নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রামাদান ডায়েরি ০২ঃ অফিসে ইফতার, ব্যস্ততা

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১:৪৭

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই যদি দেখা যায় আপনার গত কয়েকদিনের কাজের পারিশ্রমিকের পরিমান আপনাকে দেওয়া হয়েছে তাকে মন কার না ভাল হয় ! আর এই কথা তো বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না যে যখন টাকা পয়সা আসে তখন মনটা আপনা আপনিই ভাল হয়ে যায় । আজকের সকালও তেমন মন ভাল করা সকাল ।
গত মাসের শেষের দিকে আমার স্কুল বন্ধু ফোন দিয়ে ওর অফিসে গিয়ে ইফতার করতে বলল। আমরা ঢাকাতে একদিন ইফতার করি প্রতি বছর । কিন্তু সেটা শেষের দিকে । একেবারে প্রথম দিকে করা হয় না । যাক আমার যাওয়ায় কোন সমস্যা ছিল না । আমি সময় মত গিয়ে হাজির হলাম । অফিস তখন ফাঁকা প্রায় । এমনই হওয়ার কথা । অবশ্য ও আমাকে আরও একবার ফোন দিয়ে জানিয়ে ছিল যে কেন আমাকে ওর অফিসে যেতে বলছে ।

সে একটা প্রকাশনি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িতো । নামটা বলছি না তবে আমি নিশ্চিত আপনার ছেলে মেয়ে ছোট ভাই কিংবা আপনি নিজে সেই প্রকাশনির বই পড়ে পাশ করেছেন । আমি নিজেও এদের বই পড়েছি স্কুলে থাকতে । ওদের নতুন ম্যাথ বইয়ের ইংরেজি ভার্শন বের হবে । ডেড লাইন দেওয়া হয়েছে এপ্রিলের সাত তারিখ যেখানে কাজ এখনও শুরু হয় নি । বাংলা ভার্শনটা বের হয়ে গেছে এখন সেটার ইংরেজি ভার্শন বের করতে হবে । ওদের কোম্পানির নিয়ম হচ্ছে এই সব বইয়ের ট্রান্সলেশন তারপর এডিটিং কোয়েশন সল্ভিং এসব বেশির ভাগই করা হয় ফ্রিলান্সারদের দিয়ে । যে কাজটা চলতেছে সেটার জন্য ইতিমধ্যে ফ্রিলান্সাররা কাজ শুরু করে দিয়েছেন তবে কাজ এগোচ্ছে না । আমার বন্ধুটি জানে যে আমি এই কাজ করি । তবে একেবারে একাডেমিক কাজ আমি আগে করি নি । কারণ একাডেমিক কাজের জন্য বইয়ে বর্ণিত টার্ম গুলোই ব্যবহার করতে হয় । আরো নানান প্যারা আছে । সাধারণ ক্ষেত্রে এসবের বালাই নেই । তাই একটু কনফিউশনে ছিল যে কাজটা পারবো কিনা ।

