নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা ! আমার শ্রেষ্ঠ মানুষটির কথা !

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

বাবার সাথে আমার প্রথম স্মৃতিটা একটি নেগেটিভ স্মৃতি !

আমার একটা লাল রংয়ের ছাতা ছিল । বাবা সেই ছাতা দিয়ে আমার ভাইকে পিটিয়ে আমার ছাতাটা ভেঙ্গে ফেলেছে । ভাইকে মেরেছে এই ব্যাপারে কোন দুঃখ নাই ! আমার ছাতা ভেঙ্গে ফেলেছে এই টাই হল ব্যাপার ! আমি অনেক দিন সেই লাল রংয়ের ছাতাটা নিয়ে মুখ বেজার করে বসে থেকেছি । আমার বাবা কাছে ডাকলেও আমি যাই নি তার কাছে ।

পরে বাবা নতুন একটা ছাতা কিনে এনে দিলেও আমার বেজার ভাবটা কমে নি । আমি ডান্টি ভাঙ্গা ছাতা নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছি ।



আমার বাবা খুব বেশি রাগী মানুষ । জগতের মোটামুটি আর কাউকেও ভয় না পেলেও ছোট বেলা থেকে আমি আর আমার বড় ভাই বাবাকে সব সময় ভয় পেতাম খুব বেশি । বলতে গেলে একেবারে জমের মত । আমাকে যে খুব একটা বকাবকি করতেন তা কিন্তু না ! কিন্তু তবুও ভয় পেতাম খুব !

কিন্তু আর একটা ব্যাপার ছিল সেই ভয় পাওয়ার ভিতর । ভয়টা ছিল কেবল মাত্রই অন্যায় করার ক্ষেত্রেই । অন্য কোন ক্ষেত্রে কন ভয় ছিল না !



প্রায়ই একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম আমি যখন পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করতাম তখন যদি শোনা যে কারো বাবা আসতেছে তখন কি এক অদ্ভুদ কারনে যার বাবা আসছে সেই ছেলেটি সেখান থেকে পালিয়ে চলে যেত । যেন খেলাধুলা করাটা খুব একটা অন্যায় । প্রায় প্রত্যেকটা ছেলেই এমন করতো ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে ভাবতাম এরা আব্বার নাম শুনলে এমন করে পালায় কেন ? পালানোর কি আছে ?

একদিনের কথা বলি । তখন যশোর থাকতাম । থ্রী কিংবা ফোরে পড়তাম । বিকেল বেলা বাড়ির পাশের মাঠে খেলা করছি । সম্ভত টেনিস বল ছোড়াছুড়ি জাতীয় কিছু একটা খেলা । এমন সময় এক ছেলে এসে আমাকে এসে বলল

-জলদি পালা ! তোর আব্বা আসছে !

আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম

-পালাবো কেন ?

আমার বাবা বিডিআর ক্যাম্পে চাকরী করত । যে মাঠে খেলা করছিলাম সেটা আমাদের বাসা আর ক্যাম্পের মাঝ খানে পরে । যাওয়ার পথে তো মাঠ পরবেই । এখানে পালানোর কি আছে ?

ছেলেটা আমার থেকেও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । একটু পরে যখন আমার আব্বা এসে হাজির হল আমাকে ডাক দিল । আমি ধীরে সুস্থে বাবার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম । আমার চারপাশের সব কটা চোখ আমাদের উপর নিবদ্ধ । কিছু একটা হবে যেন । বাবার কাছে হাজির হতেই বাবা পকেট থেকে কয়েকটা চকলেট আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল

-সাবধানে খেইল্ল । দুঃকু পাইয়ো না !

বিডিআর ক্যাম্পের ক্যান্টিন থেকে বাবা আমার জন্য প্রায়ই কিছু না কিছু নিয়ে আসতো । আমি যখন খেলায় ফিরে গেলাম ।

সবার মুখ কেমন হা হয়ে গেছে । এটা যেন তাদের কাছে একটা অবিশ্বাস্য কিছু ।



আমার বাবার হাতে আমার বড় ভাই খুব মার খেয়েছে । সেই তুলনায় আমি কিছুই খাই নি । কেবল দুইদিনের কথা মনে আছে । একদিন আমার গালে একটা চড় মেড়ে ছিল আর একদিন আমার মাথায় । এই মনে আছে । কিন্তু কি কারনটা ছিল আমার মনে নাই !



