নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবি উৎস- প্রথম আলো
পুকুর নিয়ে আমাদের দেশে ভুতের গল্পের কোন শেষ নেই । নানান পুকুরের প্রচলিত যে গল্প বা লেজেন্ড গুলো আছে তার ভেতরে হচ্ছে পুকুরে জ্বীন বাস করে, পুকুর থেকে নানা রকম থালা বাসন পাওয়া যায় কোন বিশেষ উপলক্ষে এবং সেগুলো আবার ফেরৎ দিয়ে যেতে হয় কাজ শেষ করে নয়তো বিপদ হয় । গ্রাম গঞ্জে এমন অনেক পুরানো পুকুরের সন্ধান পাওয়া যায়, সেই সাথে পাওয়া যায় গল্প । আমার বাড়ির ঠিক পরে একটা পুকুর রয়েছে যার নাম কানাপুকুর । এখানে সন্ধ্যার পরে কেউ সাহস করে নামে না । নামলে নাকি নিচ থেকে কেউ তার পা ধরে টেনে নিয়ে যাবে । ছোট বেলা থেকে এমন গল্প শুনেই আমরা বড় হয়েছি ।
ছবি উৎস- bangla.tourtoday.com.bd
যাই হোক এমন বেশ কিছু পুরুষের ভেতরে একটা বিখ্যাত পুকুর হচ্ছে রামসাগর দিঘি । এটি দিনাজপুর জেলাতে অবস্থিত । এটা আমাদের দেশে মানুষ্য সৃষ্টি সব থেকে বড় পুকুর । উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায় এর তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার। পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার । এই রামসাগর নিয়ে একটা চমৎকার একটা উপকথা শোনা প্রচলিত রয়েছে।
দিনাজপুরের রাজা ছিলেন প্রাণনাথ । তার রাজত্বকাল ছিল ১৭২২-১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। রাজার হিসাবে তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। প্রভাব প্রতিপত্তি আর অর্থকড়ির কোন অভাব ছিল না তার । দীর্ঘদিন পর রাজার ঘরে এক রাজকুমারের জন্ম হল । রাজা তার নাম রাখলেন রাম । জ্যোতিষী রাজকুমারের ভাগ্য গণনা করে বললে যে তার পুত্রকে মানুষ মনে রাখবে ঠিকই তবে সে খুব বেশি দিন বাঁচবে না । রাজকুমার যখন যৌবনে পদার্পন করলেন, সময়টা সম্ভবত ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ হবে, তখন দিনাজপুর এলাকাতে প্রচন্ড খরা দেখা দেয় । পানির অভাবে রাজ্যের প্রজাদের অবস্থা যখন শোচনীয় তখন রাজা ঠিক করলেন একটা দিঘি খনন করবেন । শুরু হল দিঘি খননের কাজ । সেই সময়েই প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছিলো দিঘিটি খনন করতে । কয়েক হাজার শ্রমিক রাত দিন পরিশ্রম করে দিঘিটি পনের দিনের ভেতরে খনন করা শেষ করে । কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যে দিঘিতে পানি ওঠলো না । কোন উপায়েই দিঘিতে পানি আনা সম্ভব হল না । একদিন রাজা স্বপ্নে দেখলেন যে যুবরাজ রাম যদি দিঘিতে নেমে পুজো দেন তাহলেই পানি উঠবে ।
ছবি উৎস - bn.wikivoyage.org
দিঘির ঠিক মাঝ বরাবর একটা মন্দির তৈরি হল । যুবরাজ সেই মন্দিরে পুজো দিতে গেলেন । এবং মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দেওয়া শুরুর সাথে সাথেই পুকুরে পানি উঠতে শুরু করলো । এবং এক সময়ে সেই পানিতে মন্দির ডুবে গেল । যুবরাজ রামের আত্মদানে ফলে পুরো রাজ্যের মানুষ খরার হাত থেকে রক্ষা পেল । সেই সাথে জ্যোতিষীর কথাও সত্য হল । যুবরাজ স্বল্পায়ু হলেন ঠিকই তবে প্রজাদের মাঝে অমর হয়ে রইলেন । তার আত্মত্যাগের কথা সবাই স্বরণ করলো আজীবন । এই হচ্ছে রাম সাগরের পেছনের উপকথা । সত্য মিথ্যা এটা আসলে প্রমান করার কোন উপায় নেই । তবে শীত কালে এখনও যখন পানি কমে যায় তখন নাকি পুকুরের মাঝে মন্দিরের একটা চুড়া ভেসে ওঠে মাঝে মাধ্যে ।
ছবি সুত্র অন্তর্জাল
তথ্যসুত্রঃ বাংলা কিংবদন্তী (আসাদুজ্জামান জুয়েল)
উইকিপিডিয়া
২৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:১০
অপু তানভীর বলেছেন: পুকুরের সাথে এই রকম মিথ খুব বেশি প্রচলিত । আমিও এই রকম শুনেছি । আমাদের এলাকাতে ছিল বিয়েতে রান্নার জন্য হাড়িপাতিল দরকার হলে পুকুর থেকে তা উঠতো কিন্তু শর্ত ছিল যে কাজ শেষ করে তা আবারও ফিরিয়ে দিতে হবে । একবার এক মহিলা একটা হাড়ি রেখে দিয়েছিলো । ফলে তার উপরে নেমে এসেছিলো অভিশাপ - এই টাইপের কিছু !
এই মিথ গুলো আমার কাছে বেশ চমৎকারই লাগে !
