নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ!

মৃদুল ইসলাম

এ্যা ম্যান অব স্ট্রীম অব অপজিট্‌স

মৃদুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৬

১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ৩:৫৫


ইয়াজুজ মাজুজের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এজেন্ডা বা লক্ষ্যঃ
ইয়াজুজ মাজুজ হলো এক মহা ফিতনা, মহা আতঙ্কের নাম। প্রায় সব ধর্মের নিকটই এরা আতঙ্কের প্রতিমূর্তি! আজকের দিনের পৃথিবীর যে সমরসজ্জা তার মূলে রয়েছে ইয়াজুজ মাজুজের কালো এজেন্ডা বাস্তবায়নের অশুভ ইঙ্গিত। সকল আব্রাহামিক ধর্মেই এ ব্যাপারে সতর্কবাণী রয়েছে। খ্রিস্ট ও ইহুদীদের মতে GOG MAGOG শেষ জামানা বা End Time এ দুই-তৃতীয়াংশ খ্রিস্টান বা ইহুদী হত্যা করবে। এই হত্যা সংঘটিত হবে “Battle of Armageddon” এ। ইসলাম ধর্মে যেটাকে “মালহামা” বলা হয়েছে।


মজার ব্যাপার হলো দুনিয়াতে এমন জাতি পাওয়া দুষ্কর, যারা এই ইয়াজুজ মাজুজ বা অসুর আতংকে ভোগে নাই। এর একটি কারন ধর্মীয়। সব ধর্মেই এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। অন্যটি রাজনৈতিক। যখনি কোন শক্তি অন্য কোন শক্তির বিরুদ্ধে বিপুল বিক্রমে আগ্রাসন বা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, তখনই প্রতিপক্ষ সাধারন মানুষকে যুদ্ধে সংশ্লিষ্ট করার জন্য GOG MAGOG বা ইয়াজুজ মাজুজ থিওরি সামনে এনেছে। এ কারণে ইতিহাসে অনেকবার GOG MAGOG এর নাম এসেছে। কিছুদিন পর তারাই আবার স্বীকার করেছে এরা সেই মহাধ্বংসকারী GOG MAGOG নয়। খ্রিস্ট প্রথম শতকের দিকে ইহুদী ধর্মাবলম্বিরা বিশ্বাস করতেন, তৎকালিন সিথিয়ান (বর্তমান উত্তর কাস্পিয়ান, ইউক্রেইন) এর অধিবাসীরাই প্রাচীন গগ মেগগ, যাদেরকে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট (কারো কারো মতে ইনিই জুলকারনাইন) দমন করেছিলেন।
কিন্তু, প্রাথমিক সময়ের খ্রিস্টানরা (তখনো খ্রিস্টধর্ম ইউরোপে ভালমতো যায় নি), যুদ্ধবাজ রোমানদেরকে গগ মেগগ জাতি বলে বিশ্বাস করতো। চতুর্থ শতকে পুরো রোমান জাতি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করলে সেটার সম্ভাব্যতা রহিত হয়ে যায়। কারণ, খ্রিস্টান বিশ্বাসে গগ মেগগ তো আর খ্রিস্টান জাতি হবে না! তখন তাঁরা মত পরিবর্তন করে আরো উত্তর দিকের জাতির দিকে দৃষ্টি আরোপ করে। তৎকালীন উত্তরের সভ্যতাহীন গোথিক’ জাতিকে খ্রিস্টান ধর্মবেত্তাগণ গগ-মেগগ বলে মনে করতে থাকে। উল্লেখ্য, তখন, রোমান সম্রাটেরা এই বর্বর জাতির সাথে বছরের পর বছর যুদ্ধে লিপ্ত থাকতো।

The 3rd-century Great Ludovisi sarcophagus depicts a battle between Goths and Romans

ষষ্ঠ শতকের দিকে বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানরা, হুন (আদি চৈনিক) জাতিকে ইয়াজুজ মাজুজ ভাবতে শুরু করেন। কিন্তু, শতকের শেষের দিকে আরব মুসলমানদের সাথে রোমানদের বিরোধ শুরু হয়ে গেলে, অর্থাৎ মুসলমানরা একের পর এক রাজ্য জয় করে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করলে অনেক খ্রিস্টান আলেম ওলামা প্রমাণ করে বসেন, এই ‘সারাসিন’ (আরব মুসলমানরা তখন এই নামে পরিচিত ছিল রোমান আর ইউরোপিয়ানদের কাছে) জাতিই ইয়াজুজ মাজুজ।



এ ধারনা পবিবর্তন হতে কিছু সময় নেয়। একে একে তুর্কী খাজারির পর আসে নতুন ইয়াজুজ মাজুজের বংশধর, মোঙ্গল সাম্রাজ্যের খানেরা। চতুর্দশ চেঙ্গিস খানের আমলে মোঙ্গলরা মুসলমান হয়ে গেলে তাদরও ইয়াজুজ মাজুজ বদনাম ঘুচে। সর্বশেষ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ইরাকীদের উপর বোমা মেরে পুরা ইরাককে ছাই বানানোর এক পর্যায়ে ঘোষণা করেন, ইরাকেই ইয়াজুজ মাজুজ আছে।



