![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাই,আমি পদাতিক চৌধুরী।পথেঘাটে ঘুরে বেড়াই।আগডুম বাগডুম লিখি। এমনই আগডুম বাগডুমের পরিচয় পেতে হলে আমার ব্লগে আপনাদেরকে স্বাগত।
গাড়ি থেকে নেমে কোমরের বেল্ট ধরে প্যান্টটা একটু উপরে তুলতে তুলতে ওসি সুরিন্দর ভক্তের কৌতুহলী চোখ গিয়ে পড়লো অনেকটা নিচে ঘটনাস্থলের দিকে। এক দৃষ্টিতেই বুঝতে পারলেন জায়গাটা যথেষ্ট নিচে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
- খেয়েছে রে! যা আশঙ্কা করছিলাম তাই। এতোটা নিচে নামতে হবে?আপন মনে বলে উঠলেন কথাগুলো।
বুঝলেন ওনার ভারী শরীরটা নিয়ে অতোটা নিচে নামা খুব সহজ হবে না। যদিও মনের কথা মুখে আনলেন না। বুঝতে দিলেন না কাউকে।বরং টালমাটাল করতে করতে ঢালু গড়ানো জায়গা দেখে কয়েক পা নিচে নেমে এলেন। দেখলেন সঙ্গীসাথিরা তখন বেশ অনেকটাই নিচে নেমে গেছে।আর কোন জায়গা দিয়ে নামলে সুবিধা হবে সেই কাজটি করে যাচ্ছিল গোর্খাজি। ওদের বয়স কম; নামছিল বেশ দ্রুততার সঙ্গে।ফলে অনেকটাই ব্যবধান হয়ে গেছে বুঝতে পেরে একটা জায়গায় থমকে দাঁড়ালেন।বড় বড় কয়েকটি নিঃশ্বাস নিয়ে কোমরে দুহাত রেখে একটা হাঁক দিলেন,
- গোর্খাজি দাঁড়াও ওখানে।
পরোক্ষণেই আবারো একটা ডাক দিয়ে কনস্টেবল অমিতকে,
- অমিত, তোমরা নিচে গিয়ে প্রোয়োজনীয় ব্যবস্থা নাও। আমি বোধহয় অতোটা নিচে নামতে পারবো না। যদিও আমি চেষ্টা করছি, দেখি কোন পর্যন্ত যেতে পারি।
ওরা সবাই থমকে গিয়ে উপরের দিকে চেয়ে রইল।
তার মধ্যে যথারীতি সৌজন্য সূচক উত্তরে কনস্টেবল অমিত ,
- আজ্ঞে স্যার। আপনি যেটা বলবেন,বলে কনস্টেবল অমিত আবারো নিজের পায়ের দিকে লক্ষ্য দিলেন। ভীষণই ঢালু জায়গাটা। কাজেই খুব সাবধানে নামতে হবে।
ওদিকে গোর্খাজি সাহেবের ডাক পেয়ে ভীষণ খুশি হল। আগেও বলেছি ও এতোক্ষণে সামনে থেকে সকলকে ঢালু জায়গা দেখে দেখে নামতে সাহায্য করছিল। কিন্তু বড় সাহেবের হুকুম বলে কথা। কাজেই সাহেবের ডাক পেয়ে আবারো উপরে উঠতে লাগলো। গোর্খাজিকে উপরে উঠতে দেখে ওসি সাহেব,
- আরে! না না না তোমাকে নুতন করে আর উপরে উঠতে হবে না। তুমি বরং ঐখানে দাঁড়াও। আমি নিচে নামছি।
ওসির নির্দেশ মতো গোর্খাজি মাথা নেড়ে,
- আজ্ঞে স্যার ঠিক আছে। আমি এখানেই দাঁড়াচ্ছি। আপনি সাবধানে নামুন।
ওসি অত্যন্ত সাবধানে ধীর গতিতে কোনোক্রমে গোর্খাজির কাছে চলে এলেন। কিছুটা উদ্বিগ্নতার সঙ্গে,
- আচ্ছা গোর্খাজি নামতে গিয়ে তো বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এখনও তো অনেকটাই নিচে নামার বাকি আছে। তাহলে তো উপরে উঠবার সময় আরও সমস্যা হবে দেখছি।
- আজ্ঞে স্যার। ঠিকই বলেছেন।এ জায়গাটা বড্ড খাঁড়া।উপরে উঠতে ভীষণ কষ্ট হবে আপনার।
- তাহালে কী করা যায় বলো দেখি?
