নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"আমি নজরুল জুয়েল, খেতে অনেক পছন্দ করি, মাঝে মাঝে টুকটাক লিখতে ভালোবাসি, বর্ষাকাল আমার অনেক পছন্দ, এবং কফির দারুণ ভক্ত...\"

অজানা তীর্থ

আমি যদি আমার সম্পর্কে অবগত হইতাম, তাহলে লিখতাম।

অজানা তীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসুস্থ শিক্ষাব্যবস্থা – পরিপূর্ণতা খুঁজতে গিয়ে যত সমস্যা! পর্ব-১

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:৫৮


ঢাকা ট্রিবিউন সেপ্টেম্বর 9, 2022 এর তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী মারা গেছে। তার মানে ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি (১৯৪ জন শিক্ষার্থী) যার পরিমাণ ৫৩.৩% এর সমান। অন্যদিকে, ৭৬ জন কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর হার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়াও ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং ৪৪ জন মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছে।

কেন এই আত্মহত্যা?

এর সঠিক কারণ যারা আত্মহত্যা করেছে তারা সবচেয়ে ভালো জানবে। আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু ব্যাপার শেয়ার করতে চাই। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় একটি মানুষিক ব্যাপার হলো, আমরা বেশিরভাগ সময় সব কিছুতে একদম পরিপূর্ণ খুঁজি

মনেকরুন, রহিম SSC সব বিষয়ে A+ পেয়েছে, করিম যে কিনা রহিমের ক্লাসমেট সেও A+ পেয়েছে তবে সব বিষয়ে না। সার্টিফিকেটের মানদণ্ড অনুযায়ী দুজনের জিপিএ কিন্তু সমান অর্থাৎ ৫.০০। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

সমস্যাটা হলো যদিও সবকিছুর মানদণ্ডের একটি স্ট্যান্ডার্ড আছে, তবুও নিজের মনের স্বস্তির জন্য আমরা নিজেরা কিছু অতিরিক্ত বিশেষণ যোগ করি, আর এখানেই সমস্যা। একটি উদাহরণ দেয়। বিকাল বেলা মিষ্টি বিতরণের সময় রহিমের বাবা কিংবা মা এই ব্যাপারটিকে “গোল্ডেন A+” হিসেবে প্রকাশ করছেন করিমের মা কিংবা বাবার কাছে যে তার ছেলে গোল্ডেন A+ পেয়েছে। বেচারা করিমের মা কিংবা বাবার চেহারাটা ফ্যাঁকাসে হয়ে গেল, আর মনে মনে হয়তো বলছে—হায় হায় আমার ছেলে কেন এত খারাপ করলো, কোথায় কমতি রেখেছি? এক গোল্ডেনে বৈষম্য।

প্রশ্ন ১। রহিম কী আসলেও করিমের চেয়ে ভালো??

এই পারফেকশন বা পরিপূর্ণতা যখন খোঁজা হয় তখন সবচেয়ে বেশি মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আমাদের দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঠিক যখন তারা অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী প্রবেশ করে। এনসিটিবি কারিকুলামে সাধারণত তিন কেটাগরিতে শিক্ষার্থীদের ভাগ করা হয়। বিজ্ঞান, ব্যবসা, এবং মানবিক বিভাগ। এখানেও বৈষম্য।

সাধারণত দেখা যায়, যে শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণীতে গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান এই দুটো বিষয়ে ভালো নম্বর পায় অথবা যারা জেএসসি তে ভালো জিপিএ পায় তারা বিজ্ঞান, তারপর ব্যবসা, এবং সব শেষে যারা তথাকথিত ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি তাদের জন্য মানবিক বিভাগ। আর এই ভাবে বাটারফ্লাই ইফেক্ট শুরু হয়ে যায় (বাটারফ্লাই ইফেক্ট বলতে বোঝায় কোনো ক্ষুদ্র ঘটনার ফলে ভবিষ্যতে এর বৃহদাকার প্রভাব সৃষ্টি)। এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা নিজ থেকে বিভাগ পছন্দ করার সুযোগ পায় না, হয় স্কুলের শিক্ষক কিংবা অভিভাবকরা ঠিক করে দেয় যে, শিক্ষার্থীর জন্য কোন বিভাগটি সবচেয়ে উপযোগী।

বাটারফ্লাই ইফেক্ট সম্পর্কে হয়তো একটু ধারণা পেয়েছেন। কোনো ক্ষুদ্র ঘটনার ফলে ভবিষ্যতে এর বৃহদাকার প্রভাব সৃষ্টি। আপনার মানবিক বিভাগের সন্তানের বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয়েছিল, হয়তো সে ডাক্তার হতে পারতো, হয়তো সে সবচেয়ে সুন্দর একটি স্থাপনা বানাতে পারতো।