এবং বর্তমানের ইজরায়েলী ইহুদী পণ্ডিতেরা বলেনঃ



যেহেতু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে পতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এই টার্মটি ব্যবহার হয়েছে তাই যুগ যুগ ধরে বিষয়টি ব্যাপক বিকৃত হয়ে কাল্পনিক উদ্ভট রপকথায় রুপান্তরিত হয়েছে। বিশেষত খ্রিষ্টান ও ইহুদী ধর্মে। ইসলামেও ঐসব বিকৃত রুপকথাকে অনেকে ইয়াজুজ মাজুজের বিষয় ব্যাখ্যা করতে ব্যাবহার করছেন। অর্থাৎ ইহুদী খ্রিষ্টানদের থেকে ধার করেছেন। এতে মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে চরম অজ্ঞতা ‍ও বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে, যার কোরআন হাদিস ভিত্তিক কোন দলীল নাই। অনেক বড় বড় আলেম যুগের পর যুগ সেগুলো নকল করে এই সর্বনাশকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন।



মানবতা আজ এক মহা ধ্বংসের সম্মুখীন। আমেরিকা এটম বোম বানাচ্ছে। কারণ তারা গগ মেগগ রাশিয়া থেকে বাঁচতে চায়। রাশিয়াও আমেরিকান জোটকে মোকাবেলায় তৈরী করে চলেছে মারাত্বক সব মারনাস্ত্র। ভারত মনে করে, মুসলমান ও চাইনিজরাই সেই অসুরের দল। একে মোকাবেলায় চাই সর্বশক্তি নিয়োগ। গগ মেগগ বা ইয়াজুজ মাজুজকে সনাক্ত করতে ব্যাপক গবেষনা হয়েছে। তৈরী হয়েছে অসংখ্য ফিল্ম, ডকুমেন্টরী। কিন্তু সবই সেই বিকৃত উদ্ভট কল্পকথা নির্ভর।

কিন্তু যাদের কাছে আছে সেই অমূল্য রত্ন, এব্যাপারে সঠিক অবিকৃত আসমানী জ্ঞান, যা পারে মানুষকে এই মহাবিপদ থেকে বাঁচাতে, যা আল্লাহ্ কোরআন এবং হাদিসের মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন আমরা সেই মহা মূল্যবান জ্ঞান নিয়ে ঘুমিয়ে আছি। যা কিছু ব্যখ্যা বিশ্লেষন করেছি তাও ইহুদী নাসারাদের থেকে ধার করা ঐ কল্পকথা। অথচ আল্লাহ্ তায়ালা ইয়াজুজ মাজুজ সম্পর্কে আয়াত নাজিল শেষে বলেছেন,
“তারা হল সে সব লোক যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন ও তাঁর সাথে সাক্ষাৎকে অমান্য করে। যার ফলে তাদের যাবতীয় ‘আমল নিস্ফল হয়ে গেছে। কিয়ামাতের দিন আমি তাদের (কাজের) জন্য কোন ওজন কায়েম করব না”। [সুরা কাহাফঃ ১০৫]
They are those who deny the Signs of their Lord and the fact of their having to meet Him (in the Hereafter): vain will be their works, nor shall We, on the Day of Judgment, give them any weight.

এবং সূরা আম্বিয়ার ৯৫-৯৬ আয়াতের মাধ্যমে ইয়াজুজ মাজুজের সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকাটি ফাঁস করে দিয়েছেন। তারা ইহুদীদেরকে জেরুজালেমে ফিরিয়ে আনবে। অবশ্য ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করা ধূর্ত খাজারিরা GOG MAGOG নাম দিয়ে তাদের কার্যকলাপ চালায় না। illuminati, Freemason, Skull and Bones, The Knights Templar, The Bilderberg Group, The Priory of Sion ইত্যাদি নামে তারা পরিচিত। নামখানা ভিন্ন হলেও সবার মিশন ও ভিশন এক। এবার আমরা এদের কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করবোঃ

১/ তাদের নিয়ন্ত্রণে এক উপাসনালয় ও এক মুদ্রা ব্যবস্থা বিশিষ্ট বিশ্বব্যাপী একটি মাত্র সরকার ব্যবস্থা সৃষ্টি করা। যেটাকে ডাকা হয় New World Order বা NWO বা আমি বলি ইহুদী খিলাফত।



২/ প্রত্যেক জাতীয়তাবাদী চেতনার ধ্বংস সাধন, তাহলেই কেবল মানুষ একটি সুপার বিশ্ব-সরকার ব্যবস্থাকে মেনে নিবে। [আপনারা ২০১৭ সালের অস্কার অনুষ্ঠানে দেখে থাকবেন, সেখানে ২-৩ বার বিভিন্ন মিডিয়াকর্মী সকল বর্ডার ভেঙ্গে সবাইকে এক বর্ডারে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।]
৩/ প্রত্যেক ধর্মের বিকৃতিসাধন, পরে তার ধ্বংস সাধন। একমাত্র খাজার স্যাটানিস্টরা যা হুকুম করবে তাইই মানতে সবাই বাধ্য থাকবে।
৪/ মনুষ্য প্রজাতিকে রোবটে পরিণত করার উদ্দেশ্যে তাদের চিন্তা চেতনাকে নিয়ন্ত্রণ করা। তারা কিসে রেসপন্স করবে, আর কিসে করবে না সেটাকে বিশেষ উপায়ে প্রভাবিত করা। [এই যেমন পশ্চিমে সন্ত্রাসী হামলায় বছরে দুইটা মরলে বিশ্ব জনতা কয়েকদিন যাবৎ চোখের পানি ফালায়, অথচ মধ্যপ্রাচ্যে মাসে কয়েক’শ সিভিলিয়ান বোমার আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হলেও তাদের ইমোশানে সামান্য পরিমাণও আঘাত লাগে না।]

