নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স

অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাণিজ্যমেলায় বিজ্ঞানবাক্স (ছবি ব্লগ)- তাশমিন নূর

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:১৩

বিকেলের আলোয় দেবদারুর ছায়াগুলো দীর্ঘতর হয়ে এসেছে তখন। কালো কাপড় পরে ভূতের গল্পের ভূতেরা জবুথবু দাঁড়িয়ে যেন। নগর-বাহনের জানালার ধূসরিত কাঁচ ভেদ করে সূর্যের আপাত হেমবর্ণ আমার চশমার কাঁচে এসে ভাগ হয়ে যাচ্ছে আরও আরও রঙে। কিন্তু সেই রঙ মনকে উদ্বেলিত করছে না, বরং চোখকে বাঁচাতে হাতের আশ্রয় নিলাম কিছুক্ষণের জন্য। বহুদিন, আমি বহুদিন ধরে কী এক আলস্যের ব্যস্ততায় ফেসবুক, ব্লগ সবকিছু থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে আপন ঝিনুকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সেদিনের সেই ভ্রমণান্তের গল্প আমাকে হঠাৎ জাগিয়ে তুলল। ঝিনুকের খোলস থেকে বের হয়ে আসতে ইচ্ছে করল। মনে হলো, এমন অভিজ্ঞতা না লিখলেই নয়।

বাণিজ্য মেলায় যাইনি কখনোই আগে। গ্রাম-মফস্বলের সবুজ শ্যাওলা-আচ্ছাদিত দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঘে মেঘে রূপকথা খুঁজতে খুঁজতে এই অদ্ভুত শহরে এসে পড়েছি আমি। এসে একবার বই মেলায় গিয়েছি কেবল। কিন্তু পেশাগত কাজের সুবাদে এবার এই মেলায়ও যেতে হলো। বাণিজ্য মেলায় ঢুকেই আমি খুঁজছিলাম- স্টল নম্বর পিএস-৬৬। খুব বেশি পরিশ্রম করতে হলো না। পেয়ে গেলাম প্রধান প্রবেশ পথের হাতের বাম দিকে, ঝলমলে বেগুণি-গোলাপী আর কমলা রঙে মোড়া অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স’-এর স্টল ‘পিএস-৬৬’। বেশ ভীড় স্টলে। খোকা-খুকুদের বিস্ময়াভিভূত বড় বড় চোখ দেখে নিমেষেই ভালো হয়ে গেল মন। কেন এই বিস্ময়? এই আনন্দ? সন্দেহ নেই, নতুন শেখার আর নতুন জানার আনন্দে তারা চমকিত। মনে মনে ভাবছিলাম, এমন বড় বড় চোখই তো দরকার! এমন চমকই তো আমাদের দিতে হবে তাদের! না হয় ফিনল্যান্ড আর আয়ারল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের শিক্ষার তুলনা করে অশ্রু বর্ষণই করে যেতে হবে কেবল।

ওদের চমক দেখে হাত নিশপিশ করে উঠল ছবি তুলবার জন্য। কিন্তু আমার কাছে তো আর ক্যামেরা ছিল না। পিঞ্জুই তুলল ছবি। আদিবা আর আয়মান ‘আলোর ঝলক’ প্রজেক্টের পরীক্ষাগুলো দেখে বাবাকে তখন তখনই পাগল করে ফেলল। এটা কিনে দিতেই হবে! পেরিস্কোপে হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়ার উপায় জেনে আর ক্যালাইডোস্কোপে বর্ণিল নকশা দেখে তাদের বাবাও আর না করতে পারলেন না। হয়তো সন্তানদের এমন আনন্দ নিয়ে কিছু শিখতে তিনিও আগে দেখেননি।


পেরিস্কোপের মজা দেখে এত এত উচ্ছ্বাস আদিবা আর আয়মানের। শিখতে গিয়ে এমন প্রাণখোলা হাসি আমিও দেখিনি বহু দিন।


জীবিকার প্রয়োজনে সরকারি-বেসরকারি স্কুলেও চাকরি করেছি নানান সময়। আমার মনে পড়ল মফস্বলের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের জরা-জীর্ণ ল্যাবরেটরির কথা। অনেক চেষ্টা করেও যে ল্যাবটা আমি ঠিক করাতে পারিনি বিদ্যালয়ের হোতা-মাথাদের দিয়ে। নিজের ভেতর কেমন একটা টান অনুভব করি আমি-এমন ছোট ছোট ‘ল্যাবরেটরিগুলো’ যদি পৌঁছে দিতে পারতাম তাদের হাতেও। বিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি সংস্কারে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা সত্ত্বেও তবে অন্ধকারে পড়ে থাকতে হত না আমার সেইসব অভাগা ছাত্র-ছাত্রীদের। জানি না, আজ তাদের কেউ আমার এই লেখা পড়ছে কিনা। জানছে কিনা, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরাও তৈরি করছি ‘হোম ল্যাবরেটরি’। আমি চাই তারা জানুক। সেজন্য যা কিছু সম্ভব, আমি করব। শুধু তাদের নয়, আমি সবাইকেই জানাতে চাই এইসব প্রাপ্তির গল্প।


