যাদের দুবেলা ভাত জোটে না, তাদের মুখে এ কথা শুনলে লোকে গায়ে থুথু দেবে। কিসে আর কিসে, তুমি চাও জমিদারের ছেলের সঙ্গে লড়াই করতে!

কথাটা এতই রূঢ়ভাবে বিরাজের মুখ দিয়া বাহির হইয়া আসিল যে, নীলাম্বর সহ্য করিতে পারিল না, সে একেবারে অগ্নিমূর্তি হইয়া উঠিল। চেঁচাইয়া বলিল, তুই আমাকে কি কুকুর-বেড়াল মনে করিস যে, যখন তখন সব কথায় ঐ খাবার খোঁটা তুলিস! কোন্ দিন তোর দুবেলা ভাত জোটে না?

দুঃখে-কষ্টে বিরাজের আর পূর্বের ধৈর্য এবং সহিষ্ণুতা ছিল না, সেও জ্বলিয়া উঠিয়া জবাব দিল, মিছে চেঁচিও না। যা করে দু'বেলা ভাত জুটচে, সে তুমি জান না বটে, কিন্তু জানি আমি, আর জানেন অন্তর্যামী। এই নিয়ে কোন কথা যদি তুমি বলতে যাও ত আমি বিষ খেয়ে মরব।

বলিয়াই মুখ তুলিয়া দেখিল, নীলাম্বরের মুখ একেবারে বিবর্ণ হইয়া গিয়াছে, তাহার দুই চোখে একটা বিহ্বল হতবুদ্ধি দৃষ্টি—সে চাহনির সম্মুখে বিরাজ একেবারে এতটুকু হইয়া গেল। সে আর একটা কথাও না বলিয়া ধীরে ধীরে সরিয়া গেল। সে চলিয়া গেল, তবুও নীলাম্বর তেমনই করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল।

তারপর একটা সুদীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বাহিরে আসিয়া চন্ডীমন্ডপের একধারে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া পড়িল। তাহার প্রচন্ড ক্রোধ না বুঝিয়া একটা অনুচ্চ স্থানের মধ্যে সজোরে মাথা তুলিতে গিয়া তেমনই সজোরে ধাক্কা খাইয়া যেন একেবারে নিস্পন্দ অসাড় হইয়া গেল।

কানে তাহার কেবলই বাজিতে লাগিল বিরাজের শেষ কথাটা—কি করিয়া সংসার চলিতেছে! এবং কেবলই মনে পড়িতে লাগিল, সেদিনের সেই অন্ধকারে গভীর রাত্রে ঘরের বাহিরে ভূশয্যায় সুপ্ত বিরাজের শ্রান্ত অবসন্ন মুখ। সত্যই ত! দিন যে কি করিয়া চলিতেছে এবং কেমন করিয়া যে তাহা ওই অসহায়া রমণী একাকিনী চালাইতেছে, সে কথা আর ত তাহার জানিতে বাকী নাই। অনতিপূর্বে বিরাজের শক্ত কথা শক্ত তীরের মতই তাহার বুকে আসিয়া বিঁধিয়াছিল, কিন্তু যতই সে বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিল, ততই তাহার হৃদয়ের সেই ক্ষত, সেই ক্ষোভ শুধু যে মিলাইয়া আসিতে লাগিল তাহা নহে, ধীরে ধীরে শ্রদ্ধায় বিস্ময়ে রূপান্তরিত হইয়া দেখা দিতে লাগিল। তাহার বিরাজ ত শুধু আজকের বিরাজ নয়, সে যে কতকাল, কত যুগ-যুগান্তের। তাহার বিচার ত শুধু দুটো দিনের ব্যবহারে, দুটো অসহিষ্ণু কথার উপরে করা চলে না! সে-হৃদয় যে কি দিয়া পরিপূর্ণ, সে কথা ত তার চেয়ে আর কেউ বেশী জানে না! এইবার তাহার দুই চোখ বাহিয়া দরদর করিয়া অশ্রু গড়াইয়া পড়িল।……………

বিরাজবউ- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ধন্যবাদ, ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ছবি: গুগল
©

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৩৪

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: সময় বদলেছে।
এখন বিরাজ বউ আয় করে; তবে তা সংসারে খরচের জন্য না, নিজের স্বাদ আহ্লাদ পুরোনের জন্য।
বিরাজ বউদের ভাষায়- স্বামীর উপার্যনে স্ত্রীর অধিকার আছে, কিন্তু স্ত্রীর উপার্জনে স্বামীর কোনো অধিকার নাই।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৩

অজানা তীর্থ বলেছেন: হতে পারে কিছু মেয়ে এমন করে তবে সবাই না। আর আমার লেখার লক্ষ্য হলো, অনেক সময় বাবা-মা, শিক্ষক বকা দিলে আমরা তাদের উপর রাগ করি, দুঃখ দিয়ে কথা বলি,গালাগাল দেয়। অথচ আমরা এই ভাবিনা যে তারা আমাদের সাথে কখনো এমন আচরণ করতে চাইনা, এমনটা তাদের স্বভাব নই; যারা বেশিরভাগ সময় ধরে আমাদের শুধু ভালোই বাসে। হইতো মাঝে মাঝে পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে তাদের আচরণের একটু ভারসাম্য নষ্ট হয় কিন্তু ক্ষণিক বাদে আবার আপনাকে কাছে টেনে নেই, সব ভুলে গিয়ে বুকে জড়িয়ে নেই। শুভকামনা আপনার প্রতি।

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্ট লিখেছেন। সুন্দর করে।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৪

অজানা তীর্থ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ রাজীব ভাই। আপনিও অনেক সুন্দর লিখেন। নিরন্তর শুভকামনা।

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:১৬

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ গল্পটি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৬

অজানা তীর্থ বলেছেন: গল্পটি মনে করে দিতে পেরেছি জেনে ভালো লাগলো আপু। নিরন্তর শুভকামনা আপনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.