![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইয়াজুজ মাজুজ পানির অপচয় করবেঃ
সমগ্র ‘পবিত্রভুমির’ জন্য এখনও পর্যন্ত গ্যালিলী হ্রদ বা টাইবেরিয়াস হ্রদ বা কিনেরেট হ্রদই হচ্ছে মিঠা পানির প্রধান উৎস! ইজরায়েলী, ফিলিস্তিনী ও জর্ডানবাসীরা তাদের পানির জন্য এই হ্রদের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে নির্ভরশীল। গ্যালিলী হ্রদ যদি শুকিয়ে যায়, তাও ইজরায়েলীরা সহজেই সমুদ্রের পানির লবণাক্ততা দূরীকরণ প্রকল্প ব্যবহার করে তাদের মিঠা পানির অভাবের সমাধান করতে পারবে। কিন্তু ফিলিস্তিনি ও জর্ডানবাসীর জন্য কোনো সমাধান থাকবে না। তারা এক ধরণের জিম্মি হয়ে পড়বে এবং বেঁচে থাকার জন্য ইজরায়েলীদের কাছ থেকে পানি কিনতে বাধ্য হবে। ইহুদীরা রিবা’র অর্থনৈতিক প্রয়োগ করে ইতোমধ্যেই তাদেরকে যেভাবে দারিদ্রসীমার নিচে নিয়ে গেছে, তাতে বুঝা যায় যে তাদের ঐ ধরণের প্রকল্প থেকে পানি কেনার সামর্থ থাকবে না। যার ফলশ্রুতিতে পানি পাবার জন্য তাদেরকে ইজরায়েলের কাছে রাজনৈতিকভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আর তারা যদি তা না করে, সেক্ষেত্রে তারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করবে।
গ্যালিলী হ্রদের পানির গভীরতা এখন এতই নিচে নেমে গেছে যে, ইজরায়েলের তার ‘পানির চাল’ ব্যবহার করার ক্ষণটি আর বেশি দূরে নেই।
কোরআন ঘোষণা করেছে, প্রত্যেক জীবন্ত সত্তাকে পানি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে [আম্বিয়াঃ৩০] পানিকে মানুষসহ সকল জীবন্ত সত্তার “মা” বলা হয়। কোরআন আরোও ঘোষণা করেছে যে, আল্লাহ্র আসন (যেখান থেকে তিনি সকল সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেন) পানির উপর অবস্থিত [সুরা হুদঃ ০৭]
ধর্মীয় জীবন পদ্ধতি পানিকে সম্মান করতে শেখায় ও তাঁর অপচয়কে কঠোরভাবে নিষেধ করে। কিন্তু নবী (স) এর হাদীস থেকে ইয়াজুজ মাজুজের যে বৈশিষ্ট ফুটে উঠেছে তা হলো, তারা পানির ব্যবহার এমন মাত্রাতিরিক্ত করবে যে, পবিত্রভুমিতে অবস্থিত গ্যালীলী সাগর পর্যন্ত শুকিয়ে যাবে।
“… তাদের প্রথমজন টাইবেরিয়াস হ্রদের (গ্যালীলী সাগর) পাশ দিয়ে যাবার সময় সেখান থেকে পানি পান করবে। তাদের শেষজন যখন সেই স্থান অতিক্রম করবে, সে বলবে একদা এখানে পানি ছিলো…। (এর মানে এমন মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহৃত হবে যে, প্রকৃতিও তা পূরণ করতে পারবে না। পানির উচ্চতা কমতে থাকবে যতক্ষণ না হ্রদটি শুকিয়ে যাচ্ছে) [ছহীহ্ মুসলিম]
উপরন্ত তারা যেহেতু ফ্যাসাদ করে, তাই তারা যে কেবল গোটা পৃথিবীর পানি সম্পদকে ধ্বংস করবে তাইই নয়, সেই সাথে পানির প্রতি সম্মানকেও ধ্বংস করবে। আর একারণেই, ওজু ও গোসলে পানির পরিমাণ ও বিশুদ্ধতা উভয় ক্ষেত্রে সুন্নাহ্ মেনে চলার তাৎপর্য রয়েছে। আমরা সচরাচর ট্যাপ চালু করে ওজু করি, এতে হয়তো দেখা গেলো হালকা পানি হাতে ছুঁয়ে নিয়ে মাথা ও কান মাসেহ করছি, এদিকে নল থেকে ধরধর করে পানি পড়তেই আছে। এটা অপচয়। আমরা এই অপচয়গুলো ধরতে পারছি না, থামাতে পারছি না, কারণ ইয়াজুজ মাজুজের একটা সুন্দর গুণ হলো সে বাকী মানবজাতিকে (তাদের) ফটোকপিতে রূপান্তর করতে সক্ষম। অর্থাৎ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যাকে বলা হয় “দ্রুত বংশবৃদ্ধি করবে”। আমরা অপচয়কারীরা যদি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মোড়কে প্রত্যহ পানির বিপুল অপচয়কে সনাক্ত করতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে আমরা ইয়াজুজ মাজুজের ফটোকপিতে রুপান্তর হয়ে গেছি। টিভি-সিনেমাতে যেমনটা জম্বি থেকে জম্বি, ভ্যাম্পায়ার থেকে ভ্যাম্পায়ারে পরিণত হওয়া দেখায়।
