নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমিয় উজ্জ্বল

অমিয় উজ্‌জ্‌বল

অর্থ নয় কীর্তি নয় সফলতা নয় আরো এক বিপন্ন বিস্ময় অন্তর্গত রক্তের ভেতর খেলা করে।

অমিয় উজ্‌জ্‌বল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসংগ হোমিওপ্যাথি- ২, ভুলের রাজ্য

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:০০

হোমিওপ্যাথি শব্দটি এসেছে গ্রীক ‘হোমিওস’ ও ‘প্যাথোস’ শব্দ দুটি থেকে। হোমিওস মানে হলো like বা same। প্যাথোস মানে SUFFERING বা কষ্ট বা রোগের লক্ষণ। অর্থাৎ পুরোটির অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘একই রকম রোগ লক্ষণ’। একই রকমের রোগলক্ষণ বিশিষ্ট একজন মানুষকে একটি বিশেষ শ্রেনীভুক্ত ধরে একটি নির্দৃষ্ট ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করার পদ্ধতিই হলো ‘হোমিওপ্যাথি’। তাই হোমিওপ্যাথিকে বাংলায় বলা যায় ‘সদৃশ বিধান’।



হোমিওপ্যাথিকে বুঝতে হলে এর ইতিহাসটি জানা দরকার। হোমিওপ্যাথির শুরু হলো কিভাবে? কিভাবে পাওয়া গেল এই সমলক্ষণের তত্ব? হোমিওপ্যাথির জনক সামুয়েল হানেমান (জার্মান ভাষায়: Samuel Hahnemann) ছিলেন একজন জার্মান চিকিৎসক। তিনি জার্মানির স্যাক্সনি প্রদেশে ১৭৫৫ সালের ১০ এপ্রিল জন্ম নেন।[ তিনি ১৭৯৯ সালে এমডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি পল্ল িচিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন, একপর্ািয়ে তা ছেড়েও দেন। এরপর তিনি মেডিকেল সায়েন্সের টেক্সটবুক অনুবাদ করা শুরু করেন।

১৭৯০ খ্রীষ্টাব্দে ‘মেটিরিয়া মেডিকা’ বলে ডাঃ উইলিয়াম কালেনের একটি স্কটিশ মেডিকেল টেক্সটবুক অনুবাদ করার সময় হ্যানিম্যান একটি অভিজ্ঞতার মুখমিুখি হন। মেটিরিয়া মেডিকা অনুবাদ করার সময় তিনি লক্ষ করেন যে সিনকোনার রস একটু বেশী মাত্রায় খেলে কপিুনি দিয়ে জ্বর হয় । তখন তিনি নিজে এই রস খেয়ে দেখেন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ও বন্ধুবান্ধবদের খাওয়ান। দেখেন সবারই কাপুনি দিয়ে

জ্বর আসচ্ছে ও অন্যান্য কিছু লক্ষন দেখা দিচ্ছে। তিনি এই লক্ষন গুলি লিপিব্দ্ধ করে রাখেন এবং পরে ঐ রকম লক্ষন যুক্ত কোনো রোগী এলে তাকে সল্প মাত্রার সিনকোনার রস খাইয়ে দেখলেন তার ঐ কাপুনি দিয়ে আসা জ্বর সেরে গেছে ও অন্যান্য লক্ষন গুলিও চলে গেছে। (উইকিপিডিয়া)

মূলত এটাই হলো হোমিওপ্যাথির ভাবনা সূত্র। কিন্তু এত বড় একটা ডাহা ভুলের উপর কিভাবে একটি চিকিৎসা শাস্ত্র দাড়িয়ে যায় ভাবতে অবাক লাগে। শুধু দাড়িয়েই যায়নি সেটা আজ অবধি চলছে। ভুলটি কোথায়? ভুলটি হলো সিনকোনা গাছের রসে আসলে েএকধরনের েউপাদান থাকে যার ফলে সিম্পটমস অব সিনকোনিজম হয় যার লক্ষণ হলো জ্বর আসা , শরীরে কাপুনি ,গিড়ায় ব্যাথা প্রভৃতি। একই সাথে সিনকোনা গাছের বাকলে আছে ‘কুইনিন’ যা ম্যালেরিয়ার ওষুধ। ফলে হ্যানিম্যানের এই তত্ত্ব সিনকোনা রসের ক্ষেত্রে অবজারভেশনাল ফাইন্ডিংস ছিল, ফ্যাক্ট ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ সিনকোনিজম আর কুইনিনের মেকানিজম অব একশন সম্পূর্ণ আলাদা।

কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে হ্যানিম্যান তার এই ভুলটি বুঝতে ব্যার্থ হলেন এবং এখান থেকেই তার like cures like থিওরি আবিষ্কার করলেন। এই থিওরি বলে যে

"that which can produce a set of symptoms in a healthy individual, can treat a sick individual who is manifesting a similar set of symptoms." অর্থাৎ যে রাসায়নিক পদার্থ বা ওষুধ সুস্থ মানুষের দেহে সকল লক্ষণ তৈরী করে অসুস্থ অবস্থায় ঐ লক্ষণ গুলো দেখা দিলে ঐ ওষুধ স্বল্প মাত্রায় প্রয়োগ কররে ঐ সমলক্ষণ বিশিষ্ট মানুষগুলি সুস্থ হয়ে যাবে। এই সূত্র অনুযায়ী যেহেতু একজন সুস্থ মানুষকে কীটনাশক অরগানোফসফরাস খাওয়ানো হলে তার চোখের মনি ছোট হয়ে আসে, শ্বাসনালীতে সিক্রেশন বেড়ে যায় বা শ্বাস কষ্ট শুরু হয়,খিচুনি হয় সেহেতু এই সব লক্ষণ বিশিষ্ট(অর্থাৎ চোখের মণি ছোট,শ্বাসকষ্ট,খিচুনি) মানুষকে অরগানো ফসফরাস স্বল্প মাত্রায়(মানে ডাইলিউট করে) খাওয়ালে ভাল হয়ে যাবে।(??????) বা যেহেতু সুস্থ মানুষ বেশী পরিমানে ব্যাথার ওষুধ ডাইক্লোফেনাক খেলে কিডনী ফেইলিউরে আক্রান্ত হয় সুতরাং কিডনী ফেইলিউরের রোগীকে স্বল্প মাত্রার ডাইক্লোফেনাক খাওয়ালে কিডনী ফেইলিউরের রোগীরা সুস্থ হয়ে যাবে। কি সাংঘাতিক কথা! এখানে রোগের প্যাথোফিজিওলজী বা কাযকারণ মূখ্য নয়,ওষুধের মেকানিজম অব একশন ও গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো set of symptoms বা লক্ষণের সাদৃশ্য। এটাই হ্যানিম্যানের বিখ্যাত ‘ডকট্রিন অব সিমিলারিটি’। মূলত এটা ছিল হ্যানিম্যানের অবজারভেশনাল ইরর (OBSERVATINAL ERROR)। কারণ তিনি সিনকোনিজম এবং কুইনিনের একশন এর মধ্যে পার্থক্যটি ধরতে পারেননি। এভাবেই এক বিরাট ভুলের ভেতর দিয়ে শুরু হয় হোমিওপ্যাথি।

ভাবতে পারেন শুরুতে ভুল ভ্রান্তি তো হতেই পারে। নিশ্চয়ই হোমিওপ্যাথি সেখান থেওেক গত তিনশ বছরে অনেক এগিয়েছে। দু:খজনক হলেও সত্যি যে হোমিওপ্যাথি এখনো এই like cures like থিওরির উপর ভর করেই চলছে। আরো মজার বিষয় হলো যে সিনকোনা গাছের রস আর ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা থেকে এর সূত্রপাত সমপ্রতি WHO প্রজ্ঞাপন জারি করে রীতিমত ওয়ারনিং দিয়ে দিয়েছে যে ম্যালেরিয়া রোগের ক্ষেত্রে যেন হোমিও চিকিৎসা প্রয়োগ না করা হয়। কিন্তু সব রোগের ক্ষেত্রেই কেন নয় সেটা একটা রহস্য। সম্ভবত PLACEBO হিসেবে এটা ভাল কাজ করে বলে। ঠিক বোধগম্য না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:২৪