২| ২৮ শে মে, ২০২১ রাত ৮:৫২
সন্ধ্যা প্রদীপ বলেছেন: এমন কিংবদন্তি আমাদের এলাকার এক পুকুর নিয়েও আছে।গ্রামবাংলার সবখানেই হয়ত এমন গল্প পাওয়া যাবে।সত্যি হোক মিথ্যা হোক শুনতে কিন্ত ভালই লাগে।
২৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:১২
অপু তানভীর বলেছেন: আমার কাছেও তাই । শুনতে আমার বেশ ভালই লাগে । আসলে এই গুলো আমার গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে !
৩| ২৮ শে মে, ২০২১ রাত ৯:৩৮
মা.হাসান বলেছেন: রামসাগরের মিথ অনেক ভাবে প্রচলিত। কোনোটাতে আছে রাজকুমার, কোনোটাতে আছে রানি।
ঐ সময়ে খরা হয়েছিলো এবং স্থানীয় রাজার উদ্যোগে দীঘিটি খনন করা হয়েছিলো এটা সত্য। তবে এই একই মিথ আমি অন্তত আরো চার-পাঁচটি জেলার বড় বড় দীঘির সম্পর্কে শুনেছি।
দীঘিটা একটা ভালো পিকনিক স্পট হিসেবে এক সময়ে ব্যবহার হতো। কয়েকবছর আগে বিকেলের দিকে একবার গিয়েছিলাম। দেখলাম দেশের অন্যান্য এরকম স্পটের মতো এটাও মাদকসেবি ও অসামাজিক কার্যকলাপকারিদের আখড়া হয়ে গিয়েছে, অন্তত বিকেলের পর এরকমই অবস্থা ছিলো।
২৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:১৫
অপু তানভীর বলেছেন: এখন অবস্থা আরও খারাপের দিকে । পর্যাপ্ত পরিমান দেখা শুনার অবাবে দিন দিন সেটা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে । আমাদের দেশের অবস্থা তো জানেনই যে সরকারী ব্যবস্থাপনাতে যা থাকে তা কোন দিকে যায় !
হ্যা রাম সাগরের মত এককই মিথ অনেক বড় বড় দীঘি নিয়ে শোনা যায় । তবে সেটা কেবল মাত্র স্থানীয় ভাবে । রামসাগরেরটাই বলা যায় একেবারে দেশ ব্যাপী প্রচলিত ।
৪| ২৮ শে মে, ২০২১ রাত ১০:২৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: বার দুয়েক বেড়াতে গিয়েছিলাম। চমৎকার জায়গা। প্রথমবার খুব সুন্দর লেগেছিল। অনেক আগের কথা, তখন বাইরের মানুষ এটা সম্পর্কে তেমন একটা জানতো না। দ্বিতীয়বারে দেখেছি, পরিবেশের অনেক অবনতি। বর্তমান অবস্থা কি জানি না। তবে, আমাদের দেশের ট্রেন্ড অনুযায়ী আরো অবনতি হওয়ার কথা।
মিথের ব্যাপারে.......এটা পুরানো অনেক পুকুর / দীঘিরই একটা কমন মিথ। ডুবুরী দিয়ে মাঝখানে মন্দির আছে কিনা চেক করা হয়েছে কখনও?
২৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:১৭
অপু তানভীর বলেছেন: অবস্থা আগের থেকে খারাপের দিকে গেছে শুনেছি ।
মিথের ব্যাপারটাই এই রকম । শুনতে ভাল লাগে । আর আমাদের দেশের মিথ গুলো একটার সাথে অন্যটার মিলও দেখা যায় বেশ । যেমন মা. হাসান বলল । বড় দীঘি নিয়ে আমাদের এই একই রকম মিথ শোনা যায় প্রায় !
৫| ২৯ শে মে, ২০২১ রাত ১২:৫৩
জটিল ভাই বলেছেন:
সুন্দর পোস্ট। বেরাতে গিয়েছি। সেখানে সাইনবোর্ডেও ব্যাখ্যা আছে।
যাই হোক এমন বেশ কিছু পুরুষের ভেতরে একটা বিখ্যাত পুকুর হচ্ছে রামসাগর দিঘি । শব্দটি টাইপিং মিস্টেক হয়েছে।
ভুয়া মফিজ বলেছেন: ডুবুরী দিয়ে মাঝখানে মন্দির আছে কিনা চেক করা হয়েছে কখনও?
প্রশ্নটাতে যেনো অন্যকাউকে খুঁজে পাচ্ছি?
২৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:১৯
অপু তানভীর বলেছেন: গ্রাম বাংলার মানুষ এই সব বিশ্বাস করতে পছন্দ করে । তাদের এতো সত্য খোজার সময় কোথায় ।
ভুয়া সাহেবের প্রশ্নের ধরন দেখে আমারও একজনের কথাই মনে পড়লো । ইঙ্গিত ভাল ধরতে পেরেছেন আপনি !
৬| ২৯ শে মে, ২০২১ রাত ৩:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
২৯ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:২০
অপু তানভীর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
৭| ২৯ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:৩৩
হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: চমৎকার!
রামসাগর বেড়াতে গিয়েছি পুরো পরিবারসহ, ভালো লেগেছে।
আপনার পোস্ট পড়ে আরো ভালো লাগলো।
২৯ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:৫৭
অপু তানভীর বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে মে, ২০২১ রাত ৮:৪৯
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: রামসাগরে গিয়েছি।
এর কিংশুকিনীও পড়েছি আগে।
আমার এলাকায় একটি পুকুর ছিলো। সেটি সম্পর্কে গল্প চালুছিলো অনুষ্ঠানের সময় হড়ি-পাতিল উঠে আসার। আরো একটি মিথ ছিলো - এই পুকুর কখনোই সেচা যাবে না। পুকুরটির অস্তিত্ব এখন বিলিন হয়েছে। সেটির উপরে এখন দাঁড়িয়ে আছে ১০ তালা দালান।