নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং ইউ!

মৃদুল ইসলাম

এ্যা ম্যান অব স্ট্রীম অব অপজিট্‌স

মৃদুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্তমান মুসলিম জাতির উপর চালিত নিপীড়নের সঙ্গে অতীতের বনী ইজরায়েলের উপর পতিত খোদায়ী গজবের মিল রয়েছেঃ

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫২



আন্তর্জাতিক খবর পড়ুয়া কোনো মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমানে আমাদের উপর যে সারা বিশ্বব্যাপী একপাক্ষিকভাবে অত্যাচার, নিপীড়ন চালানো হচ্ছে সেটাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
এ প্রশ্নের উত্তরে সে বলবে "এইগুলা পরীক্ষা চলতেছে!"
অর্থাৎ, উদ্দেশ্যমূলকভাবে চালিত নিপীড়নটাকে এই জাতি "পরীক্ষা চলতেছে" ট্যাগ দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। সামান্য বোধশক্তি না থাকায় এরা বুঝেও উঠতে পারছে না শাস্তি আর পরীক্ষা এক নয়। আল্লাহ পরীক্ষা নেন মুমিন বা হুকুম অনুসরণকারী বান্দাদের। পরীক্ষার ফলে মুমিনদের মর্যাদা বাড়ে, তারা উপকৃত হন। অন্যদিকে গজব হচ্ছে ভিন্ন জিনিস। এর দ্বারা ধ্বংস হয়। শত শত বছর ধরে মার খাইয়ে, লাঞ্ছনা গঞ্জনা দিয়ে, নারীদের ধর্ষণ করিয়ে, দাস বানিয়ে আল্লাহ্‌ কারো পরীক্ষা নেন না।
আল্লাহ্‌ তায়ালা বনী ইজরায়েলীদেরকে সতর্ক করেছিলেন তাদের দুইবার ফ্যাসাদ সৃষ্টির বিষয়ে এবং দুইবারই তাদেরকে চরম শাস্তি দিয়ে আল্লাহ্‌ তাঁর কথা রাখেন। প্রথম ঘটনাটি ঘটে খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সনে, যখন বখতে-নাসারের (Nebuchadnezzar) নেতৃত্বে ব্যাবীলনীয় এক বাহিনী জেরুজালেম অবরোধ করে, তারপর শহরটি পুড়িয়ে দেয়, এর অধিবাসীদের হত্যা করে, সুলাইমান (আ) কর্তৃক তৈরি করা মসজিদ ধ্বংস করে দেয় এবং ইহুদী জনসংখ্যার উৎকৃষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অংশকে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যাবীলনে নিয়ে যায়। যেভাবে আল্লাহ্‌ তায়ালা ঘোষণা করেছেন (বনী ইজরায়েল ১৭:১৫-১৬) যে, তিনি সতর্কবাণী না পাঠিয়ে কোনো জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেন না, ঠিক সেইভাবে নবী ইয়ারমিয়া (Jeremiah) বাইবেলে তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন (ইয়ারমিয়া ৩২:২৬)।



দ্বিতীয়বার, ঈসা (আ) কে ক্রুশবিদ্ধ করার পর যখন ইহুদীরা গর্ব করলো এবং তাঁকে হত্যার ক্রেডিট নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়লো তখন আবার তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। সেনাপতি টাইটাসের (Titus) এর নেতৃত্বে রোমান বাহিনী ৭০ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম অবরোধ করে। টাইটাস জেরুজালেম শহর ধ্বংস করে দেয়, এর বাসিন্দাদের হত্যা করে ও পবিত্রভুমি থেকে অবশিষ্ট ইহুদীদের বহিষ্কার করে। পবিত্র মসজিদ আল আক্‌সা আবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং রোমান সৈন্যরা সেটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে, গলিত স্বর্ণ পিন্ডের খোঁজে প্রতিটি পাথরকে এক এক করে আলগা করা হয়, ঠিক যেমনটি ঈসা (আ) সতর্কবাণী দিয়েছিলেন, “একটি পাথরও অপর পাথরের উপর লেগে থাকবে না; সব ভেঙ্গে ফেলা হবে।” ইহুদীদেরকে জেরুজালেম থেকে বহিষ্কারের লোমহর্ষক কাহিনী কোরআনে সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরা হয়েছেঃ
"আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে।"
And We conveyed to the Children of Israel in the Scripture that, "You will surely cause corruption on the earth twice, and you will surely reach [a degree of] great haughtiness.
"অতঃপর যখন প্রতিশ্রুতি সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।"
So when the [time of] promise came for the first of them, We sent against you servants of Ours - those of great military might, and they probed [even] into the homes, and it was a promise fulfilled.
"অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুয়িয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম।"
Then We gave back to you a return victory over them. And We reinforced you with wealth and sons and made you more numerous in manpower.
"তোমরা যদি ভাল কর, তবে নিজেদেরই ভাল করবে এবং যদি মন্দ কর তবে তাও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন দ্বিতীয় সে সময়টি এল, তখন অন্য বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম, যাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয়, আর মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার ঢুকেছিল এবং যেখানেই জয়ী হয়, সেখানেই পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।"
(And said), "If you do good, you do good for yourselves; and if you do evil, [you do it] to yourselves." Then when the final promise came, [We sent your enemies] to sadden your faces and to enter the temple in Jerusalem, as they entered it the first time, and to destroy what they had taken over with (total) destruction.

