নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১. যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করি যে জীবনে আপনি কি চান ? এমন প্রশ্ন শুনে আপনার মনে নানা রকম জিনিস চলে আসবে, নানান ব্যাপার নানা ধরনের কাজ করার কথা মনে আসবে । আমারও এই রকম অনেক জিনিস ছিল আগে যা আমি চাইতাম কিংবা করতে চাইতাম জীবনে । এর ভেতরে অনেক কিছু পূরন হয়েছ আবার হয় নি অনেক কিছু । এই পূরণ হওয়া না হওয়ার ভেতরে একটা ব্যাপার আমি আবিস্কার করেছি যে যখন একটা জিনিস জীবনে চাওয়া হয় তখন জিনিসটার ব্যাপারে যে তীব্র আগ্রহ থাকে, তখন মনে হয় জিনিসটা না পেলে বুঝি জীবন বৃথা হয়ে যাবে কিংবা ব্যাপারটা না ঘটলে আমার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে কিন্তু যখন ব্যাপার সত্যি সত্যিই ঘটে তখন আর সেই অনুভূতিটা হয় না । সত্যি বলতে কি তখন আসলে কিছুই মনে হয় না । আমার জীবনের অনেক দিনের জমিয়ে রাখা একটা ইচ্ছের কথা বলি । আমি অনেক দিন থেকেই একটা ইচ্ছে নিজের ভেতরে লালন করে আসছিলাম । ইচ্ছেটা হচ্ছে মোটামুটি মাস ছয় আমি একেবারে কোন কাজ কর্ম করবো না । সারা দিন বাসায় থাকবো নিজের ঘরে । আমার বিছানার পাশে, বিছানার উপরে এদিক ওদিক বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে । যখন ইচ্ছে তখন যেটা ইচ্ছে সেই বইটা নিয়ে পড়বো । খাওয়ার সময় খাবো আবার বই পড়বো । এই হচ্ছে আমার কাজ । কিন্তু এই ইচ্ছেটা পূরন হচ্ছেছিলো না । দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বাড়ির বাইরে যেতেই হয় কাজের জন্য । সপ্তাহে ছুটি থাকে, সেদিন গুলোতে শুয়ে বসে বই পড়ে কাটানো যায় বটে কিন্তু সেই মনের মত ইচ্ছেটা আর পূরণ হচ্ছিলো না কোন ভাবেই । কিন্তু গত বছর হঠাৎ করে আবিস্কার করলাম যে আমি একেবারে আমার সেই মনের মত সময় কাটাচ্ছি । করোনার কারণে বাড়ির বাইরে যাওয়া একেবারে বন্দ্ধ ছিল । বন্ধ ছিল সকল কাজ কর্মও । হাতে ছিল অখন্ড অবসর । প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতাম, নাস্ত খেয়ে বই নিয়ে বসতাম, ল্যাপটপে মুভি দেখতাম, ব্লগ পড়তাম খাওয়া-দাওয়া করতাম তারপর আবার রাতে ঘুমিয়ে যেতাম । এই ছিল রুটিন । একেবারে আমার সেই দীর্ঘদিন ধরে লালন করা স্বপ্নের মত । মোটামুটি দুই মাস আমি এই ভাবে সময় কাটিয়েছি । প্রথম কয়েকদিন ব্যাপারটা ভাল লাগলেও একটা সময়ে এই কাজেই আমি বিরক্ত হয়ে উঠলাম । আমার কাছে আমার স্বপ্নটা আর মোটেও আকর্ষনীয় মনে হল না আর । এই ব্যাপার টা নিয়ে আরও একটা ঘটনা মনে পড়লো ।
২. তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি । একদিন স্কুল শেষ করে এক বন্ধুর সাথে নিউমার্কেটে গিয়ে হাজির হলাম বন্ধুর জন্য ব্যাগ কেনার জন্য । ব্যাগ দেখা হচ্ছে এমন সময় একটা মানি ব্যাগের দিকে চোখ গেল আমার । সেটা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতে লাগলাম । ছোট সাইজের একটা মানিব্যাগ। দেখতে খুবই সুন্দর । ব্যাগ কেনা শেষ করে মানিব্যাগটার দাম দর করতে শুরু করলাম । কিন্তু দামটা একটু বেশি ছিল। যা দাম চাইছিলো সেই পরিমান টাকা যদিও আমার কাছে ছিল কিন্তু যদি সেটা দিয়ে দিই তাহলে আমার হাতে আর কোন টাকাই থাকবে না । হাত একেবারে শূন্য হয়ে যাবে । তাই মানিব্যাগটা না কিনেই চলে এলাম বাসায় । আমাদের বাসা থেকে নিউমার্কেট কম করে হলেও আট নয় কিলোমিটার দুরে । আমি বাসায় ফিরে গেলাম বটে তবে পুরো রাস্তা আমার মনের ভেতরে কেবল সেই মানিব্যাগের কথাই ঘুরপাক খেতে লাগলো । বাসায় এসে আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না । শেষে কী মনে হল আবারও সাইকেলটা নিয়ে বের হয়ে গেলাম । তখন সন্ধ্যা হব হব করছে । আবার সেই নিউমার্কেটে গিয়ে হাজির হলাম । সেই মানিব্যাগ কিনে তারপর শান্তি । কিন্তু মানিব্যাগ নিয়ে যখন বাসায় ফেরৎ এলাম তখন সেই শান্তি উবে গেছে একদম । তখন কেবল মনে হচ্ছে কেন কিনতে গেলাম । না কিনলেই তো হতো ! এমন তো না যে মানিব্যাগ নাই কাছে, একটু পুরানো হলেও কাজ চলার মত । আরও কয়েকদিন চলে যেত নিশ্চিন্তে । তাহলে কেন কিনলাম ! কোন দরকার ছিল কি ! এই চাওয়া যত সময় সেটা পূরণ না হচ্ছে তত সময়ই তার মূল্য অনেক বেশি । যখনই সেটা পূরণ হয়ে যায় তখনই সেটার মূল্য কমে যায় অথবা একেবারে থাকে না । আমার সাথে এমনটাই হয় বারবার । এখন তাই কোন কিছু পাওয়ার জন্যই উতলা হই না । অনেক দিন ধরে একটা ম্যাকবুক কেনার ইচ্ছে । অনলাইনে প্রায়ই আমি ম্যাকবুকের ছবি দেখি, এড গুলো দেখি, ইউটিউবে ভিডিও দেখি কিন্তু আমি জানি যেদিন সেটা কিনে ফেলবো সেদিনই মনে হবে ধুর না কিনলেই চলতো ! এতো গুলো টাকা কেন নষ্ট করলাম !
৩. আচ্ছা একটা ব্যাপার ভাবেন । আমরা নিজেদের দরকারে গাছ লাগাচ্ছি তারপর সেটা আমার যখন ইচ্ছে কেটে ফেলছি । গাছ কেটে সেগুলো খেয়ে ফেলছি, নানান প্রয়োজন মেটাচ্ছি । এমন যদি একটা পৃথিবীতে গিয়ে হাজির হন সেখানে আমি গাছকে নয় গাছ আপানকে খেয়ে ফেলছে, নিজের প্রয়োজন মত কাজে লাগাচ্ছে নিজেদের মত উৎপাদন করছে তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বলেন তো! কয়েকদিন আগে গেলর্ড সাবাতিনি নামের একজন লেখকের একটা গল্প পড়লাম । সেই গল্পের ঘটনা ঠিক এই রকম । গল্পটা পড়ার পরে বারবার মনে হচ্ছে আমরা যেমন পৃথিবীর সুপিরিয়ত হয়ে সব কিছু নিজেদের প্রয়োজন মাফিক নিয়ে নিচ্ছি, নিজেদের মত করে ব্যবহার করছি, কী হত যদি আমারা সুপিরিয়র না হতাম ? আমাদের কেউ কি তাহলে এই ভাবে কেউ ব্যবহার করতো ! তখন ব্যাপারটা কেমন হত?
