নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘোরলাগা সন্ধ্যায় পাতিকাকের কা-কা ডাক বন্ধ হলে গ্রামের মধ্যে অদ্ভুত এক নির্জনতা নেমে আসে। চারপাশটা কেমন জানি হাহাকার করে । বিদ্যুৎবিহীন গ্রামে তখন একটা ভূতুরে পরিবেশ হানা দেয় ।সারাদিনের ক্লান্তি শেষে পরিশ্রান্ত কর্মঠ মানুষ কপাটজোড়া বন্ধ করে রাত পোহাবার আশায় বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
করুণাবালা রাতের কাজকর্ম সেরে জড়ো হয়ে বসে থাকা সংসারের অন্য সদস্যদের ঠিক পেছনের পিড়িতে গুটিমেরে বসে পড়েন। সবাই করুণাবালার জন্যই এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।সংসারের সবচেয়ে ছোট সদস্য কল্লোল করুণাবালার উপস্থিতি টের পেয়ে সংসারের সবচেয়ে প্রবীন সদস্য মনোরঞ্জন মোহনকে উদ্দেশ্য করে বলে- দাদু, দাদু, মা আইয়া পড়ছেন। এখন কি ক্যাসেটটা চালামু ?
- হুম, চালাও দাদু ।
সংসারের একমাত্র উপর্জনকারী ব্যক্তি করুণাবালার স্বামী গোপীকান্ত বিদেশে থাকেন। তাদের বিয়ের প্রায় চার বছর গত হলো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দাম্পত্যজীবনের হিসেবনিকেশ বুঝে উঠার আগেই মাত্র দু’মাসের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান গোপীকান্ত । সেই থেকে নিরক্ষর গোপীকান্ত তিনমাসে একবার অডিও ক্যাসেটে মনের জমানো কথা রেকর্ড করে বাড়িতে পাঠান।বাড়ি থেকে ফিরতি ক্যাসেটে তাদের কথা বিনিময় হয়। আজ গোপীকান্তের পাঠানো ক্যাসেট শোনার জন্য বাড়ির সবাই জড়ো হয়েছেন।
কল্লোল ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করে।
যখন গোপীকান্তের কথা ভেসে উঠে তখন সবাই আরো মনোযোগী হয়।সবার নজর ক্যাসেট প্লেয়ারের দিকে। যেন টিভি দেখছে সবাই।
-মা, কেমন আছো তুমি ? গোপীকান্ত কাঁপা কাঁপা গলায় মায়ের উদ্দেশ্যে বলে।
মা অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠেন- আমি ভাল আছি বাবা, তুই কেমন আছিস ?
দুষ্টু কল্লোল অট্টহাসি দিয়ে উঠে।সে ঠাকুরমাকে বলে, ঠাম্মা, তুমি যে বাবার কথার উত্তর দিচ্ছো বাবা কি তা শুনতে পাচ্ছে ?
ঠাকুরমা লজ্জায় শাড়ির আঁচলে মুখ লুকান।কল্লোলের কথা শুনে অন্যরা হাসাহাসি করে।
-আচ্ছা মা, পাশের বাড়ির মুতালেব চাচা কেমন আছেন? আমাদের লাল রঙের গাভীটার না ক্ষুরারোগ ছিল, সেটা কি কমেছে ? আমি নিজের হাতে নারকেল চারা লাগিয়ে এসেছিলে, সেটা এখন কত বড় হয়েছে মা ?
কথার শেষ নেই। গ্রামের এই মহিলা কি করে ? বাজারে কয়টা নতুন দোকান বসেছে ? ইত্যাদি, ইত্যাদি।
গোপীকান্ত এবার বাবার উদ্দেশ্যে বলেন- বাবা, তোমার শরীরটা কেমন আছে ? ঠিকমতো ওষুধ খাও তো ?
চাঁদর গায়ে বসে থাকা মনোরঞ্জন হুক্কা টানছিলেন।ছেলের কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন। এবার ক্যাসেটের দিকে পূর্ণ মনযোগ দিলেন । বিড়বিড় করে বলেন- আমার আর ভাল থাকা। এখন পর্যন্ত তোকে বিদেশ পাঠানোর ঋণটা শোধ করতে পারিনি।শোভার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব আসছিল তাও টাকার জন্য দিতে পারিনি।
বৃদ্ধ বাবার দীর্ঘশ্বাসে পুরো ঘরের পরিবেশটা ভারী হয়ে উঠে।ক্যাসেট পাওয়ার আনন্দে কেউ যেন কষ্টের একটা প্রলেপ এঁটে দিয়েছে।
এবার কল্লোলকে উদ্দেশ্য করে তার বাবা বলেন- বাপ তুই কেমন আছিস ? লেখাপড়া ঠিকমতো করিস তো ।
-হ্যাঁ বাবা, আমি ঠিকমতো লেখাপড়া করি।তুমি বাড়িতে কবে আসবা ? আসার সময় আমার জন্য একটা এরোপ্লেন আনিও।
কল্লোলের কথা শুনে তার ঠাকুরমা হা-হা করে হেঁসে উঠেন। কীরে দাদু, তুই তোর বাপরে কি জানি আনতে কইলে, তোর বাপ কি তোর কথা শুনতে পাইছে ?