৫/ মাদক গ্রহণে সহযোগীতা করা, এক বৈধ বানানো। পর্ণকে “আর্ট” এ পরিণত করা, যেটাকে প্রথমে মানুষ গ্রহণ করবে এবং সবশেষে পর্ণ দেখাকে পুরো স্বাভাবিক মনে করবে।
৬/ জায়োনিস্টদের স্বার্থে আঘাত লাগে এমন সব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ধ্বংস করা।
৭/ আঞ্চলিক যুদ্ধ বাঁধিয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের অন্তত ৩০০ কোটি মানুষ হত্যা করা। অথবা অনুন্নত দেশের জনসাধারণকে দুর্ভিক্ষ ও রোগ দ্বারা মারা।



৮/ জনগণের সততাকে ধ্বংস করা, এবং কর্মক্ষম শ্রেণিকে ব্যাপকহারে বেকার বানিয়ে অসৎ পথে পরিচালিত করা, যেনো তারা মাদকদ্রব্য গ্রহণে বাধ্য হয়। মাদক গ্রহণ ও এগ্রেসিভ মিউজিক শ্রবণের ফলে কিশোর যুবকরা পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে অবাধ্য হবে।
৯/ জনগণকে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করা থেকে বিরত রাখা। তাদেরকে একটার পর একটা সমস্যা দ্বারা এমনভাবে আক্রান্ত করা যাতে, তারা সেই সমস্যা মোকাবিলার জন্য সরকারের দ্বারস্থ হয়। ধর্মশিক্ষা থেকে দূরে থাকা জনগণ তাদের এই ‘মানবসৃষ্ট’ দুর্দশার জন্য অনেক ক্ষেত্রে স্রষ্টাকে দায়ী করতে বাধ্য হবে।
১০/ যেকোনো ধর্ম থেকে কয়েকটি শাখা বের করা যাতে তারা সব সময় পরস্পর বিবাদে লিপ্ত থাকে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নী যুদ্ধ লাগানো। তাতে Greater Israel সৃষ্টির সময় সংক্ষিপ্ত হয়ে আসবে।



১১/ প্রচলিত অর্থনৈতিক কাঠামোর বিলুপ্তি সাধন। অর্থাৎ ডলারের ধ্বংস। এই প্রক্রিয়া সুপারপাওয়ার আমেরিকাকে প্রতিস্থাপিত করে ইজরায়েল তার জায়গা দখল করে নিবে।
১২/ গোপনীয় মিশনের সাহায্যে সকল দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে তাদের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করা। [অবশ্য আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, মিশরের সরকার পরিবর্তন গোপনীয় মিশন ছিলো না। আবার বাসার সরকারকে উৎখাতের নিমিত্তে সিরিয়ায় জঙ্গী উৎপাদন ও বোমাবর্ষণও গোপন না]



১৩/ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ কায়েম করে জনপদকে ভীতির মধ্যে রাখা। (বাংলাদেশে যেটাকে জঙ্গীবাদ বলা হয়)
১৪/ পৃথিবীর প্রতিটি কোণার শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা এবং জনগণকে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা, যাতে তারা সহজেই New World Order কে গ্রহণ করতে পারে।
১৫/ Messiah এর আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

শেষের এজেন্ডাটাই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই এজেন্ডাকে সফল করবার জন্য উপরের এজেন্ডাগুলিকে প্রথমে বাস্তব রুপ দিতে হবে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাকঃ
ধরেন চট্টগ্রামের অমুক অঞ্চলে আজকে প্রধানমন্ত্রী যাবেন। উনি কিন্তু হঠাৎ করে বাসের টিকেট কেটে সরাসরি ঐ অঞ্চলে যেতে পারবেন না। তাকে নিজে প্রস্তুতি নিতে হবে, পাশাপাশি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা ঐ অঞ্চলে কয়েকদিন আগে থেকে গিয়ে ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। যেমন, প্রধানমন্ত্রী যে পথে যাবেন, সে পথের আশেপাশের দোকানহাট কয়েকদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করবে। প্রধানমন্ত্রীর যারা ভক্ত সাগরেদ আছে তারা সুন্দর একটা স্টেইজ সাজাবে যেখানে তিনি মুল্যবান বক্তব্য দিবেন। সবকিছু প্রস্তুত হওয়ার শর্তে তবেই প্রধানমন্ত্রী সে অঞ্চলে যেতে রাজী হবেন।
ইহুদীদের মেসিয়াহ্‌ আসার ব্যাপারটাও তেমন। মেসিয়াহ্‌ এর ভক্তরা, অর্থাৎ খাজার ইহুদীরা স্টেইজ সাজাচ্ছে, মিশন সম্পূর্ণ হওয়ার শর্তে মেসিয়াহ্‌ এর আগমন ঘটবে। বাইবেল অনুযায়ী দাউদ (আ) এর সিংহাসন থেকে পুরো বিশ্ব শাসন করবে। ইহুদিদেরকে সকল জাতির উপর শ্রেষ্ঠ বানাবে। তাদের কাছে মনে হবে যে “সুলাইমানের সেই Golden Age ফিরে এসেছে”!

এখন প্রশ্ন আসতে পারে কে এই মেসিয়াহ্‌?