বর্তমান পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের এক উল্লেখযোগ্য অংশ পানি ব্যবহারে মাত্রাতিরিক্ত অপচয় করে থাকে। বর্তমান সভ্য জগতে ফ্লাশিং ওয়াটার, যা টয়লেট পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত হয়, তা সামগ্রিকভাবে ব্যবহার্য পানির প্রায় ত্রিশ হতে পঞ্চাশ গুণ বেশি। ‘শাওয়ারে’ গোসল প্রবর্তন করার ফলে এই পানির অপব্যয়ের আরো একটি মাত্রা সংযোজিত হযেছে। এই মাত্রাটি হট-বাথ দ্বারা আরো বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ধৌত করা এবং হাঁড়ি-পাতিল ধৌত করার ডিশ ওয়াশারের ব্যবহারে। অবশ্য, আমরা ইয়াজুজ মাজুজের ফটোকপি সম্প্রদায় পানির মর্ম না বুঝলেও ইজরায়েল যাদেরকে পানির কষ্ট দিয়ে তিলে তিলে মারছে তারা নিশ্চয়ই এর মূল্য বোঝে!
মুসলমানদের নবী (সাঃ) নির্দেশ দিয়ে গেছেন – “প্রবাহমান নদীর পার্শ্বে বসেও এক ফোঁটা পানির অপচয় করো না” – এই জন্য যে ‘পানি’ হলো শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। কিন্তু মুসলমানরা এখন অজুর সুন্নত বাদ দিয়ে পানির ট্যাপ ব্যবহার করছে। এমন একটি অজুর জন্য যে পরিমাণ পানির অপব্যয় ঘটে – তা সাধারণত সুন্নত অনুগামী অজুর দশ/বিশ গুণ বেশী। দুনিয়াতে এখন ইয়াজুজ মাজুজের স্বভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আহলে ইয়াজুজ মাজুজের সৃষ্টি হচ্ছে, যাদের মধ্যে মুসলমানদের একটি অংশ রয়েছে সুবিশাল সংখ্যায়!
যাই হোক, উপরের হাদীসটি প্রকাশ করছে, গ্যালিলী সাগরের পানির উচ্চতা ক্রমাগত হ্রাস পাওয়াটা একটা দলীল যে, ইয়াজুজ মাজুজ ক্রমাগত প্রধান মঞ্চ জেরুজালেম অতিক্রম করছে। অর্থাৎ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জেরুজালেমে প্রত্যাবর্তন করে আজ অবধি কৃষি ও শিল্পখাতে গ্যালিলী সাগরের পানির ব্যাপক ব্যবহার করে যাচ্ছে খাজার ইহুদী সম্প্রদায়। এবং এক সময় এটা শুকিয়ে মরুভুমিতে পরিণত হবে। “…তাদের শেষজন যখন সেই স্থান অতিক্রম করবে, সে বলবে একদা এখানে পানি ছিলো”; বর্তমান গ্যালিলী সাগরের পানির উচ্চতা এই সাক্ষ্য বহন করছে যে ইয়াজুজ মাজুজের শেষদলটির জেরুজালেমে প্রত্যাবর্তনের সময় অতি আসন্ন! বাইবেলেও গ্যালিলী সাগর শুকিয়ে যাবে বলে প্রফেসী করা আছেঃ
The Messiah… will arise in the land of Galilee… the Messiah shall reveal himself in the land of Galilee because in this part of the Holy Land the desolation (Babylonian exile) first began, therefore he will manifest himself there first. [Zohar III, Shemoth 7b, 8b, 220a; Otzar Midrashim, 466]
হ্রদটির পানির মওজুদ এতটা নেমে এসেছে যে পানি কর্তৃপক্ষ Mekorot পাম্পের ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে এ জন্য যে এই উচ্চতায় বসানো পাম্পগুলো আর কাজ করার যোগ্যতা রাখে না। এই পাম্প দ্বারা গ্যালিলি সাগর হতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পানি প্রেরণ করা হতো কলকারখানা ও কৃষিকাজের জন্য। ইজরাইয়েল সরকার নির্বিচারে এই পানিকে অপব্যয় করে চলেছে। (চুষে নিচ্ছে)। Yitzhak Gal,লেক কিনারেত কর্তৃপক্ষ, ঘোষণা দেন – “From research we have carried out this is the lowest level in the lake in the past 150 years. We also checked archaeological data as far back as the Roman period and it appears that the lake has never been as depleted as it is today.” –
