নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ!

মৃদুল ইসলাম

এ্যা ম্যান অব স্ট্রীম অব অপজিট্‌স

মৃদুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-২

০৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৩



ইয়াজুজ মাজুজের অনুপ্রবেশ রয়েছে ইঙ্গ- মার্কিন-ইজরায়েলী চক্র এবং রুশ-নেতৃত্বাধীন চক্র, এই উভয় পরাশক্তির মধ্যেই, এরাই উভয় চক্রকে এক মহা সংঘাতের পথে নিয়ে যাচ্ছে। যার পরিণতিতে বিশ্বশক্তি দু’টি একে অন্যকে ধ্বংস করবে। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে এই মহা সংঘাতের পরেও ইয়াজুজ মাজুজ টিকে থাকবে। সহীহ্‌ হাদীস হতে আমরা অবগত আছি যে ঈসা (আ) কে হত্যা করার জন্য তারা প্রত্যেক উঁচু আসন থেকে নেমে আসবে এবং আল্লাহ্‌র গজবে ধ্বংস হবে।
যাই হোক, বাইবেলের জেনেসিস ১০ আমাদের জানাচ্ছে যে Magog বা ইয়াজুজ হলো হযরত নূহ (আ) এর পুত্র ইয়াফেতের বংশধর। হযরত নুহ (আ) এর জামানায় শিরক ও নবীর অবাধ্যতা করায় আল্লাহপাক সমগ্র মেসোপটেমীয় জাতির উপর গজব নাযিল করেন। সেই গজবে নুহের প্লাবনে সে সময়কার সকল মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যায়। উল্লেখ্য, তখন পৃথিবীর সকল মানুষ একই অঞ্চলে বসবাস করত। আর সেটা ছিল মেসোপটেমিয়া। যারা নূহ (আ) এর স্রষ্টার উপর ঈমান এনেছিলো, অর্থাৎ ইসলাম কবুল করেছিলো তারাই নৌকায় চড়ে সার্ভাইব করে। নুহ (আ) এর চার পুত্রের এক পুত্র ইয়ামিন বিন নুহ, অবাধ্য হওয়ায় তাকেও সে প্লাবনে ডুবে মরতে হয়।


মজার ব্যপার হলো আদম (আ) থেকে নুহ (আ) এর যুগ পর্যন্ত যারা জীবিত ছিল তাদের DNA আধুনিক মানুষের DNA থেকে আলাদা ছিল। এমনকি তাদের দৈহিক গঠনও। বলতে গেলে তারা ছিল সুপার’হিউম্যান। তাদের হাজার হাজার বছরের আয়ু ছিল। এদের এক পা থেকে আরেক পায়ের দুরত্ব ছিলো কল্পনাতীত। আমরা জানি যে, আদম (আ) কে যখন ভারত অঞ্চলে ফেলে দেওয়া হলো তখন তিনি ইচ্ছেমত পায়ে হেটে আরবে যাওয়া-আসা করতে পারতেন। নুহের প্লাবনে এই সব সুপার’হিউম্যানদের মৃত্যু হয়। তাদের লাশ সমুদ্রের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় আর ফসিল আকারে অবস্থান করে। আধুনিক সেক্যুলার বিজ্ঞানীরা অবশ্য এদেরকে মানবজাতির পূর্বপুরুষ বা হোমো সেপিয়েন্সের আদি অবস্থা ধরে গবেষণা করে।
Anatomical comparison of the skulls of Homo sapiens sapiens (modern humans) and Homo neanderthalensis (right)

