নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আখ্যাত

আমি একজন মন্দ মানুষ বলেই নিজেকে জানি। কারো দ্বিমত থাকলে সেটা তার উদারতা।

আখ্যাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

লিঙ্গবৈষম্য

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৩৫


অভূতবূর্ব অভিজ্ঞতা। কিন্তু শেয়ার করার মত কেই ছিলনা কাছে। কালকে উঠলাম এই বাসায়। আমাদের নতুন বাসা এটা। জানালার সাথে দুলছে আমের পল্লব। সব পল্লবেই মুকুল। খানিক থমকে দাঁড়িয়ে কল্পনা করি। চৈত্রের গুটি আম, বৈশাখের ডাঁসা আম, জ্যৈষ্ঠের পাকা আম। জানালা সংলগ্ন ঝুলন্ত দুলন্ত জীবন্ত তাজা আম। ওকে কল দিতে যেয়েও দেইনা। ওর মনটা একদম ভাল থাকেনা আজকাল।

কালকে যখন জানালায় দাঁড়িয়ে আমের মুকুল দেখছিলাম, তখনও নজরে পড়েনি। নামটাও জানা ছিল না। পরে জেনেছি। মৌটুসি। আজকে অফিস থেকে ফিরে ঘরে ঢোকার সময় জানালার দিকে চোখ পড়তেই দেখি.............
এই বাড়ির জানালার কাচ পূর্ববাংলার নির্বাচনকমিশনের চাইতেও বেশি নিরপেক্ষ আর স্বচ্ছ। ফলে ঘরের ভেতরের পক্ষ (আমি) বাইরের পক্ষের (ওদের) মলত্যাগের দৃশ্য পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি, স্পষ্টতম দৃষ্টিতে। অথচ বাইরের পক্ষ (ওরা) ভেতরের কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।

সংখ্যায় ওরা দুই। যুগল, কাপল, দম্পতি যাই বলুন। প্রেমিক-প্রেমিকা নাকি স্বামী-স্ত্রী, জানিনা। দু’জনেই সুন্দর। কিন্তু একটির রং আর ডিজাইন অন্যটির চাইতে বেশি উজ্জ্বল আর বেশি চমৎকার।

বেশি চমৎকার পাখিটিকে একদম কাছ থেকে দেখছি । এক বিঘতেরও কম দূরত্ব থেকে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ নিখুঁত নজর দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি। হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখার মত। আমার তর্জনী আর ওর চঞ্চল শরীরের মাঝে দূরত্ব ১০ মিলিমিটার। জানালার কাচের পুরুত্ব ১০ মিলিমিটার।

বেশি চমৎকার পাখিটির পিঠ অমাবস্যার মত কালো। মাথাও কালো, কিন্ত কালোর উপরে পিত্ত রঙের প্রলেপ। চিকণ লম্বা এবং নিচের দিকে বাঁকানো ঠোঁটটি কুচকুচে। পা জোড়াও তাই। গালা আর বুকের অর্ধেকটা কালো হিজাবে ঢাকা। আধুনিকা হিজাবীদের মত। বুকের বাকি অংশ আবছা হলুদ। পেট সাদা। বুক থেকে পেটের দিকটা হলুদ থেকে সাদার দিকে গ্রেডিয়েন্ট।

