নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দিকভ্রান্ত পথিক

দিকভ্রান্ত*পথিক

আমি নিরপেক্ষ নই, আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে!

দিকভ্রান্ত*পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচারের রায় ও বিএনপির নীরবতা---ফ্যাক্ট থেকে অনেক দূরে বিএনপি।জনতার সাথে থাকতে সংহতি জানান!

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:২৯







যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের একটি রায় নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি দ্বিতীয় রায় মেনে নিতে পারেনি। তাদের বক্তব্য: ‘ছয়টি অভিযোগের পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে আরও কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত ছিল।’ বেশির ভাগ ব্যক্তি কাদের মোল্লার ফাঁসি আশা করেছিলেন। এ রায় নিয়ে যখন দেশের বহু মানুষ, দল বা সংগঠন সোচ্চার তখন বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এটা স্বাভাবিক বলে মনে হয় না। বিএনপির এ নীরবতাকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা বললে অত্যুক্তি হয় না। একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল সুবিধাবাদিতা দিয়ে চলতে পারে না। তাদের একটা বক্তব্য থাকতেই হবে। কারণ, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা দলের লাখ লাখ নেতা ও কর্মীকে বিএনপি এভাবে অসহায় অবস্থায় রাখতে পারে না। চুপ থাকাটা রাজনীতি নয়। তাঁদের কথা বলতেই হবে।



বিএনপি সম্পর্কে জনমনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন ১. বিএনপি কি এ বিচারে খুশি নয়? ২. মন্তব্য করে বিএনপি কি জামায়াতের বিরাগভাজন হতে চাচ্ছে না? ৩. বিএনপি কি চেয়েছিল কাদের মোল্লা বেকসুর খালাস পেয়ে যাক?



এটা মানতে হবে যে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যু নিয়ে তেমন স্পষ্ট অবস্থান নিতে পারেনি। আমার ধারণা, স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া তাদের পক্ষে কঠিন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুটা এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়ন করে ফেলবে, তা বোধ হয় বিএনপি ভাবতেই পারেনি। বিএনপির এখন শাঁখের করাত অবস্থা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সোচ্চারভাবে সমর্থন করলে জামায়াতের সহযোগিতা থেকে তারা বঞ্চিত হবে। বঞ্চিত হলে তাদের পক্ষে নির্বাচনে জয়ী হওয়া দুরূহ হতে পারে। আর ক্ষমতায় যেতে না পারলে সামনে তাদের জন্য অনেক বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। দল টিকিয়ে রাখাই হবে এক বড় চ্যালেঞ্জ। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায়ের বিরোধিতা করলে বিএনপির ভেতরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ গ্রুপ, দলের অগণিত সমর্থকদের মুক্তিযুদ্ধ পক্ষ গ্রুপ, নিরপেক্ষ ভোটারদের এক বিরাট অংশ বিগড়ে যেতে পারেন। বিএনপির সঙ্গে থাকা বা তাদের পরোক্ষ সমর্থন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বিবেকের তাড়নায়। তাঁরা হয়তো সবাই আওয়ামী লীগের ক্যাম্পে যাবেন না। তবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বেন। বিএনপির অনেক ভোট কমে যাবে। এখন কোন কূল রক্ষা করবে বিএনপি?



তবে বিএনপি বলতে পারে: ‘প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হলে আমরা কিছু বলব না। কিন্তু বিএনপি যদি মনে করে বিচার নিরপেক্ষ হয়নি, দলীয় বিবেচনায় হয়েছে, তাহলে বিএনপি সরকার গঠন করলে প্রতিটি বিচার ও রায় রিভিউ করা হবে। এবং রিভিউতে যদি প্রমাণিত হয় বিচার ও রায় নিরপেক্ষ হয়নি, তখন আমরা আইনানুগভাবে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’



দেশের বেশির ভাগ মানুষের যে সেন্টিমেন্ট, বিশেষ করে তরুণদের যে সেন্টিমেন্ট, তা বিবেচনায় নিলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ নেই। দলের কিছু ক্ষতি হলেও বিএনপিকে এ বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই।