“আমাদের গবেষণালব্ধ হতে নিশ্চিত হয়েছি যে বিগত ১৫০ বছরের মধ্যে সী অব গ্যালিলির পানি-মওজুদ বর্তমানে সবচাইতে কম। আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্রসমূহও পরীক্ষা করেছি- রোমানদের সময় হতে এ পর্যন্ত পানি মওজুদ হ্রাসের রেকর্ড এ সময়েই সবচেয়ে বেশী।”
আরবদের উপর অত্যাচার হবে তাদের বিশেষ লক্ষ্যঃ
আরবদের সাথে ইয়াজুজ মাজুজের আচরণ হবে বিশেষভাবে বৈরি। এটা নবী (স) একটা স্বপ্নের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যুলক্বারনাঈনের নির্মিত প্রাচীরে একটা ছিদ্র হয়ে গেছে অথবা খুব শীঘ্রই আরম্ভ হতে যাচ্ছে। এর ফলস্বরুপ তাঁর নিকট এই তথ্যটি প্রকাশ হয়ে যায়, যেটাকে তিনি বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ
যায়নাব বিনতে জাহাশ (রা) হতে বর্ণিত, একবার নবী (স) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বলতে লাগলেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্। আরবের লোকদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে”। এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলের অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রা) বলেন, তখন আমি বললাম, “হে আল্লাহ্র রসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৩৩৪৬)
এভাবেই ইয়াজুজ মাজুজরা আরবদেরকে অত্যাচার ও নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করবে। এর চরম নিহিতার্থ হলো ইয়াজুজ মাজুজের আক্রমণে হজ্ব এবং সেই সাথে ইসলামী খিলাফত কোনোটাই টিকে থাকবে না। বৈধ হজ্ব বা সুন্নি খিলাফতকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না যতক্ষণ ইয়াজুজ মাজুজীয় বিশ্ব ব্যবস্থা টিকে থাকছে।
আরবদের উপর অত্যাচার ও নিপীড়নের মাঝে রয়েছে সাম্প্রদায়িক অবজ্ঞা এবং অবহেলাকে এমন মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়া যাতে সমগ্র মানবতা আরবদেরকে ঘৃণার পাত্র হিসেবে বিবেচনা করে। বর্তমান খাজার ইহুদী মালিকানাধীন মিডিয়ার আরবদের বিরুদ্ধে প্রচার প্রপাগান্ডার অসহনীয় মাত্রা, ক্রুসেড চলাকালীন সময়ে আরবদের কচুকাটা করা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জেরুজালেমে আগ্রাসন, নাইন ইলেভেনের False Flag অপারেশনের পর War on Terror এর নামে ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি আরব অধ্যুষিত অঞ্চলে বৃষ্টির মতো ন্যাটো এর বোমাবর্ষণ উক্ত হাদীসটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
ইয়াজুজ মাজুজের বিশ্ব-ব্যবস্থাঃ
বিস্মিত হতে হয় যে আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি যা আজও বিশাল সভ্যতা নিয়ে গঠিত, কিন্তু নিজ নিজ রাষ্ট্রের উপর জনগণ কিংবা সরকার কারোরই নিয়ন্ত্রণ নেই। রাষ্ট্র পরিচালিত হয় শয়তানের উপাসনাকারী কোনো সম্প্রদায় দ্বারা (যেমন আমেরিকার ক্ষেত্রে খাজারিয়ান ইলুমিনাতি স্যাটানিস্ট) অথবা কোনো কর্পোরেট কোম্পানির নিয়ম-নীতি মুতাবেক।
পৃথিবীর সর্বত্রই ইউরোপীয় ধাঁচের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা আজ মানবকুলকে গ্রাস করে ফেলেছে। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই ব্যাপারটি স্পষ্টতই ব্যতিক্রম। যেমন রহস্যময়, তেমনি অশুভ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের এই ইউরোপীয় ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত লীগ অব নেইশন্স নামের অভিনব আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়, যা পরবর্তীতে ইউনাইটেড নেইশন্স বা জতিসংঘ হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করে। এই ইউনাইটেড নেইশন্স নামের ভেতরেই ইউরোপ কর্তৃক সৃষ্ট New World Order বা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা বা ইহুদী খিলাফতের লক্ষ্য নিহিত রয়েছে।
