নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার নিরক্ষর কিন্তু বুদ্ধিমতী মায়ের কাছ থেকে এই শিক্ষাই পেয়েছিলাম,যথাযথ কর্তব্য পালন করেই উপযুক্ত অধিকার আদায় করা সম্ভব। - মহাত্মা গান্ধী

পদাতিক চৌধুরি

হাই,আমি পদাতিক চৌধুরী।পথেঘাটে ঘুরে বেড়াই।আগডুম বাগডুম লিখি। এমনই আগডুম বাগডুমের পরিচয় পেতে হলে আমার ব্লগে আপনাদেরকে স্বাগত।

পদাতিক চৌধুরি › বিস্তারিত পোস্টঃ

উনবিংশ শতকের ত্রিশ/চল্লিশের দশকে টাকি বসিরহাটের মধ্যবর্তী গ্রামগুলির সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনের একটি চিত্র।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৬

স্ত্রী বিয়োগের পর তৌফিক সাহেব আবার বিবাহের মনস্থির করলেন।তৌফিক সাহেবের বিষয় আশায় যথেষ্ট।গ্রামে দু দুটি পুকুর,জমি,বাড়ি,গরু ভর্ত্তি গোয়াল,বাড়ির উঠোন ও রাস্তার ধারে পাঁচ পাঁচটি ধানের গোলা। সব মিলিয়ে সম্পন্ন কৃষক বলা যায়।আর আপনজন বলতে পাশের গ্রামে বসবাসকারী ছোট ভাই সৌফিক ও নিজ পুত্র মুকুল।মুকুলের বয়স তখন যথেষ্ট আঠার বছরের তাজা যুবক।তারও পকেটে যথষ্ট পয়সা ও চোখে রঙিন স্বপ্ন দেখে।৪০বছর বয়সে মায়ের অকাল মৃত্যুতে তাই তার মত তার আব্বাও প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে আবার নুতন করে সংসার শুরু করতে বিবাহের সিদ্ধান্ত নিলেন।মুকুল স্বপ্ন দেখে যে তার আব্বা তাকে বিবাহ দিতে সম্মন্ধ দেখছে।মুকুল কখনও তার আব্বা মায়ের মুখের উপর কথা বলত না।তবে সে চলতো সম্পূর্ণ নিজের খেয়ালে।শুধু মুখের উপর কথা না বলাকে যদি সমিহ বলা যায় তাহলে আব্বার প্রতি এহেন খবরে সম্মানটা তখন থেকে অনেকটা বেড়ে গেল।গাঁয়ের কোন একজন দুষ্টু বন্ধু মজা করতেই বোধহয় খবরটা তার কাছে এরুপ ভাবে পরিবেশন করেছিল।যাইহোক এর পর থেকে অনেকটা সময় সে বাড়িতে দেয়।###### এদিকে তোফিক সাহেবও মায়ের মৃত্যুর পর ছেলের এই আকস্মিক পরিবর্তনে অবাক।এটা ঠিক যে ছেলেকে এক সময় পড়ানোর ইচ্ছা থাকলেও স্রেফ স্কুলের অভাবে তাকে ভর্ত্তি করতে পারেননি।এক প্রকার নিষ্কর্মা ছেলে সারাদিন এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াত।বাড়িতে বাবা মা এত পরিশ্রম করলেও সে ফিরেও তাকাত না।মা সারাদিন গোয়াল ঘর পরিষ্কার,উঠোন ঝারু দেওয়া,গরুর দুধ দোওয়া,ধান সিদ্ধ, রান্নাবাড়া সামলিয়ে বিকাল গড়িয়ে না গেলে নাওয়া-খাওয়া করতে পাটতেন না।তৌফিক সাহেব সারাদিন প্রায় মাঠে হাটেই কাটাতেন।প্রায়শই দুপুরে বড় বড় ঝুড়িতে বেগুন, পটল, ঢ্যাঁরস,পেঁপে পুই নিয়ে বাড়িতে ফিরতেন, বিকালে হাটে তুলবেন বলে।বাবা মায়ের প্রতি মুকুলের উদাসীনতা প্রসংগে তাকে একা দোষ দেওয়া যায় না।একমাত্র সন্তানকে আদরে রাখতে বাবা মা ছোট থেকে তাকে কোন কাজে বলতেন না।কিন্তু ক্রমশ সে যখন বড় হতে লাগলো,তখন তার বাবামায়ের প্রতি উদাসীনতা আরও বেড়ে গেল।তৈরী হল বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা। মা একটু বেশিই হতাশা প্রকাশ করতেন। তাকে নিয়ে প্রায়শই মা দুঃখ করে বলতেন আজ আমাদের কষ্ট দেখছিস না।যেদিন আমরা থাকবো না, সে দিন দেখবি পৃথিবীতে আপনজন বলতে আর কেউ নেই।মৃদুভাষী আব্বা অবশ্য ছেলের এহেন আচরন নিয়ে উপর ওয়ালার কাছে কপাল ঠেকাতেন।নামাজের পাটিতে বসে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতেন যাতে তার সুবুদ্ধির উদয় হয়।