ওরাও এখানে নতুন। আমার মত। ওরাও ব্যস্ত বাসা তৈরির কাজে। তবে দু’জনের দায়িত্ব আলাদা। কম সুন্দর পাখিটি তীক্ষ্ণ কণ্ঠে কিচিমিচি করতে করতে চোখের পলকে উড়ে এসে থামছে। চমৎকার পাখিটিও একই ভাবে বিদ্যুৎ বেগে উড়ে এসে বসছে।
কম সুন্দর পাখিটির মুখে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম (সোনপাপড়ির মত) উপকরণ। ঘর বানানোর উপকরণ। আর চমৎকারটির শূন্য ঠোঁটৈ অবিরাম কিচিমিচি। কম সুন্দরটা উড়ে এসে থেমে, দুই লাফ দিয়ে চলে যায় বাসা বানানোর ডালে, চোখের পলকে। শুরু করে কাজ। অধা মিনিট। আর চমৎকার পাখিটা ততক্ষণ বসে থাকে ডালে। ঈষৎ খোলা জানালার দিকে সাবধানী দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে, পাছে কোন বিপদ এসে হানা দেয়।
কাজ শেষ। আবার উড়াল। একসাথে। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে কিচিমিচি অব্যাহত। কিচিমিচি শব্দ বিলীন হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ। সন্তর্পণে এগিয়ে যাই। জানালার ফাঁকটুকু বন্ধ করে দেই। আবার ফিরে আসে। কিচিমিচি স্পষ্ট হতে হতে জানালার কাছে চলে আসে।
কম সুন্দরটার একাই কাজ করে। মুখে করে খড়কুটা বয়ে আনে। তার পর তাই দিয়ে বাসা বোনে। আর চমৎকারটা যত বার আসে, খালি মুখে উড়ে এসে ডালে বসে। এইযে এখন, আমার জানালার কাচে ঠোকর মারছে। থাইগ্লাসের প্রান্ত খামচে ধরে ঝুলে আছে। সম্ভবত নিজের ছবিকে অন্য কোন পাখি ভেবে বীর বিক্রমে ঠোকর মারছে। ডানা দিয়ে ঝাপটা মারছে। আমি তর্জনী ছোঁয়াই। ঠোকরের জায়গার কাচে। নিরোপেক্ষ কাচ। ওর মলত্যাগের দৃশ্যটিও আমি দেখছি। অথচ আমার তর্জনীর আবছা ছায়াটিও দেখতে পারেনা ও। ১০ মিলিমিটার দূর থেকেও।

কোনটি নারী আর কোনটি নর, জানিনা। কিন্তু প্রকৃতি বড্ড অবিবেচক। বড়ই পক্ষপাতদুষ্ট। অলঙ্ঘনীয় এক বৈষম্য চাপিয়ে দিয়েছে তাবত প্রাণীকুলের ঘাড়ে।
• কেউ হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ঘর বানায় আর কেউ ডালে বসে শুধু জানালা পাহারা দেয়।
• কেউ গাধা খাটুনি খেটে খড়কুটা বয়ে আনে, আর কেউ শুধু তাকে সঙ্গ দেয়। কর্তৃত্ব খাটায়।
• কেউ বাসা বোনে আর কেউ জানালার কাচের সাথে আরামছে দোল খায়, নিজের ছবির সাথে বীরত্ব দেখায়। ব্যাস, দায়িত্ব শেষ।
• কেউ প্রাণ যায় যায় প্রসব বেদনা সয়ে ডিম পাড়ে, আর কেউ উড়ে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়। হেসে খেলে পোকা খায়। নেচে গেয়ে ফুলে ফুলে মধু খায়। (মৌ চুষে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০৮

হাবিব বলেছেন: লিঙ্গ বৈষম্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালো।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০৫

আখ্যাত বলেছেন: বরং অপরিহার্য

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৩৮

মা.হাসান বলেছেন: সামাজিক ভাবে লিঙ্গ বৈষম্য দূর হতে অনেক সময় লাগবে। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হয়েছে।নিজ লিঙ্গ নিয়ে যারা নিজেদের বৈষম্যের শিকার ভাবছেন তারা সার্জারি করিয়ে লিঙ্গান্তর করাতে পারেন। পরিবর্তন পার্ফেক্ট হয় না, তবে বাহ্যিক ভাবে যা হয় তা সামাজিক বৈষম্য দূর করার জন্য যথেষ্ঠ।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০৯

আখ্যাত বলেছেন:
কিছু কিছু বৈষম্য দরকারী, সমর্থিত, বরং সমাদৃত।

৩| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: প্রকিতির হিসান নিখুঁত।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০৭

আখ্যাত বলেছেন: সন্দেহ নেই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.