![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অর্থ নয় কীর্তি নয় সফলতা নয় আরো এক বিপন্ন বিস্ময় অন্তর্গত রক্তের ভেতর খেলা করে।
আমার পিতৃকূলে দুইজন আবুল হাশেম আছেন একজন এইচ এম আবুল হাশেম, অপর জন শুধু আবুল হাশেম (ডাকা হয় ডাকাইত আবুল হাশেইম্যা)।
জনাব এইচ এম আবুল হাশেম পেশায় ছিলেন সচিব। এখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কনসালটেন্সী করেন। ভদ্রলোক প্রায়ই বলেন, “মাঝে মাঝে আসবে কিন্তু উজ্জ্বল। ইয়ংরা সিনিয়র সিটিজেনদের সাথে কথা বলতে চায়না। তাছাড়া আজকালকার ছেলেপেলেদের সাথে কথা বলেও আসলে আরাম পাইনা। তবে ইউ আর ডিফারেন্ট। তোমার সাথে কথা বলে আরাম পাই।” আমি আসলে এই ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে আরাম পাইনা। সারাক্ষণ নিজের কীর্তি বর্ণনা, আর ছেলেদের গল্প। ইহুদি নাসারাদের দেশে গিয়েও তার ছেলেরা কিভাবে ঈমান ঠিক রেখে চলেছে সেই গল্প। আমেরিকানরা কতটা খারাপ সেই গল্প। আবার তার আমেরিকা প্রবাসী ছেলে এবং তার বউ সেদেশের ভারসিটিতে কিভাবে মেধার স্বাক্ষর রেখে এখন প্রফেসারি করছে সেই গৌরবময় গল্পও চলে পাশাপাশি।(যার অধিকাংশই সত্য মিথ্যা মেশানো) একই প্রসংগে ঘুরপাক খাওয়া এরকম লোকের সাথে কথা বলতে আমার ভাল লাগেনা।
আমার পিতৃকূলের শেষোক্ত আবুল হাশেম (যাকে ডাকা হয় আবুল হাশেইম্যা) পেশায় একজন ডাকাত। শুধু ডাকাত বললে আজ থেকে দশ বছর আগেও ঠিক ছিল। এখন শুধু ‘ডাকাত’ পরিচয়ে এই লাইনে তার স্ট্যাটাস বোঝা যাবেনা। তিনি এখন আন্ত:জেলা ডাকাত দলের সরদার।
আবুল হাশেম আমার গ্রাম সম্পর্কের চাচা। আমরা ডাকতাম আবুল হাশিম্যা চাচা। রক্ত সম্পর্কীয় কেউ না হলেও গ্রামে এই প্রতিবেশী চাচারা রক্তের সম্পর্কের চেয়ে কম কিছু নয়। ছোট বেলায় যখন গ্রামে যেতাম তখন আবুল হাশিম্যা চাচা আমাকে কাধে করে গুদারা ঘাট বাজারে নিয়ে যেত। টিনের পিরিচে মিষ্টি খেতে দিত। আমি চামচে কেটে কেটে সেই মিষ্টি খেতাম। চাচা বলতো “ ভাতিজা চা খাইবা নি?” আমি মাথা নেড়ে না করতাম। “ ছোটদের চা খেতে নাই”।
আবুল হাশেম যখন বিশ বাইশ বছরের তরুন তখন থেকেই তার ডাকাতিতে হাতেখড়ি। সেই সময়ে আমাদের গ্রামে এটা কোন বিশেষ ঘটনা ছিলনা। তখন পোলাপান লায়েক হলে অনেকেই এই কাজটি করতো, একধরনের এডভেন্চার হিসেবে।একধরনের গ্রামীন স্মার্টনেস। (আজকাল শহুরে ছেলেরা যেমন গাজা বা ইয়াবা খায় সেরকম আরকি।) তবে তাদের একটা নীতি ছিল। নিজ গ্রামে কেউ এসব করতো না। অবশ্য ডাকাতি না করলেও অসুবিধা নাই। গ্রামের জোয়ান ছেলেদের দুই একটা ডাকাতির মামলা এমনিতেও জুটে যেত।
সেবার আবুল হাশেম সম্ভবত ডাকাতির ভাগ হিসেবে পেল একটা হারমোনিয়াম। গ্রামে বেড়াতে গেলাম পরে আবুল হাশিম্যা চাচা আমাকে ডেকে বলল “ ভাতিজা আইজ রাতে আসর হইব।” বলে রাখা ভাল আমাদের ঐ গ্রামের প্রায় সব পরিবারেই টুকটাক গান বাজনার চর্চা ছিল। কারোরই কোন ওস্তাদ লাগতোনা। নিজেরাই হারমেনিয়াম বাজিয়ে গান করে ফেলতে পারতো। রবীন্দ্র সংগীত , নজরুল সংগীত, বিচ্ছেদী , মারফতী সব রকম গানের চর্চাই হতো। সুর বেসুর কোন বিষয় না। গান গাওয়াটাই আসল কথা।
ভাতিজা একটা ‘রবীন্দ’ সংগীত গাই। রাতের আসরে সেই সময়ের শৌখিন ডাকাত আবুল হাশেম গান ধরে …..তুই ফেলে এসেছিস কারে মন, মনরে আমার,
তাই জনম গেল শান্তি পেলি নারে মন , মন রে আমার।
গান শেষে আবুল হাশেমের দুই চোখ দিয়ে পানি পড়ে। “শান্তি পাইলাম না ভাতিজা, জীবনে শান্তি পাইলামনা”।
তার শেষোক্ত বাক্য যুগল অমাস্যার রাতে গ্রামের অন্ধকার উঠানে দুরাগত বাতাসের হাহাকারের মত শোনাল “শান্তি নাই ভাতিজা”।
পুনশ্চঃ দীর্ঘদিন পর কিছুদিন আগে আবার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আবুল হাশিম্যা চাচা বাড়িতেই ছিল। (তাকে বাড়িতে খুব একটা পাওয়া যায়না। অধিকাংশ সময় জেল খানাতেই থাকে।) তাকে খুব দেখার ইচ্ছা ছিল। আমাকে সে দেখা দেয়নি। সকালে আমার জন্য আমার প্রিয় রসের পিঠা পাঠিয়েছে। শুনেছি রাত থেকেই সে কাকে নাকি মোবাইলে বকাবকি করছিল। “ ঢাকা থেইকা আমার ভাতিজা আসছে। ভাতিজার লেইগা কাইলকা সকালের মধ্যেই………
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৯
অমিয় উজ্জ্বল বলেছেন: উত্তর টি দিয়েছি।
৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:২৯
হাসান মাহবুব বলেছেন: ডাকাতি করা স্মার্টনেস ছিলো! এমন কথা তো আগে শুনি নাই।
২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৩৮
অমিয় উজ্জ্বল বলেছেন: আমাদের গ্রামটা এরকমই ভাই। এখন মাইরের চোটে কিছুটা ঠিক হইছে। ১৯৮৯ সালে এক ফ্যামিলির ৭ জন খুন হইছিলো। সারাদেশে তোলপাড় হইছিল। এরপর থেইকা ঠান্ডা হইতে শুরু করছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৫৬
মো. আবুল হোসেন, শিবচর, মাদারিপুর বলেছেন:
আপনার এ পোস্টে আমার যে একটি প্রশ্ন ছিল।