শাকচুড়া হাটে একদিন এক সাইকেল আরোহীকে দেখে আব্বার কাছে সে একটি সাইকেল কেনার বায়না ধরলো।আজ যাই কাল যাই করে একদিন সময়মত তৌফিক সাহেব গরুর গাড়ি করে হাসনাবাদে গিয়ে তার জন্য একটি সাইকেল নিয়ে এলেন।যদিও সাইকেলটি দেওয়া নিয়ে মায়ের একটু আপত্তি ছিল।যাইহোক এটি পাওয়ার পর মুকুলের ব্যস্ততা অনেক বেড়ে গেল।সারাদিন সে কোথায় যায় বা থাকে কি খায় কেউ কিছু জানতে পারে না।যেটুকু সময় বাড়িতে থাকে মুখ বুজে থাকে।কিছুক্ষনের জন্য বাড়িতে এলে বা দ্রুত বাড়ি ছাড়ে।ফেরে সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে।নুতন সাইকেল পেয়ে তার মনের অবস্থাও বদলে গেছে। এটি নিয়ে প্রায়শই একজন বন্ধু সঙ্গে নিয়ে সে গা্ঁছারাটি জামালপুরের দিকে ঘুরতে যায়।তার সাইকেলের সওয়ারি হওয়াটা বন্ধুদের কাছে খুব আকর্ষনীয় ছিল।কত লোক তার নুতন সাইকেলটির দিকে তাকিয়ে থাকতো।আর এজন্য সে মনে মনে তার আব্বাকে ধন্যবাদ দিত।সাইকেলটি তার পরিচিতি অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। আশেপাশে পা্ঁচ সাততি গ্রামে তার মত সাইকেল কারও নেই।গ্রামের মেয়েদের মধ্যেও তাকে নিয়ে ফিসফিশানি কম হয় না।কিন্তু সে তার আব্বা মাকে প্রচন্ড ভয় পায়।কারও সম্গে কথা বলার মত সাহসে সে পেরে ওঠে না।তাকে অনেকে সাইকেল বলে ডাকে।সে ডাকে অবশ্য সে বেশ খুশিই হয়।

শাকচুড়া হাটের উপর দিয়ে কিছুটা গেলেই কোদালিয়া গ্রাম।এই গ্রামেই চৌদ্দ পুরুষের বাস তৌফিক সাহেবের।চারিদিকে সবুজে ঘেরা গ্রামটি অত্যন্ত সুন্দর।এখান থেকে বেশ কিছুটা গেলে ছোলাদানা গ্রাম।পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। পার্শ্ববর্তি অন্যান্য কয়েকটি গ্রাম হল উত্তর দিকে বাগুন্ডি,দন্ডিরহাট,মধ্যমপুর আর দক্ষিন আছে কাটারাটি, জালালপুর,গাছারাটি প্রভৃতি।আরও একটু দক্ষিনে গেলে টাকি সোদপুরের ঐতিহ্যশালী টাকি জমিদারবাড়ি।ছোলাদানাগ্রামটির ভৌগোলিক অবস্থা অত্যন্ত মনোরম।একদিকে পাশাপাশি দুটি ইটভাটা,পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী অপর দিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ।এই ইছামতি মুকুলকে সারাদিন বসিয়ে রাখে।নদীর পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দে সে বিভোর হয়ে যায়।নদীর ঘাটে কত নৌকা আসা যাওয়া করছে এসবে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।মাঝে মাঝে কয়েকজন পথচারির পায়ের শব্দে যদিবা তার কল্পনার জগতে ছেদ ঘটে।কখনও বা ইছামতির নোনাপানি তুলে সে চোখ মুখ ধুয়ে নেয়।তবে এপানি তার কাছে নোনা নয়,বরং মিষ্টি।সে লক্ষ্য করে দূরে একঝাক বক উড়ে যায়,পানকৌউরি টপাটুপ ডুব দেয়, কিমবা নদীর ধারে লবনাম্বু উদ্ভিদের শিকড়ের মধ্যে পানির স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে দু-একটি কাকড়া শিকর বেয়ে উপরে ওঠার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