মানুষের অনেক টাকা পয়সা থাকে । আমরা অতটা বড় লোক না । মিডিল ক্লাস ফ্যামিলি । কিন্তু একটা কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি যে ভাবে আমার বাবা মা আমাদেরকে লালন পালন করেছে খুব কম ছেলে মেয়েই এমন আদর পেয়েছে । আমার এখনও পর্যন্ত মনে আছে আমার জীবনে এখনও পর্যন্ত আমি কিছু নাই যেটা আমি বাবার কাছে চেয়েছি কিন্তু পাই নি !!



সবাই বলে মেয়েদের নাকি বাবার দিকে বাবার দিকে টান থাকে । আর ছেলেদের টান থাকে মায়ের দিকে । কিন্তু কেন জানি আমাদের দুই ভাইয়েরই বাবার দিকে টান বেশি ।

এক দিনের ঘটনা বলি । ক্লাস নাইনে পড়ি তখন । একবার বাবা আর মায়ের ভিতর প্রচন্ড ঝগরা । মা রাগ করে নানীর বাড়ি চলে গেল । অবশ্য আমাদের পাশের বাড়িই ছিল নানীদের বাড়ি । নানী বাড়ি যাওয়ার আগে আমাদের দুই ভাইকে তার সাথে নিয়ে যেতে চাইলেও আমরা কেউ মায়ের সাথে গেলাম না । বাবার পক্ষ নিয়েই থেকে গেলাম ।

ঐ দিন রাতে বাসায় কেবল আমরা তিনজন । দুপুরে রান্না বান্না কিছু হয় নি । রাতে বাবা রান্না ঘরে খিচুড়ী চাপিয়ে দিলেন । আমরা দুইভাই তাতে গিয়ে যোগ দিলাম । কেউ চাল ধুচ্ছে । কেউ চুলা জ্বালাচ্ছে । কেউ লাকড়ি নিয়ে আসছে । একটা পিকনিক পিকনিক ভাব চলে এল । রাতে তিনজন আরাম করে সেই খিচুড়ি খেলাম । এমন একটা স্বরনীয় দিন আমার জীবনে আর এসেছে কিনা আমি বলতে পারবো না ।

আমরা যখন খিচুড়ি খাচ্ছিলাম আরাম করে আমাদের কারো মনেই নেই আমাদের মা রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে ।



বাবা সব সময় খুব রাগী মানুষ । উনার মতের বিরুদ্ধে কেউ গেলেই আর উপায় নাই । কিন্তু ভিতরে আমাদের জন্য কি এক অপরিসীম মায়া নিয়ে বেঁচে আছেন তা আমরা ছাড়া কেউ জানে না । আর যাই হোক বাবা কখনও আমাদের চোখের আড়াল করতে চাইতেন না । কাজ থেকে ফিরে এসে আমাদের না দেখলে নাকি তার ভাল লাগতো না ।

ক্লাস টেনে প্রিটেষ্টের পরীক্ষার সময় আমার পিঠে আর কোমরে বিশাল ফোড়া হল । প্রচন্ড ব্যাথায় আমি এদিক ওদিক নড়তে পারি না । আমার বাবা স্কুলে দৌড়ালেন হেড মাস্টারকে কনভেন্স করার জন্য ।

আর সারা রাত আমার পাশে বসে থেকে আমার পিঠে গরম ভাপ দিতে লাগলো । আমি যতবার ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠতে থাকি আমার বাবা ততবার যেন ব্যাথা পায় । যতবার আমি চোখ মেলে তাকায় দেখি আমার বাবার কাতর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !

আর একটা মজার কথা এখনও আমাকে আনন্দ দেয় । ভর্তি কোচিং করতে আসবো । বাড়ির প্রথম কেউ প্রথম বারের মত ঢাকায় পড়তে যাচ্ছে । তার চেয়েও বড় কথা আদরে ছেলে বাড়ির বাইরে একা একা যাচ্ছে । বাবা আমাকে ঢাকায় একা একা থাকতে দিতে রাজি না । সে খোজ নিয়ে জানতে পেরেছে আমার কোচিং সপ্তাহে তিন দিন । একদিন পর একদিন । তিনি বললেন যেন আমি বাড়ি থেকেই কোচিং করি । তার মানে হল সকাল বেলা চুয়াডাঙ্গা থেকে গাড়িতে করে ঢাকায় যাবো । কোচিং করে আবার ফিরে আসবো । এবং বাবা মোটামুটি সিরিয়াস ছিলেন । তিনি চাইতেন না যেন তার কোন ছেলে রাতের বেলা বাড়ির বাইরে খাকুক !!