আগেও বলেছি, আল্লাহ্‌ তায়ালা তৌরাতের মাধ্যমে বনী ইজরায়েলকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাদের কাছে একজন মেসিয়াহ্‌ পাঠানো হবে যে সুলাইমান (আ) এর মত শাসন করবেন।

“আমাদের মাঝে যখন এক সন্তান জন্ম নেবে, আমাদেরকে যখন এক পুত্র দান করা হবে; যার কাঁধে শাসনভার ন্যাস্ত হবে (অর্থাৎ তিনি পৃথিবী শাসন করবেন) এবং তার নাম হবে “চমৎকার”, “পরামর্শদাতা”, “শক্তিশালী বিধাতা, “চিরস্থায়ী পিতা”, “শান্তির রাজপুত্র”।
“দাঊদ (আ) এর সিংহাসনের উপর এবং রাজত্বের উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, এবং সেখানে তার শাসনামলের ও শান্তির কোনো শেষ থাকবে না। সকলের প্রভুর একান্ত ইচ্ছাবলেই ইহা সংঘটিত হবে।” [বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, ইসাইয়া ৯:৬-৭]

মসীহ্‌ সম্পর্কে ইয়ারমিয়া (Jeremiah) বলেন, “…তিনি হবেন দাঊদ (আ) এর বংশে একটা ন্যায়বান চারা।” [বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, ইয়ারমিয়া ২৩:৫]

ইসাইয়া তাঁর সম্বন্ধে আরও লিখেছেনঃ
“চেয়ে দেখ আমার দাস, যার মাঝে আমারই আত্মা উদ্ভাসিত; আমি তাঁর ভিতর আমার ‘রুহ্‌’ (Spirit) ভরে দিয়েছি; সে অ-ইহুদীদের বিচার করবে।
“সে কাঁদবে না বা চিৎকার করবে না বা রাস্তায় তাঁর কণ্ঠস্বর শোনাবে না।”
“একটা ক্ষত গাছের ডগা সে ভাঙবে না, এবং জলন্ত শণকে সে নিভিয়ে দিবে না; সে কেবল সত্যের উপর ভিত্তি করে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবে।”
“সে বিফল হবে না বা তাকে নিরাশও করা যাবে না, যতক্ষণ না সে ভূপৃষ্ঠে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবে; এবং দ্বীপপুঞ্জ তাঁর আঈনের অপেক্ষায় থাকবে।” [বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, ইসাইয়া ৪৯:৬]

দাউদ (আ) ও সুলাইমান (আ) কর্তৃক প্রথমে যে শাসন প্রতিষ্ঠিত, আরও একজন দ্বারা সেই শাসনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ভবিষ্যতবাণী তৌরাতের প্রথম পুস্তক Genesis এও উল্লেখিত হয়েছে। সেখানে তাকে শীলো (Shiloh) বলে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
“তাঁর পুত্র জুডার কাছ থেকে ‘রাজদন্ড’ যেনো হারিয়ে না যায়, ‘শাসনদণ্ড’ যেনো তাঁর দু’পায়ের মধ্যবর্তী পরিসর থেকে সরে না যায়, যতক্ষণ না শীলো আসে এবং জাতিগোষ্ঠীসমুহ তাঁর অনুগত হয়।” [তৌরাত, জেনেসিস ৪৯:১০]

এই ভবিষ্যতবাণী, কোন্‌ গোত্র থেকে মসীহ্‌ আবির্ভূত হবেন কেবল সেটাই নির্দেশ করে নাই, বরং ভবিষ্যতের রাজারা যে জুডার বংশধর হবেন তাও নির্ধারিত করেছে। শিলোকে ‘মসীহ্‌র’ এক ব্যাক্তিগত উপাধি হিসেবে রাবাইদের ব্যাখ্যা প্রাচীনকাল থেকে সনাক্ত করে এসেছে এবং এটাও ভবিষ্যতবাণী করেছে যে, তিনি জুডা গোত্রথেকে উদ্ভূত হবেন।

প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আল্লাহ্‌ তায়ালা ২০০০ বছর আগে মরিয়মের পুত্র ঈসা মসীহকে পাঠালেন। সে সময়টাতে বনী ইজরায়েল গোমরাহীতে লিপ্ত ছিলো। আল্লাহ্‌ যা হারাম করেছেন, তারা সেটাকে হালাল বানিয়েছিলো। তিনি দেখলেন তারা কেবল ধর্মের ‘বাহ্যিক’ দিকটা আঁকড়ে ধরে রয়েছে, অথচ দুঃখ্যজনকভাবে এর ‘অন্তর্নিহিত’ সারবস্তুকে অবজ্ঞা করে চলেছে। মসজিদের ভেতরে তারা সুদের ব্যবসা খুলে বসেছিলো। আজকের মুসলিম নামধারী জাতিটি যেমনটা ইসলামী ব্যাংক বানিয়ে সেখানে সুদেরও ব্যবসা করে, তার ভেতর নামাযও পড়ে। যাই হোক, সুদকে হালাল বানানোর জন্য তারা তৌরাতের লিখন বদলে দিয়েছিলো। অর্থাৎ নিজেদের ভেতর তারা সুদ খাওয়া নিষিদ্ধ করে অ-ইহুদীদের কাছ থেকে সুদ খেতো।

বস্তুতঃ ইহুদীদের জন্য আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পূত-পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্য হালাল ছিল-তাদের পাপের কারণে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমাণে বাধা দানের দরুন। [সুরা নিসা ৪:১৬০]
For wrongdoing on the part of the Jews, We made unlawful for them [certain] good foods which had been lawful to them, and for their averting from the way of Allah many [people].

আর এ কারণে যে, তারা সুদ গ্রহণ করত, অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারণে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করতো অন্যায় ভাবে। বস্তুত; আমি কাফেরদের জন্য তৈরী করে রেখেছি বেদনাদায়ক আযাব। [সুরা নিসা ৪:১৬১]
And [for] their taking of usury while they had been forbidden from it, and their consuming of the people’s wealth unjustly. And we have prepared for the disbelievers among them a painful punishment.