অশুভ বলেছেন: ধন্যবাদ, লেখাটির জন্য। হোমিয়োপ্যাথির প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস ছিলো। আগে কখোনো এটার সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা খুজতে যাইনি। আপনার লেখা পড়ার পরে কিছু গুগলিং করে দেখলাম আপনার কথার সত্যতা। চালিয়ে যান সাথেই আছি।

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫

অমিয় উজ্‌জ্‌বল বলেছেন: াল লাগল আপনার মন্তব্য পেয়ে। লেখাটি সার্থক হয়েছে ধরে নেব। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য মিথ নির্ভর অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে, নির্দিষ্ট কোন পেশার বিরুদ্ধে নয়।

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:০১

রােশদ সুলতান তপু বলেছেন: কয়েকটা প্রশ্ন আমারও আছে- আশাকরি আপনার লেখায় এই বিষয়গুলোও একটু টাচ্ করে যাবেনঃ

এক- বাংলাদেশের প্রায় সব হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারদের ডাক্তারী পেশা হলো সেকেন্ডারী। তাদের প্রায় সবারই মূল পেশা হচ্ছে অন্য। যেমন কেউ মসজিদের ইমাম, কেউ মুয়াজ্জিন কেউ বেসরকারী শিক্ষক বা কেউ অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পরে সময় কাটানোর জন্যে ডাক্তার হয়েছেন। আমার প্রশ্ন হলো ডাক্তারীর মতো একটি পেশা কি কোন সৌখিন পেশা হতে পারে? (আমার অফিসের পাশে একজন আছেন যিনি হোমিওপ্যাথিক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত স্টোরকিপার)

দুই- আমাদের দেশের অনেক নামকরা হোমিও ডাক্তারদের সাইনবোর্ড লক্ষ্য করে দেখবেন তাদের ডাক্তারী ডিগ্রির আগে বড় করে লেখা বিএ অনার্স (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা দর্শন), এম এ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার প্রশ্ন হলো একজন ডাক্তারের জেনারেল লাইনের ডিগ্রিটাকে হাইলাইট করার উদ্দেশ্য কি।

তিন- যে কোন হোমিও ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলেই দেখা যায় মণ খানেক বই তার সংগ্রহে আছে। কোন এলোপ্যাথিক ডাক্তারের চেম্বারে তা দেখা যায় না কেন। হোমিওতেকোন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নেই- মানলাম হোমিওপ্যাথি গুণ বা লক্ষণ বিচার করে। আমার প্রশ্ন হলো সব ডাক্তারের তো আর বিচারিক ক্ষমতা সমান নয়- যেখানে প্যাথলজী পরীক্ষা অনেক সমাধান দেয়।

সবশেষে একটি মজার ঘটনাঃ হোমিও ডাক্তাররা কিন্তু তাদের বউয়ের ডেলিভারীর সময় এলোপ্যাথিক ডাক্তারের কাছেই বউকে নিয়ে যায়। :)

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪

অমিয় উজ্‌জ্‌বল বলেছেন: প্রশ্নটি আমারও। আমাদের এক স্যার ছিলেন , বাংলার অধ্যাপক। বাবু নিত্যানন্দ মালাকার। আমরা কিছু হলেই তার কাছে যেতাম। তিনি খুশী হতেন। তাকে খুশী করার জন্য কখনো কখনো আমরা এমনি এমনিই যেতাম। অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
বিষয়টি আমিও লক্ষ্য করেছি।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ২:২৭

মূর্খ রুমেল বলেছেন: Right u r.

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:০০

অমিয় উজ্‌জ্‌বল বলেছেন: থ্যাংক ইউ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.