নুহ (আ) এর নৌকায় বাকি যে ক’টা জীবিত ছিল, তাদের মধ্যে কেবলমাত্র তাঁর তিন পুত্রের বংশবিস্তার দ্বারা আধুনিক মানবজাতির সূচনা হয়। নুহ (আ) এর তিন পুত্র হলেন, শেম বিন নুহ, হাম বিন নুহ এবং ইয়াফেথ বিন নুহ। আজকের পৃথিবীর ৭০০+ কোটি মানুষের আদি পিতা এই তিন মহানায়ক। সমগ্র আরবিভাষী ও হিব্রুভাষীদের জনক হলেন শেম বিন নুহ। ইংরেজীতে উনার বংশধরদের বলে ‘The Semites’ এবং বর্তমানে ইহুদী স্বার্থ’বিরোধী অবস্থান নিলে তাকে বলা হয় Anti-Semite! সমগ্র আফ্রিকান, অস্ট্রেলিয়ান, ইন্দো-মালয়েশিয়ান ও চাইনিজ-জাপানিজ-কোরিয়ানদের জনক হলেন হাম বিন নুহ। সমগ্র ইন্দো-ইউরোপিয়ানভাষী, ন্যাটিভ ইন্ডিয়ান, তুর্ক, রুশ ও মঙ্গোলিয়ানদের জনক হলেন ইয়াফেথ বিন নুহ।
ইয়াফেথ বিন নুহের সন্তানদের মধ্যে একটি জাতি হলো ইয়াজুজ। তারা তাদের তুর্ক ভাইদের সাথে ককেশাস পর্বত পার হয়ে রাশিয়া চলে যায়। আর সেখানেই বসবাস করতে শুরু করে। তারা অনেক অত্যাচারী জাতি ছিল। যাই হোক ইয়াজুজ মাজুজ কে সনাক্ত করা কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার। যুলক্বারনাঈনের প্রাচীরের পেছনে আটকে থাকা অবস্থায় তারা যেখানে বসবাস করতো আমরা প্রথমত সেই ভৌগোলিক এলাকা খুজে বের করবো। বাইবেল আমাদেরকে জানাচ্ছে যে ইয়াজুজ মাজুজ উত্তর দিক থেকে পবিত্রভূমি জেরুজালেমে Invasion বা আগ্রাসন চালাবে।


“Son of man, direct your face against Gog, of the land of Magog, the prince, leader of Meshech and Tubal, and prophesy concerning him. Say: Thus said the Lord: Behold, I am against you, Gog, the prince, leader of Meshech and Tubal … Persia, Cush and Put will be with you … also Gomer with all its troops, and Beth Togarmah from the far #North with all its troops—the many nations with you.” (Ezekiel : 38)


বাইবেলের উত্তর দিক সংক্রান্ত প্রফেসী ইসলাম ধর্মের হাদীস দ্বারাও সত্যায়িত হয়েছে। নবী (স) এর হাদীসগুলি আমাদের জানাচ্ছে যে ইয়াজুজ মাজুজরা জেরুজালেমের যাত্রাপথে গ্যালিলী সাগর অতিক্রম করবে। গ্যালিলী সাগর জেরুজালেমের উত্তরে অবস্থিত। প্রাসঙ্গিক হাদীস দু’টি হলোঃ

…এরকম অবস্থায় আল্লাহ্‌ ঈসা (আ) এর কাছে ওহী পাঠাবেন, “আমি আমার বান্দাদের মাঝ থেকে এমন একটা দল সৃষ্টি করেছি যাদের সাথে যুদ্ধ করে কেউ জয়ী হতে পারবে না, তুমি (তোমার সাথীদের) তূর পাহাড়ের উপর নিয়ে যাও।
(ইতিহাসের সে পর্যায়ে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা) ইয়াজুজ মাজুজকে পাঠাবেন, (এর মানে এই নয় যে, ঈসা (আ) এর প্রত্যাবর্তনের পরই ইয়াজুজ মাজুজকে মুক্ত করা ছেড়ে দেওয়া হবে, পাঠানো আর মুক্ত করা দু’টি আলাদা শব্দ) এবং তারা প্রতিটি উচ্চভুমি থেকে নেমে আসবে। তাদের প্রথমজন টাইবেরিয়াস হ্রদের (গ্যালিলী সাগর ) পাশ দিয়ে যাবার সময় সেখান থেকে পানি পান করবে। তাদের শেষ জন যখন সেই স্থান অতিক্রম করবে, সে বলবে একদা এখানে পানি ছিলো…”। [সহীহ্‌ মুসলিম]