এই অবস্থা দেখে একজন মেসিয়াহ্‌ এর যা ভূমিকা গ্রহণ করার কথা, ঈসা (আ) তাইই করলেন। তিনি তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার বিরোধীতা করলেন। নির্ভয়ে ধর্মের ‘আভ্যন্তরীণ’ সারবস্তু প্রচার করতে লাগলেন এবং (ধর্মের) বাহ্যিক রুপের বিকৃতির নিন্দা করলেন। এতে ইহুদী আলেম ওলেমারা ক্ষেপে গেলো। মেসিয়াহ্‌ হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালো। তারা দাবী জানালো কোথায় মেসিয়াহ্‌ এসে আমাদের স্বর্ণযুগ ফিরে দিবে, তা না করে উলটা মরীয়মের পুত্র আমাদের ব্লাসফেমীর দায়ে অভিযুক্ত করতেছে! এরপরে যা ঘটবার তাইই ঘটলো। নবী খুন করার রেকর্ডে শীর্ষে অবস্থান করা বনী ইজরায়েলের আলেম ওলামারা রোমানদের সাথে ষড়যন্ত্র করে ঈসা মসীহকে ক্রুশবিদ্ধ করলো। যার স্পষ্ট বর্ণনা কোরআনে এসেছেঃ

আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলীতে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোন খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি। [সুরা নিসা ৪:১৫৭]
And [for] their saying, “Indeed, we have killed the Messiah, Jesus, the son of Mary, the messenger of Allah .” And they did not kill him, nor did they crucify him; but [another] was made to resemble him to them. And indeed, those who differ over it are in doubt about it. They have no knowledge of it except the following of assumption. And they did not kill him, for certain.

বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। [সুরা নিসা ৪:১৫৮]
Rather, Allah raised him to Himself. And ever is Allah Exalted in Might and Wise.

আর আহলে-কিতাবদের মধ্যে যত শ্রেণী রয়েছে তারা সবাই ঈমান আনবে ঈসার উপর তাদের মৃত্যুর পূর্বে। আর কেয়ামতের দিন তাদের জন্য সাক্ষীর উপর সাক্ষী উপস্থিত হবে। [সুরা নিসা ৪:১৫৯]
And there is none from the People of the Scripture but that he will surely believe in Jesus before his death. And on the Day of Resurrection he will be against them a witness.

যখন ঈসা মসীহকে ক্রুশবিদ্ধ করা হলো তখনও ইহুদীরা নিশ্চিত ছিলো যে আল্লাহ্‌ প্রতিশ্রুত মেসিয়াহ আসার ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটবে। কারণ, নিজেকে মসীহ্‌ দাবী করা মরীয়মের পুত্র অবিশ্বাসী রোমানদের দখল থেকে পবিত্রভুমিকে মুক্ত না করেই মৃত্যুবরণ করেছে (ইহুদীদের দাবী অনুযায়ী), আর তাছাড়া সে দাউদ (আ) এর সিংহাসন (অর্থাৎ জেরুজালেম) থেকে পৃথিবীর উপর শাসনও করেনি। তাই সে মসীহ্‌ হতে পারে না।



এই গর্হিত অপরাধের জন্য বনী ইজরায়েলের উপর গজব আসলো। রোমানরা জেরুজালেম আক্রমণ করে মসজিদ আল আকসা ধ্বংস করলো, ইহুদীদেরকে হত্যা করলো ও বাদবাকী ইহুদিদেরকে সেখান থেকে বহিস্কার করে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিলো। ইতোপূর্বেই এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছি।

এতকিছুর পরেও আল্লাহ্‌ তায়ালা শুধরানোর আরেকটা সুযোগ দিলেন বনী ইজরায়েলকে। নবী মুহম্মদকে (স) পাঠালেন আরবের বুকে। ইয়ায়সরিবের (মদীনা) ইহুদী আলেম ওলামারা তাঁকে পরীক্ষা করে দেখলেন যে সে আসলেই মেসিয়াহ্‌ কি না। তাকে তিনটি প্রশ্ন করা হলোঃ
তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ হল আমার পালনকর্তার আদেশ । এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে। [১৭: ৮৫]
And they ask you, [O Muhammad], about the soul. Say, “The soul is of the affair of my Lord. And mankind have not been given of knowledge except a little.”

এরপর প্রশ্ন করা হলো আসহাবে কাহাফের সেই ৭ যুবকের কথা, যারা ফিতনা থেকে রক্ষা পেতে দেশ থেকে পলায়ন করে এবং একটা গুহায় আশ্রয় নেয়। দেখুন সুরা কাহাফ ০৯-২৬

এরপর প্রশ্ন করা হলো বিখ্যাত ভ্রমণকারী সম্পর্কে যিনি পূর্ব ও পশ্চিমে ভ্রমণ করেছিলেনঃ
“তারা আপনাকে (হে মুহম্মদ!) যুলক্বারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, “আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু কিছু অবস্থা বর্ণনা করবো।” [কাহাফ ১৮:৮৩]
And they ask you, [O Muhammad], about Dhul-Qarnayn. Say, “I will recite to you about him a report.”

