![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজও ঠিক প্রতিদিনের মত ঘড়ির কাটার সাথে মিলিয়ে ঠিক মাঝরাত ৩ টা ১০ মিনিটে অভ্রের ঘুম ভেঙ্গেছে।১১ বছর বয়সের পর থেকে এই ঘটনার সাথে পরিচিত অভ্র। আট বছরে একদিন ও ব্যতিক্রম হয়েছে বলে তার মনে নেই।আট বছরে কখনই অভ্র সকাল বেলা পাখির ডাক শুনে কিংবা সুর্যের আলো দেখে ঘুম থেকে উঠতে পারেনি।প্রতিদিন জেগেছে মাঝরাতে।প্রতিদিনের মত অভ্র মুখে পানি দিয়ে,কফি মেকার থেকে এক কাপ কফি নিয়ে বিছানায় বসলো।হাতে ‘ফিজিক্স ফর দি ফিউচার’ নামে একটি বই।কিন্তু বই এ আজ কেন যানি মন বসাতে পারছে না।অভ্র’র যে কোন বন্ধু নেই তা নিয়ে সে কখনো আফসোস করেনি।অভ্র’র বাব-মা সব সময়ই ওকে সবার সাথে মিশতে জোড় করে কিন্তু অভ্র কখনই কারো সাথে খুব কাছ থেকে মিশতে চায়নি।বুদ্ধি বিবেক হবার পর থেকে তার মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে।ভয় এর কথা সে কাওকে কখনো বলেনি,তার বাবা-মাও তার কাছ থেকে যে সাহস করে কিছু শুনতে চায়না অভ্র সেটা ভাল ভাবেই জানে।অভ্র এটাও জানে যে সে অন্য দের থেকে ব্যতিক্রম এবং অন্যদের থেকে অনেক ইন্টেলিজেন্ট।সে আঠারো বছর বয়সে স্ট্রিং থিওরী নিয়ে একা একা অনেক গবেষনা করেছে এবং অনেক তথ্যও আবিষ্কার করেছে।
অভ্রের যে কারো সাথে মিশতে ইচ্ছে করেনা,এমন টা নয়।সে কারো সাথে মিশতে পারেনা।তবে ফেসবুক থাকাতে তার একটু সুবিধা হয়েছে।আগের মত অতটা একা লাগেনা,আর ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে কথা বলতে সরাসরি সামনা-সামনি ও হতে হয়না।ফেসবুকে অনেকের সাথে পরিচয় হলেও,মিমির সাথে অভ্রের অনেক ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।মিমি অভ্রর সাথে কখনো দেখা না করলেও অভ্র কে এখন নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবে।অভ্রের ও মিমির সাথে মেইল এ কথা বলতে ভাল লাগে,আর দেখা হবার কোন আশংকা না থাকায় তার মধ্যে ভয় ও কাজ করেনা।
নিজের একাকিত্ব টা অভ্রের ভালই লাগে।তবে তার কিছু খারাপ অনুভুতির কথা অন্য কারো সাথে শেয়ার করার অনেক দিন ধরেই একটা ইচ্ছা ওর মধ্যে কাজ করছে।তবে কখনো সেরকম কোন বন্ধু পায়নি।তবে আজ মনে হচ্ছে,মিমি কে তার কথা গুলো বলা যায়।তবে এক ধরনের ভয় ও আছে।সে যে অনেকের থেকে আলাদা সেটা হয়তো মিমি ও স্বাভাবিক ভাবে নিবেনা।হয়তো অভ্র কে আর বন্ধুই ভাববে না।ওর প্রতি ঘৃনা জন্মাবে মিমির।
এসব ভাবতে ভাবতে ভোর হয়ে যায়।অভ্র কলেজ থেকে ফিরে দুপুর বেলা ফেসবুকে লগিন করেই মিমির মেইল পায়,’’ঐ শুনলাম ম্যাথ অলিম্পিয়াডে ফার্স্ট হইছিস??ট্রিট দিবিনা??’’ অভ্র মিমির মেইল এর রিপ্লাই দিলো,’’গত চার বার ই হইছি।এটার জন্য ট্রিট দেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনা।আর তোর সাথে আমার দেখা হবার কখনো সম্ভাবনা নাই।তুই থাকিস বরিশাল আর আমি কোথায় তেজগাঁও!’’অভ্র মেইল টা করে আরও একটি মেইল করতে চায়।কিন্তু পারেনা।তার হাত কাপতে থাকে।
রাতে অভ্র মিমির মেইল পায়,’’শুন,আমি তোর সাথে দেখা করবোই।যেদিন তেজগাও যাবো সেদিনই।‘’ অভ্রর ইচ্ছা হয় মিমির সাথে দেখা করার।কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনা।অনেক চিন্তা করে অভ্র মিমি কে একটা মেইল করে,’’তোর ফোন নাম্বার টা দিবি? আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই’’ মিমি মিনিট দশেকের মধ্যেই মেইল ব্যাক করে,’’কতদিন তোর সাথে কথা বলতে চাইছি আর আজকে তুই বলতিছিস!ও মাই গড!!’’