…ইয়াজুজ মাজুজরা হাঁটতে থাকবে যতক্ষণ না তারা আল-খাম্‌র নামক পাহাড়ে পৌঁছাচ্ছে। এটা বায়তুল মাকদিসের একটি পাহাড়…” [সহীহ্‌ মুসলিম]

এ থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যুলক্বারনাঈনের প্রাচীর পবিত্রভুমি জেরুজালেমের উত্তরে কোথাও থাকবে। তবে বাইবেল থেকে ইয়াজুজ মাজুজের অবস্থান সনাক্ত করার সমস্যা হলো গবেষেকরা এর সাথে পলিটিক্যাল বা রেসিয়াল বিরোধ জুড়ে দিয়ে নিজের মনমতো কতিপয় দেশের নাগরিককে ইয়াজুজ মাজুজ বানিয়ে ফেলে। যেমন কেউ হয়তো তুরস্ককে পলিটিক্যাল অপন্যান্ট ভাবে, তাই সে ফতোয়া কপচালো যে জেরুজালেমের উত্তরে তুরস্ক অবস্থিত, সুতরাং তুরস্কের নাগরিকরাই ইয়াজুজ মাজুজ। আবার মনে করেন কেউ হয়তো রাশিয়াকে ঘৃণা করে, সে গুগল আর্থের উপরে জেরুজালেম থেকে রাশিয়া বরাবর একটা দাগ টেনে বলবে মস্কো শহরটা জেরুজালেমের উত্তরে অবস্থিত, তাই রাশিয়ার জনগণই ইতিহাসের সেই ইয়াজুজ মাজুজ।

কিন্তু মুসলিমরা বিশ্বাস করে কোরআন একমাত্র গ্রন্থ যা ইয়াজুজ মাজুজের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতকে নির্ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে। তাই আমরা এখন পবিত্রভুমির উত্তরে একটি সমুদ্রের খোঁজ করবো যার সাথে যুলক্বারনাঈনের পশ্চিমে ভ্রমণ সংক্রান্ত কুর’আনিক বর্ণনা মিলে যায়। এতে বিশাল পরিমাণ পানি থাকতে হবে কেননা এই সমুদ্র অতিক্রম করে তাঁর পক্ষে আরো পশ্চিমে ভ্রমণ করা সম্ভব ছিলো না। দ্বিতীয়ত এটি অবশ্যই অস্বাভাবিক রকমের কালো রং বিশিষ্ট হতে হবে।

“তিনি ভ্রমণ করলেন যতক্ষণ বা তিনি সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছলেন (যেহেতু সেখানে এরপর কোনো ভূমি ছিলো না তাই মনে হচ্ছিলো এটিই পৃথিবীর শেষপ্রান্ত)। তখন তিনি সূর্যকে ঘোলা জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং সেখানে তিনি এক সম্প্রদায়কে পেলেন। আমি বললাম, “হে যুলক্বারনাঈন! (তোমার অধিকার রয়েছে) চাইলে তুমি এদের শাস্তি দিতে পারো অথবা তাদের প্রতি দয়াময় হতে পারো।” [কাহাফ ১৮:৮৬]

ঠিক তেমনি পূর্বদিকের ভ্রমণে তাকে অবশ্যই আরো একটি সমুদ্রের সম্মুখীন হতে হবে।

“যতক্ষণ না তিনি সূর্যের উদয়াচলে পৌঁছলেন (অর্থাৎ তিনি পুবের একেবারে দূরপ্রান্তে চলে গেলেন; যেহেতু এরপর কোনো ভূমি ছিলো না তাই মনে হচ্ছিলো এটিই পৃথিবীর শেষপ্রান্ত এবং এখান থেকেই সূর্য উদিত হয়)। তখন তিনি একে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদিত হতে দেখলেন, যাদের জন্যে (সূর্য, কিরণ, আবহাওয়া, পরিবেশ ইত্যাদি থেকে আত্মরক্ষার জন্যে) আমরা প্রাকৃতিক আড়াল ছাড়া কিছুই তৈরি করিনি। [কাহাফ ১৮:৯০]