ঠাম্মার কথা শুনে কল্লোল লজ্জা পায়।তার মায়ের কুলে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে।
করুণাবালা এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন। তাকে উদ্দেশ্য করে হয়তো গোপীকান্ত কিছু বলবে।
-বউ, অনেকদিন হলো দেখিনা। দেখতে খুব মন চায়। তোমার কথা মনে হলে রাতের ঘুম ভেঙে যায়। তোমাকে খুব ভালবাসি করুণা। অথচ দেখো ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস ! ভগবান বিয়ে পর আমাকে সংসার করার সময়টা দেয়নি।
গোপীকান্ত একটু থেমে বলেন-তোমাকে একটা চুমু দেই… একটা চুমু।
চেঁচিয়ে উঠলেন মনোরঞ্জন মোহন।
শুয়রের বাচ্চা ! কুত্তার বাচ্চা ! লইজ্জা-শরম নাই। মুখ দিয়া যা আসে তাই কয়। বন্ধ কর, বন্ধ কর ক্যাসেট !!!
লজ্জায় অপমানে অনুরাগে করুনাবালা বিছানায় গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।বালিশ জড়িয়ে ধরে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদতে থাকেন।স্বামীকে কাছে না পাওয়ার বেদনা, মনের কথা না বলার বেদনা, সব কিছু যেন চোখের জলে গড়িয়ে পড়ছে।
আজ অবদি বাবার মুখ না দেখা কল্লোল মায়ের এই দশা দেখে নির্লিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।জানালায় চোখ রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে এরোপ্লেন খুঁজে সে। কারণ তার মা একদিন বলেছিলেন- দেখিস বাবা, তোর বাবা একদিন এরোপ্লেনে চড়ে বাড়ি আসবে। সাথে নিয়ে আসবে তোর জন্য ছোট্ট একটা এরোপ্লেন !
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৩
পার্থ তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ মাইদুল ভাই।
মোবাইল আসার আগে ক্যাসেটের বেশ প্রচলন ছিল। এখন অবশ্য নেই।
ভাল থাকবেন।
২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:০৮
শায়মা বলেছেন: বেচারা করুণাবালা!
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৪
পার্থ তালুকদার বলেছেন: স্বামীর জন্য অপেক্ষা। :-(
৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১৪
জেন রসি বলেছেন: আশা। অপেক্ষা। এবং যাপিত জীবন।
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৫
পার্থ তালুকদার বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য !
৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২১
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: অপেক্ষা কতটা যাতনাময় তার আমি। অপেক্ষার আগুনে প্রেম খাঁটি হয় তাও মানি। আমি শুধু এতটুকু বলবো অপেক্ষার অবসান হোক।
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৮
পার্থ তালুকদার বলেছেন: কতশত নারী প্রবাসী স্বামীর অপেক্ষায় এভাবে জীবন কাটাচ্ছে । কত কষ্টের শুধু তারাই বুঝে।
ধন্যবাদ সেলিম ভাই।
৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: বহু বছর আগে আমি নিজেই কথা ক্যাসেটে রেকর্ড করে বিদেশে পাঠাতাম।
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৯
পার্থ তালুকদার বলেছেন: আপনি তাহলে ক্যাসেটের জীবন্ত সাক্ষী । হা হা.
ভাল থাকবেন নুর ভাই ।
৬| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১০
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আহা রে জীবন !!!
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫০
পার্থ তালুকদার বলেছেন: কঠিন জীবন !
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
৭| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২১
জাহিদ অনিক বলেছেন:
বেশ ! ভালো লাগলো পার্থ দা
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫২
পার্থ তালুকদার বলেছেন: ধন্যবাদ অনিক ভাই।
৮| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪১
সুমন কর বলেছেন: হুম, শুনেছিলাম আগে এমন হতো। গল্প ভালো হয়েছে।
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১১
পার্থ তালুকদার বলেছেন: হুম দাদা, আগে এমন হতো ।
ধন্যবাদ।
৯| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৮
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: গল্প হিসেবে ঠিক আছে। তবে তখন ক্যাসেটে কেউ বউকে চুমু দিত না...
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:১৩
পার্থ তালুকদার বলেছেন: বাস্তবে এমন একটা ঘটনার কথা শুনেছি। :-)
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩০
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: এরকম সত্যি ঘটনা আমাদের এদিকেও হয়েছে।
তাও অনেক আগে। ক্যাসেটে করে ছেলের কথা শুনতে পুরো পরিবার।
ধন্যবাদ সেই সময় ধারন করার জন্য।