ইউরোপের জায়োনিস্ট খাজার ইহুদীরা যেনো শেষ পর্যন্ত বিশ্ব-সরকার হিসেবে গোটা বিশ্বকে শাসন করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় রাজনৈতিক প্রভাব ও নিয়ন্ত্রনের আওতায়, গোটা পৃথিবীকে একত্র করাই ছিলো ঐ লক্ষ্য! দিন দিন রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর রহস্যময় পরিবর্তন সাক্ষ্য দিচ্ছে যে জায়োনিস্টরা ঐ রাজনৈতিক কৌশলের চুড়ান্ত এবং পূর্ণ সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় ধর্মনিরপেক্ষ শৃঙ্খলের বন্ধন থেকে মুক্তির ব্যাপারে গোটা বিশ্বের বাকী অ-ইউরোপীয় সভ্যতা সমুহ যেনো আজ অসহায়।
ইউরোপীয় লক্ষ্য ছিলো খুব পরিষ্কারভাবে, অথচ রহস্যজনভাবে ও অশুভভাবে, সমগ্র পৃথিবীর উপর ইউরোপীয় জায়োনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সুপরিচিত ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ আর্নল্ড টয়েনবী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Civilization on Trial- এ এক অকপট বক্তব্যের মাধ্যমে এই বিষয়কে নিশ্চিত করেনঃ
“Western Civilization is aiming at nothing less than the
incorporation of all of mankind in a single great society and the control of everything in the earth, air and sea.” [Page 166]
অবশ্য ইউরোপীয়দের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিলো ‘পবিত্রভুমিতে’ ইহুদীদের প্রত্যাবর্তনকে সম্ভব করে তোলা এবং পৃথিবীর শাসনভার ইহুদীদের হাতে অর্পণ করা, যাতে তারা জেরুজালেম থেকে পৃথিবীকে শাসন করতে পারে।
আধুনিক যুগের সুচনা হয়েছিলো অশুভ ও গুরুতর ইউরোপীয় বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে। এই বিপ্লব গোটা মানবকুলকে একটি একক, ভৌগোলিক, ধর্মবিমুখ এবং ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীতে রুপান্তরিত করার কাজে এগিয়ে গেলো। এই ঘটনাটি ছিলো মানব ইতিহাসের একটি অভিনব ঘটনা, যা শত-কোটি বছরেও ঘটে নাই, কিন্তু ঘটে গেলো মাত্র ছয়’শ বছর আগে।
স্রষ্টা বিমুখ ইউরোপীয় বিপ্লব আরো বেশি রহস্যময় এই জন্যে যে, এর সাথে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিপ্লবও সংঘটিত হয়েছিলো। এভাবে ধর্ম বিমুখ ইউরোপ এক অজেয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলো যা পূর্বের জঙ্গলে ভরা ইউরোপকে এক চাকচিক্যপুর্ণ অবয়ব দান করার পাশাপাশি তাকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। বাষ্প চালিত রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি, ট্রাক, যুদ্ধের জন্য যান্ত্রিক ট্যাংকবহর, জাহাজ, উড়োজাহাজ ইত্যাদি, মানুষের যাতায়াত ও যুদ্ধ করার ধারাকে সম্পূর্ণ পালটে দেয়। বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে মানুষ রাতকে দিনে পরিবর্তিত করলো, মানুষের জীবনযাত্রাকে পালটে দিলো। টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ বিশাল দূরত্বের ব্যবধানে তাৎক্ষনিক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব করে তুলল। সবশেষে নারীবাদী বিপ্লব আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও নির্ধারিত নারী ও পুরুষের মাঝের কর্মপদ্ধতিগত পার্থক্যকে অস্বীকার করে নারীকে পুরুষের কার্যকরী ভুমিকা অধিগ্রহণ করবার স্বাধীনতা দিলো। ঐ বিপ্লবকে স্বাগত জানানো হয় Women’s Liberation বা নারী স্বাধীনতা হিসেবে! এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অশুভ পরিবর্তনটি সাধিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ঘর থেকে বের করে এনে নারীকে বানানো হয় “পন্য”!
