নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আপনারা সবাই জানেন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ভারের বেশির ভাগটাই বাংলাদেশ ব্যবসায়ীদের বহন করতে হচ্ছে । এই কারণে সকল জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। বিদেশে থাকা আমাদের কিছু ব্লগারের অবশ্য দেশের বাইরে থেকেই দেশের বাজারের খবর আমাদের থেকে বেশি ভাল জানেন । তাদের কাছে দাম বাড়ে নি খুব একটা । কিছু কিছু ব্যাপারে কিন্তু তাদের এই বক্তব্য ভুল নয় । মানে, দেখবেন এমন অনেক পণ্যই রয়েছে যা আপনি একবছর আগে যা দামে কিনতেন এখনও সেই একই দামে কিনছেন। বাজারে এমন জিনিসের সংখ্যা নেহতই কম নয়।
তাহলে ?
যে সব জিনিসের দাম বাড়ে নি সেগুলোর উপর কি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ে নি?
আসলে পড়েছে ঠিকই । এবং সেগুলোর দামও বৃদ্ধি পেয়েছে । আমরা হয়তো খালি চোখে দেখছি না । আগের দামেই সেই জিনিস গুলো কিনছি । তবে দাম বেড়েছে ঠিকই। এই ক্ষেত্রে ইনফ্লেসন ঘটে নি । ঘটেছে ‘স্রিংকফ্লেসন’ । শব্দটা পরিচিত মনে হচ্ছে না খুব ? খুব পরিচিত দুটো শব্দ নিয়েই এটা গঠিক । এবং এই শব্দটা শুনেই বুঝতে পারছেন আসলে কী ঘটেছে । মূলত এই স্রিংফ্লেসন হচ্ছে ইনফ্লেসনের অন্য একটি রূপ । কেবল সেটা আমাদের সামনে অন্য ভাবে এসে উপস্থিত হয় । ইনফ্লেসনে আমরা জানি যে সমগ্র জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পায় । আগে কোকের দুই লিটার বোতলের দাম ছিল ১১০ টাকা এখন সেটা ১৫০ টাকা । যে জিনিসের দাম ছিল ৩০টাকা এখন সেটা ৪৪ টাকা । কিন্তু দোকানে গিয়ে খেয়াল করে দেখুন যে এমন অনেক জিনিস আপনাদের চোখে পড়বে যার দাম আগে যা ছিল এখনও তাই আছে । যেমন একটা কফির ছোট মিনি প্যাকেট । আগে ৫টাকা ছিল এখনও ৫টাকাই আছে । কিন্তু আসলেই কি আছে? কফির যে ২০০ গ্রামের বোতল ছাড়া প্যাকটা আমি আগে কিনতাম ৩৮৫ টাকায়, এখন সেটার দাম ৪২০ টাকা । তাহলে মিনি কফির দাম কেন বাড়ল না?
আসলে দাম ঠিকই বেড়েছে । সেখানে ইনফ্লেসন না ঘটে ঘটেছে স্রিংফ্লেসন । আগে আমার এই মিনি প্যাকেট দুইটা দিয়েই এক কাপ দারুন কফি হয়ে যেত । মানে আমি ঠিক যে পরিমান কফি খাই সেই হিসাবে এক মগে দুইটা মিনি প্যাকেট দিলেই হয়ে যেত । এখন সেখানে দুইটা দিলে কেমন একটা পানসে ভাব লাগে । মনে হয় যেন ঠিক মত কফিটা ঠিক মত হয় নি । এখন সেখানে তিনটা প্রয়োজন। অর্থ্যাৎ কোম্পানী গুলো কিছু পন্যের দৃশ্যমান দাম না বাড়িয়ে অদৃশ্যমান মূল্য বাড়িয়েছে সেই পণ্যের পরিমান কমিয়ে দিয়ে । এটার নামই হচ্ছে স্রিংফ্লেশন । জিনিসের দাম সরাসরি না বাড়িয়ে পরিমান কিংবা পণ্যের মান কমিয়ে দেওয়া । এটি একটি মার্কেটিং কৌশল। এখানে ক্রেতার মনে হয় যে আসলে জিনিসের দাম আগের মতই আছে । ফলে সে সেই জিনিসটি কিনতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে ।
