নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.oputanvir.com

অপু তানভীর

আমার চোখে ঠোঁটে মুখে তুমি লেগে আছো

অপু তানভীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাডাইটসঃ প্রযুক্তি যাদের চাকরি কেড়ে নিয়েছিল

২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:০২



কর্মক্ষেত্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তির ব্যবহারের একটা অর্থ হচ্ছে কিভাবে আরো কম লোকবল ব্যবহার করে আরো বেশি পরিমান কাজ করানো যায় ! আর এআই এর বেলাতে এই লোকবলের সংখ্যা একশ থেকে মাত্র একজনেও নেমে আসতে পারে ! অর্থ্যাৎ আগে যে কোম্পানিটি চালাতে ১০০ জন লোক দরকার পড়তো এখন সেখানে মাত্র একজন দিয়ে সেই কাজ হয়ে যাচ্ছে । একদিন দিয়ে হিসাব করে দেখলে এটা কোম্পানির জন্য খুবই চমৎকার একটা ব্যাপার কিন্তু আবার অন্য দিক দিয়ে খেয়াল করে দেখলে ব্যাপারটা ভয়ংকর একটা ব্যাপার । এখানে ৯৯ জন মানুষ তাদের কাজ হারিয়ে ফেলছে !
প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে মানুষের চাকরি হারানোর ব্যাপারটা কিন্তু অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে । এটা নতুন কিছু না । ইতিহাসে যতবার এই রকম বড় প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ঘটেছে ততবারই দেখা গেছে সাধারন মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে । এই রকমই একটা গল্প হচ্ছে লাডাইটসদের গল্প ।
লাডাইটস (Luddites) শব্দটা যদি আপনারা ডিকশনারীতে খোজেন তাহলে এর অর্থ দাড়ায় (a person opposed to new technology or ways of working) যে মানুষটি নতুন কর্ম প্রযুক্তির বিরোধীতা করে । তবে এই অর্থ দিয়ে আসলে পুরোপুরি ভাবে লাডাইটসদের বোঝা সম্ভব না । তারা কেন নতুন প্রযুক্তির বিরোধী ছিল সেই গল্পটা যদি আমরা জানি তাহলে তাদের নামের অর্থ পরিস্কার ভাবে আমাদের বোধগম্য হবে ।

গল্পটা ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সময়ের । সেই সময়ে কাপড় খুবই দামী বস্তু ছিল এবং এবং এই কাপড় তৈরি করা খুব কঠিন একটা কাজ ছিল। বেশ কয়েক ধাপে কাজগুলো করতে হত । এবং যারা কেবল দক্ষ কারিগর কেবল তারাই এই কাজগুলো করতে পারতো ! সেই সময়ে এই দক্ষ কারিগড়রা সুন্দর এবং স্বচ্ছল জীবন যাপন করতো । কিন্তু যখন প্রযুক্তি আসতে শুরু করলো তখন ধীরে ধীরে যন্ত্রপাতি তাদের কাজের স্থান গুলো দখল করে নেওয়া শুরু করল। একজন এমন একটি যন্ত্র আবিস্কার করল যেটা তন্তুকে সুতায় পরিণত করত। কেউ এমন একটি যন্ত্র আবিস্কার করল যেটা কিনা আপনার সুতোকে অল্প কর্মী দিয়েই কাপড়ে পরিনত করতে পারত। অন্য একজন এমন একটি যন্ত্র আবিস্কার করেছিল যা দিয়ে সহজেই কাপড় কাটা যেত । মানে হচ্ছে কাজ গুলো আগে কর্মীরা করতো সেই কাজ গুলোই এখন যন্ত্রগুলো করতে শুরু করল।
সেই সময়ের আগে ব্রিটিশ আইন এমন ছিল যে নতুন এমন কোন যন্ত্রপাতি চলবে না যা মানুষজনের কাজ কর্মের জন্য হুমকি হয়ে দাড়ায়। তবে এই সময়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিল যে এই নীতি পরিবর্তন করবে। ফলে দেখাগেল নানান রকম যন্ত্রপাতি আবিস্কার হতে থাকল এবং একে একে মানুষজন যারা এক সময়ে দক্ষ কারিগর ছিল তারা নিজেদের কাজ কর্ম হারিয়ে বেকার হতে থাকল। এই সময়েই তারা সিদ্ধান্ত নিল যে তারা এটার প্রতিবাদ করবে। যুদ্ধ ঘোষণা করবে যারা তাদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে ।