৪. অনেক দিনের আগের একটা গল্প । দুই জন স্বল্প পরিচিত মানুষ একটা হোটেলে খেতে গেছে । হোটেলে বয় পানি দিয়ে গেল । পানি খাওয়ার পরই একজন বলে উঠলো, বাহ এদের পানি তো বেশ মিষ্টি । আমাদের ফ্যাক্টরির পানিও ঠিক এই রকম মিষ্টি । পারত পক্ষে এই লাইন শোনার পর অন্যজন এই কথাটা বলতে পারে যে কিসের ফ্যাকটারি আপনাদের কিংবা আপনার বাবা কি করে ইত্যাদি ! এটাই আসলে অপর জনের উদ্দেশ্য । নিজের নিজের কথা মানুষকে জানানো । এই নিজেকে একটু জাতে তোলার চেষ্টা নিজের একটু দাম বাড়ানোর চেষ্টা এই ব্যাপারটা আমার সব থেকে বেশি অপছন্দ । এটা নিয়ে আরেকটা গল্প রয়েছে বেশ মজার । জনৈক ভদ্রলোকের ছেলে বিদেশ থেকে তার জন্য একটা স্যুট পাঠিয়েছে । কিন্তু সময়টা তখন গরম কাল । গ্রামে তখন মানুষ স্যুট কেন পড়ে ঘুরে বেড়াবে? তবুও ভদ্রলোক মানুষজনকে দেখানোর জন্য সেই স্যুট পরেই বের হল । কিন্তু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় কত মানুষের সাথে দেখা হোক না কেন কেউ তার পরনের স্যুটের কথা জানতে চাইলো না । এক সময়ে সে মোড়ের দোকানের গিয়ে হাজির হল । চায়ের অর্ডার দিয়ে বসলো বেঞ্চের উপরে কিন্তু কেউ তার স্যুটের দিকে যেন ফিরেও তাকাচ্ছে না । কেউ তার স্যুটের ব্যাপারে জানতে চাইছে না । এটা দেখে তার মোটেও সহ্য হচ্ছে না । শেষে থাকতে না পেরে সে নিজেই বলল, আজকে অনেক গরম না ! পাশ থেকে একজন তার দিকে তাকিয়ে বলল, এই সময়ে এই বস্তা পরে থাকলে তো গরম লাগবেই ... গল্প দুটো অনলাইন থেকে সংগ্রহ করা । উপরের এই দুজনের মতই আমাদের সামুতে একজন মানুষ রয়েছে । তার লেখায় কিংবা মন্তব্যে সর্বদা একটা চেষ্টা থাকে যে মানুষকে দেখানো যে দেখো আমি কত মহান আমি কত কিছু করেছি কিংবা দেখো আমি কত টাকার মানুষ । ব্যাপারটা ইগ্নোর করেই যাওয়ার দরকার ছিল, কিন্তু প্রতিনিয়ত কেউ যখন এই কাজটা করে যায় তখন বিরক্ত তো একটু লাগেই । নিজেদের দাম কখনও নিজেদের বাড়াতে নে. কোথাও না । আপনি যত নিজের কাজের বড়াই করতে থাকবেন মানুষের চোখে আপনি তত ছোট হতে থাকবেন । আমাদের সামুতে কত বড় বড় মানুষ ব্লগিং করে গেছেন, এখনও করছেন । তাদের বংশ পরিচয় পারিবারিক অর্থ সম্পদ কিংবা চাকুরীর পদবি কখন ব্লগিংয়ের লেখায় কিংবা মন্তব্যে প্রকাশ পায় নি। অন্য মানুষজন তাদের কে চিনেছে তাদের লেখার মাধ্যমে ।
এই সব বগর বকর কেন লিখছি? গতদিনই বলেছিলাম যে মনে যা আসে তা যদি বলতে না পারি তাহলে সেটা আসলে শান্তি লাগে না । তাই এই কথা বার্তা গুলো । ভাল লাগা কিংবা বিরক্তির সব কারণই বলে ফেলা উচিৎ । তাহলে মনে শান্তি আসে । আমিও কেবল মনে শান্তি আনার চেষ্টা করছি ।
Photo by Jason Rosewell on Unsplash
পোস্ট কিছুটা এডিট করা । কাউকে হেহ করতে নয় কেবল একটা উদাহরন দিয়েছিলাম । পরে মনে হল তবুও দরকার নেই ।
০৮ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৪
অপু তানভীর বলেছেন: মনের শান্তিই বড় শান্তি !
২| ০৮ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৫
কঙ্কাবতী রাজকন্যা বলেছেন: বগর বগর পড়বো।
মনের কথা বলে ফেলা ও পড়ে ফেলা আনন্দের বিষয়।
০৮ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:৩৫
অপু তানভীর বলেছেন: বগর বকর লিখেই যাবো লিখেই যাবো !
৩| ০৮ ই জুন, ২০২১ রাত ৮:৩৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: চাচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না এই আকাঙ্খাই মানুষকে অস্থির করে তোলে। যখন পাওয়া যায় তখন আকাঙ্খা থাকে না ফলে পাওয়া জিনিস ভালো লাগে না। আবার সহজে পাওয়া গেলে ভালো লাগে না। বেশীরভাগ মানুষই এই ভাবেই চিন্তা করে। তবে ব্যতিক্রমী মানুষও থাকতে পারে।
০৮ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:৩৭
অপু তানভীর বলেছেন: এই কারণে এখন একটা ব্যাপার আয়ত্ত করেছি যে কোন কিছুর জন্যই আর উতলা হব না । যা পাওয়ার পাবো নয়তো পাবো না । এভাবেই চলবে । কোন কিছুর পেছনে এতো তীব্র আগ্রহ আর দেখাবো না যাতে সেটা পেলে আগ্রহ হারিয়ে যায় আবার না পেলে মন খারাপ হয় !
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৫০
জটিল ভাই বলেছেন:
সুন্দর চিন্তা। এভাবে নিজের মনকে হালকা রাখুন। শুভকামণা রইলো।