ইছামতির তীরে বসে কখনও সে তার অতিত জীবনের কথা ভাবে।আব্বার সঙ্গে পাঁচ/ছয় কিমি দূরে গরুর গাড়ি করে বসিরহাটে মার্টিন বার্ন লাইনে ট্রেন দেখতে যাওয়া,যেটা ছিল তার প্রথম শহর দেখা।অনেকপরে হাসনাবাদে সাইকেল কিনতে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু বসিরহাট শহরকে সে আজও ভূলতে পারেনি।ফেরার সময় কিছু চপ ও মুড়ি খেয়ে কি আনন্দেই না সে বাড়ি ফিরেছিল।সে দু চোখ বন্ধ করে দিনটিকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলো।

পড়াশোনায় সে ভাল ছিল না ঠিকই কিন্তু পাঠশালার পাঠ শেষ করে গুরু মশায় যখন তাকে স্কুলে ভর্ত্তি হবার জন্য টাকি বা বসিরহাটে ভর্ত্তি করার পরামর্শ দিলেন তখন তার মাথায় বাস্তবিকই আকাশ ভেঙে পড়েছিল।শুুধু শুধু পড়াশোনার জন্য টাকি বা বসিরহাটে গিয়ে থাকাটা তার কাছে নিতান্ত অনর্থক বলে মনে হয়েছিল।তখনই সে ঠিক করে ভাল পড়াশোনা করলে যদি বাড়ি ছেড়ে থাকতে হয় তাহলে সে বরং লখাপড়া আর করবে না।তৌফিক সাহেবেরও ছেলেকে কাছছাড়া করার ইচ্ছা ছিল না।এদিকে কোদালিয়া বা তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোন বিদ্যালয় না থাকায় অগত্যা ছেলের পড়াশোনা বন্ধকরতে বাধ্য হলেন।

আজ ইছামতির তীরে বসেও মুকুলের মনটি ভাল নেই।গতকাল সন্ধ্যাবেলা সে বাড়ি ফিরে শুনেছে যে এবারে টাকির জমিদারবাবুরা তাদের জমিতে খাজনার পরিমান অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন।নায়েব মশায় কাঁছারিতে পেয়াদা পাঠিয়ে তার আব্বার মত কৃষকদের ডাকিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছেন।সময়মত খাজনা দিতে না পারলে যে জমিজমা রাখা যাবেনা সেটা তৌফিক সাহেব ভালোই জানেন।সেদিন রাতে মাটির দাওয়ায় শুয়ে তৌফিক সাহেব সারারাত এপাশ ওপাশ করছিলেন।আর মুকুল লক্ষ্যকরেছিল কেরোসিনের কুপির শিখাটি যেন তার আব্বার যন্ত্রনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই মূহুর্মুহু স্থান পরিবর্তন করছিল।অস্পষ্ট কুপির আলোয় তার আব্বার যন্ত্রনা যেন তাকে আরও আতঙ্কিত করে তুলেছিল।আজ নদীর পাড়ে বসে সে ভাবছিল যদি মা আজ বেঁচে থাকতো তাহলে আব্বার সমস্যা সমাধানের নিশ্চয় একটা উপায় বার হত।আজ আর তার এখানে বসে থাকতে ভাল লাগছে না।মনে পড়লো ইছামতির ওপাড়ে গোয়ালহাটি নামক একটি স্থানে তার মামার বাড়ি।খুব ছোট বেলায় একবার মায়ের সঙ্গে সে মামার বাড়ি গিয়েছিল।সে তখন এতই ছোট যে সে সম্পর্কে তার তেমন কিছু মনে নেই।মামারাও কোনোদিন তাদের বাড়িতে আসেনি।মাকে অবশ্য এই নিয়ে কোন দিন হা হুতাশ করতে শোনেনি। তৌফিক সাহেবের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কটি ঠিক কি কারনে খারাপ সেটা ঠিক মুকুল জানে না।আজ তার মনে হচ্ছে যদি এই সময় মামারাও তাদের পাশে থাকতো তাহলেও আব্বার সমস্যা সমাধানের একটা পথ বার হত।যাইহোক মনের এই যন্ত্রনায় সে তার সাইকেল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