আমরা যে বিস্তৃত এলাকার অনুসন্ধান করছি সেটা যে পূর্ব-পশিম উভয় দিক দিয়ে দু’টো বিশাল সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত হবে কেবল তাই নয়, সেটা ভৌগোলিকভাবেও অবিচ্ছিন্ন দুর্গম পাহাড়ের সারি বিশিষ্ট হতে হবে। এক সমুদ্রের তীর থেকে অপর সমুদ্রের তীর পর্যন্ত বিস্তৃত কম-বেশি সন্নিবেশিত পাহাড়ের একটা সিরিজ আমাদের বের করতে হবে। আর এভাবেই আমরা মেনে নেবো যে, পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে প্রবেশের একমাত্র পথকে বন্ধ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে নির্মিত প্রাচীর খুব কার্যকরভাবে পাহাড়ের উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে আসা লুণ্ঠনকারী সম্প্রদায়ের প্রবেশকে চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছিলো।

“আর এভাবেই (প্রাচীরটি নির্মিত হলে ইয়াজুজ মাজুজরা) না পারবে তা আরোহন করতে আর না পারবে তা ধ্বসিয়ে ফেলতে (যেমন খননের মাধ্যমে, আর এভাবেই মানবজাতি তাদের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকবে)।” [কাহাফ ১৮:৯৭]

চলুন আমরা পুনরাবৃত্তি করি। পবিত্রভুমির উত্তরে আমরা অবশ্যই এমন একটা ভৌগোলিক এলাকার খোঁজ করবো যেটা পূর্ব-পশ্চিম উভয় দিক দিয়ে বিশাল সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত হবে। আর পশ্চিমের সমুদ্রটি হবে কালো রং বিশিষ্ট। ঐ দু’টি সমুদ্রের মাঝে দুর্গম পাহাড়ের সারি থাকবে। উত্তর থেকে দক্ষিণ ও বিপরীতভাবে মানুষ অতিক্রমের জন্যে সেখানে একটা ফাঁকা স্থান বা গিরিপথ উন্মুক্ত থাকবে। কোরআন সেই গিরিপথের দুই পাশকে উন্মুক্ত সামুদ্রিক খোলসের মতো বর্ণনা করেছে, অর্থাৎ উন্মুক্ত সামুদ্রিক খোলসের দু’টি অংশের মতো যা নিচ দিয়ে আটকানো কিন্তু উপরের দিক দিয়ে আলাদা।

“আমাকে লোহার খন্ড এনে দাও”! এরপর তিনি (লোহাকে স্তুপাকার করে) দুই পাহাড়ের মধ্যকার ফাঁকা স্থানকে ভরাট করে দিলেন, তিনি বললেন, “তোমরা (আগুন জ্বালাও এবং) এর নিচে ফুঁ দিতে থাকো!” যখন এক (তপ্ত) আগুন তৈরি হয়ে গেলো, তখন তিনি আদেশ করলেন, “(তামাকে আগুনে গলাও এবং তারপর) গলিত তামাকে আমার কাছে নিয়ে আসো যেনো আমি তা (লোহার উপর) ঢালতে পারি।” [কাহাফ ১৮:৯৬]

পবিত্রভুমির উত্তর দিকে আমরা যখন বিশাল পরিমাণ পানির খোঁজ করবো, তখন ভূমধ্যসাগর ও তাঁর পূর্বের এলাকাগুলিকে সরাসরি বাতিল করে দেবো যেহেতু তারা উপরের কোনো বর্ণনার সাথেই খাপ খায় না। আমাদের জন্যে কেবল একটি উত্তর বাকি থাকে এবং সেটা সকল বর্ণনার সাথে একদম ঠিক ঠিকভাবে মিলে যায়। ভূমধ্যসাগরের উত্তরে রয়েছে কৃষ্ণসাগর। কৃষ্ণসাগর নামকরণের সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো, এর গভীর পানি অস্বাভাবিকভাবে কালো। ভূমধ্যসাগরের উত্তরে হওয়ায়, লবণাক্ততা কম থাকায়, এবং ক্ষুদ্র শৈবালের আস্তরণ ঘন হওয়ার কারণে এর রং কালো বা অন্ধকার প্রকৃতির। অর্থাৎ, ভূমধ্যসাগরের তুলনায় কৃষ্ণসাগরের পানির তলদেশের স্বচ্ছতা কম। পশ্চিমেরটি কৃষ্ণসাগর হলে পুর্বেরটি ক্যাস্পিয়ান সাগর।

