নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অামি অতি সাধারণ, সাধারণ থাকতে চাই ।

পার্থ তালুকদার

আমি ভাই সাধারণ, সাধারণ থাকতে চাই।

পার্থ তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিকড়ের টানে গাই ধামাইল গান (২য় র্পব)

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:১২



ধামাইল গান নিয়ে আমার লেখা গতপর্বে প্রার্থনা, বাঁশী ও বিচ্ছেদ পর্বগুলো বিশেষভাবে স্থান পেলেও গৌররূপ, জলভরা,কোকিল সংবাদ, কুঞ্জসাজানি, মানভঞ্জন, মিলন, সাক্ষত খেদ এই বিষয়গুলোকে যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে পারিনি।ঋতুরাজ বসন্ত যেমন কোকিলের কুহুকুহু, সবুজের সমারোহ, গাঁদা ফুলের উজ্জলতা ছাড়া পূর্নতা পায় না, ঠিক তেমনি উল্লেখিত বিষয়/পর্বগুলো ছাড়া ধামাইল আসরের অপূর্ণতা থেকেই যাবে।তাই “শিখড়ের টানে গাই ধামাইল গান” প্রবন্ধে আরো কিছু বিষয় সংযোজন করার লোভ কিছুতেই সামলাতে পারছিনা।সত্যি বলতে কি, ধামাইল গানের এই ব্যাপক পরিসরের মধ্যে আমার লিখা এই কয়টি লাইন সমুদ্রের বিশালতা থেকে তোলা একফোঁটা পানির সমান।

ধামাইল গানের ‘প্রার্থনা’ পর্বে লেখকদের যেমন গুরুর প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা গভীর ভাবে লক্ষণীয় ঠিক তেমনি ‘গৌররূপ’ পর্বে গৌর বা কৃষ্ণের রুপের বর্ণনায় গীতিকারগণ নিপুন কারিগরের মত শব্দের সর্বোত্তম ব্যবহার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণের শ্যামল বর্ণ, বাঁকা চোখের চাহনি, মাথার চূঁড়া, মুখের হাসি,হাতের বাঁশী ইত্যাদি অনুষঙ্গ অতিচমৎকার ভাবে গানগুলোতে স্থান পেয়েছে। গৌররূপ দেখে শ্রী রাধিকার পাগল প্রায় অবস্থা। কুল-কিনারাহীন এই রূপসাগরে ডুব দিয়ে রাধার প্রাণবায়ু বের হওয়ার উপক্রম। শ্রী প্রতাপ রঞ্জন লিখেছেন- কেনরে নয়ন গৌররূপটি দেখালে/মন লোভা রূপ দেখাইয়া পাগল বানালে। শ্রীরাধিকার কাছে তাঁর শ্যাম কালিয়ার রূপের চমক এমন যে,এই মোহনীয় রূপ তাঁর- দেহ থইয়া প্রাণটি লইয়া যায়। আশীষ দেব তার কল্পনায় শ্রীকৃষ্ণকে সাজিয়েছেন এভাবে- ও তার মাথায় মোহন চূড়া,কর্ণেতে কুণ্ডল/এগো চরণে নূপুর শোভে, দেখতে কি সুন্দর। তবে কাশীনাথ তালুকদার গৌররূপ বর্ণনায় চমৎকার সব শব্দ প্রয়োগ করেছেন। প্রতিটি গানেই নিখুত শব্দের ব্যবহার করে তিনি তাঁর মেধার প্রমান দিয়েছেন। তিনি গৌররূপ বর্ণনায় লিখেছেন- চন্দ্র বিনিন্দিত, হেম কান্তি শোভিত,আঁখি কোনে প্রেমেরি তরঙ্গ/অধর সুরঙ্গ,ঢল ঢল গৌর অঙ্গ, লাজে পীড়িত অনঙ্গ। সুনামগঞ্জের এই সুন্তান নিভৃত পল্লীতে বসে শ’দুয়েক ধামাইলগান সহ বাংলাদেশে প্রথম শ্রীমদ্ভাগবত-এর বাংলায় কাব্যানুবাদ করেছেন। জীবনের সব প্রতিকুল পরিস্থিতি- তার মেধা, প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও শৃঙ্খলিত জীবনের কাছে বারবার পরাজিত হয়েছে।তবে এটা সত্য যে, ধামাইল গানের প্রসঙ্গ আসলেই রাধারমনের নাম সর্বাগ্রে আসীন হবে। ছোট বেলায় কোন ধামাইল গান গুনগুনিয়ে গাওয়ার সময় প্রতিটি গানেই ‘ভাইবে রাধারমন বলে’ জুড়ে দিতাম। তখন মনেহত এই শব্দ তিনটি সব গানেরই শেষের অংশ অথবা তা জুড়ে দেওয়াই অমোঘ নিয়ম। যদিও শ্রীরাধারমনের সমসাময়িক বা তাঁর সাথে তুলনা করার মতো কোন ধামাইল গানের লেখকের পরিচিতি পাওয়া যায়নি তবে একথা মানতেই হবে রাধারমন পরবর্তী সময়ে অনেক লেখক ধামাইল সংগীতে অনেক গান সংযুক্ত করে ধামাইল গানের সম্বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে- দীন শরত,শাহ আব্দুল করিম, প্রবীর দেবনাথ, ভরতচন্দ্র সরকার,আব্দুর রহমান,কাশীনাথ তালুকদার,মধুসূদন দাস, সন্ধ্যারানী চন্দ,সুশীল চন্দ্র দাস, প্রতাপ রঞ্জন তালুকদার, শিখা রানী দাস এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