অবশ্যই মানবিক বিভাগ থেকে পড়ে সমাজে অনেকে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে তবে যারা হচ্ছে না, কিন্তু কেন???
এইবার একটু বলি, আপনার মানবিক বিভাগ নেয়া সন্তান এসএসসি দিল, রেজাল্ট মোটামোটি, এইচএসসি দিল এখানেও রেজাল্ট মোটামোটি। কোনো স্বপ্ন নেই, ইচ্ছে নেই, এই সমাজে মানবিক বিভাগের কোনো দাম নেই। তারপর, কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকলো না, এতেও ক্ষতি নেয়, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী, মেধা কম, প্রাইভেটে ভর্তি হলো নামমাত্র সিজিপিএ নিয়ে পাশ করলো, চাকরী নেই, হয় বিসিএস, না হয় মনের বিরুদ্ধে নিজেকে কোথাও স্থাপন করে নিল, এই ভাবে যাচ্ছে জীবন।

"ক্লাস রোল নম্বর কত?? একটি স্টেরিওটাইপ বায়াস।"
সামাজিক মনোবিজ্ঞানে, স্টেরিওটাইপ মানে হলো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের সম্পর্কে একটি সাধারণ বিশ্বাস। যার রোল নম্বর ১-৫ এরা ভালো শিক্ষার্থী, এরা সর্বদা ভালো করে, ইত্যাদি। রোল নম্বর ২০, ৩০ কিংবা ৪০ এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না, অবহেলা আর অবহেলা। একদম সোজা হিসেব, স্কুল কলেজের সকল রোল নম্বর পদ্ধতি বাদ, পরীক্ষার খাতায় নাম লিখা বাদ। “2022309” টাইপের একটি আইডি থাকবে শিক্ষার্থীদের। যাতে করে রোল নম্বর কত? এই অসুস্থ প্রশ্ন যেন এই সমাজ থেকে উঠে যায়, শিক্ষকরা যেন খাতা দেখার সময় নাম দেখে কোনো পক্ষপাতিত্ব না করতে পারে।

প্রশ্ন ২। আচ্ছা খারাপ রোল নম্বর হলে সে শিক্ষার্থী পরবর্তীতে খারাপ করবে?

“The Whole Person Concept”
একজন ব্যক্তিকে আমরা 4 টি ভাগে ভাগ করতে পারি- শরীর, মন, হৃদয়, এবং আত্মা। সত্যিকারের সফল ব্যক্তিরা এই ৪টি বিষয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবে বেড়ে ওঠার গুরুত্ব বুঝতে পারেন। শুধু বুঝতে পারে না, আমাদের অসুস্থ শিক্ষা সমাজ, সাধারণ সমাজ, এবং সংকীর্ণমনা মানুষগুলো। এই চারটি বিষয়ের মধ্যে আপনি কোনটিকে উপেক্ষা করতে পারেন না। কারণ প্রতিটির সুস্বাস্থ্য নির্ধারণ করে যে আপনি কতটা উঁচুতে উঠবেন। শুধু ভালো বিভাগের শিক্ষার্থী হলে অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্ব শেষ না। তথাকথিত বেশিরভাগ স্কুল কলেজ ভার্সিটি এরা নামে মাত্র দায়িত্ব নিতে শিখেছে, তবে দায় নিতে শিখিনি। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনার সন্তানকে নিখুঁত ভাবে দেখুন, সে কিসে ভালো আর সে অনুযায়ী তাকে চাষ করুন, তাকে এম্পেথির জায়গা থেকে বুঝতে চেষ্টা করুন, সমাজে তার একটি সত্যিকারের ভেলু তৈরী করতে সহয়তা করুন। দেখবেন এতে করে আপনি আপনার সন্তানের শরীর, মন, হৃদয়, এবং আত্মার একটি চমৎকার সমন্বয়ে সাধন করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবেন।

“কমার্সের শিক্ষার্থীরা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে উচ্চতর গণিত নিতে পারবে না বাটারফ্লাই ইফেক্ট এর আরেকটি চমৎকার উদাহরণ”
আমার বন্ধু বিজনেস স্টাডিজ বিভাগ থেকে পড়ে পরবর্তীতে বিবিএ কমপ্লিট করে। ও আর আমি এক সাথে থাকতাম। ওর একটি কোর্স ছিল বিজনেস ম্যাথম্যাটিকস। ৪ মাসের এই একটি কোর্সে আমি দেখেছি তাকে আমার ইন্টারমেডিয়েটের বর্তমানে উচ্চতর গণিতের অনেক কিছু করতে হয়েছে। যার মধ্যে ছিল, স্থানাঙ্ক (Coordinates), সরলরেখা (Straight Line), ফাংশন ও সীমা (Function & Limit), অন্তরীকরণ (Differentiation), এবং যোগজীকরণ (Integration) ইত্যাদি ছিল। বেচারা তো কোনোরকম আমি থাকাতে ভালোই করেছে, তার কিছু বন্ধুবান্ধব থেকে শুনেছি এই সাবজেক্ট দুই তিনবার রিটেক নিতে। গণিত একটি সার্বজনীন বিষয়, কে কোন বিভাগ থেকে পড়ছে এটা বিষয় না। অথচ আমাদের এমন এক বৈষম্য শিক্ষা ব্যবস্থা যে, মেট্রিক আর ইন্টার্মেডিয়েটে উচ্চতর গণিত শেখার সুযোগ না থাকার ফলে ভবিষ্যতে এর বৃহদাকার প্রভাব সৃষ্টি হয়, টাকা নষ্ট, সময় নষ্ট, মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া।