সন্ধ্যার একটু আগেই বাড়ি ফিরে মুকুল দেখলো তার আব্বা তখনও হাট থেকে ফেরেনি।অন্যদিনগুলিতে বেশ রাতে বাড়ি ফিরে মুকুল দেখতো তার আব্বা বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা করেছে।ওদিকে মসজিদের মাগরিবের আজান কানে এল।পাশের বাড়ির মনোয়ারা চাচিমাকে তাদের বাড়ির লাগোয়া পুকুরে উজু করতে দেখলো।চাচিমা তার আব্বা হাট থেকে ফিরেছে কিনা খোঁজ নিল।আজ সন্ধ্যায় দাওয়ায় বসে তার মায়ের চলে যাওয়ার ছবিটিকে মনে করিয়ে দিল।ছোট থেকেই সে দেখে এসেছে মা সারাদিন বাড়িতে কঠোর পরিশ্রম করতো।সময়মত নাওয়া খাওয়া ভুলে যেত।কিন্তু তাদের খাওয়ান,গরুদের দেখাশোনা করার মত কাজ মা সময়মত করত।মা কত সুন্দর করে গোটা উঠোন,বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার করে রাখত।সকালবেলা রান্নাঘর সুন্দর করে নেমন দেওয়া,তিনবেলা গরম গরম খাবারের ব্যবস্থা করা, সন্ধ্যাবেলা ঘর রান্নাঘরে আলো দেওয়া।আর এখন তাদের বাড়ির ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে।তৌফিক সাহেব মাঠঘাট সমলিয়ে যা সময় পান তা দুটো রান্না করতেই সময় চলে যায়।মুকুল বোঝে এখন তার আব্বার কাজ অসম্ভব বেড়ে গেছে। তার আব্বা মায়ের মত পরিপাট করে রান্না করতে পারে না।দুপুরের রান্নাতেই এখন তাদের তিন বেলা খেতে হয়।এত পরিশ্রমে তার আব্বারও যদি মায়ের মত পরিনত হয়।সে আর ভাবতে পারেনা।চোখ মুখ জ্বালা করে ওঠে।সে ভীতু হয়ে পড়ে।দু হাতে মুখ চেপে কান্না ঢাকার চেষ্টা করে।

তার মনে এল মা যেদিন মারাগেল,তার আগেরদিন শেষ রাতে মায়ের অসম্ভব বুক যন্ত্রনা শুরু হল।কখন থেকে ব্যাথা শুরু হয়েছিল,সেটা সে জানেনা ঠিকই কিন্তু শেষরাতে যখন তার ঘুম ভাঙে সে দেখে তার আব্বা মায়ের যন্ত্রনা প্রশমিত করার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে।ঘুম চোখে হাউমাউ করে সে মায়ের পায়ের কাছে কেঁদে পড়লো।মায়ের সে সবে ভ্রুক্ষেপ নেই।অনেক ক্ষন ছট ফট চিৎকার করতে করতে মা একসময় কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পড়লো।এক সময় তার আব্বা তাকে মাকে দেখতে বলে পড়শিদের বাড়িতে ছুটে গেল।মাঘ মাসের শেষের দিকে সেই হালকা শীতের রাতে অনেক ডাকাডাকির পর পাশের বাড়ির হাবিবুরচাচা,মানোয়ারা চাচিমা সহ কয়েকজনঘুম চোখে ছুটে এলেন।সবাই তার মায়ের যন্ত্রনার কারন অনুসন্ধানের চেষ্টা করতে লাগলেন।কেউ বলছেন গ্রামের বৈদ্য মশায় রাজ্জাক সাহেবকে ডেকে আনতে।হাবিবুরচাচা বরং মাকে বসিরহাট হসপিটলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন।এদিকে তখন ভোর হয়ে গেছে।বিভিন্ন মসজিদের আজান ভেসে আসছে।পূর্ব আকাশে লাল আলো ফুটে উঠছে।শেষ পর্যন্ত সকাল বেলায় হাবিবুর চাচা আব্বাকে সঙ্গে নিয়ে মাকে নিয়ে গরুর গাড়ি করে বসিরহাট হসপিটলের উদ্দেশ্য রওনা দিলেন।ডাক্তারবাবু জানালেন রোগীর আগেই মৃত্যু ঘটে গেছে।এমন সময় মকুল বাইরে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেল।ঘরে আলো জ্বলছে দেখে তৌফিক সাহেব খুশি হয়ে এত তাড়াতাড়ি বাড়ি এসেছে, শরীর ঠিক আছে কিনা জানতে চাইলেন।মুকুল মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল।তৌফিক সাহেব মুকুলের দায়িত্ববোধ দেখে খুশি হলেন।