এই সময়েই জন্ম হল এডওয়ার্ড নেড লাড এর । আমরা রবিন হুডের নাম সবাই শুনেছি । ঠিক এমন ভাবেই ইংল্যান্ডে জন্ম হল বিদ্রোহী নেতা নেড লাড । সে রবিন হুডের মত নটিংহ্যামশায়ারের শেরউড ফরেস্টে লুকিয়ে ছিল। যদিও এই নামে কেউ আদৌও ছিল কিনা সেটা কেউ নিশ্চিত ভাবে বলতে পারে না । কেউ কেউ বলে নেড লাড নামের একজন কারিগর ছিল বটে । যেকিনা কাজ হারিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিল। সে থাকুক বা না থাকুক তার নামে মিথ ঠিকই চালু হয়ে গেল । বিশাল এক গোপন বাহিনী তৈরি হয়ে গেল! প্রথমে সকল কারখানা মালিকদের কাছে চিঠি পাঠানো হল যাতে যন্ত্রপাতি গুলো নষ্ট করে দেওয়া হয় । তারপর তারা সরাসরি কারখানাতে হামলা করা শুরু করল । দিনের পর পর দিন হামলা বেড়েই চলল ।
একসময় সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠিন আইম তৈরি করল । সর্বোচ্চ শাস্তি রাখা হল মৃত্যুদণ্ড। গ্রেফতার শুরু হল বিচার হল দ্রুত । ফলে হামলা কমে এল । ১৮১৭ সালের পর সেটা একেবারেই কমে গেল ।

সেই সময়ে লাডাইটসদের এটা বোঝানো হয়েছিলো যে প্রযুক্তির এই উন্নতির ফলে সবার ভাল হবে । এবং এটা সত্যিই সবার জন্য ভালই হয়েছিলো । ইংল্যান্ড সেই সময়ে উন্নতির শিখরে পৌছে গিয়েছিল সত্য কিন্তু এটা লাডাইটসদের জন্য মোটেই ভাল হয় নি। বাকি জীবন তাদের অবস্থা উন্নত হয় নি। কারখানার মালিকেরা ধনী হচ্ছিল। যে শ্রমিকরা কালকারখানা তৈরি করত বা যারা যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ করত সেই শ্রমিকরা খেয়ে পড়ে ভাল ভাবে বেঁচে ছিল । কিন্তু একজন দক্ষ কারিগরদের জন্য সময়টা ভাল ছিল না।

আজকে ডেইলি স্টারে একটা সংবাদ চোখে পড়ল । সেখানে একটা লাইন রয়েছে স্কাইটেক সলিউশনসের দারুণ একটি প্রকল্প ছিল, ৫০ জনেরও বেশি মানুষ তাতে প্রত্যেকে ঘণ্টায় সাড়ে আট ডলার করে ইনকাম করতে পারতো। কিন্তু, গত বছরের শেষের দিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের ফলে এক ধাক্কায় এই প্রকল্পের ৮০ শতাংশেরও বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন।


ধীরে ধীরে এই সংখ্যাটা আরো বাড়বে । প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যত ঘটবে তত কম দক্ষ মানুষরা কর্মহীন হয়ে পড়বে । হয়তো আপনারা বলতে পারেন যে আমাদের দক্ষ হয়ে উঠতে হবে । কিন্তু বললেই কি এটা এতো সহজে হয়ে যাবে? যে হারে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটছে সেই হারে আমাদের দেশের মানুষের দক্ষতা বাড়ছে না । এটা বাড়ানো সম্ভবও না । বিপুল সংখ্যক মানুষ পিছিয়ে পড়বে ।