এই দুই সাগরের মাঝে রয়েছে ককেশাস পর্বতমালা। প্রকৃতপক্ষে এই পর্বতমালা এক সাগর থেকে আরেক সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এই প্রক্রিয়ায় সে ইউরোপ থেকে এশিয়াকে আলাদা করেছে।

আমরা এখন দুই সাগর এবং সেই সাথে পার্বত্য অঞ্চল যেইটা এক সাগর থেকে অন্য সাগর পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিস্তৃত, তাঁর সন্ধান পেয়ে গেছি। আমাদেরকে এখন পাহাড়দ্বয়ের মাঝে অতিক্রমের জন্যে একটি সরু পথ বের করতে হবে, যুলক্বারনাঈনের প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ থেকে লোহার প্রমাণ বের করতে হবে। এটা নিশ্চিত যে, জর্জিয়ান মিলিটারি হাইওয়ে হচ্ছে অতিক্রমের একমাত্র পথ যেটা রাশিয়া কর্তৃক ঊনবিংশ শতকে পুনর্নির্মিত হয়েছে, যা পর্বতের উত্তর অংশকে দক্ষিণ অংশের সাথে একত্রিত করেছে। এটা হচ্ছে জর্জিয়ার তিবিলিশি (Tbilisi) থেকে রাশিয়ার ভাদিকাভকায (Vadikavkaz) পর্যন্ত ২২০ কিঃমিঃ দীর্ঘ প্রধান সড়ক। জ্বার প্রথম আলেকজান্ডার (Tsar Alexander I) নামকৃত এই সড়কপথটি নির্মিত হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে এবং এটা আজও রাশিয়ার সাথে ককেশাস পর্বতমালার মাঝে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করছে।
এটা এমন একটা হাইওয়ে যেটা উঁচু পর্বতের মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে, যা ক্রেসটোভি (Krestovy) গিরিপথের কাছে ২৩০০ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় পৌঁছেছে। তিবলিশির উত্তরে অগ্রসর হয়ে রয়েছে আরাগভি (Aragvi) নদী ও উপত্যকা বেষ্টিত মধ্যযুগের আনানাওরি (Ananauri) দুর্গগুলি। রাশিয়ার সীমানার কাছে রয়েছে জর্জিয়ান ককেশাসের সর্বোচ্চ চূড়া কাজবেগী পর্বতের (৫০৩৩ মিঃ) পাশে কাজবেগী শহর। এর একেবারে শেষপ্রান্তে রয়েছে দারিয়াল গর্জ, যেখানে কয়েক কিঃমিঃ রাস্তা খুব সংকীর্ণ ১৫০০ মিটার উঁচু গ্রানাইটের পাহাড়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে।

ঐতিহাসিকভাবে দারিয়াল গর্জ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা এটাই ককেশাস অতিক্রমের একমাত্র পথ এবং এটা অনেক আগে থেকে, অন্ততপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ সাল থেকে, দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দুর্গগুলির ধ্বংসাবশেষ আজও দৃশ্যমান রয়েছে।