আমরা জানি, বিএনপিতে নানা দলের, নানা মতের নেতা ও কর্মী যুক্ত হয়েছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের ক্যারিশমা ছিল এ দলের প্রধান সম্পদ। অন্যান্য দলের অনেক বড় নেতা ও ত্যাগী কর্মী এ দলে যোগ দিয়েছিলেন। পরে খালেদা জিয়াও সংগ্রামে, আন্দোলনে যথাযথ নেতৃত্ব দিয়ে দলটিকে একটি প্রধান দলে পরিণত করেছেন। অনেক প্লাস পয়েন্ট থাকা সত্ত্বেও বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো: মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে দলটির অবস্থান ও বক্তব্য পরিষ্কার নয়। দলটি কখনো কখনো বিপরীত অবস্থানও নিয়ে থাকে। অথচ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ একটি বড় ইস্যু। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে তত দিন এ ইস্যুটা থাকবে। এটা শুধু ইতিহাসও নয়, এটা প্রচণ্ড আবেগের জায়গা। তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, কিন্তু ইতিহাস পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা দেখেছে। তাদের যা খুশি তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আগামী দিনের রাজনীতিতে প্রধান ফ্যাক্টর হবেন এই তরুণেরাই। কাজেই তরুণদের চিন্তা ও মতের বিপরীতে গিয়ে বিএনপি ভালো ফল অর্জন করতে পারবে না। সব তরুণ আওয়ামী লীগপন্থী নয়। তবে বেশির ভাগ তরুণ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক। বিএনপিকে এ বাস্তবতা বুঝতে হবে। এটা বুঝতে ব্যর্থ হলে তাকে হারাতে হবে অনেক কিছু।



যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় বিএনপিকে একটা সুযোগ এনে দিয়েছে। তারা ক্রমে ক্রমে অবস্থান বদলাতে পারে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাছে নিজেদের টেনে আনতে পারে। বিএনপিকে এক দিনেই ইউটার্ন দেওয়ার দরকার নেই। আস্তে আস্তে দলকে বদলাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিকে।

আবার আওয়ামী লীগ যা বলছে, সেটাই মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ইতিহাস নয়। মুক্তিযুদ্ধের বহু ডাইমেনশন আছে। বহু বীর আছেন। আওয়ামী লীগ শুধু তাঁদের কথা বলে। তাঁদের কথাও সম্পূর্ণভাবে বলে না। বললে আজ তাজউদ্দীন আহমদ উপেক্ষিত হতেন না। কাজেই বিএনপি তাদের মতো করে ইতিহাস অবিকৃত রেখেও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু, এ কথা মানতেই হবে। সিরাজউদ্দৌলাকে অস্বীকার করে পলাশীর যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা চলে না। বিএনপিকে এসব কথা বুঝতে হবে। গায়ের জোরে বা দলের জোরে ইতিহাস অস্বীকার করা যায় না।



জগাখিচুড়ির রাজনীতির প্রতি মানুষ আস্থা রাখতে পারে না। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সংশোধন করলে আখেরে বিএনপিরই লাভ।



২.

আমেরিকার ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় সম্প্রতি খালেদা জিয়ার নামে যে প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। প্রবন্ধটি সমালোচনা হওয়ার মতোই। কার বা কাদের পরামর্শে খালেদা জিয়া তাঁর নামে এ প্রবন্ধ প্রকাশ করতে সম্মত হয়েছেন, জানি না। তবে বলতে পারি, সেই ব্যক্তিরা খালেদা জিয়া ও বিএনপির শুভার্থী নয়।



খালেদা জিয়া এমন এক সময়ে প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছেন, যখন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের নানা ব্যর্থতায় প্রায় কোণঠাসা। এক পদ্মা সেতু নিয়েই সরকারের অবস্থা প্রায় লেজেগোবরে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের রায় নিয়ে কোনোভাবে সরকার ও আওয়ামী লীগ আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ঠিক সেই সময়ে খালেদা জিয়া এ কাঁচা কাজটি করেছেন। সেই সুযোগ পুরোমাত্রায় গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। পদ্মা সেতুর কলঙ্ক নিয়ে বেশি আলোচনা হওয়ার সুযোগ না দিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে খালেদা জিয়ার প্রবন্ধ নিয়ে। সুযোগটা করে দিয়েছেন খালেদা জিয়া নিজেই।