আমাদের দেশে যত এআইয়ের ব্যবহার বাড়বে তত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে । যারা ফ্রিলাঞ্চার আছেন তারা এরই ভেতরে সেটা টের পাচ্ছেন । কম দক্ষতার কাজগুলো এখন পাওয়া যায় না বললেই চলে ! সামনে আরো কঠিন দিন আসছে ।



কয়েকদিন আগে একটা বই পড়ে শেষ করেছি । এই লাডাইটসদের গল্পটা সেখানে থেকে জেনেছি।
ডেইলি স্টারের সংবাদ

ছবি সুত্র

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোন জো নাই। এজন্য এই যুগে সবাইকে মাল্টিস্কীলড হতে হবে। আপনি হাত-পা ঝাড়া মানুষ; কোন টেনশান নাই। :)

২২ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১১

অপু তানভীর বলেছেন: আমার টেনশন কম । আমার বাপের ঠিকাদারি ব্যবসা । সেটাও আবার কাচামালের সাথে জড়িত । সেই হিসাবে এআই আমাদের খুব একটা ক্ষতি করতে পারবে না । এই প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে কিছু অস্বাভাবিক বড়লোক হয়ে উঠবে আর কিছু হয়ে পড়বে সহায় সম্বলহীন !

২| ২২ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এআই কতগুলির পেশার তেমন ক্ষতি করতে পারবে না।
১। আমাদের দেশের ধূর্ত রাজনীতিবিদ।
২। সরকারি আমলা
৩। সামরিক বাহিনী সদস্য
৪। নিম্ন এবং উচ্চ আদালতের বিচারক
৫। মেধাবী আইনজীবী, ব্যারিস্টার
৬। মার্কেটিংয়ের সাথে জড়িত যারা
৭। কোম্পানির সিইও, সিএফও, সিটিও, সিএমও ইত্যাদি
৮। যাদের পেশা হল ব্রোকারি
৯। কৃষক/ খামারি

ব্যবসায় এ আই লাগামহীনভাবে ব্যবহৃত হলে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলি লস করা শুরু করবে কারণ চাকরী হারানোর কারণে ক্রেতা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাবে। ফলে পরিণামে দেশের অর্থনীতি মন্দায় চলে যাবে। সরকার তখন এআই নিয়ে নতুন করে ভাবা শুরু করবে। তথ্য প্রযুক্তির মতই এআই মানুষের উপকারে লাগবে। কিন্তু কখনই এমন কোন ভুমিকা রাখবে না যার কারণে মানুষ চাকরী হারা হয়। কিছু লোক চাকরী হারা হবে কিন্তু তারা ধীরে ধীরে অন্য ক্ষেত্রে চাকরী নিয়ে নেবে। প্রথম দিকে বড় ধাক্কা লাগবে অবশ্য। পরে ঠিক হয়ে যাবে। পরিণামে এআই মানব জাতির কল্যাণেই কাজ করবে। উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে।

২২ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৪

অপু তানভীর বলেছেন: হ্যা ঠিকই বলেছেন ধীরে ধীরে মানে আমাদের অর্থনীতির ভাষার যেটাকে বলে লংরান ! কিন্তু লংরান যে কত লং হবে সেটা একবার ভাবুন ! ততদিনে সেই চাকরি হারা মানুষগুলো কোন দিবে একবার ভাবুন । লাডাউটসদের সাথে ঠিক এই কাজটাই হয়েছে । সভ্যতা অবশ্যই উন্নতি হয়েছে কিন্তু সেই সময়ে এবং তারদের পরবর্তি প্রজন্মের জন্য সেটা মোটেই ভাল কিছু ছিল না।

৩| ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০২

করুণাধারা বলেছেন: এডওয়ার্ড নেড লাড এবং তার অনুসারী লাডাইট, এদের কারো সম্পর্কেই জানতাম না।

এ আই যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে, কিছুদিন পর আমাদের এআই চালিত গার্মেন্টসের যন্ত্রপাতিও চলে আসবে। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি গার্মেন্টসে ব্যবহত সস্তা শ্রমের বিকল্প তৈরি হয়ে যাবে। ফলে আমাদের দেশ থেকে তৈরি পোশাক নেয়া কমিয়ে দেবে উন্নত দেশগুলো। বিদেশে যারা শ্রমিকের কাজ করতে যান, তাদের অনেকের কাজও এআই দিয়ে করা হবে। তাহলে আমাদের অর্থনীতির কী হবে!!