এবার ধামাইল সংগীতের ‘কোকিল সংবাদ’ পর্বের দিকে একটু চোখ বোলাই। কোকিল সংবাদ আবার ভ্রমর সংবাদ নামেও পরিচিত। শ্রী রাধিকার মনের বিরহ জ্বালা কালো কোকিলের কাছে ভাগাভাগি করা অথবা শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পাওয়ার জন্য কোকিলের কাছে অনুনয়-বিনয়-আকুতি-মিনতি এই পর্বের গানগুলোর পরতে পরতে লেগে আছে। রাধারমনের সেই বিখ্যাত ‘ভ্রমর কইও গিয়া,শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদে রাধার অঙ্গ যায় জ্বলিয়া’ গানটিতে রাধার মনের বিরহ জ্বালার চিত্র প্রকটভাবে ফুঁটে উঠেছে।

‘কোকিল সংবাদ’ পর্বে চমৎকার একটি গান লিখেছেন আব্দুর রহমান। গানটিতে শ্রীরাধিকা কোকিলাকে একাকী পেয়ে তার মনের কথা বলেছেন এভাবে- একা একা ডাকো রে কোকিল,বসে তমাল ডালে/ তোর মত মুই সাথীহারা,পুড়ি প্রেমানলে। বন্ধুহীনা পিপাসিত চিত্তে যে বিষম জ্বালা তা শ্রীকৃষ্ণকে অবগত করার জন্য কোকিলের কাছে শ্রীরাধিকা বার বার ধরনা দিয়েছেন। আর তা লেখনীর মাধ্যমে নিখুতভাবে চিত্রায়িত করেছেন সঞ্জয়নাথ সঞ্জু। তিনি লিখেছেন- কোকিল কইও গো কইও গো বন্ধেরে/ তার লাগিয়া বিষম জ্বালা, আমার অন্তরে।

শুধু ধামাইল গানের জন্য অনেক লেখক জীবনের বৈষয়িক সব লোভ লালসার উর্দ্ধে থেকে নিজের মনপ্রাণ ধামাইল গানেই সপে দিয়েছেন। জীবনে বিত্তশালী হওয়ার চিন্তাভাবনা একপাশে ঠেলে দিয়ে ঝঞ্জাটপূর্ণ অনিশ্চিত জীবন বেচে নিয়েছেন শুধু ধামাইল গানের টানে। ধামাইল গান বললেই যেখানে রাধারমনের নাম চলে আসে ঠিক তেমনি রাধারমনের পরবর্তী সময়ে সর্বাধিক কৃতিত্ব দেখিয়েছেন শ্রী প্রতাপ রঞ্জন তালুকদার। সুখত্যাগী সুনামগঞ্জের এই সুলেখক তার এক সাক্ষতকারে বলেছেন-‘যারা সৃষ্টিশীল বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে, তাদের বৈষয়িক বিষয় নিয়ে ভাবলে চলবে না। যে কোন একটা তো অবশ্যই পরিহার করতে হবে’। তিনি ঠিকই গানের টানে বৈষয়িক সব চিন্তা ভাবনা পরিহার করেছিলেন।তাঁর লিখা প্রতিটি গানেই সুখ-দুঃখ,আনন্দ-বেদনা,মিলন-বিরহ, হাসি-কান্না ইত্যাদি মূর্ত হয়ে উঠেছে। তিনি ধামাইল গানের ‘স্বপন’ পর্বে অনেকগুলো গান রচনা করেছেন।তাঁর একটি গানে দেখা যায়- শ্রী কৃষ্ণ দেশান্তরী। রাধার মনে তাই বিচ্ছেদের জ্বালা। এই বিষম জ্বালা যখন রাধার হৃদয় থেকে মুছে ফেলা কষ্টকর ঠিক তখনই শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে স্বপনে দেখা দিয়ে কষ্টের তীব্রতা দ্বিগুন করে দিয়েছেন। আমাদের মানব জীবনেও একই রকম স্বপ্নের প্রভাব রয়েছে। মানুষের হারিয়ে যাওয়া অনেক কষ্ট বা সুখের স্মৃতি স্বপ্নের মাধ্যমে মনে জাগ্রত হয়ে উঠে। প্রতাপ রঞ্জন তাঁর গানে লিখেছেন- আগে ভাল ছিল মন,চঞ্চল হইল প্রাণ দেখিয়া স্বপন। প্রতাপ রঞ্জন যেখানে স্বপনে বন্ধুকে পেয়ে কষ্টের কথা বলেছেন, তার ঠিক বিপরীত ভাবে একটি গান লিখেছেন মৌলভীবাজারের হরিপদ চন্দ। বহুদিন পর বন্ধুকে অন্তত স্বপনে পেয়েও শ্রীরাধিকার মনের উচ্ছলতার চিত্র তাঁর গানে চমৎকার ভাবে স্থান পেয়েছে। তিনি লিখেছেন- বহুদিন পরে,পেয়ে বন্ধুরে/দূরে গেল জ্বালা/দু’হাতে তুলে,দিয়েছি গলে/গাঁথিয়া রাখা মালা।

এভাবে বাংলার পথে-প্রান্তরে, মাঠে-ঘাটে যেভাবে ধামাইল গান একাকার হয়ে মিশে আছে, ঠিক সেভাবে কিন্তু ধামাইল গান লেখকদের সমাজে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমাদের প্রিয় এই ধামাইল গান বিশেষ ভাবে সংরক্ষন, সঠিক বিশ্লেষণ ও সুপ্রচার অতি প্রয়োজন।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.