“এবং তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন,
নিশ্চয় তোমাদের কর্ম প্রচেষ্টা বিভিন্ন ধরনের।” [সুরা লাইল ৯২:৩-৪]
মানুষের মৌলিক প্রবৃত্তি, লোভ ও কামস্পৃহার কাছে আবেদন রেখে ইউরোপের যৌনবিপ্লব- স্বাভাবিক ও বিকৃত সব ধরণের যৌনতাকে সূর্যালোকের মত চাহিবামাত্র, অবাধে ভোগ করতে পারার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এলো। বিয়েকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করা হলো এবং মানুষজন বিবাহ বন্ধন ছাড়াই একত্রে বসবাস করাকে বেছে নিতে পারলো, এবং এ ধরণের জীবনযাত্রা সম্মানজনক বলে বিবেচিত হতে লাগলো। Assassinated মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডিকে Camelot যুগের একজন আমেরিকান তারকা হিসেবে গন্য করা হতো। তারই স্ত্রী জ্যাকুইলিন কেনেডি জীবনের শেষ বছরগুলো বিনা বিনা বিবাহে একত্রবাস করে গেছেন। যখন তিনি মারা গেলেন তখন এক ইহুদীকে বিশ্ববাসীর কাছে তাঁর ‘সাথী’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। [লোককাহিনীতে বিখ্যাত প্রাচীন যুগের ব্রিটিশ রাজা আর্থারের এক দুর্গের নাম ক্যামলেট। মনে করা হয় এটা ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে উইনচেস্টারে অবস্থিত। সাধারণ পরইভাষায় ক্যামলেটকে ন্যায়, নৈতিকতা ও গৌরবের এক “উজ্জ্বল মুহূর্ত” হিসেবে গণ্য করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিহত হলে তাঁর স্ত্রী জ্যাকি, কেনেডি পরিবার ও প্রশাসনকে ক্যামলেট বলে আখ্যায়িত করেন।]
সমকামীতাকে বিকল্প যৌনতা হিসাবে সমর্থন দেয়া হলো এবং ব্যাপারটা গণসচেতনতায় এতই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠলো যে, একজন সমকামী পাদ্রি বা রাবাই গোপনীয়তার আবরণ পরিত্যাগ করে সম্মানের দাবী করতে পারে এবং পাদ্রি বা রাবাই হিসেবে নির্বিঘ্নে তার কাজ চালিয়ে যেতে পারে। এমনকি সমকামীতার ইংরেজী প্রতিশব্দ Homosexuality-র ভিতরে যে অস্বাভাবিক যৌন আচরনের ইঙ্গিত ও তার প্রতি সামাজিক ঘৃণা আছে তা দূরীকরনের লক্ষ্যে ঐ শব্দকেও ধর্মনিরপেক্ষ রুপ দেয়া হলো। ইংরেজী শব্দ “gay” দিয়ে ঐ শব্দটি প্রতিস্থাপিত হলো। সরল মনের জনসাধারণ, নামের ঐ আপাত নিরীহ পরিবর্তনকে সহজেই গ্রহণ করলো।
এক ভোগবাদী বিপ্লব মানবকূলকে আরও বেশি করে চোখ ধাঁধানো ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করার তৃপ্তিহীন লিপ্সায় অভ্যস্থ করে তুলল। নতুন স্রস্টাবিমুখ ইউরোপ ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাকী পৃথিবীকে জয় করার এবং তাকে উপনিবেশে পরিনত করার কাজে এগিয়ে গেলো এবং তারপর তার ‘চটক’ ব্যবহার করে মানবকুলকে স্রষ্টা বিমুখ, ক্ষয়িষ্ণু ইউরোপীয় জীবনযাত্রা ও নতুন ভোগবাদী সংস্কৃতি অনুসরণ করতে প্ররোচিত করলো। ঐ ধর্মবিমুখ ইউরোপীয় বিপ্লব, আমেরিকান-ফরাসী-বলশেভিক বিপ্লবের ভিতর দিয়ে যথাক্রমে ১৭৭৬, ১৭৮৭-১৮০০, এবং ১৯১৭ সালে নতুন রাজনৈতিক মোড় নিলো। ঐ বিপ্লবের ফলে রিবার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সুদাশ্রিত অর্থনীতির নতুন ধারার বিকাশ ঘটলো, যা প্রটেস্ট্যান্ট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করলো। [ষোড়শ শতাব্দীতে খ্রিস্টান ধর্মে সংস্কারের উদ্দেশ্যে রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে প্রটেস্ট্যান্ট চার্চ গঠিত হয়। মার্টিন লুথার ও জন ক্যালভিন এই আন্দোলনের অগ্রণী ছিলেন।] আর সাংস্কৃতিক জীবনের মোড় পরিবর্তন ছিলো নারী মুক্তির নামে নারীবাদী বিপ্লবের সুচনা। এটা অনস্বীকার্য যে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিপ্লবের সহযাত্রা ছাড়া এই সমস্ত বিপ্লবের কোনোটাই সম্ভব ছিলো না।
বর্তমান পৃথিবীর প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই ঐ ইউরোপীয় ধাঁচের ধর্মনিরপেক্ষ বা সেকুলার (ধর্মহীন) রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি। ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের পর পশ্চিমা সভ্যতা কৌশলে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল গুলোতেও এই মতবাদ চাপিয়ে দিয়ে তখন থেকে নানাবিধ শিরক ও কুফরে নিমজ্জিত করে ফেলেছে। ইসলামী খিলাফত শাসন ব্যবস্থায় যেখানে কুরআন বা আল্লাহ্ প্রদত্ত আঈনকে সর্বোচ্চ ও সার্বভৌম হিসেবে গণ্য করা হয়, সেখানে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমুহ আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করে “মানব রচিত” সংবিধান ও আঈনকে সর্বোচ্চ বলে মর্যাদা দেয়, যা স্পষ্টত শিরক! মানুষের স্রষ্টা যেটাকে হারাম বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান বা আঈনের বদৌলতে মানুষ সেটাকে হালাল বা বৈধ ঘোষণা করার ক্ষমতা অর্জন করেছে, সেটাকে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে।
