নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অামি অতি সাধারণ, সাধারণ থাকতে চাই ।

পার্থ তালুকদার

আমি ভাই সাধারণ, সাধারণ থাকতে চাই।

পার্থ তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সেলাই

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৬



চৌরাস্তার মোড়ে তীব্র রোদে একটা অর্ধছেড়া ধূসর ছাতার নিচে দেয়াল ঘেঁসে বসতেন তিনি। চোখে কালো গোলগোল মোটা ফ্রেমের অস্পষ্ট চশমা। কোন সুস্থ মানুষকে এই চশমাটা পড়িয়ে দিলে সে নিজেকে অন্ধ ভাবতে শুরু করবে কিন্তু তিনি একুশ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন এই চশমাটা নিয়েই। অবশ্য এতে তার মনে বিন্দুমাত্র ক্লেশ জমা হয়নি। অথবা জমা হলেও খানিক পরে অবশিষ্ট থাকেনি।
কোন পথচারী যখন ছেড়া-ময়লা জুতাজোড়া তার কাছে নিয়ে আসতো প্রথমেই তার কাজ ছিল ধারালো দাঁতের সমান্তরাল আকৃতির ব্রাশ দিয়ে জুতাদুটি পরিষ্কার করা। তখন হাতদুটিতে ময়লার একটা আবরণ স্পষ্টতই খেলা করতো । তারপরই জুতার নির্দিষ্ট ছেড়া স্থানে পাইপাই করে সেলাই দিতেন তিনি। আমি প্রায়শই তার পাশে বসে হাতের কারসাজি লক্ষ্য করতাম। কতটা নিখুত আর যত্ন নিয়ে কাজ করতেন তিনি !

একদিন বললাম- আচ্ছা বাবা, তুমি যে জুতা সেলাই করো, তোমার ঘেন্না লাগেনা ?
- না রে মা। আমার এতো ঘেন্না নেই।
- আচ্ছা বাবা, তুমি সুন্দর একটা ফলের দোকান দিতে পারো না। ঐ যে দেখো গোপাল কাকা কী সুন্দর একটা ফলের দোকান দিয়ে বসছেন !
- না রে মা। এই কাজ আমাকে দ্বারা হবে না। জুতা সেলাই হচ্ছে আমাদের জাত ব্যবসা। আমার বাপ-দাদারা তো তাই করেছেন। এখন আমি ক্যামনে ছাড়ি বল।

বাবার সাথে আমার তর্কে যাওয়ার সাহস কখনো হয়নি। তবে এটা যে বাবার মনের কথা নয়, তা তখন বুঝিনি। বুঝেছি আরো ক'বছর পর।

একদিন সন্ধার পরপরই বাবা বাড়িতে ফিরলেন। কারো সাথে কথা না বলে চুপচাপ ঘরের কোণায় রাখা জলচকিতে বসে আছেন তিনি। মা রান্নাঘর থেকে কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বাবার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমিও গুটিগুটি পায়ে মায়ের পাশে গিয়ে শাড়ির আচল ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। হঠাৎ বাবা কাউকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।
পরে জানা গেল আজ কোনো জুতা সেলাই করা হয়নি তার। তাই বাবা শূণ্য হাতেই বাড়ি ফিরেছেন। বাবার সেই মলিন চেহারার ভাষা তখনও আমার বুঝে উঠার বয়স হয়নি। তার অপারগতার হেতু হিসেব করার ইচ্ছে বা সামর্থ্য আমার কোনটাই ছিল না। তখন মা সব সামলে নিয়েছেন। তবে আমার কাছে তখন বাবাকে কাছে পাওয়ার আনন্দটাই ছিল সবার উর্দ্ধে।

ম্যাডাম....

পিএস এর ডাক শুনে ঘাড় ফিরে তাকালেন ডাঃ কিন্নরী। চোখদুটি ঝাঁপসা হয়ে আসছে তাঁর। জানালার দিকে তাকিয়ে দেখলেন বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। রুমের এসি'র কল্যাণে শরীরের লোমকুপে বরফ জমেছে যেন। সেই ছোটবেলা থেকে গতকাল অবধি বাবার টুকরোটুকরো স্মৃতিগুলো আগে কখনো এভাবে ভর করেনি। তবে আজ আঁকড়ে ধরছে বারবার।

-ম্যাডাম, আজ রাতের ফ্লাইটের সবকিছু ঠিকটাক করা হয়েছে। কাল সকালে আপনি শ্রীলংকা যাচ্ছেন। দুপুর ঠিক তিনটায় আপনাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকতে হবে।
- আমি কি পরের দিন ব্যাক করবো ?
- না ম্যাডাম। পরের দিন আপনি সুইজারল্যান্ড যাবেন। সেখানের একটি হাসপাতাল অলরেডি আপনার শিডিউল নিয়ে রেখেছে। সেখানে আপনি আরেকটা অপারেশনে অংশগ্রহণ করবেন।
ডাঃ কিন্নরী বাইরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসেন। তাঁর বাবা আজীবন মানুষের জুতা সেলাই করেছেন। কিন্তু সময়ের পালাবদলে এখন তিনি মাথায় অস্ত্রপ্রয়োগ করেন, পাইপাই করে সেলাই করেন। দুটোই সেলাই। একটা জীবন রক্ষা করে অন্যটা ফ্যাশন রক্ষা করে।

তারপরের দিন যাবেন.....

থামেন মি. রাইসুল !
চিৎকার দিয়ে উঠলেন ডাঃ কিন্নরী।

আপনি এই মুহূর্তে সবকটি ফ্লাইট বাতিল করে দেন। যে অসুস্থ বাবার অপারেশন করানোর সামর্থ্য ছিল না আমার, যে মায়ের মৃত্যুশয্যায় আমি পাশে ছিলাম না, তাদের মেয়ে আজ বিখ্যাত সার্জন। এটা মানতে পারছি না মি. রাইসুল। আপনি সব ফ্লাইট বাতিল করে দেন, সব ফ্লাইট।
ডাঃ কিন্নরী একটু পরপর প্রলাপ বকছেন। মি. রাইসুল কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তার পাশে। তার ম্যাডামের এমন আচরণ এর আগে কখনো দেখেননি তিনি। কোনো হিসেব মিলছে না তার। অবশ্য তিনি জানেন, জীবনের হিসেব কখনো গড়মিল হবেনা- এমন গ্যারান্টিও নেই !!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৮

সুমন কর বলেছেন: ভালো লাগা রইলো। প্লাস।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪

পার্থ তালুকদার বলেছেন: শুভকামনা ।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:১৫

ফয়সাল রকি বলেছেন: ভাল লাগলো।
থিমটা ভালো।
প্লাস।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৫

পার্থ তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.