- স্যার আমার মন বলছে, আপনার আর নিচে নামা ঠিক হবে না।
- হুম! কথাটা মন্দ বলো নি,বললেও কিছুটা সন্দিগ্ধতার সঙ্গে,
- তাহলে আমি এখন করবোটাই বা কী?
ওসির মুখের কথা লুফে নিলেন গোর্খাজি,
-আপনি আর নামবেন না স্যার। যতোটা নিচে নেমেছেন এই রাস্তাটুকু উপরে উঠতে আপনার ভীষণ বেগ পেতে হবে।তাই বলি কী স্যার, আপনার পক্ষে এখানে থাকাটাই নিরাপদের হবে। অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে নিচে নামবেন না। আমি বরং নিচে নেমে অমিত-নীলমাধব স্যারদের আপনার সমস্যাটা জানাচ্ছি। ওখানকার কাজটা আমরা সকলে মিলে সামলে নিতে পারবো।
- কী বলছো! সামলে নেবে? পারবে তো ঠিকমতো সামলাতে?
- আজ্ঞে স্যার অসুবিধা হবে না। এটুকু ভরসা রাখতেই পারেন।আর তাছাড়া অমিতস্যার তো আছেন। আপনার ডান হাত তো বলাই যায়।
- হ্যাঁ তা যা বলেছ।অমিত ভীষণ দায়িত্ববান। ঠিক আছে।সেটাই ভালো। তুমি তাহলে গিয়ে ওদেরকে জানাও।আমি বরং এখান থেকেই বিষয়টির উপর নজর রাখছি।
গোর্খাজি পিছন ফিরতেই ওসি আবারো বলে উঠলেন,
- আর হ্যাঁ শোনো, গোর্খাজি দরকারে ওদের হেল্প করতে কসুর করো না।
- আজ্ঞে স্যার আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন,বলে গোর্খাজি দ্রুত নিচে নেমে গেল।
গোর্খাজি উপস্থিত হবার আগেই কনস্টেবল অমিত দুই সঙ্গীকে নিয়ে পৌঁছে গেছিল। সহকর্মী নীলমাধব যেন একটা হাওয়া দেওয়া পুতুল। হাওয়া শেষ তো অচল। ধরাবাঁধা কাজের বাইরে কিছু করতে তার প্রবল অনিহা।আর কনস্টেবল অরিন্দমের বয়সটা অনেকটাই কম। আগেও বলেছি এটাই ওনার প্রথম পোস্টিং। ভীষণ এনার্জেটিক। তবে সেই এনার্জি মেধার চেয়ে গায়ের শক্তি দিয়ে জাহির করার টেনডেন্সি বেশি। যাইহোক গোর্খাজিকে দেখে কনস্টেবল অমিত,
- কি গোর্খাজি তোমার স্যারকে ওখানে রেখে এলে নাকি?
-আজ্ঞে স্যার।
-সাহেব বোধহয় তাহলে আর নিচে নামতে পারবেন না?