আমি ভেবে দেখলাম এই রোজার মাসটা আমি বলতে গেলে বসেই রয়েছি । চেষ্টা করে দেখাই যাক । প্রথম দিন ডেমো হিসাবে দুই পাতা কেবল দেওয়া হল । ঐদিনই ওদের অফিসে প্রথম ইফতার করলাম । বাসায় চলে এলাম । তারপর রাতে বেশ সময় নিয়েই পাতা দুটো ট্রান্সলেট করে পাঠিয়ে দিলাম । আমার এমন কোন টেনশন ছিল না । কাজ যদি ভাল হয় তাহলে ডাক পড়বে, না হলে হবে না । কিন্তু ডাক পরলো । আবারও গিয়ে হাজির হলাম পরদিন । তবে একটু আগেই গেলাম । আমাকে দেখানো হল যে আমার কোথায় কোথায় ভুল ছিল । সে গুলো দেখিয়ে দেওয়া হল । এরপর অন্য আরেকজনের একটা ট্রান্সলেট করা শীট ধরিয়ে দিয়ে বলল যে এবার এটা ঠিক করে দেখো কোথায় কোথায় ভুল আছে ।
এভাবেই কাজ হয় । প্রথমে একজন ট্রান্সলেট করে পরে আরেকজন সেটা চেক করে ভুল ঠিক করে দেয় । তারপর সেটা যাবে আরেকজনের কাছে । সে ভুল গুলো টাইপ করে ঠিক করে বই আকারে বের করার অবস্থায় নিয়ে আসবে । তবে ফাইনাল প্রেসে যাওয়ার আগে আরেকবার আসবে অফিসে । সেখানে আবার ভাল ভাবে সব কিছু চেক করা হবে যে সব কিছু ঠিক ভাবে লেখা হয়েছে কিনা !
যা বলছিলাম, সেই কাজগটা এডিটিং করা শুরু করলাম । কিভাবে কী করতে হবে সেটাও দেখে দিল সে । সেদিনও ইফতার হল অফিসেই।

আমি ভেবেছিলাম যে আমি কেবল ট্রান্সলেটই করবো নিজের বাসায় বসে । শুয়ে বসে কাজ করবো যা এতোদিন করে এসেছি । আসলে অফিসে গিয়ে এভাবে কাজ করার আমার জন্য একটু অস্বস্তিকর ছিল । বাসায় এসে মেইল চেক করে দেখি এবার বেশ বড় সাইজ এসেছে । সেগুলোর কাজ শেষ করতে করতে সেহরীর সময় হয়ে গেল । কাজ শেষ করে সেহরি করে ঘুম দিলাম । সকাল ঘুম ভাঙ্গলো । বন্ধুর ফোনে । ডাক পরলো অফিসে । গিয়ে হাজির হলাম । আবারও সেই এডিটিংয়ের কাজ । এরপর যেমন এটাই রুটিং । রাতে বাসায় ফিরে ট্রান্সলেট সেহরি পর্যন্ত । সেহরি খেয়ে ঘম । সকালে উঠে অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে এডিটিং । একেবারে ইফতার করে বের হয়ে বাসায় । বাসায় আবার ট্রান্সলেট ।

সত্য বলতে কি আমার জীবনে এতো কাজের চাপ কোন দিন অনুভব করি নি । যদি রোজা না হত এই কাজে যেতাম কিনা সন্দেহ। গতকালকে শেষ হল সব কাজ । গতকাল ওদের অফিস থেকে ইফতার করে বাসায় এসে একটা ঘুম দিলাম । মনে হল যেন কত দিন পরে শান্তমত একটা ঘুম হল । কাজের চাপ আর তারপর কাজ শেষ করে শান্তির ঘুম যে কী আরামের সেটা কাজ ভাল করে অনুভব করলাম ।

আগের একটা পোস্টে বলেছিলাম যে বাসায় সব সময় একা একাই ইফতার করি। কিন্তু এই কদিনে অফিসে আমরা প্রতিদিন সাত আট জন করে ইফতার করতাম । এর ভেতরে আমরা নিয়মিত ফ্রিলান্সার ছিলাম তিন থেকে চার জন । এটা একটা আনন্দদায়ক কাজ ছিল । সবাই একসাথে কাজ করে ইফতার করছি । ইফতারে গল্প করছি টুকটাক । হালকা হাসি মশকরা করা হচ্ছে । এটা যেন সারা দিনের পরিশ্রমের পরিমানটা অনেকটাই কমিয়ে দিচ্ছে । অফিসের এই ব্যাপারটা বেশ চমৎকার ।

