নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিজ্ঞান, মন, অনুভুতি, কিছু রহস্য আর আমি।

অপ্রকাশিত ৩

অপ্রকাশিত ৩ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনে পড়ে তোমায়

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৭


[ ‘’পুরনো সেই দিনের কথা... ভুলবি কিরে হায়...” পুরনো দিনগুলোর কথা সত্যিই ভোলা খুব কঠিন। এই লেখাটাও অনেক পুরানো একটা লেখা। মেডিক্যালের প্রথম বর্ষে যখন পড়তাম তখন এই গল্পটি লিখেছিলাম। পুরান কিছু খুঁজে পেলে খুব ভাল লাগে... ]

হটাত করে ঘুমটা ভেঙে গেল মাঝ রাতে। কোনদিন এমন সময়ে ঘুম ভাঙেনি আমার। বিছনা থেকে উঠে পাশে রাখা পানির গ্লাস নিয়ে পুরোটা শেষ করে দিলাম এক চুমুকে। কেমন যেন নিস্তব্ধতা , ঘুম আসছিল না মোটেই। হটাত করে মনে পড়ে গেল সেই সব দিন গুলোর কথা। সেই কালো লম্বা চুলের, বাতাসে দোল খাওয়া , আমার গালে এসে আলতো ছোঁয়া , একটু ভালোলাগা।
আচ্ছা, তোমার কি মনে পড়ে তুমি নদীর কূল দিয়ে হেটে বেরাতে আর ঠাণ্ডা হাওয়া খেতে খুব পছন্দ করতে। আমি শুধু তোমাকে বারণ করতাম। কেন জানো? কারণ তোমার অ্যাজমা ছিল। ঠাণ্ডা লেগে যাবে ভয়ে আমি তোমাকে বারণ করতাম। যদিও তুমি শুনতে না একটুও! কতদিন যে তোমার কথা ভেবে ভেবে রাত পার করেছি তার কোন হিসাব নেই। আজ কেন যেন সময়ের সাথে সাথে নিজেকে অনেকটা বদলে ফেলেছি।
আজ আর আগের মতো নির্জন রাস্তায় হাঁটতে ভাল লাগে না, ভাল লাগেনা খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াতে। কতো অজানা সপ্নের জাল বুনেছিলাম শুধু তোমাকে নিয়ে। তোমাকে দেখলে আমি কেমন যেন হয়ে যেতাম, কিছুই ঠিক থাকত না আমার। চোখ তোমার বেঁচে থাকার নতুন সপ্ন দেখায় প্রতিক্ষণে। নির্জন রাস্তায় বসন্তের বিকালে, তোমার সাথে যখন হেঁটে বেড়াতাম, তোমার চুলের গন্ধ এক নতুন মাত্রা যোগ করত।
আজও বসন্তের বিকাল আসে কিন্তু সে বিকালে থাকে না কোন চুলের গন্ধ, থাকে না কোন ঘ্রাণ, শুধু থাকে জীবাণু। তোমার কি মনে পড়ে সেই যে সেই দিনের কথা, যেদিন তুমি আমাকে ভালবাসি বলতে গিয়ে কয়েকটা পানির বোতল নিমিষেই শেষ করে দিয়েছিলে। এখনও কথা গুলো মনে পড়লে আমার অনেক হাসি পাই। আজো একা একা হাসি , সে হাসির শব্দ শুধু আমিই শুনতে পাই।
সেই হাসি যেন প্রতিধ্বনি হয়ে মিলিয়ে যায় দূর থেকে দূরে।