আজ এত বছর পরে মুকুলও তার আব্বাকে অন্য রুপে দেখলো।আজকের সন্ধ্যাবেলা তাকে অনেক শিক্ষা দিল।সে ছোট্ট শিশুর মত আব্বাকে বললো এখন থেকে আমিই প্রত্যেকদিন বাড়িতে আলো দেব।তোমার আর চিন্তা করতে হবে না।আজ সত্যিই বাবাছেলে যেন একে অপরকে অন্য ভাবে পেল।আসলে তৌফিক সাহেব কোনোদিন ছেলের সঙ্গে জোর করে কথা বলেন নি।যেমন বলেনি তার মাও।ফলে চিরদিনই সে কিছুটা বাড়তি স্বাধীনতা পেয়ে পেয়ে এসেছে।অসম্ভব অপত্য স্নেহের কারনে বাবামা ছেলের কোন কাজকে কখনও নিষেধ করেনি।কিন্তু একটা সন্ধ্যা তাকে অনেকটা বড় করে দিয়েছে।তাই সে যখন তার আব্বাকে জানালো আমিই আজ থেকে বাড়িতে আলে দেব,রান্না করতে তোমার সাহায্য করবো,গরুর খাবার দেব,মাঠের কাজেও তোমাকে সাহায্য করবো তখন তৌফিক সাহেবের চোখের জ্বল বাস্তবিক ই বাঁধ মানল না।বাবা ছেলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো।তিনি যে আজ তার প্রিয়তমা মারিয়মকে মুকুলের মধ্যে ফিরে পেলেন।

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২১

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: শুভ ব্লগিং

২৯ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: অনেকদিন ধরে ভাবি জীবনের প্রথম উত্তরটি ঠিক করে দিই, তখনি আবার পিছিয়ে এসেছি, না এই ভুলকে স্মারক হিসাবে রেখে বরং নুতন করে উত্তর দিই। সেই প্রচেষ্টা থেকে আজ উত্তর দিলাম। আপনার শুভেচ্ছা মাথায় করে রাখলাম।


শুভ কামনা সুপ্রিয় তারেক ভাই।

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:২৬

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

ব্লগে আপনার ভবিষ্যতের সময়গুলো সুন্দর সাবলীল গঠনমূলক লেখনীতে আমাদের মুগ্ধ করবে।

আপনার ব্লগীয় বিচরণ স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠুক। সে কামনা রইল। প্রতিউত্তর দিতে এই কমেন্টের সবুজ অংশ চেপে উত্তর করুন! ধন্যবাদ!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:২০

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আপনাদের দোয়া/আশির্বাদ আমার পাথেয়!ধন্যবাদ।

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১০

মাআইপা বলেছেন: ভাল হয়েছে। শুভকামনা রইল

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:০৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।ভোরের আলোর পরবর্তী অংশ দেখার আমন্ত্রণ রইল।