স্রিংফ্লেসনের সব থেকে বড় উদাহরণ হচ্ছে আমাদের পাড়ার হোটেলের সিঙ্গাড়া । দাম এখনও ৫ টাকাই আছে তবে সিঙ্গাড়ার আকার কমে গেছে বহুগুণে । আগে যেখানে দুইটা সিঙ্গাড়া খেলে আমাদের আর কিছু খাওয়ার দরকার পড়তো না এখন সেখানে ৪/৫টা খাওয়াতেও কিহু মনে হচ্ছে না। যারা এখনও পড়াশোনা করেন, তারা খেয়াল করে দেখবেন যে আগে একটা ৫ টাকার কলম দিয়ে আপনি যে পরিমান লিখতে পারতেন এখন তার থেকে কম লিখতে পারছেন । কলমের দাম না বাড়িয়ে কেবল কালি এবং কমলের মানের কমিয়ে দেওয়া হয়েছে । আগে ১৫০ গ্রাম কাপড় কাঁচা সাবানের দাম ছিল ২০ টাকা । সেটা এক সময়ে ৩০ টাকায় উঠে গিয়েছিল । পরে সেটা কমে এখন ২৫ টাকা হয়েছে । কিন্তু এখন আর ১৫০ গ্রাম নয়, সাবানের পরিমান এখন ১২৫ গ্রাম । চিপসের দাম আগের মতই আছে তবে আগে যেখানে ২৫ গ্রাম দেওয়া হত এখন সেখানে দেওয়া হয় ১৫ গ্রাম । গুড়া দুধ আগে যেখানে ১৮ গ্রামের দেওয়া হত এখন দেওয়া হয় ১০ গ্রাম । কোভিটের পরে এই চলটা আমাদের দেশে শুরু হয়েছিল । তাও অল্প কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে । তবে এখন প্রায় প্রতিটি জিনিসের (যার দাম বাড়ে নি) ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে । কোভিটের পরে যার একটু পরিমান কমানো হয়েছিল এখন সেটা প্রায় অর্ধেক পরিমান কমানো হয়েছে । চিপসের প্যাকেটে ২৫ গ্রাম থেকে কোভিটের সময় করা হয়েছিল ২২ গ্রাম । এখন সেটা ১৫ গ্রাম । হিসাবটা খেয়াল করে দেখেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্রেতা এই ব্যাপারটা খেয়াল করে না। অন্তত কেনার সময়ে না। আপনি আমি পন্য কেনার সময় দোকানদারকে কী বলি? আমি টুথপেস্ট কেনার সময় মোমিনের দোকানের গিয়ে বলি মোমিন একটা টুথপেস্ট দাও। মোমিন জানতে চায় ভাই কোনটা বড়টা নাকি ছোট টা ? মিডিয়াম টা দাও । এদিকে মিডিয়ামটা আগে ছিল ১০০ গ্রাম সেটা যে এখন ৮০ গ্রাম হয়ে গেছে সেটা আমার খেয়াল করার কথা না । আগে যে পেস্ট যেত ২ মাস এখন সেটা দেড় মাসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে । তার মানে সময়ের ব্যবধানে আমি সেই বর্ধিত দামেই জিনিস পত্র কিনছি । ব্যবসায়ী নিজেদের প্রোফিট মার্জিন বৃদ্ধি করতে এই কৌশল ব্যবহার করে থাকেন । শুরুতে ক্রেতারা এই পরিমান কমে যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক মত খেয়ালই করেন না কিংবা বুঝতে পারেন না । তারা কেবল দাম বাড়ে নি এটা নিয়েই খুশি থাকেন । কিছু দিন ব্যবহার করার পরে সেটা টের পান ।
স্রিংফ্লেসন নিয়ে আরো পড়তে পারেন।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের রিপোর্ট
স্রিংফ্লেসন
ইউকিপিডিয়া
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৩
অপু তানভীর বলেছেন: যতই দিন যাচ্ছে এই স্রিংফ্লেশনের ব্যাপারটা বাড়ছেই । চিপসের ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে অনেক আগে । বাকিরা তাদের ফলো করছেন । যুক্তিশীল তাই তো কম দামের প্রতি আকৃষ্ট হয় । এটাই তো সব থেকে বড় র্যাশোনাল বিহেবিয়ার !
২| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:০৯
ডার্ক ম্যান বলেছেন: প্রবাসী ব্লগাররা ডলার পাউন্ড ইনকাম করেন তাই তাদের কাছে পণ্যমূল্য তেমন ফ্যাক্টর না।
জিনিসপত্রের দাম ভয়াবহরকম বেড়েছে। আমাদের ব্যবসায়ীদের উপর আল্লাহপাকের বিশেষ রহমত ও বরকত আছে।
ভারত থেকে ডিম ও আলু আসার পর এই দুটো জিনিসের দাম কমে গেল।
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৫
অপু তানভীর বলেছেন: দেশের কোন কিছুতেই আসলে তাদের যায় আসে না । এটা তাদের কাছে চায়ের দোকানে বসে বিকেলের আলাপের মতই । এই বেশি কিছু না ।
দাম যে কমছে বলছেন কয়টাকা কমেছে? কাল কিনতে গিয়ে ছি ডজনে কমেছে ৫ টাকা । ২০ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা কমানো সরকারের অনেক পুরানো খেল !
৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৩২
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
দেশের নিজস্ব উৎপাদন নেই বললেই চলে।
আমদানী করে বাজার ঠিক রাখা এতো সহজ না।
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৬
অপু তানভীর বলেছেন: একটা দেশের নিজেস্ব উৎপাদ ছাড়া কোন ভাবেই এগিয়ে যেতে পারে না । আর সেই সাথে ঋণের পরিমান বছর বছর যে লাগাম ছাড়া হচ্ছে সেই দিকে কারো খেয়াল নেই। কেবল জিডিপি বাড়লেই তো হবে না ।
৪| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৪৬
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা সব চেয়ে বড় পাপী।
তাদের কোন ক্ষমা নেই।
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৭
অপু তানভীর বলেছেন: ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সব থেকে বড় দায়ী । এবং প্রতিটা সিন্ডিকেটের মাঝে বসে আছে একটা নির্দিষ্ট দলের লোকজন ।
৫| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৪
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: অসাধারণ পোস্ট।
এই জিনিসগুলো আমি উপলব্ধি করি কেনাকাটা করতে গিয়ে। সময় যেমন ছোট হয়ে আসছে তেমনি সবকিছুই ছোট হয়ে আসছে। সময়ের দুই পাশ অলীক ইরেজারে মুছে যাচ্ছে, কাজে কর্মে কিছুতেই আর বরকত নাই। চাহিদার ব্যাপ্তি যতই আকাশসীমা হোক না কেন শখ মিটাতে, ক্ষিধা মিটাতে এখন মানুষ হিমসিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশে সব চেয়ে বড় বেঈমান ব্যবসায়ী, ডাক্তাররাও দিগুন ভিজিট বাড়িয়ে দিয়েছে। এরাও কম বেঈমাননা।
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৮
অপু তানভীর বলেছেন: কেবল মাত্র যারা অবৈধ টাকা আয় করছেন তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না । বৈধ পথে আয়করা প্রতি মানুষ বিপদে রয়েছে ।
৬| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:১৮
রেজাউল৬১ বলেছেন: চাটগার ব্লগার আব্দুর রব চিপসের প্যাকেটে চিপসের পরিমাণ কমা নিয়ে একটা রম্য পোস্ট দিয়েছিলেন। উনার ব্লগীয় ইন্টারেকশন কম বলে সেই পোস্টে তেমন ভিউ হয় নাই।
সাজ্জাদ সাহেবকে চিন্তিত দেখলাম কনডমের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে। এখন ওই জিনিস যদি দাম এক রেখে সাইজ কমায় দেয় তাহলে কি হবে সেটা ভাবতে আছি।
১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:২৬
অপু তানভীর বলেছেন: তখন আরো বিপদ । সাইজ ছোট হবে না তবে দাম একই রাখলে কোয়ালিটি কমে যাবে । সেই হিসাবে ছিড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে । ফলস্বরূন জন সংখ্যা বিস্ফোরণ !
যাই হোক আপনাকে আমি একটা মেইল পাঠিয়েছিলাম। মেইলটা দেখেছিলেন কি?
না হলে আমার মেইলে আরেকটা মেইল পাঠিয়েন সময় । একটা জিনিস আপনাকে দেখাইতাম ।
৭| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৩৪
হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
দাম বাড়লেও কেনা কাটা কিন্তু বন্ধ নেই।
প্রথম আলোতে দেখলাম বহুল আলোচিত লিপিষ্টিক নাকি প্রতি বছরই আমদানি বাড়ছে, এই বছর ৪৬% বেশি লিপষ্টিক আমদানি হয়েছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ সক্ষম ক্রেতা গোষ্ঠী।
বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ কৃষি পণ্য উৎপাদিত হলেও বিক্রির জন্য শ্রীলংকার মত রপ্তানি বাজার খুঁজতে হয় না দেশেই খাদ্যের বিশাল বাজার।
শ্রীলঙ্কার মত বিদেশি পর্যটক খুঁজতে হয় না, দেশেই বিশাল পরিমাণ পর্যটক যারা বিদেশীদের চেয়ে বেশি খরচ করতে রাজি।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫৭
অপু তানভীর বলেছেন: কাওরান বাজার থেকেই আমেরিকায় বাজার সদাই করেন মনে হচ্ছে !
৮| ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:৫৬
রেজাউল৬১ বলেছেন: যাই হোক আপনাকে আমি একটা মেইল পাঠিয়েছিলাম। মেইলটা দেখেছিলেন কি?
না হলে আমার মেইলে আরেকটা মেইল পাঠিয়েন সময় । একটা জিনিস আপনাকে দেখাইতাম ।
সে এক ব্রাট ইতিহাস, ঘরেতে ছিল না কেরাসিন ...
যাই হোক, আগামী সপ্তাহের মধ্যে আপনার সাথে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবো।
১৬ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২২
অপু তানভীর বলেছেন: উকে নো প্রব্লেম ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৪৮
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: একটা কাজের কাজ করেছেন এই পোস্ট করে !
আমার সাথে এই স্রিংফ্লেশনের প্রথম পরিচয় বোম্বে সুইটসের চিপস দিয়ে । সম্ভবত এই চিপস কোম্পানিভাবে এই সিংফ্লেশনকে মৌলিকভাবে ধরে রেখেছে ।
অর্থনীতিতে অনুমিত শর্ত হিসেবে ধরে নেয়াই হয় মানুষ যুক্তিশীল । কিন্তু বাজারে ভোক্তাদের ক্ষেত্রে কেবল যারা স্বার্থান্বেষী তারাই কেবল সিংফ্লেশন নামক নীরব ইনফ্লেশনকে বুঝতে পারে না ! অর্থনীতিতে এদেরও বিবেচনায় আনা দরকার , আর হ্যাঁ পরিসংখ্যানেও !!