দেখুন ১০৫ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর কোনো নবী ছাড়া সাধারণ মানুষের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব ছিলো। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও বনী ইজরায়েল মুহম্মদকে মসীহ্‌ হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালেন। কারণ তিনি জন্মেছেন আরব মায়ের গর্ভে। অর্থাৎ ইসমাইল (আ) এর বংশে। কিন্তু তাদের মতে মেসিয়াহ্‌ আসবে ইসহাক (আ) এর ব্লাডলাইন থেকে। অর্থাৎ বনী ইজরায়েলের বংশ থেকে। নবী মুহম্মদকে প্রত্যাখ্যান করায় ইহুদীদের তওবা করার শেষ সুযোগটিও হাতছাড়া হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ইতোমধ্যে আল্লাহ্‌ তায়ালা মুহম্মদ (স) কে সর্বশেষ মেসিয়াহ্‌ বলে ঘোষণা করলেন। তারপর নতুন আর কোনো নবী আসবেন না।

কিন্তু বনী ইজরায়েল সেই গোঁ ধরেই থাকলো যে ভবিষ্যতে মেসিয়াহ্‌ আসবে এবং সুলাইমান (আ) এর স্বর্ণযুগ ফিরে দিবে।

এখন, ইহুদীদের এই আপকামিং মেসিয়াহ্‌ টিকে সনাক্ত করতে হলে আমাদেরকে কিয়ামতের আলামতগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। আল্লাহ্‌ তায়ালা সুরা নিসার ১৫৯ আয়াতের মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে ঈসা (আ) শেষ জামানায় ফিরে আসবেন এবং পৃথিবীর শাসনভার গ্রহন করবেন। ঐ সময়টাতে সবাই ইসলাম ধর্ম কবুল করবে বা ঈমান আনবে।

হুযায়ফা ইব্‌নে উসায়েদ গিফারী (রা) কর্তৃক বরণিতঃ
আমরা আলোচনায় ব্যস্ত থাকা অবস্থায়, হঠাত করে আল্লাহ্‌র রাসুল (স) আমাদের কাছে আসলেন। তিনি বললেন; তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছো? সাহাবীগণ বললেন, আমরা ‘শেষ সময়’ নিয়ে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেন, দশটি আলামত যতক্ষণ না তোমরা দেখতে পাও, ততক্ষণ তা (শেষ সময় বা ক্বিয়ামত) আসবে না। [সহীহ্‌ মুসলিম]
এই দশটি আলামত হলোঃ
১। মসীহ্‌ আদ-দাজ্জাল বা ভন্ড মসীহ্‌ এর মুক্তি লাভ,
২। ইয়াজুজ মাজুজের মুক্তি লাভ,
৩/ প্রকৃত মসীহ্‌ ঈসা (আ) এর প্রত্যাবর্তন,
৪/ দুখান (বা ধোঁয়া) দৃশ্যমান হওয়া,
৫/ ভুমির জানোয়ারের উদ্ভব (অর্থাৎ পবিত্রভুমি থেকে উদ্ভুত এক জীব)
৬/ পশিম দিক থেকে সূর্যোদয়,
৭/ পূর্বের কোনো স্থানে ভূমিধ্বস বা মাটি সরে যাওয়া,
৮/ পশ্চিমের কোনো স্থানে অপর একটি ভূমিধ্বস,
৯/ আরবভুমিতে তৃতীয় এক ভূমিধ্বস,
১০/ ইয়েমেন থেকে এক আগুনের (অগ্নিকান্ডের) উতপত্তি হবে যার ফলে মানুষ পালিয়ে গিয়ে তাদের মিলনস্থলে জড়ো হবে।
(দ্রষ্টব্য যে, উপরোক্ত তালিকায় আলামতগুলি কোন্‌টার পর কোন্‌টা ঘটবে তাঁর সঠিক নির্দেশনা নেই)

ঈসা (আ) এর প্রত্যাবর্তনকে কোরআন শেষ সময়ের ‘সকল আলামতের সেরা আলামত’ বলে আখ্যায়িত করেছে;
সুতরাং তা হল কেয়ামতের নিদর্শন। কাজেই তোমরা কেয়ামতে সন্দেহ করো না এবং আমার কথা মান। এটা এক সরল পথ। [সূরা যুখরুফঃ ৬১]
And indeed, Jesus will be [a sign for] knowledge of the Hour, so be not in doubt of it, and follow Me. This is a straight path.

তাহলে কোরআন হাদীসের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে প্রকৃত মসীহা ঈসা (আ) এর আগমনের পূর্বে ভন্ড মসীহ্‌ দাজ্জালের আগমন ঘটবে। এবং বর্তমান ইজরায়েলের ইহুদীরা এই দাজ্জালের অপেক্ষায়ই দিনাতিপাত করছে। দেখুন: https://www.breakingisraelnews.com/...



ঈসা (আ) নিজেই তাঁর প্রত্যাবর্তনের সময় বুঝার জন্য আলামতের একটি তালিকা দিয়ে গেছেনঃ
১/ নিজেকে ‘মসীহ্‌’ বলে দাবী করবে এমন ব্যাক্তিদের আবির্ভাব ঘটবে, কিন্তু তারা হবে ভন্ড।
২/ চারিদিকে যুদ্ধ এবং যুদ্ধের গজব ছড়িয়ে থাকবে।
৩/ পৃথিবীব্যাপী অভূতপূর্ব দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।
৪/ মহামারীতে পৃথিবী ছেয়ে যাবে।
৫/ অরাজকতা ও মানুষের প্রতি অমানবিক আচরণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
৬। ভূমিকম্পের তীব্রতা ও সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