খালেদা জিয়া দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। যিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। সে রকম একজন ব্যক্তি যখন দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানান, তখন তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পর্কে মানুষের মনে সন্দেহ জাগে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে তাঁর ধারণা যে খুব দুর্বল, তা-ও এতে প্রতিফলিত হয়েছে। এ প্রবন্ধ পড়ে আমার আরও মনে হয়েছে, তিনি দলের কিছু ব্যক্তির দ্বারা শুধু প্রভাবিতই নন, তিনি তাঁদের কাছে অসহায়। অবশ্য অসহায় হওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। এ অসহায়ত্ব অনেকাংশে শেখ হাসিনারও রয়েছে। দক্ষ নেতৃত্ব একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার ফল। এটা ঠিক ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়ার জিনিস নয়। আমাদের এ দুই নেত্রীর ক্ষেত্রে যা হয়েছে।



আমাদের দেশের বড় দুই দল এসব কথা বুঝতে চায় না। শুধু আবেগ দিয়ে চলতে চায়। আজ তারই খেসারত দিচ্ছে বিএনপি। রাজনৈতিক দল পরিচালনা ও রাষ্ট্র পরিচালনা অনেক বড় ব্যাপার। ‘কে একজন প্রবন্ধ লিখে দিল, আমি বুঝলাম কি বুঝলাম না, আমেরিকার পত্রিকায় ছাপিয়ে দিলাম।’ এভাবে রাজনীতি হয় না।

আমেরিকার সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিদিন বিস্তারিতভাবে জানে। খালেদা জিয়াকে নিবন্ধ লিখে সেই পরিস্থিতি জানাতে হবে না। খালেদা জিয়া বাংলাদেশে কী রাজনীতি করছেন, কী কী ইস্যুতে কথা বলছেন, সংসদে যান কি না, সংসদে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা পালন করছেন কি না, সেই খবরও তাদের জানা আছে।



বাংলাদেশে যদি শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্রবিরোধী কাজ করে, তার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া ও তাঁর দল দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলবেন। জনগণকে বোঝাবেন। সংসদে গিয়ে বক্তৃতা করবেন। দেশের মিডিয়ায় কথা বলবেন। জনমত তৈরি করবেন। এটাই তো গণতান্ত্রিক রাজনীতি।



বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার জন্য আমেরিকার বাজারে জিএসপি-সুবিধা বন্ধ না করার জন্য ব্যবসায়ীরা আমেরিকায় লবিস্ট নিয়োগ করছেন। এ সুবিধা বন্ধ হলে আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তৈরি পোশাক ব্যবসার ক্ষতি হবে। সেই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া জিএসপি-সুবিধা বন্ধ না করার জন্য আমেরিকার প্রতি আহ্বান জানানোই উচিত ছিল। তা না করে তিনি এ সুবিধা বন্ধ করার অনুরোধ করেছেন। এ বক্তব্য সমর্থনযোগ্য নয়।



আমার আশঙ্কা, খালেদা জিয়া কিছু ভুল উপদেষ্টার খপ্পরে পড়েছেন। ওয়াশিংটন টাইমস-এর এ প্রবন্ধ তার একটি প্রমাণ।

দেশের রাজনীতি, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও বিদেশি সরকার সম্পর্কে খালেদা জিয়ার কাছে আরও বাস্তবসম্মত ধারণা দেশবাসী আশা করে।




 মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: মিডিয়া ও উন্নয়নকর্মী।



___________________________________________________

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর এর দারুন বিশ্লেষণধর্মী লেখাটি প্রথম আলোর খোলা কলম অংশে প্রকাশিত হয়েছে।



ছবিঃ ইন্টারনেট।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪০

সু্মিত বলেছেন: বি এন পির মত পতিতা দলের সংহতির দরকার নাই আমাদের। তারা দুরে গিয়া মরুক।

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৮

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: ঠিক

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৩

প্রিন্স অফ পার্সিয়া বলেছেন: বিএনপি? থাক আর কিছু কইলাম না!! X( X( X(

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৩

দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: হুুম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.