নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"আমি নজরুল জুয়েল, খেতে অনেক পছন্দ করি, মাঝে মাঝে টুকটাক লিখতে ভালোবাসি, বর্ষাকাল আমার অনেক পছন্দ, এবং কফির দারুণ ভক্ত...\"

অজানা তীর্থ

আমি যদি আমার সম্পর্কে অবগত হইতাম, তাহলে লিখতাম।

অজানা তীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিঠি

০৮ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:০১


প্রিয়তমা,

মানুষের জন্মদিনের কথা তোমার মুখে এত শুনেছি যে চারুশিল্পী হলে সে মুহুর্তগুলো সব একসাতে জড় করে কতশত ছবি যে আঁকাতাম! প্রতিটি ছবির ক্যানভাস জুড়ে থাকতো শুধু তোমার হাসিমুখ। এই দেখ, অভ্যাসের তাড়নায় আবার সাহিত্যের মন ভুলানো কথা লিখছি, কোথায় যে একটু টাকা পয়সা ব্যবস্থা করার কথা নিয়ে চিন্তা করবো তা না করে দেখ চিঠি লিখতে বসেছি।

গত বছরের এই দিনে তোমার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানতে একদম ভুলে গিয়েছিলাম বলে অনেক রাগ করেছ। মুখ বুঝে, চোখের অশ্রুজল ধরে রেখে, মনের বিরুদ্ধে রাগচটা হয়ে অতটা নীতি বাক্য তোমাকে শোনাতে চাই নি মোটেও।

ইংলিশ ভার্সনের একটি গাইড বইটি লিখেছি তা তুমি জান। বাংলা ভার্সনে টাকা কম বলে ইংলিশ ভার্সনের গাইড বইটি লিখেছিলাম। অনেক নাম করা পাব্লিকেশন, মোটা অংকের টাকা জমা হয়েছিল, প্রায় ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু কী করবো? করোনার কারণে তারা বললো প্রায় ২৫ লাখ টাকা আমার মত অনেক লেখকের তারা দিতে পারছে না। তুমি তো জান আমি টাকার জন্য বই লিখি নি। এক পর্যায়ে নিজের সম্মানিটুকু, সম্মানি পাব্লিকেশনের থেকে না পেয়ে আমি নিজেও অনেক হতাশ হয়েছিলাম।

ডেপ্যুটি ম্যানেজারের সাথে ম্যানেজারে দা-কুমড়ো সম্পর্ক। অনেক মানুষের টাকা না দিতে পেরে বেচারা ড্যাপুটি ম্যানেজারও লজ্জা, ঘৃণায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। ম্যানেজারের সাথে অনেক যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয় নি। এক পর্যায়ে তো এমন হলো ম্যানেজার আর আমার কল ধরে না, বাংলা ভার্সন ডিপার্টমেন্ট এ গিয়ে তাকে কলে দেয়ার পর তিনি উত্তর দিলেও পরবর্তীতে আবার যে লাউ সে কদু। প্রায় একবছর হয়ে গেল। আমার লেখা তিনটি বই পর পর বের হলো। অথচ আমার কোনো কূলকিনারা হলো না। আসলে ফ্রিল্যান্স কাজ করাটা উত্তম হলেও লিগাল কোনো চুক্তি পত্র না থাকায় আমিও টাকার আশা ছেড়ে দিয়েছি। প্রাপ্তি বলতে এইটুকু দেশের হাজার স্টুডেন্ট এর মাঝে আমার চিন্তাচেতনার কিছু অংশ বিলিয়ে দিতে পেরেছি।

করোনার জন্য প্রায় একটি বছর সরাসরি প্রাইভেট পড়াতে পারি নি। অনেক স্টুডেন্ট অনলাইনে পড়তে চেয়েছিল। তুমি তো জান, অনন্ত আমার ভালো বন্ধু এবং রুমমেট। নিজের কম্পিউটার বলতে অনন্তের কম্পিউটারটি ছিল। গত একবছর জুড়ে সে বাড়িতে অবস্থান করছে। ইচ্ছে করে নিজের অ্যান্ড্রোয়েড সেটের ভাঙ্গা ডিস্প্লেও আর ঠিক করা হলো না। পনেরশ টাকা দিয়ে যাও ঠিক করেছিলাম দুদিনের মাথায় তা আবার নষ্ট হয়ে গেছে। এর পরে আর ঠিক করা হয়ে উঠে নি।

কী ভাবছ? অজুহাত দিচ্ছি, তা বলতে পার। মানুষের স্বভাব কেমন জান? কেউ যদি তোমার ব্যাপারে একদমই কিছুই না জানে, তাও সে মানুষটি তোমার একটি বিশেষণ খুঁজে বের করবে। আমার জন্য না হয় তুমি নিজেই একটি সুন্দর বিশেষণ খুঁজে রাখবে। এতে আমার রাগ হবে না, বরঞ্চ জেনে ভালো লাগবে তুমি আমাকে যতটুকু বুঝতে পেরেছ সে অনুসারে এই বিশেষণ। আজকালকার দিনে কজনই আছে যারা নিজের প্রিয়জনকে সত্যিকারের জানে অথবা বুঝে?

করোনার জন্য প্রায় একবছর যাবত গ্র্যাজুয়েশনটা শেষ হবার পথে পা পিছলে ল্যাংড়া আমের মৌসুমে এসেও পঙ্গুত্ব বরণ করে নিচ্ছে। সব জায়াগায় মানুষের এত আনাগোনা, এত ভীড়, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও দিব্যি চলছে ছাত্রছাত্রীদের শপিং। ঢাকার বাতাসে আমি করোনার গন্ধ একদম খুঁজে পাইনি সত্যি। বাবার চিকিৎসার টাকা জোগাতে গিয়ে তিনটি ঈদ ঢাকার বাতাসে মিশে গেল, বাড়ি যাওয়া আর হলো না। মা অত করে বললেন, তাও যেতে পারছি না। কী করে যাব? বাবার কথা মনে পড়লে খুব কষ্ট হয়। বড় আপুর চাকরীটাও চলে গেছে। মায়ের প্রাইমারী স্কুলের চাকরির টাকায় চলছে সংসার।

এই দেখ কি লিখতে কি সব আবত তাবল লিখছি তোমাকে!
সাহিত্য চর্চা করে কী লাভ বল? মাসের শুরু পকেটে একদম টাকা নেই। কাল জন্মদিনে কি দিব? গোলাপ নাকি হীরের আংটি? রবীন্দ্রনাথ হয়ে জন্মালে ভাবতে হতো না, তবে আমি হয়ে জন্মেছি বলে নিজেকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।

শুভ জন্মদিন প্রিয়তমা, অনেক বড় হও। তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি। আর হ্যা চিঠির উত্তর জানাতে একদম ভুলো না।

ইতি তোমার প্রিয়তম।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০২১ দুপুর ২:১৯

কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: প্রিয়তমাদের কাছে কোনো অভাব অনুযোগ করতে নেই। তাদেরকে কাঁচের পাত্রের মত সযতনে মুছে ধুয়ে রাখতে হয়।


কোনো প্রিয়তমাই বাস্তব বুঝবে না..... প্রেম আর প্রিয়তমারা স্বপ্নে বাস করে। সেখানে কোনো অভাব অভিযোগ থাকে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.