হলিউডি সুপার মুভি দেখার অভ্যেস যাদের আছে, তারা সহজেই ঈসা (আ) কর্তৃক প্রেডিক্টেড আলামতগুলো সহজেই বুঝতে পারবেন। মুভিতে দেখায় কোনো স্টেইট যখন অশান্তিতে ছেয়ে যায়, তখনই সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ওয়ান্ডারওম্যান, আয়রনম্যান, হাল্ক, ফ্লাশ প্রভৃতি অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী চরিত্রগুলো মেসিয়াহ্‌র মত হাজির হয়ে যায়। তারা অশুভ শক্তির সাথে লড়াই করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে, যেই শক্তির সাথে লড়াই করবার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই। ঈহুদীদের ভন্ড মসীহের আগমণও একই পন্থায় ঘটবে। ইয়াজুজ মাজুজ যখন মালহামা বা আরমাগেডন বা তৃতীয় বিশ্ব সংঘটিত করবে তখন মানুষ সেই যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করবে। ঠিক এই সময়টাতে ত্রাণকর্তারুপে মহানায়ক দাজ্জাল বা ভন্ড মসীহ্‌র আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জাল শব্দের অর্থই হচ্ছে “ভন্ড”, The great Deceptor. তার এক চোখে অন্ধ হবে, অর্থাৎ তার অন্তরদৃষ্টি থাকবে না, বাহিরের চক্ষুদ্বয় দিয়ে যা দেখবে সেটাই তার কাছে সত্যরুপে গৃহীত হবে। সে খালি চোখে স্রষ্টাকে দেখতে পায় না তাই সে মনে করে স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। আজকালকার এথেইস্ট বা নাস্তিকরা যেমনটা বলে আর কি! স্রষ্টাকে দেখা যায় না বিধায় স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে তারা বিজ্ঞানের পূজা করে। বিজ্ঞান চোখে দেখা যায়। এটা তাদের কাছে বেদবাক্য।

যাই হোক, খ্রিস্টানরাও বিশ্বাস করে শেষ জামানায় একজন ভন্ড Creature এর আবির্ভাব ঘটবে। তারা একে ডাকে “Anti-Christ” নামে। অর্থাৎ স্বত্বা একটা কিন্তু সে ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের নিকট সে ভিলেন, এবং ইহুদীদের নিকট সে মহানায়ক বা প্রতিশ্রুত মেসিয়াহ্‌।


‘পবিত্রভুমির’ শাসক হিসেবে সেখানে ফিরে যাওয়া, এবং রাজা-নবী দাউদ (আ) ও সুলাইমান (আ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত “ইজরায়েল রাষ্ট্র” পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারা, সেই সাথে সুলাইমান (আ) কর্তৃক নির্মিত উপাসনালয় পুননির্মাণ করতে পারা এবং ঐ উপাসনালয়ে ইব্রাহিম (আ) এর বিধাতার উপাসনা করতে পারাই হচ্ছে ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইহুদীদের সবচ্যে বড় স্বপ্ন। ঐ ধরণের স্বপ্নকে অবশ্যই মহৎ মনে করা উচিত। একটা জনগোষ্ঠীর সবচে বড় স্বপ্ন যদি ঐরকম হয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বিশেষ উৎকর্ষতা লাভ করার যোগ্যতা তাদের রয়েছে। তারা এমন এক জনগোষ্ঠী হবার কথা, যারা পরকালকে দুনিয়ার (ইহকাল) চেয়ে অধিকতর শ্রেয় বলে মূল্যায়ন করে। অতএব, অন্ততপক্ষে তাদের এটুকু অনুধাবন করতে পারা উচিত যে, ঐরকম মহৎ স্বপ্ন, নিশ্চিতভাবে ধর্মবিমুখ বা সেকুলার রাষ্ট্র ইজরায়েল সৃষ্টির মাধ্যমে এবং ‘পবিত্রভুমিতে’ রক্ত রঞ্জিত ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ত্রাস ও নিপীড়নের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করাটা স্রষ্টা-বিরোধী ও গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য হবে। এবং এই উৎপীড়নের মাত্রা ও গতিপ্রকৃতি দেখে নিমেষেই আন্দাজ করা যায় যে এর শাস্তিস্বরুপ ঐশ্বরিক ভয়ঙ্কর পরিণতি ভোগ না করলে আরও ৬০ বছর তারা এভাবেই নিপীড়ন চালিয়ে যাবে।