ইয়াজুজ মাজুজ দারিয়াল গর্জ দিয়ে ককেশাস অতিক্রম করে জর্জিয়ান অধিবাসীদের উপর ফিতনা-ফাসাদ করে বেড়াতো। জুলকারনাইন সে স্থানে একটি দেয়াল নির্মাণ করে দেন, ফলে তারা আর জর্জিয়ায় ঢুকতে পারে না। তারা চেনা পৃথিবী থেকে হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। তারা তখন সেখানে যাযাবর জীবন কাটাতে থাকে। এভাবে সময়ের সাথে সাথে তাদের জনসংখ্যা বাড়ে। তারা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়। একটা সময় তাদের কিছু গোত্র জাহাজ বানাতে শেখে। হ্যাঁ, আমি হানদের কথা বলছি। হানরা স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশসমূহে হানা দেয়। সৃষ্টি হয় প্রথম ইউরোপীয় শরণার্থী সংকট!

৫০০-৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জুলক্বারনাইনের দেয়ালে ভাঙন ধরে। ইয়াজুজ মাজুজরা ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসে। এদের প্রথম গোত্র খাজার!
এক্ষণে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে অতিক্রমের পথকে আমরা চিহ্নিত করেছি। বাকি রয়েছে অবশিষ্ট প্রাচীরের প্রত্নতাত্বিক অনুসন্ধান। যুলক্বারনাঈন নির্মিত প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ গিরিখাতের একেবারে নিম্নদেশে অবস্থিত হবে এবং সেটা ব্রোঞ্জ, লোহা, তামা বা পিতলের খন্ড দ্বারা নির্মিত হতে হবে, যেমনটি কোরআন পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছে। দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চল ও তাঁর আশেপাশে লোহার আকরিকের প্রমাণ বের করতে হবে কেননা সেই স্থানে লোহা থাকতে হবে, যেকারণে তারা লোহার টুকরা বা খন্ড যুলক্বারনাঈনের জন্য নিয়ে আসতে পেরেছিলো। উইকিপিডিয়া ঘুরে আসিঃ

The name Darial originates from Dar-e Alān (در الان) meaning Gate of the Alans in Persian. The Alans held the lands north of the pass in the first centuries AD. It has been fortified in ancient times by the Romans and Persians; the fortification was variously known as the Iberian Gates or the Caucasian Gates. The pass is mentioned in the Georgian annals under the names of Darialani; Strabo calls it Porta Caucasica and Porta Cumana; Ptolemy, Fortes Sarmatica; it was sometimes known as Porta Caucasica and Portae Caspiae (a name bestowed also on the “gate” or pass beside the Caspian Sea at Derbent); and the Tatars call it Darioly.
Josephus wrote that Alexander the Great built iron gates at an unspecified pass which some Latin and Greek authors identified with Darial.

আরো দেখতে পারেন “Gates of Alexander”

ইহুদী ও খ্রিস্টানরা মনে করে কোরআনের যুলক্বারনাঈন হলো আলেকজান্ডার দ্য গ্রেইট। কিছু মুসলিম গবেষক মনে করেন সাইরাস দ্য গ্রেইট হলেন ইতিহাসের সেই যুলক্বারনাঈন!

এরপর, দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলে ব্যবহৃত একটা ভাষা আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে যেটা তৎকালীন বিশ্বে এবং সে অঞ্চলের আশেপাশে ব্যবহৃত ভাষা থেকে আলাদা হবে। এটা আমাদেরকে করতে হবে কেননা যুলক্বারনাঈন সে অঞ্চলে পৌঁছান এবং এমন লোকদের সাক্ষাত পান যারা তাঁর ভাষা বুঝতে পারছিলো না।

“তিনি (ভ্রমণ করতে থাকলেন) যতক্ষণ না তিনি দুই পর্বত প্রাচীরের মাঝে পৌঁছালেন। তিনি সেখানে এমন এক জাতিকে পেলেন যারা তাঁর কথা (অর্থাৎ তাদের ভাষা) খুব কমই বুঝতে পারছিলো।” [কাহাফ ১৮:৯৩]

এটা নিশ্চিত যে ককেশাস পার্বত্য অঞ্চলে ব্যবহৃত জর্জিয়ান ভাষাই এরকম একটা ভাষা। এটা একটা বিচ্ছিন্ন প্রি-ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা যে ভাষাতে অন্ততপক্ষে ৫০০০ বছর যাবৎ কোনো গোত্র কথা বলেনি।