৪| ১৪ ই জুন, ২০১৮ রাত ৮:২৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: তৌফিক সাহেবের যন্ত্রণার সাথে কেরোসিনের কুপির শিখার কাঁপাকাঁপির (আপনি বলেছেন 'স্থান পরিবর্তন';) তুলনাটা অসাধারণ হয়েছে। দক্ষ কথাশিল্পীর পর্যবেক্ষণের মত।
মুকুলের প্রয়াত পরিশ্রমী মায়ের দৈনন্দিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে গ্রাম বাংলার শাশ্বত সংসারী মহিলাদের অস্বীকৃত এবং অমূল্যায়িত শ্রমের একটা চিত্র পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। ভাল লাগলো এ জায়গাটুকু।
ছবিদুটো কি আসলেই ইছামতি নদীর?
গল্পের ইতিবাচক পরিণতি হৃদয়মন স্পরশ করে গেল! গল্পে ভাল লাগা রেখে গেলাম!! + +

১৪ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:১৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: কৃতজ্ঞতা জানাই স্যার আপনাকে। আপনার পোষ্ট এবং কমেন্ট দুটিই আমাদের মত নবাগতদের কাছে শিক্ষনীয়। এই গল্পটি ঠিক গল্প নয়। এর সঙ্গে আমার পূর্বপুরুষের সম্পর্ক জড়িত। মূল বিষয়টাকে সামনে রেখে কিছু গদ্যের রুপ দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে প্রথমে তেমন সাড়া না পাওয়াই আপাতত লক্ষ্যটি সাময়িক বিরতি দিয়েছি ।

ছবি দুটি টাকি থেকে তোলা, ইছামতি নদী।

পোষ্টটি আপনার হৃদয়মন স্পরশ করায় ও প্লাস দিয়ে উৎসাহিত করায় অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা স্যার।

আপনাকে অনন্ত শুভেচ্ছা।

৫| ১৪ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: ব্লগে সুস্বাগতম! এখানে আপনার বিচরণ দীর্ঘস্থায়ী হোক, আনন্দময় ও স্বচ্ছন্দ হোক! হ্যাপী ব্লগিং!
এখানে প্রকাশিত আপনার প্রথম পোস্টটা পড়ে গেলাম। ভাল লেগেছে।

১৪ ই জুন, ২০১৮ রাত ১১:২৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার আশীর্বাদ আমার পাথেয়। ব্লগে এটাই আমার সর্ববৃহৎ পুরষ্কার।
আপনার ভালো লাগাতে উৎসাহিত হলাম। আপনাকে নিরন্তর পাশে পাওয়া আমার প্রার্থনা।

অনেক শ্রদ্ধা আপনাকে। করুণাময় আপনার মঙ্গল করুণ।

৬| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:১৩

রাকু হাসান বলেছেন:



বাহ ,আমার সব সময় সামাজিক গল্প পড়তে অন্য রকম ভাল লাগে এটাও ব্যতিক্রম ছিল না । :-B

তোমার ব্লগ বাড়িতে আসলাম । প্রথম পোস্টের স্মৃতি ছোট ভাই থাকবে না ,সেটা কিভাবে হয়। =p~

বাহ ,আমার সব সময় সামাজিক গল্প পড়তে অন্য রকম ভাল লাগে এটাও ব্যতিক্রম ছিল না । :-B

তোমার ব্লগ বাড়িতে আসলাম । প্রথম পোস্টের স্মৃতি ছোট ভাই থাকবে না ,সেটা কিভাবে হয়। =p~
ফুলেল শুভেচ্ছা ,সামুতে স্বাগতম , ব্লগীয় পথচলা হোক গর্বের , তা দীর্ঘ
দীর্ঘতর হোক ।দোয়া ,ভালবাসা সব কিছু থাকবে সব সময় ভাই আমার । :-B



আমি কিন্তু ........... |-)

০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২৮

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: স্নেহের ছোটোভাই ,

সাংসারিক বন্ধনে বড্ড জড়িয়ে গেছি । সকালে উঠে তোমার সুন্দর কমেন্টটি পড়ে মন ভিজে গেল।। মধুর কমেন্টের একটি ভালো প্রতিমন্তব্য দেবো বলে সময় নিয়েছিলাম।। কিন্তু দর্ভাগ্য যে এখনও সময় করে উঠতে পারছিনা। কাজের মধ্যে বেশ কয়েকবার দু - চার মিনিটকরো সময় নিয়ে এলেও পর্যাপ্ত সময় না পাওয়াই অবশেষে অটোতে বসে আমার ভায়ের প্রতিমন্তব্য লিখলাম। আমার ভায়ের উষ্ঞ অভ্যুত্থনায় আমি পুলকিত ।