২৪ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৯

অপু তানভীর বলেছেন: একটা ধাক্কা যে খাবে সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই । সত্যি বলতে কি আমাদের অর্থনীতি এমন কোন শক্ত জিনিসের উপরে দাড়িয়ে নেই। আমার গার্মেন্টস শিল্প দাড়িয়ে আছে কেবল মাত্র আমাদের সস্তা শ্রমের কারণে অন্য আর কোন কারণে নয়। তার মানে হচ্ছে আমাদের থেকেও কমে যে শ্রম দিবে কাজ সেদিকে চলে যাবে আবার যদি এমন হয় সস্তা শ্রমের বিকল্প পাওয়া যাবে তখন আমাদের এই শিল্প হুমকির মুখে পড়বে । এবং অদুর ভবিষ্যতে এমনটা হবে ! তখন কী হবে এখনই তা ভাবা দরকার !

৪| ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১০

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: আমি আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরের কথা বলতে এসেছিলাম, দেখি করুণাধারা আগেই বলে দিয়েছেন।

আমাদের বড় একটা ভরাডুবি অপেক্ষা করছে। চায়না আফ্রিকাতে উন্নত মানের টেকনোলজি সহ গার্মেন্টসে ইনভেষ্ট করছে। ওখানে কম লোক দিয়ে অনেক কাজ হবে। তার উপর আফ্রিকানরা খুব পরিশ্রমী। তার উপরে তাদের বেতনের চাহিদা এখনও বাংলাদেশ থেকে অনেক কম। আর দুরত্বে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে তারা বাংলাদেশের চাইতে কাছে।

হঠাৎ একটা ধাক্কা যেন আমাদের জন্য অবধারিত হয়ে পড়েছে।

২৪ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২২

অপু তানভীর বলেছেন: যখন সেই ধাক্কা এসে লাগবে তখন এই অবস্থাটা কেমন হবে এখন একবার চিন্তা করেন ! ধাক্কার আগেই যখন অবস্থা এমন ধাক্কার পরের অবস্থা কেমন হবে ?

৫| ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: পরিবর্তিত সময়ে এমন সব ধাক্কা কিন্তু প্রায়শই আসে। এবারের এ আই কি এবং কী কেড়ে নিচ্ছে সময় বলে দিবে।

২৪ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

অপু তানভীর বলেছেন: সকল পরিবর্তন ধাক্কা নিয়ে আসে সত্য কিন্তু সেই ধাক্কা সামলানোর সময় পাওয়া যায় কিংবা প্রস্তুতি নেওয়া যায় কিন্তু এআই বড় দ্রুত সব কিছু পরিবর্তন করে দিচ্ছে । কেউ কেউ নিজেদের বদলানোর সময় পর্যন্ত পাচ্ছে না । তাদের জন্য সব কিছু একেবারে বদলে গেছে !

৬| ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:২৫

প্রামানিক বলেছেন: প্রযুক্তি যত প্রসার পাবে বেকার তত বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নাই। আমি নিজেই তার বাস্তব স্বাক্ষি

২৪ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৫

অপু তানভীর বলেছেন: অনেকেই এর ভুক্তোভোগী । সামনে আরো বাড়বে !

৭| ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৭

কামাল১৮ বলেছেন: প্রয়োজনে লোকেরা তাদের কাজ খুঁজে নিবে।সময় সব ঠিক করে দিবে।

২৪ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬

অপু তানভীর বলেছেন: যারা নিরাপদ থাকে তারা আসলে কখনই আসল পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারে না, পারবেও না ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.