"হেলো ইফেক্ট এবং আবগীয় বুদ্ধিমত্তা"
আমাদের সমাজে একটি শিক্ষার্থীর ভালো রেজাল্ট আছে, ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়লে সে সবকিছুতে ভালো। যেহেতু সে পড়ালেখায় ভালো, আমরা ধরে নিচ্ছি সে সবকিছুতে পারফেক্ট, এমনকী তার আচার আচরণ ব্যবহারের মধ্যে যে নেতিবাচক প্রভাব কাজ করতে পারে আমরা ভাবতেই পারি না। হেলো ইফেক্ট বলতে বুঝায়, আমরা যখন একটি মানুষের কোনো একটি দিক বিবেচনা করে তাকে সবদিক থেকে ভালো ধরে নেয়।

আমি দেখেছি আমার শিক্ষার্থীকে ছোট বেলা থেকে খুবই ভালো মেধাবী ছিল, আন্টি আংকেল, আশেপাশের মানুষ তাকে নিয়ে ভালো বলে। কারণ সে ভালো কলেজে পড়ে, ভালো বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন। অবশেষে দেখা গেলো তার এই ভালো শিক্ষার্থীর তোকমাকে পুঁজি করে মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সে মন্দ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে ফেললো। অতএব, প্রতিটি অভিভাবকের উচিৎ ঢালাওভাবে আপনার সন্তানের একটি ভালো দিক এর উপর নির্ভর করে তার সবকিছু থেকে নজর উঠিয়ে ফেলবেন না। মেট্রিক আর ইন্টারের শিক্ষার্থীদের যে বয়স থাকে এই সময়ে শুধু আইকিউর উপর নির্ভর না করে তাদের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বিকাশেও চোখ রাখুন। কারণ এ সময়ে শিক্ষারর্থীরা প্রচণ্ড আবেগী হয়, আবেগের জন্য মন্দ কিছুতে জড়িয়ে যেতে পারে। তারা আইকিউর উপর নির্ভর করে শুধু পড়ালেখার ক্ষেত্রে, কিন্তু বাকি অন্যান্য কাজে তাদের ইকিউ বা আবগীয় বুদ্ধিমত্তার উপর নির্ভর করে চলতে হয়।

আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত যদি কোনো কনসেপ্ট বুঝাতে ব্যার্থ হয়। কোথাও ভুল করে থাকলে অভিজ্ঞদের সহযোগিতা এবং গঠনমূলক মন্তব্য কামনা করছি। লেখার পরিধি ছোট রাখতে পর্ব অনুযায়ী করেছি। ধন্যবাদ নিরন্তর শুভকামনা।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:০৯

সোনাগাজী বলেছেন:



মনে হচ্ছে, আপনি রহিম কিংবা করিম নন; আপনি কি যদু, নাকি মধু; আত্মহত্যা করার পেছনে পড়ালেখা নয়, বেশীরভাগই অন্য কারণ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২২

অজানা তীর্থ বলেছেন: বেশীরভাগই অন্য কারণ! কী কারণ হতে পারে?

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:১১

সোনাগাজী বলেছেন:



ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা যদি আত্মহত্যা কম করে থাকে; পড়ালেখার শুরু ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু হোক; ক্রমেই নীচের দিকে আসুক; বেঁচে থাকুক।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৫

অজানা তীর্থ বলেছেন: ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা যদি আত্মহত্যা কম করে থাকে; পড়ালেখার শুরু ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু হোক; আপনার ইচ্ছে পূরণ হোক।

৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৩:১৫

সোনাগাজী বলেছেন:



আপনি কি ২০০৯ সালের পরের গ্রেজুয়েট?

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৭

অজানা তীর্থ বলেছেন: চাকরী দিবেন?

৪| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:০৩

সোনাগাজী বলেছেন:


লেখক বলেছেন: চাকরী দিবেন?
-আমার মন্তব্য পড়ার পর, ইহা জানতে চাওয়ার কোন দরকার আছে?

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:১২

অজানা তীর্থ বলেছেন: “আপনি কি ২০০৯ সালের পরের গ্রেজুয়েট?”
-আমার লেখা পড়ার পর, ইহা জানতে চাওয়ার কোন দরকার আছে? :P

৫| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: পুরো দেশই অসুস্থ।

২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৭

অজানা তীর্থ বলেছেন: বলা যেতে পারে! পুরো দেশই অসুস্থ।

৬| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৫

সোনাগাজী বলেছেন:



লেখক বলেছেন: “আপনি কি ২০০৯ সালের পরের গ্রেজুয়েট?” আমার লেখা পড়ার পর, ইহা জানতে চাওয়ার কোন দরকার আছে?

-দরকার আছে; বাংলাদেশ ২০০৯ সালের পর, ১টা খুবই সন্মানীত জেনারেশন সৃষ্টি হয়েছেন, "প্রশ্নফাঁস জেনারেশন"।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.