আমার বাবা সারা জীবন কষ্টই করে গেলেন । দাদা মারা গেছেন বড় ছোট বেলায় । তখন বাবা কেবল স্কুলে পড়ে । কোন রকম মেট্রিক পাশ করে বাবা ঢাকায় চলে আসে । পুরান ঢাকার এক আড়তে কাজ নেয় । আর জগন্নাথ কলেজে নাইট শিফটে ভর্তি হয় । আমার মাঝে মাঝে ভাবতে ভাল লাগে যে আমার বাবা যে খানে পড়াশুনা আমিও সেই খানে পড়ছি । ইন্টার পাশ করে বিএ তে ভর্তি হয় । তারপর বাবা ক্যারানী গঞ্জের এক সিলভারের হাড়ি পাতিলের দোকানে ম্যানেজারীর চাকরী নেয় । মাসিক বেতন ছিল চারশ টাকা ।

কিছুদিন পর বাবার বিয়ে হয় । নানা বাবাকে নিজের কাছে নিয়ে এসে নতুন এক চাকরী দিল । বিডিআরের রেশন ঠিকাদারের চাকরী । সেই ঠিকাদারী করেই বাবা জীবন পার করে দেন । আগে বাবা এক বড় ঠিকাদারের আন্ডারে চাকরী করতো । এখন তিনি নিজেই নিজের ঠিকাদারের ব্যবসা করেন ।



আমার সব থেকে কষ্টের জায়গাটা হল আমার বাবা সারাটা জীবন কষ্টই করে গেলেন । দুটো ছেলে তার । বড় ছেলে বয়স ত্রিশ পার হয়েছে । কিন্তু এখনও তিনি নিজেই ইনকাম করে খাচ্ছেন । খেতে হচ্ছে । ছেলের আয় রোজকার এখনও তার ভাগ্যে জুটলো না ।

বাবা এখন প্রায়ই মায়ের কাছে আক্ষেপ করে বলে আমার বুঝি সারা জীবন কামাই করেই খেতে হবে । পোলাগো কামাই বুঝি ভাগ্য হইবো না ।

আমার কেন জানি কান্না আসে এই কথাটা শুনে । আল্লাহর কাছে কেবল একটা দোয়া করি আমার বাবাকে আমার উপার্জিত অর্থ দিয়ে একটা দিন অন্তত খেতে যেতে পারে । তার মনের আক্ষেপ যেন না থাকে !

আমার জীবনের আর কোন চাওয়া নেই এখন আর । আপনারাও এই দোয়া টুকু করবেন ।



বাবাকে কোন দিন বলি নি তাকে কত ভালবাসি । কোন দিন হয়তো বলাও হবে না । তবে তুমি জেনো বাবা তুমি আমার কাছে আমার শ্রেষ্ঠ মানুষ । দুচোখ মেলে আমি দেখেছি তোমার ভালবাসা । পৃথিবী সব গুলো মানুষ যদি তোমাকে ত্যাগ করে চলে যায় জেনে রেখো তোমার ছেলে কোন দিন তোমাকে ছেড়ে যাবে না । জীবনে কোন পথে যদি তোমার হোচট খেতে যাও একবার কেবল তাকিও পেছনে দেখবে আমি আমি আছি তোমার হাত ধরার জন্য । আর যদি পিছনে তাকিয়ে কাউকে না দেখতে পাও তাহলে বুঝে নিও আমি বেঁচে নেই ।

আল্লাহ যদি তোমার মুখে এক মুঠো ভাত দেওয়ার যোগ্যতা না দেয় তবে কেবল এই কথাটা মনে রেখো তোমাকে অভুক্ত রেখে তোমার ছেলে এক ফোটা পানিও খায় নি ।



বাবা তোমাকে ভালবাসি । তোমাকে ভালবাসি বাবা !

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৫

আমি ময়ূরাক্ষী বলেছেন: বাবা ভালো থাকুন।


শুভকামনা

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৩৮

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !! :)

২| ১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫৮

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: অনেক ভাল লাগলো লেখা।

১৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩২

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !! :)

৩| ১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:২৬

একজন আরমান বলেছেন:
সকল বাবার জন্য শুভকামনা।

১৭ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ আরমান !!

৪| ১৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:১০

অিপ পোদ্‌দার বলেছেন: ++++++++++++++++++

১৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০

অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ !

৫| ১৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩

ভুং ভাং বলেছেন: পৃথিবীর সকল বাবা ভাল থাকুক।

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:২৯

অপু তানভীর বলেছেন: সকল বাবা ভাল থাকুক !! :):):)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.