মিমি কে ফোন দেবার সময় অভ্রর গলা কেপে ওঠে।দুবার ডায়াল করেও সে ফোন কেটে দেয়। অবশেষে সাহস করে শেষ বারের মত ফোন দেয়।অভ্র আজকে বলেই ছাড়বে মিমি কে,ওর দুঃস্বপ্নের কথা টা। প্রতিদিন রাতে যেটা দেখে।একদল ছেলে আর মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে,ওকে ঘিরে ঘুরছে আর অকে দেখে অট্টহাসি হাসছে।ফোনের ওপাশ থেকে গলা ভেসে আসে,’’হ্যালো অভ্র!’’
অভ্র লজ্জিত গলায় জবাব দেয়,’’কেমন আছো মিমি??’’
‘’এই তুই আমাকে তুমি বলছিস ক্যান?আর তোর গলা টা এতো মিষ্টি কেন? একদম মেয়েদের মত’’ মিমি হাসতে থাকে।
অভ্র অনেক সঙ্কোচ নিয়েও বলে ফেলে,’’মিমি,আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই।আমি কখনো এটা কাওকে বলতে পারিনি।কারন আমার কোন বন্ধু নাই।আমি প্রতিদিন রাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখি।‘’অভ্র এক নিশ্বাসে বলে ফেলে ওর স্বপ্নের কথা।
মিমি হাসতে হাসতে বলে,’’আরে এটা আবার দুঃস্বপ্ন নাকি ! এরকম কত স্বপ্নই তো আমরা দেখি।‘’
অভ্র অনেক দিনের লুকানো কথা টা মিমি কে বলে ফেলে,’’আমি তোদের থেকে ব্যতিক্রম।আমি Hermaphodite। সহজ ভাষায় তোরা যাকে হিজড়া বলে চিনিস।আমাকে তোরা অনেক ঘৃনা করিস।হয়তো সবাই করে।এজন্য আমি তোদের সাথে মিশতে পারিনা।আমার ভয় লাগে।আমি দুঃস্বপ্ন টা দেখতে চাইনা।আমি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে চাই,পাখির ডাক শুনে।সবার মত হতে চাই।কিন্তু প্রকৃতি আমাকে এরকম হতে দেয়নি।‘’ অভ্রের গলা ভিজে যায়।মিমি ও কিছু বলতে পারেনা।অভ্র ফোন রেখে দেয়।
অভ্র জানে মিমি হয়তো আর কখনো ওর সাথে কথা বলবে না।হয়তো ফেসবুকেও ব্লক করে দিবে।তবে অভ্রর খারাপ লাগছে না।সে একজন কে তার কথা গুলো বলতে পেরেছে।আর একা থাকতে ওর খারাপ লাগেনা।ঘুমুবার আগে অভ্র ফেসবুকে মিমির একটি মেইল পায়,’’তুই হয়তো ভাবছিস প্রকৃতির এরকম আচরনে আমিও তোকে ঘৃনা করবো?না,আমি তোকে এখনো বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবি।আমি তোর পাশে সারাজীবন থাকবো।তোর বন্ধু হয়ে।তোর দুঃস্বপ্ন টা কে ঝাড়ু পেটা করে ভাগাবো।তোকে সবার সাথে মিশতে শেখাবো।আজ রাতে তুই আর দুঃস্বপ্ন টা দেখবিনা।’’
অভ্রর চোখ আবারো ভিজে যায়,অভ্র অপেক্ষা করতে থাকে ঘুমের।সে আশা করতে থাকে,আজ তাকে আর দুঃস্বপ্ন দেখতে হবেনা।আজ তার ঘুম ভাংবে সকালের আলো দেখে।অভ্র অপেক্ষা করতে থাকে সকালের।
©somewhere in net ltd.