"হয়ত তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ কর, আমিও পুনরায় তাই করব। আমি জাহান্নামকে কাফেরদের (সত্য গোপনকারী/হুকুম অমান্যকারী) জন্যে কয়েদখানা করেছি।"
(Then Allah said), "It is expected, [if you repent], that your Lord will have mercy upon you. But if you return [to sin], We will return [to punishment]. And We have made Hell, for the disbelievers, a prison-bed."
- [বনী ইজরায়েল ১৭:৪-৮]



বনী ইজরায়েল আল্লাহর শরীয়তকে ছেড়ে যখন অন্য শরীয়ত গ্রহণ করে, তাদের চোখে যখন আল্লাহর আয়াতের থেকে মানবসৃষ্ট জিনিস বেশী আকর্ষণীয় লাগে, তখন যারা আল্লাহর কথা বলে, আল্লাহর নিদর্শনের কথা বলে, আল্লাহর শরীয়তের কথা বলে, সেসব নবীদের তারা ঘৃণা করতে থাকে ও তাদের অত্যাচার নির্যাতন এমনকি হত্যাও করতে থাকে। এতোসব অকাম কুকামের ফলে ইহুদিদের উপর দুইবার এমন গজব নেমে এসেছিল যে, প্রায় দুই হাজার বছর ইহুদিরা পৃথিবীর যেখানেই গেছে, যেখানেই আশ্রয়ের আশায় ছুটে গেছে, সেখানেই তাদের উপর নেমে এসেছে নিপীড়ন, লাঞ্ছনা গঞ্জনা। আজ বিশ্বময় মুসলিম জাতির ঐ একই অবস্থা চলছে।



বনী ইজরায়েল মিশরে দাসত্ব করতে করতে ভুলে গিয়েছিল স্বাধীনতা কাকে বলে। তারা সারাদিন গাধার মত ফেরাউনের জমিতে কৃষিকাজ করাকেই বিরাট সম্মানজনক পেশা ভাবতো। আল্লাহপাক যখন মূসা (আ) কে পাঠিয়ে তাদেরকে স্বাধীন জীবন দান করলেন আর মান্না ও সালওয়াকে তাদের খাদ্য হিসেবে পাঠালেন, তারা এই স্বাধীন জীবনযাপনে সন্তুষ্ট থাকতে পারলো না। তাদের চোখে আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী জীবনযাপনের চেয়ে ফেরাউনের শরীয়ত অনুযায়ী জীবনযাপনই বেশী আকর্ষণীয় ছিল। তারা স্বাধীনতাকে ছেড়ে গোলামির জীবনযাপনের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়ে পড়লো।

"আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী।" [সুরা বাকারাঃ ৬১]
And (remember) when you said: “O Moses! We cannot endure one kind of food. So invoke your Lord for us to bring forth for us of what the earth grows, of its herbs and its cucumbers and its garlic, its lentils and its onions”. He said: “Will you exchange that which is better (higher) for that which is worse (lower)”? Go down to the settled country (Egypt) and you shall find what you want (ask for). And abasement and humiliation were brought down (branded) upon them, and they incurred the Wrath of Allah, because they disbelieved in the Signs (Verses) of Allah and killed the Prophets wrongfully; this was so because they disobeyed and exceeded the limits.