বর্তমান পৃথিবীর রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, ব্যাবসা বাণিজ্য ( বাজার ), গণমাধ্যম, খেলাধুলা, বিনোদন প্রভৃতি সবই ধর্মনিরপেক্ষ। এমনকি খাবার ঘর, বিশ্রাম ঘর, শোবার ঘর পর্যন্তও ধর্মনিরপেক্ষ। এই ধর্মনিরপেক্ষতার শুরু হয় মানুষের স্রষ্টাকে পাশ কাটিয়ে, শেষ হয় তাকে অস্বীকার করে। তাই লুকাছাপা না করে এই মতবাদকে সরাসরি ধর্মহীনতা হিসেবে চিহ্নিত করাই শ্রেয়।
এবার ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বিশ্বাসী (?) বাসিন্দা হিসেবে আমরা কয়েকটি শিরক ও কুফরকে সনাক্ত করার চেষ্টা করবো। শিরক মহাপাপ, সবচেয়ে বড় পাপ, যা আল্লাহ্ তায়ালা ক্ষমা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন-
“অবশ্যই আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তার সাথে শিরক করে, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে অন্য সবকিছুর ব্যাপারে ক্ষমা করতে পারেন। আর যে শিরক করলো সে জঘন্য পাপ করলো।” [ সূরা নিসা ৪:৪৮]
Indeed, Allah does not forgive association with Him, but He forgives what is less than that for whom He wills. And he who associates others with Allah has certainly fabricated a tremendous sin.
“…যে শিরক করে, আল্লাহ্ তার জন্য বেহেস্তে প্রবেশকে হারাম করেছেন; তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম” [সূরা মায়িদা ৫:৭২]
Indeed, he who associates others with Allah – Allah has forbidden him Paradise, and his refuge is the Fire. And there are not for the wrongdoers any helpers.
মূর্তিপূজা হচ্ছে সবচেয়ে প্রকাশ্য শিরক। আজকের পৃথিবী থেকে শিরকের এই রুপ অনেকাংশেই বিলুপ্ত, যদিও হিন্দু বিশ্ব বেশ একরোখা ভাবেই মূর্তিপূজাকে ধরে রেখেছে। আর একজন বিশ্বাসী যদি হিন্দুদের এই শিরক সনাক্ত করতে ব্যার্থ হয় তবে তাকে কখনও ক্ষমা করা যায় না। পবিত্র কুরআন বিশ্বাসীদেরকে সাবধান করে দিয়েছে যে ইহুদি ও শিরককারীরা (যেমন মূর্তিপূজকরা) তাদের সাথে আচার ব্যবহারে অস্বাভাবিক ঘৃণা ও বৈরীতা প্রদর্শন করবে:
“আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু হিসেবে ইহুদি ও মুশরিকদের পাবেন” [সূরা মায়িদা ৫:৮২]
Strongest among men in enmity to the believers wilt thou find the Jews and Pagans.
যাই হোক, মূর্তিপূজা ছাড়াও পবিত্র কুরআন অন্যান্য ধরনের শিরকগুলোরও ব্যাখ্যা করেছে। উদাহরনস্বরুপ, ফেরাউন, মূসা (আঃ) এর কাছে ঘোষণা করেছিলো, “আমি তোমার সর্বমহান প্রভূ– বিধাতা”। ফেরাউনের দাবী ছিলো মিশরীয় জনগন তার উপাসনা করুক, তাকে মিশরীয় ভূমির সর্বোচ্চ কর্তৃত্বধারী জেনে তার কাছে আত্মসমর্পন করুক, এবং তার আঈনকে মিশরীয় ভূমির সর্বোচ্চ আঈন হিসেবে স্বীকৃতি দিক; যা ছিলো স্পষ্টত শিরক (স্রষ্টার সঙ্গে তুলনা)।
পবিত্র কুরআন, ফেরাউনের মত যারা হুকুম অর্থাৎ আল্লাহর কর্তৃত্ব এবং আল্লাহর আঈন ব্যাতিরেকে অথবা তার বিপরীতে বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে তাদেরকে বারবার তিরস্কার করেছে। পক্ষান্তরে যখন মানুষের কাছে ঐশ্বরিক দিকনির্দেশনা পৌঁছায় (যেমন ঈহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের ক্ষেত্রে) এবং তারা সেটা গ্রহণ করে তখন সেখানে আরেক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ঐ ধরনের জনগোষ্ঠীর যদি কোনো ভূখন্ডের উপরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ ঘটে (যেমনটি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় ভারতীয় মুসলিমদের ঘটেছিলো এবং তারা ব্যর্থ হয়) এবং তারা যদি ওহী দ্বারা প্রাপ্ত আল্লাহর আঈনের ভিত্তিতে আঈন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যার্থ হয়, সেক্ষেত্রে কুরআন দ্ব্যার্থহীন ভাষায় তাদের তিরস্কার করেছে এবং তাদেরকে কুফর (বিশ্বাসের বিরোধীতা), জুলুম (অবিচার) এবং ফিসকের (শয়তানী ও পাপাচার) দোষে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
.