সোস্যাল মিডিয়ার কল্যানে (মেইনস্ট্রীম মিডিয়ায় দেখায় না) আমি যখন দেখতে পাই কোনো ইজরায়েলী জঙ্গিবিমান হঠাৎ বোমা ফেলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আদি নিবাসীর ঘরবাড়ি মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে, যখন দেখি ইজরায়েলী সৈন্য নিরীহ শিশু-বৃদ্ধের বুকে নির্দয়ের মত গুলি করছে, মা-বোনদের লাঞ্ছিত করছে, তখন আমি এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হই যে এরা কিছুতেই বনী ইজরায়েল হতে পারে না, দাউদ ও সুলাইমান (আ) এর রক্ত কিছুতেই এদের শরীরে বইতে পারে না, স্রষ্টা এদের উপরে তাওরাত নাযিল করেননি, যাদের উপর তাওরাত নাযিল হয়েছে তারা এমন পাশবিক আচরণের অধিকারী হতে পারে না। এরা হলো ইয়াজুজ মাজুজের রক্ত বহনকারী সেই ভয়ংকর প্রাণী। ভন্ড মেসিয়াহ্‌ দাজ্জাল বা Anti-Christ এর নিবেদিত আর্মি! ইয়াজুজ মাজুজ গং ইহুদীদের ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়েছে, বর্তমান ‘ইজরায়েল রাষ্ট্রই’ বাইবেলের ভবিষ্যতবাণী করা সেই ইজরায়েল রাষ্ট্র, এই মিথ্যা বাক্য শুনিয়ে তারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদীদের জেরুজালেমে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে, সেই সাথে পুরো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষকে তাদের ফটোকপিতে রূপান্তর করে ইজরায়েল রাষ্ট্রকে বৈধ বানিয়ে নিয়েছে। আজ ‘আপাতদৃষ্টিতে’ মনে হবে যে ইহুদীদের ‘সবচেয়ে বড় স্বপ্ন’ বুঝি প্রায় পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে চলেছে। ইজরায়েলী ইহুদীরা পবিত্রভুমিতে ফিরে এসেছে, অথবা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক না কেনো, ইচ্ছা করলেই তারা সেখানে ফিরে আসতে পারে। ১৯৪৮ সালে যে ইজরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টি করা হয়েছিলো আজ তা এক বাস্তবতা। ঐ স্বপ্ন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে এখন আর যেটুকু বাকী রয়ে গেছে তা হচ্ছে একজন রাজার বা মেসিয়াহ্‌র নিয়োগ এবং মসজিদ আল-আক্‌সার ধ্বংস সাধন, যেনো তার স্থলে Temple of Solomon নির্মাণ করা যায়। উপরন্তু ইজরায়েলকে পৃথিবীর ‘নিয়ন্ত্রা রাষ্ট্র’ হতে হবে এবং ইজরায়েলের রাজাকে (বা শাসনকর্তাকে) জেরুজালেম থেকে পৃথিবীর উপর শাসন করতে হবে।



আসলে উপরিউক্ত বিষয়গুলি চরম বাস্তবতা মনে হলেও সবকিছুই ধোঁকা, একটা অশুভ পরিকল্পনার অংশ, যে পরিকল্পনার কলকাঠি নাড়ছে খাজার ইহুদিরা তথা ইয়াজুজ মাজুজ। তারা তাদের মেসিয়াহ্‌ দাজ্জাল বা Anti-Christ এর আগমনের জন্য স্টেইজ সাজাচ্ছে। ঠিক যেমন প্রধানমন্ত্রী কোনো এলাকায় গেলে আগেভাগে তার সৈন্য সামন্ত ভক্তরা স্টেইজ সাজায়। আমি উপরে যে এজেন্ডাগুলো উল্লেখ করেছি তা ভন্ড মেসিয়াহ্‌ দাজ্জালের আগমনের পূর্বশর্ত। ইয়াজুজ মাজুজ সে এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। বাইবেলে উল্লেখিত মিশর নদী থেকে ইরানের উপসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত দখলের পরিকল্পনা তাদের হাতে রয়েছে। সৌদি আরব, ইরাক, ফিলিস্তিন তাদের নখদর্পণে, বাকি থাকলো সিরিয়া। সিরিয়ার Anti-Zionist সরকার বাসার আল আসাদকে সরাতে পারলেই Greater Israel সৃষ্টির পথে কেউ আর বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না। তাই ২০১১ সাল থেকে সেখানে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে রাখা হয়েছে।



দাজ্জালের একচক্ষুকে ধার্মিকরা অন্ধত্বের প্রতীক মনে করে, অর্থাৎ যার অন্তরের চোখ অন্ধ। একে খাঁটি বাংলায় “কানা” বলা হয়, যে দেখেও দেখে না। আর শয়তানের উপাসকরা একে আলোর প্রতীক মনে করে। যেমনটা ফেরাঊন মনে করতোঃ
One Eye of Egyptian Horus God

বর্তমান ইজরায়েল রাষ্ট্রও দাজ্জালের ঐ ভন্ডধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত। এর অধিবাসীরা বা এর রক্ষকরা নিজেদের ইহুদী বললেও তারা আসলে শয়তানের উপাসনাকারী। এদের কথা বাইবেলেও এসেছেঃ

I will make those who are of the synagogue of Satan, who claim to be Jews though they are not, but are liars… (Revelation 3:9)

দাজ্জালের ‘একচক্ষু’ খচিত ইজরায়েলী পার্লামেন্ট

ইজরায়েলের পতাকায় যে “তারা” আঁকা আছে তা-ও একটি স্যাটানিক হেক্সাগ্রামঃ



নিচে খাজার ইহুদীদের কয়েকটি অঙ্গ-প্রতিষ্টানের নাম দেওয়া হলোঃ

“The Bilderberg Group”
“Council on Foreign Relations”
“The Trilateral Commission”
“The Bohemian Grove”
“The Federal Reserve”
“Freemasonry”
“Skull and Bones”
“The Military”
“The Vatican”
“Knights of Malta”
“Radical Islam”
“Communism”
“World Council of Churches”
“Election Fraud”
“The British Monarch”
“Royal Order of the Garter”
“MI-5 and MI-6”
“Council of Chatham House”
“The Triads”
“The CIA”
“The NSA”
“The FBI”
“The DEA”
“Big Pharma”
“Media”
“The Priory of Sion”
“United Nations”
“International Monetary Fund”
“The World Bank”
“FEMA”
“Mossad”
“UNESCO”

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৫

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৪

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-৩

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-২

কোরআন ও বাইবেলে ইয়াজুজ মাজুজঃ পর্ব-১

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.