বর্তমান ইউরোপীয় ছাঁচের আধুনিক সভ্যতায় মুসলমানরাও স্বাধীন জীবনযাপন ত্যাগ করে গোলামির জীবনযাপনের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হচ্ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে ভালো চাকর হয়ে সম্মানজনক চাকরির আশায়। ৯টা থেকে ৫টার কর্পোরেট জীবন মুসলিমদের চিন্তাশক্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাকে টাকার পূজারি বানিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে ইসলামী শিক্ষার নামে আরেক শিক্ষা সিস্টেম থেকে দু'কলম আরবী শিখে ধর্মব্যবসায়তে নিজেদেরকে সঁপে দিচ্ছে। যাচ্ছে তাই ফতোয়া দিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে, নামায পড়িয়ে, দোয়া ফুঁকে, জানাযা পড়িয়ে বিনিময়ে নিয়ে পকেট পুরছে। বিশ্বে কী ঘটছে, কেন ঘটছে তা বোঝার আগ্রহ এই জাতি হারিয়ে ফেলেছে। দিনরাত টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে, ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে, প্রতিযোগিতা করতে করতে এরা মহাশয়তান ইবলিশ দ্বারা ব্রেইনওয়াশড হয়ে গেছে। তাদের কাছে প্রচলিত শয়তানী সিস্টেমের জীবনই গৌরবের জীবন। যদি এখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা যা করছ তা গোলামী, তবে তারা এটাকে কৌতুক ভেবে হাসবে। কারণ তারা গোলামির জীবনকেই সম্মানজনক ক্যারিয়ার ভাবছে। এটাই তাদের কাছে এখন স্মার্টনেস।



আমরা যদি বর্তমান আধুনিক সভ্যতার দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, পৃথিবীর সব দেশে ইউরোপীয় শরীয়ত চলছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-আদালত, সংস্কৃতি সব কিছুতেই ইউরোপীয়দের শরীয়ত, যার হুবহু কপিপেস্ট করা হয়েছে ফেরাউনের শরীয়ত থেকে। মুসলিম দেশগুলোতেও একই হাল। এই ফেরাউনের শরীয়তকে সভ্যতা ভেবে মুসলমানরা একে আঁকড়ে ধরেছে। রাসুলাল্লাহ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এমন সময় আসবে যখন মুসলমানরা অন্য জাতির অনুসরণ করতে করতে এ পর্যন্ত যাবে যে, ঐ জাতি যদি গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করে তাহলে আমার জাতিও তাই করবে। ওই জাতি যদি মায়ের সাথে ব্যাভিচার করে আমার জাতিও তাই করবে। আজ তাই করা হচ্ছে। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে আজ এই জাতির বাঁচা-মরার প্রশ্ন, অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের প্রশ্ন উপস্থিত হয়েছে। তবুও এই জাতির বিবেকবোধ উদয়ের নামগন্ধ নেই।
এরা ইউরোপীয় সুদী অর্থনীতিকে হালাল বানিয়ে নিয়েছে। সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খাওয়ার জন্য সুদী ব্যাংকের ইসলামী ভার্সন আবিষ্কার করে ফেলেছে। ঠিক যেমন বনী ইজরায়েলের আলেম উলেমারা তাদের কিতাবের বাক্য বদলিয়ে সুদী সিস্টেম বসিয়ে নিয়েছিলো। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। আল্লাহ্‌র হুকুম অমান্য করায় অতীতের বনী ইজরায়েলের মতই আজ দুনিয়াব্যাপী মুসলিম নামধারী জাতিটির উপর লানত নাযিল হয়েছে। বনী ইজরায়েলের মত তারাও আজ মালাউন জাতিতে পরিণত হয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, মিশর, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, মায়ানমার, ভারত, বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় এই জাতি মার খাচ্ছে, তাদের ঘর-বাড়ি, মসজিদ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, অনাহারে অর্ধাহারে রাখা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, পানিতে ডুবিয়ে মারা হচ্ছে। বনী ইজরায়েলের সাথে যা যা হয়েছিলো এ যেনো ঠিক সে ইতিহাসেরই সুস্পষ্ট পুনরাবৃত্তি!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৮ ভোর ৫:৫৭

ইমরান আশফাক বলেছেন: যতার্থই বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.