“আর যে আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী বিচার করতে ব্যার্থ হয় তবে সে কুফর এ নিমজ্জিত হলো” [সূরা মায়িদা ৫:৪৪]
“আর যে আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী বিচার করতে ব্যার্থ হয় তবে সে জুলুম এ নিমজ্জিত হলো” [সূরা মায়িদা ৫:৪৫]
“আর যে আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী বিচার করতে ব্যার্থ হয় তবে সে ফিসক এ নিমজ্জিত হলো” [সূরা মায়িদা ৫:৪৭]
যেহেতু ফেরাউনের ঘোষণা এবং মিশরীয় ভূমিতে তার বাস্তব প্রয়োগ ইত্যাদি শিরকপূর্ণ কাজ ছিলো সেহেতু বলা যায় আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ঐ একই ঘোষণাও শিরক। মুসলিমদের উচিত হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের শিরকীপূর্ণ ব্যবস্থা বা কাঠামোগুলো যথাযথ চিহ্নিত করা ও তা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা।
নির্বাচন ব্যবস্থাঃ যদি একজন বিশ্বাসী কোনো সেক্যুলার রাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে যায়, ঐ ভোট দানের নিহিতার্থ হবে এই যে, যে দলের পক্ষে সে ভোট দিলো সেই দলকে সে নিজের উপরে শাসন করার যোগ্য মনে করলো। আর ঐ দল যদি সরকার হিসেবে শিরক, কুফর, জুলুম ও ফিসকে লিপ্ত হয় তবে এর অর্থ দাঁড়াবে এই যে ঐ বিশ্বাসী তার সরকারের শিরক, কুফর, জুলুম অথবা ফিসক এর অনুসরন করলো। আল্লাহ্ যা হারাম করেছেন তাকে হালাল বানানের কাজকে পবিত্র কুরআন শিরক বলে গণ্য করে নিন্দা করেছে:
“তারা তাদের পাদ্রি ও র্য্যাবাইদেরকে আল্লাহর পাশাপাশি প্রভূ ঈশ্বর হিসেবে গ্রহণ করেছে; এবং মরিয়মের পুত্র মসীহ্’র বেলায় ঠিক এমনি করেছে”
“কিন্তু কেবলমাত্র এক আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো উপাসনা ও আনুগত্য করতে তাদের আদেশ দেওয়া হয়নি”
“তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তারা যে শিরকে লিপ্ত হয়, তিনি তা থেকে মুক্ত ও উর্ধ্বে” [সূরা তওবা ৯:৩১]
They have taken their scholars and monks as lords besides Allah, and [also] the Messiah, the son of Mary. And they were not commanded except to worship one God; there is no deity except Him. Exalted is He above whatever they associate with Him.
এই আয়াত নাযিল হবার পর এক ব্যাক্তি রাসূল (সঃ) এর কাছে এসে প্রতিবাদের স্বরে বলল যে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের পাদ্রি আলেম ও র্য্যাবাইদেরকে পূজা করে না। সে জিজ্ঞেস করলো তাহলে আল্লাহ্ কি করে তাদেরকে ঐ অভিযোগে অভিযুক্ত করলেন? রাসূলুল্লাহ্ পাল্টা প্রশ্নের মাধ্যমে তার প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করলেন, “আল্লাহ্ যা হারাম করেছিলেন তাকে কি তারা হালাল বানায়নি? তিনি বললেন, সেটাই তো শিরক! তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মানুষজন (ইহুদি ও খ্রিস্টানগণ) কি এই পথে তাদের অনুসরন করেনি?
