![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিনের পরীক্ষাটি আচমকা আঘাত করেছিল মনে। যদিও প্রত্যাশার চেয়ে ভালই হয়েছিল পরীক্ষা। শেষ হওয়ার পর বিশ্বাসই হয়নি যে পরীক্ষাটা দিলাম। কথা বলার জন্য ম্যাডাম ৫ মার্ক মাইনাস করে দিলো। কোন অনুভূতিই হয়নি তখন,এমনকি মনও খারাপ হয়নি। মনে মনে ভাবলাম জীবনে কত যে পরীক্ষা দিতে হবে, পরীক্ষার শেষ নেই। অনেকে আবার অভিমান করে বলে,যে এই পরীক্ষা আবিষ্কার করেছিল আগে জানলে তাকে খুন করতাম! পরীক্ষা হলের সবচেয়ে লজ্জাজনক ব্যাপার,না লিখে বসে থাকা আর অন্যের উপর নির্ভর করা। সেদিন এই দুটো জিনিসই হয়েছে আমার সাথে। অসহায়ের মত শুধু এদিক ওদিক তাকিয়ে ছিলাম। মৌখিক পরীক্ষায় কিছু না পারলে মনে হয় মাটির নিচে ঢুকে যাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে পরীক্ষার ধরণ তত পরিবর্তিত হচ্ছে।
ছোটকালের পরীক্ষাগুলোর কথা এখন খুব মনে পড়ে। এই পরীক্ষা দিয়েই বন্ধু-বান্ধব আর টিচারদের চেনা যায় নতুন করে। পরীক্ষা আসলেই বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে শুরু হয় লুকোচুরি,উদ্ভব হয় কতনা রহস্যের। মাঝে মাঝে এমন মানসিকতার প্রকাশ ঘটে তখন মনে হয় তাদের বয়সটাই শুধু বেড়েছে। এসব কারণে কেউ কেউ দুঃখ পায়,অভিমান করে আর অবশেষে ভেঙে ফেলে বহুদিনের বন্ধুত্ব। হায়রে পরীক্ষা!তুমি মোরে করেছ মহান! ছোটবেলায় পরীক্ষার আগে স্বপ্নে দেখতাম,আমি কিছুই লিখতে পারছি না এদিকে সময় চলে যাচ্ছে...আমি অনেক দ্রুত লেখার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই লেখা শেষ হচ্ছে না। এখনও পরীক্ষা আসলে মাঝে মাঝে এই স্বপ্ন দেখি। আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে। কমে তো যাবেই,ঘুমালে তো স্বপ্ন দেখব! পরীক্ষার আগের রাতে এখন আর ঘুমাই না তাহলে স্বপ্ন দেখব কিভাবে!
যত বড় হচ্ছি অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। প্রকৃতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বাস্তবতা আর মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। যেখানে ইমোশন গুলো একদমই ঠাই পায় না। টিচারদের আমরা সবাই সম্মান করি। কিন্তু কিছু কিছু টিচারের ব্যবহার দেখলে মনে হয়,তিনি কোনদিন স্টুডেন্ট ছিলেন না! সত্যি কথা বলতে কি তাঁদেরকে মোটেও সম্মান করিনা। সম্মান জিনিসটা আসে ভেতর থেকে,জোর করে আদায় করা যায় না। একবার আমাদের এক বড় পরীক্ষায় একজন লেকচারারের ব্যবহারে অনেক খারাপ লেগেছিল। পরীক্ষা হলে এক্সটারনাল ছিল কিন্তু ওই লেকচারারকে মনে হয়েছিল এক্সটারনাল। এতটা নির্দয় আর খারাপ ব্যবহার মনে হয় এক্সটারনালও করে না। এদিন তাঁকে দেখে মনে হয়েছিল,সে কোনদিন পরীক্ষা দেয়নি সারাজীবন শুধু পরীক্ষা নিয়েছে!
হায়রে মানুষ!হায়রে মানসিকতা! মেডিকেলে আসার পর এমন কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে যাদের মানসিকতার লেভেল দেখলে নিজেরই ঘৃণা হয়। আর এই মেডিকেলে আসার পরই বুঝতে পেরেছি পরীক্ষা কতটা ভয়ংকর হতে পারে। একটা পরীক্ষা যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা একমাত্র মেডিকেল স্টুডেন্টরাই জানে।মেডিকেল স্টুডেন্টদের কষ্ট আরেক মেডিকেল স্টুডেন্টই বোঝে,সাধারণ মানুষ কিছুই বোঝে না আর বোঝার চেষ্টাও করে না।
পরীক্ষা আসে...পরীক্ষা যায়,আর নতুন করে চেনা যায় মানুষ! একবার আমার এক বন্ধুতো অভিমান করে ফেসবুক এ লিখেই ফেলে, ‘পরীক্ষা অনেক মানুষকে নতুন করে চিনতে শেখালো!’ জীবনের পরীক্ষায় জয়ী হওয়াই বড় কথা। এই মুহূর্তে মনের মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে,
“মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়,
আড়ালে তার সূর্য হাসে।’’
©somewhere in net ltd.