যখন তুমি আমার সামনে এসে বসতে, তোমার চুল গুলো তোমার মুখের সামনে চলে আসত। আর তুমি বারবার খালি সেগুলোকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করতে। আমি বারণ করতাম কারণ যখন চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়ত, তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাত। আজ সেই সবকিছু শুধু স্মৃতি হয়ে ঘুরে বেড়ায় আমার চারপাশে। আমি আজও তোমায় খুঁজে বেড়াই বসন্তের পড়ন্ত বিকেলে,গ্রীষ্মের রোদে। আজও তোমায় খুঁজে বেড়ায় জীবনান্দ দাসের “বনলতা সেনের’’ মাঝে, আমার অস্তিত্তে।
তোমার হয়তোবা মনে নেই সেই কথা,ভুলে গেছ। সেইবার বর্ষার ঝুম বৃষ্টিতে তোমার অনেক ইচ্ছে হয়েছিল আমাকে নিয়ে ভিজবে। বারণ করেছিলাম আমি কিন্তু তুমি শুনলে না। সেদিনের বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়েছিলাম দুজন। ঐ রাতে তোমার সে কি জ্বর। সারা রাত তোমার পাশে বসে ছিলাম। আসলে তুমি না থাকলে আমি কোনদিনই বৃষ্টির রোমান্টিকতা বুঝতাম না।
তোমার স্মৃতিগুলো আজও আমার পাশে থাকে ছায়ার মত। তোমার সাথে সেইবার যে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলাম, অনেক ভাল কিছু সময় কাটিয়েছিলাম দুজনে। তোমার হয়তো কিছুই মনে নেই আজ। থাকার কথাও না। সমুদ্র স্নান , পড়ন্ত বিকেলে সূর্যের ম্লান হয়ে যাওয়া, গোধূলিতে তোমার হাত ধরে সমুদ্রের বালুকনাতে হেঁটে বেড়ানো, আর তোমার গুন-গুনিয়ে গান গাওয়া, এসবই ছিল আমার কাছে স্বর্গ সুখের মত। সেইবার আমি তোমাকে কোলে তুলে সমুদ্রের পানিতে ফেলে দিয়েছিলাম, তুমি ভয় পেয়ে কেঁদে ফেলেছিলে। সবই আজ আধরা স্মৃতি শুধু।

সেদিন আমি অনেক হেসেছিলাম। আমার হাসি দেখে তুমি অনেক রাগ করেছিলে। তোমার রাগ ভাঙাতে আমার সে কি নৃত্য,তুমিতো হেসেই খুন। অবশেষে আর থাকতে না পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলে ‘অনেক ভালবাসি তোমাকে’। কথাটা আজও কানে বাজে। প্রায়ই আমি সপ্ন দেখি যে তুমি ফিরে এসেছ,আবার আমরা হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছি কোন এক পড়ন্ত বিকালের ম্লান হওয়া সূর্যের লাল আভায়।
সেইবার কক্সবাজারে ছিল আমাদের হানিমুন। তোমার পছন্দেই আমরা সমুদ্র সৈকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই হানিমুন যে আমার জীবনকে এক নিঃশব্দ স্মৃতির অতীত করে দিবে তা এখনও আমার কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হয়। হানিমুন থেকে ফেরার পথে আমাদের গাড়ি ব্রেক ফেইল করল। আমরা সোজা যেয়ে পড়লাম রাস্তা থেকে অনেক নিচে। আমি তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলাম।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর তোমাকে একটা পাথরের উপর পেলাম। তুমিও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে। আমার ডাকে তুমি চোখ মেলে তাকালে। তখনো আমি কিছুই বুঝিনি যে তোমার মাথার ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ভালবাসার রং লাল হয়ে গেছে। তুমি মনে হয় বুঝে গিয়েছিলে যে আর সময় নেই। তুমি আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে আমায় বলেছিলে ‘আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি’। চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারি নাই। শুধু কেঁদেছিলাম।
একটু পরেই তুমি চোখ বুজলে। শত বছরের ক্লান্তি এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। মুক্ত হলে তুমি। আমার হাতে তোমার হাত। শক্ত করে ধরে আছ তুমি। এরপর আর কোনদিন ভালবাসি শব্দটা শোনা হয়নি আমার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.