According to the ninth century Georgian historian Leonti Mroveli (the author of Kartlis Tskhovreba — The Life of Georgia), King Parnavaz created Georgian script and then extended the Georgian language throughout the territories of Georgia. According to Leonti Mroveli, Parnavaz descended from Uplos, son of Mtskhetos, son of Kartlos, who was one of the powerful and famous eight brothers, who from their part were descendants of Targamos, son of Tarsi, the grandson of Japheth, son of the Biblical Noah.

এবার যেসকল হাদীসে ইয়াজুজ মাজুজের মুক্তিকে নিশ্চিত করেছে সেগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করবো। ছহীহ্‌ বুখারীতে কমপক্ষে আটটি হাদীস রয়েছে যেটা পরিস্কারভাবে নির্দেশ করছে যে, ইয়াজুজ মাজুজের মুক্তি প্রক্রিয়া আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে নবী (স) এর জীবদ্দশাতেই আরম্ভ হয়ে যায়।

যায়নাব বিনতে জাহাশ (রা) হতে বর্ণিত, একবার নবী (স) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বলতে লাগলেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌। আরবের লোকদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে”। এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলের অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রা) বলেন, তখন আমি বললাম, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৩৩৪৬]

এই হাদীসটি খুবই পরিষ্কারভাবে সংবাদ দিচ্ছে যে নবী (স) এর সত্য নবুয়তী স্বপ্নের দিন থেকেই ইয়াজুজ মাজুজের মুক্তি প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়ে গেছে। ঈমাম বুখারীর ছহীহ্‌তে বর্ণিত এই ঘটনাটি এ ব্যাপারে সবচে বড় দলীল। এগুলি বিভিণ্ণ হাদীস নয়, বরং হাদীসগুলির সারবস্তু একই। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাক্তি দ্বারা সামান্য ভিন্ন ভাষায় বর্ণিত। যার ফলে এই হাদীস হচ্ছে মুতাওয়াতির ও সম্ভাব্য সবচে শক্তিশালী হাদীস!

আবু হুরাইরা (রা) থেকে বরণিতঃ নবী (স) বলেন ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীরে একটা ছিদ্রের সৃষ্টি হয়েছে। (উপবর্ণনাকারী) উহায়ব (রা) (তাঁর তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে) ৯০ এঁকে দেখালেন। [ছহীহ্‌ বুখারী]

উপরে যায়নাব বিনতে জাহাশ (রা) এর হাদীসটি সামান্য পরিবর্তনের সাথে ছহীহ্‌ বুখারীতে আরো কয়েকবার এসেছে। আমি রিপিট করলাম না।

আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিতঃ নবী (স) তাঁর ঊটে চড়ে (কা’বার চারপাশে) তাওয়াফ করছিলেন এবং প্রতিবার কালো পাথর সম্বলিত কোণায় পৌঁছে সেই কালো পাথরের দিকে নির্দেশ করছিলেন ও বলছিলেন, “আল্লাহু আকবর” জয়নাব বিনতে জাহাশ (রা) বলেন, আল্লাহর নবী (স) বলেছেন, ইয়াজুজ মাজুজের দেয়ালে এ রকম একটি ছিদ্র তৈরি হয়েছে (তিনি তাঁর তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ৯০ সংখ্যাটি এঁকে দেখালেন) [ছহীহ্‌ বুখারী]

উপ্রোক্ত কয়েকটি হাদীস থেকে ইহাই প্রমাণিত হয় যে ইয়াজুজ ও মাজুজের মুক্তি প্রক্রিয়া রাসূল (স) এর জীবদ্দশাতেই শুরু হয়ে গেছে। পরের পর্বে আমরা ইয়াজুজ মাজুজের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি তাতে তাদেরকে সনাক্ত করা আরো সহজ ও স্পষ্ট হবে।

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-১

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.