[যে সকল হারাম ব্যাপারকে হালাল ঘোষণা করা হয়েছিলো তার ভিতর ছিলো জুয়া, লটারী, মদ্যপান ও তা বিক্রি এবং রিবা (অর্থ ধার দিয়ে সুদ নেওয়া, ড. ইউনুসের মতন)। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হারামকে হালাল বানানোর জন্য তৌরাতের বাণীকে বদলে ফেলা হয়েছে]
দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়ার পক্ষে ফতোয়া কিংবা সমর্থন দেওয়ার মত মুসলিম আলেম ওলামার অভাব নাই। কেউ কেউ যুক্তি দেখান যে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থাই হচ্ছে ইতিহাসের উন্নত ও প্রগতিশীল মডেলের রাজনৈতিক বিন্যাস। কেউ বলেন (বিশেষত মডারেট মুসলমান), আমরা যদি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করি, তবে আমাদের কোনো রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকবে না; আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করার কোনো পদ্ধতি থাকবে না। কিছু ইসলামপন্থী দলের আরও গভীর পর্যায়ের একটি যুক্তি হলো, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ হচ্ছে স্রষ্টা-বিমুখ রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের জন্য যেকোনো সফল সংগ্রামের পূর্বশর্ত! অর্থাৎ কোনো সৎ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য হারাম একটি পথকে বেছে নেওয়া বা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার সঙ্গে মিশে যাওয়া। এখানে শিরকের সংশ্লিষ্টতাকে এক ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা কার্যত ঐ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে গ্রহণ করে নেওয়াকেই বুঝায়। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঐ একই ঘোষণা প্রদান করে যা ফেরাউন মূসা (আঃ) এর উদ্দেশ্যে প্রদান করেছিলো। ঐ ঘোষণা হচ্ছেঃ রাষ্ট্র হলো সার্বভৌম। রাষ্ট্রের বানানো আঈন সর্বোচ্চ এবং জনগণ রাষ্ট্রের আঈন ও সংবিধানকে মানতে বাধ্য থাকবে, নইলে নিপীড়নের শেষ থাকবে না।
ফেরাউনের ঐ ঘোষণা হলো শিরক! তাই যখন মানুষজন ধর্মনিরপেক্ষ রাস্ট্রের নির্বাচনে ভোট দিতে যায়, তখন তারা এ ব্যাপারটাও মেনে নেয় যে, রাষ্ট্র হচ্ছে সার্বভৌম, কিছু ধর্মহীন বিকারগ্রস্থের লিখিত সংবিধান হলো অবশ্য পালনীয়। সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের ব্যাপারে রাষ্ট্রের দাবী তারা মেনে নেয়। অতএব, বিশ্বাসীগণ যখন ঐ ধরণের নির্বাচনে ভোট দেয়, তখন তারা শির্ক করা থেকে বাঁচতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয়ত, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে যখন বিশ্বাসীরা কোনো নির্বাচনে ভোট দেয়, তখন তাদের একটা রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভোট দিতে হয়। সরকারে গিয়ে ঐ দল যদি স্রষ্টা যা হারাম করেছেন তাকে হালাল বলে ঘোষণা করে, অথবা ঐ ধরণের কোনো আঈন প্রণয়ন করে, তাহলে সেই সরকারের কৃত এই শির্কের গুনাহ্ তার সমর্থকদের উপরেও বর্তাবে। সারা পৃথিবী জুড়ে আজ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সমুহের সরকারগুলি ও পার্লামেন্ট গুলি ইতোমধ্যেই আল্লাহ্ যেসব জিনিসকে হারাম করেছেন তার প্রায় সবকিছুই হালাল ঘোষণা করেছে। যখন বিশ্বাসীরা এমন রাজনৈতিক দল বা সরকারের পক্ষে ভোট প্রদান করে, যারা ইতোমধ্যেই শির্ক করছে বা শয়তানের উপাসনা করছে তখন এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তারা ঐ সব মানুষকে তাদের উপর শাসন প্রতিষ্ঠার যোগ্য মনে করেন। এভাবেই বিশ্বাসীগণ শিরক, কুফর, জুলুম ও ফিস্ক- এ শয়তানের অনুসরণ করেন।
আমাদের কিছু ইসলামপ্রেমী আলেম ওলামগণ আবার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে রাষ্ট্রে ইসলামী শাসন আনার চেষ্টা করেন। এর জন্য তারা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে রক্ষার শপথকে কিংবা পশ্চিমা শয়তানদের বানানো সিস্টেমের পূজা করাকে হেকমত বলে চালিয়ে দেন। এর খেসারত যে তাদের দিতে হয় না এমন না। আলজেরিয়া, মিশর থেকে হালের বাংলাদেশ সর্বত্রই এরা এখন ধর্মনিরপেক্ষ আঈনের বলীর শিকার, যে আঈনকে প্রতিরোধ না করে তারা প্রথমে বরং স্বাগতই জানিয়েছিলো।
সম্প্রতি এই নির্বাচনকে হাতিয়ার বানিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরাও মধ্যপ্রাচ্যের শাসক বদলানোর এক নতুন হেকমত আবিষ্কার করে ফেলে। তারা এর নামকরণ করে “Arab Spring”. তিউনিসিয়া, মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া বর্তমানে এই Arab Spring এর বলীর স্বীকার।
আগামী পর্বে ইয়াজুজ মাজুজের অর্থনৈতিক নিপীড়ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে ঈনশাল্লাহ্।
কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৩
কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-২
কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-১
©somewhere in net ltd.