তোমার জন্যও রইল আমার অন্তরের প্রীতি শুভেচ্ছা ।

৭| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
প্রিয় দাদা, শুভ সন্ধ্যা।

আপনার প্রথম পোস্টটি দেখতে এলাম। আমার কেন যেন মনে হলো আপনার প্রথম পোস্টটি পড়া হয়নি। প্রখ্যাত ব্লগার জনাব চাঁদ গাজী স্যারের প্রথম পোস্টটি পড়েছি। সেখানে অনেকে খুব আজে বাজে মন্তব্য করেছে। দেখে খুব খারাপ লেগেছে।

আপনার লেখাটি যেমন সুন্দর তেমনি মন্তব্যগুলো অনেক আকর্ষর্ণীয়। আপনার লেখার হাত ভালো। নিয়মিত চর্চা করলে ভালো হবে।

আপনার সুন্দর ও সুখী জীবন প্রত্যাশা করছি। ভালো থাকুন সব সময়। জীবন হোক অনিন্দ্য সুন্দর।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৬:৪৭

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: শুভসকাল প্রিয়সাজ্জাদভাই,

আমার ব্লগিং জীবনের প্রথম পোষ্টটি এই মুহূর্তে রিপোষ্ট করে আমার সর্বশেষ পোষ্ট হয়ে আছে। ওখানো আমি নোটে একথা জানিয়েছি। যাইহোক আপনি আগ্রহী হয়ে একেবারে শুরুতে দেখতে এলেন জেনে খুশি হলাম। শ্রদ্ধেয় গাজী সাহেবের সঙ্গে এরকম হয়েছে জেনে খারাপ লাগছে ।

আমার পোষ্টে মন্তব্যগুলি সত্যি খুব সুন্দর । ওনারা নিজেদের রুচিশীলতার পরিচয় রেখেছেন। আপনি বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন দেখে আনন্দ পেলাম। আর আপনারা পাশে থাকলে টুকটাক কিছু লেখা পোস্ট করতে পারবো।

আপনাকেও ও আপনার পরিবারকে ঈদের শুভেচ্ছা ও বিমুগ্ধ ভালোবাসা জানবেন ।


বি দ্র - আপনার কমেন্টটি আমার নোটিফিকেশনে দেখায়নি, এমনি খুঁজতে এসে দেখতে পেলাম যে আপনার একটি কমেন্ট আছে। আসলে সে সময় সেফ না হওয়াই বোধহয় এরকম হচ্ছে। অনিচ্ছাকৃত দেরিতে উত্তর দেওয়াই দুঃখিত।


৮| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪০

নজসু বলেছেন: ব্লগে আপনার প্রথম পোষ্ট এটি।
পাঠ করার ইচ্ছায় খুঁজে খুঁজে চলে এলাম।
গল্পটা কি পরে বি-পোষ্ট করেছিলেন?
মুকুল, তৌফিক, মরিয়ম খুব পরিচিত মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে আপনার ব্লগে গল্পটি কিছুদিন আগে পাঠ করেছি।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: হা হা হা হা হা , আপনি খুঁজতে খুঁজতে একেবারে প্রথম পোস্টে চলে এলেন । হ্যাঁ এটি পরে রি পোস্ট করি । আপনি ভোরের আলোর আগে এই পোস্টটি আবার পাবেন । ওখানে বসে পোস্টটিকে একটু ঠিকঠাক করে ছিলাম । এখানে কিছু বাক্যে কোন কোন জায়গায় ভুল আছে । যেহেতু পোস্টটি আপনার পড়া কাজেই নাম গুলি আপনার পরিচিত বলে মনে হচ্ছে।


অনিঃশেষ শুভেচ্ছা ও ভালবাসা প্রিয় ভাইকে।

৯| ২৩ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:১৩

নিয়াজ সুমন বলেছেন: প্রথম লেখায় ভালোলাগা রেখে গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.