ইফতার দেওয়া হত অফিস থেকেই । এই সিস্টেমটা আমার বেশ ভাল লাগলো । ওদের অফিসে ফ্রিলান্সারদের সাথে খুবই ভাল আচরণ করা হয় । এটা আমি এই কদিনে গিয়েই টের পেয়েছি বেশি । এবং সব থেকে ভাল কথা যে কাজের পারিশ্রমিক অন্যান্য যে কোন জায়গা থেকে অনেক বেশি । বন্ধুটি জানালো যে রোজা না থাকলে দুপুরের লাঞ্চ, বিকেলের স্ন্যানকসও দেওয়া হয় নিয়মিত ভাবে, সাথে চা কফি তো আছেই । আমাকে ও এই বছরের শুরুতেই আরেকটা কাজের জন্য বলেছিলো । কিন্তু তখন আমি ফ্রি ছিলাম না বলে যেতে পারি নি । এখন মনে হচ্ছে তখন না গিয়ে আসলে লসই করেছি ।
আজকে সকালে বন্ধুটি আমাকে আমার কাজের পারিশ্রমিকের পরিমানটা পাঠালো । টাকার পরিমান টা দেখে আমার চোখ কলাপে উঠলো । আমি সত্যিই এতোটা আশা করি নি । আমি আসলে দিনের সময়টা ফ্রিছিলাম বলে ওর ডাকে গিয়েছিলাম । যা পাই তাতেই খুশি এমন একটা ভাব । আজকে আমার মন বড় ভাল । যদিও বিলটা এখনও পাশ হয় নি । ফাইনাল বইটা ৭ তারিখে প্রকাশ হওয়ার কথা । তারপরই বিল পাশ হবে । তবে এই আমি জানছি যে টাকাটা আসছে আমার কাছে, এটাও কিন্তু একটা আনন্দের ব্যাপার । এই আনন্দেই কেটে যাবে কয়েকদিন।

শেষ করি একটা উপলব্ধি দিয়ে । এই যে কদিন চোখ কান বুঝে আমি কাজের ভেতরে ব্যস্ত ছিলাম এই কদিনে আসলে আমার অন্য কোন দিনে কোন খেয়ালই ছিল না । কে কী করলো কোথায় গেল না করলো এসব কিছুই আমাকে স্পষ্ট করে নি । আমার সামনে কেবল ছিল কাজ । সেটা শেষ করতে হবে । ব্লগে আমি এসেছি ঠিকই তবে কোন পোস্টই পড়ার সময়ই পাই নি । দুই কী তিনটা মন্তব্য করেছিলাম পুরো এই সময়ে কেবল । এছাড়া অন্য কিছু আর ভাবতেই পারি নি । অন্যান্য সময়ে আমার নানান কিছু ঘুরতে থাকে । কিন্তু এই কদিনে অন্য কিছুই ছিল না । এটাই হচ্ছে ব্যাপার যে আপনার হাতে যখন অফুরন্ত বেকার সময় থাকবে তখন আপনার নানান অপকর্ম করতে ইচ্ছে করবে । কিন্তু যখন আপনি নিজে কাজে ব্যস্ত থাকবে তখন এসবের ধার দিয়েও যাবেন না।

হ্যাপি রামাদান
এবং শুভ ব্লগিং

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:০২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: বাহ ! এবার রমজান বেশ ভাল কাটছে আপনার। ভাল কাটুক।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:০৪

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যা এই রমজানের আগে থেকে একটু বেকায়দায় পড়েছিলাম । তবে এখন বেশ কাটছে । সামনের কয়টা দিনও ভাল কাটবে আশা করি ।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৩৬

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হ্যাপী রমাদান

ভালো লাগলো পোস্ট

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৪২

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যাপি রামাদান !

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:২৪

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: সুখী রমজানুল মোবারক !!

দিনকাল তো ভালোই কাটছে ভাই !!

০৩ রা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:১৮

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যা এই কটা দিন সময় কাটলো বেশ ব্যস্ততায় । বেশ ভালও কেটেছে বলা যায় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.