‘চুম্বকের চমক’প্রজেক্টের ‘চুম্বকের আকর্ষণ-বিকর্ষণের ধর্ম’নিজের চোখে দেখে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেছে লাল টুকটুকে পরীটা। কী ভাবছিল সে?



‘চুম্বকের চমক’ আর ‘আলোর ঝলক’ দুটোই আরিশাকে টানছিল সমানভাবে।



পিএস-৬৬ ছাড়িয়ে পিএস-১৫ স্টলে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। সিঙ্গাপুর থেকে আগত এক পরিবার বিজ্ঞানবাক্স দেখে এতই মুগ্ধ হয়েছে যে, তারা বিজ্ঞানবাক্সের ছয়টি প্রজেক্টের চারটিই কিনে নিয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষায় বাংলাদেশের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারলেন না তারা।



স্কুল থেকে বিজ্ঞানবাক্স কিনতে দল বেঁধে চলে এসেছে এক গুচ্ছ শাদা ফুল। তারা ছয় জন মিলে কিনল ছয়টি আলাদা আলাদা প্রজেক্ট- ‘আলোর ঝলক’, ‘চুম্বকের চমক’, ‘রসায়ন রহস্য’, ‘তড়িৎ তাণ্ডব’, অদ্ভুত মাপজোখ আর ‘শব্দ কল্প’। কেন তারা আলাদা আলাদা বিজ্ঞানবাক্স কিনল, বুঝতে পারছেন কিছু?



গভীর মনোযোগে বুঁদ হয়ে ‘তড়িৎ তাণ্ডবের’ পরীক্ষা দেখছে দুই বালিকা।



“মা, মা, দেখ, আলোর কত রঙ্!” ম্যাজিক চশমা চোখে দিয়ে রাইদা তার মাকে জানিয়েছে তার অপার বিস্ময়।



আমাদের সোনামণিরা যেন থাকে হাসি-খুশি। এই নির্মল হাসিই অক্ষুণ্ণ থাকুক। মুখস্থ বিদ্যার ভয়াল মেঘ কেটে যাক।



ফিরে আসার সময় মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। গিয়েছিলামই দেরী করে। দেরী করে বের হলে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যাবে বেশ। এই ভেবে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে হলো। না হয় আরও কিছুক্ষণ থাকা যেত সেই আনন্দ যজ্ঞে। আরও কিছু উচ্ছ্বাস মনের পকেটে পুরে নিয়ে আসা যেত। কী অপার আনন্দ ছড়ানো শিশুদের আশেপাশে! ক্যামেরা কতটুকুইবা ধারণ করতে পেরেছে তার? তবু, নগর-বাহনে চেপে বাসায় ফিরতে ফিরতে মনে হচ্ছিল, অনেক দিন পর যেন জং-ধরা মনের তালাটা বেশ চকচকে হয়ে উঠেছে। শীত-ভীতু এই আমাকে শীতের উপদ্রবও স্পর্শ করছিল না এতটুকু!

ছবি ক্রেডিটঃ পিঞ্জু

মূল পোস্ট- কিছু প্রত্যাশার বিম্ব, কিছু প্রাপ্তির আনন্দ...

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:১৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: লেখাটি মনে হয় সামুর প্রথম পেজে শো করেনি।
দুপুর ১২.১৩ মিনিটে পোষ্টটি প্রকাশ হলেও এটি কেউ তেমন দেখেনি।
পোষ্টি পুনরায় দেওয়ার অনুরোধ করছি।

০৫ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬

অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স বলেছেন: ধন্যবাদ সোহেল।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৫২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: পোষ্টটি পড়ে বিজ্ঞান বাক্সের প্রেমে পড়েগেলাম।কী আর করবো, যেটা পেলাম সেটাই বা কম কিসে।
শুভ কামনা রইল।

০৫ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬

অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৩| ২৪ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

অনুতপ্ত হৃদয় বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট , আপনার জন্যভশুভ কামনা রইল

৪| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:২৯

গরল বলেছেন: খুবই চমৎকার জিনিষ এবং বাচ্চাদের উফার দেওয়ার জন্য উপযোগী একটা জিনিষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.