- আজ্ঞে স্যার। ওনার খুব অসুবিধা হচ্ছে। তবুও আসতে চাইছিলেন। আমি বারণ করে বললাম,
- অমিতস্যার খুবই দায়িত্বশীল অফিসার। আপনি স্যারের উপর ভরসা রাখতেই পারেন।
প্রতিউত্তরে উনিও মানলেন সেকথা।বললেন ,
- হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছ।অমিত ভীষণই কাজ অন্তঃপ্রাণ।
কথা বলতে বলতে গোর্খাজি আশপাশটা দেখে নিল। দেখল বাকি দুজন একটু দূরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলছে। একটু জোরে গলাখাঁকারি দিয়ে আবার বলতে লাগলো,।
-স্যার আরও বললেন,বাকি দুজন চাকরিতে নুতন। যদিও কাজ শেখার আগ্রহ দুজন কারোর নেই। একজন তো আবার অকর্মণ্যের ঢেঁকি। কাজেই অমিত আছে যখন অসুবিধা হবার নয়।
নিজের প্রশংসা কার না ভালো লাগে। কিন্তু সচরাচর মুখে কেউ সে কথা স্বীকার করতে চান না।গোর্খাজির মুখে ওসি সাহেবের প্রশংসা শুনে অমিত মনে মনে খুশি হলেও মুখাবয়বে সেটা ধরা দিলেন না। বরং অনেকটা গম্ভীর মুখে বললেন,
-স্যার তোমার কাছে একথা বলেছেন? কতোটা সত্যি জানি না।তবে স্যার একদিনের জন্য বা একবারের জন্যও এরকম কিছু আমার কাছে ধরা না দেওয়ায় তোমার এমন প্রশংসার মধ্যে সত্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
- মাইরি বলছি স্যার, বিশ্বাস করুন আমি মিথ্যে বলছি না। এতোটুকুও বাড়িয়ে বলছি না।
এবার অমিত একটু সলজ্জ চাহনি নিয়ে,
- আচ্ছা হয়েছে হয়েছে। আসলে স্যার নিজে না আসায় আমার চাপটা অনেকটা বেড়ে গেল কিনা.. এখন প্রধান কাজ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা।কথা বলতে বলতে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দুই কনস্টেবলকে হাতের ইশারায় কাছাকাছি ডেকেও নিলেন ।
চিকিৎসকের ঘোষণা ছাড়া পুলিশ কাউকে মৃত বলতে পারে না।বডি দেখে মনে হল দেহে প্রান নেই। লক্ষ্য সুরতহাল রিপোর্টটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরি করে বডিটাকে নিকটবর্তী হসপিটালে পৌঁছে দেওয়া।তাও হসপিটাল বলতে তো সেই শিলিগুড়ি। অনেকটাই দূরে। যাইহোক দূর বলে তো আর কাজ ফেলে রাখা যাবে না। ইতিমধ্যে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে নীলমাধব ও বক্সি জানতে পেরেছে দেহে ক্ষতের গভীরতা হিসাবে এক কিমির মধ্যে কোথায় পড়ে যেতে পারেন। শরীরের দুপাশে বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। মাথার ডানদিকে ক্ষতটি বেশ গভীর। ক্ষতের গভীরতা দেখে পরিষ্কার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে ওখান থেকে। যদিও দীর্ঘক্ষণ জলে পড়ে থাকায় সব ধুয়ে সাদা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।পরনোর পোশাকও ছিঁড়ে ফেটে চৌচির। এমন কয়েকটি স্থানে এমন ভাবে ছিঁড়ে আছে দেখে মনে হবে কোনো জন্তুর দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত।তার নিচের ক্ষতিগুলোও মারাত্মক গভীর। শরীরের বেশকিছু স্থানে থ্যাতলানো আছে।যে স্থানে বডিটা পড়ে ছিল সেখানকার জলও যথেষ্ট স্বচ্ছ।যেটা থেকে অনুমান করা যায় ঘটনাটা অনেক আগেই ঘটেছে। যদিও নমুনা সংগ্রহের জন্য স্থানটির পাথুরে বালি মাটি প্যাকেট বন্ধ করতে হয়েছে। গোটা বিষয়টি দেখে অনুমান, হয়তো আগের দিন বিকালে বা সন্ধ্যায় ঘটনাটা ঘটতে পারে।ভিক্ট্রিমের ব্যাক্তিগত জিনিস আশেপাশে কোথাও কিছু পড়ে থাকতে দেখা যায় নি যা থেকে ভদ্রলোকের সম্পর্কে কিছু জানা সম্ভব। এমনকি জুতা জোড়াদুটিও দৃষ্টি সীমার মধ্যে পাওয়া গেল না। তবে ফর্সা শরীরের গঠন ও মুখাবয়ব থেকে পরিষ্কার উনি বাইরে থেকে আগত, এলাকার লোক নন। সেক্ষেত্রে ওনারা ঠিক করে নিলেন পরবর্তী কাজ হবে, এলাকায় যত হোটেল আছে খোঁজ নিতে হবে এমন ছবির কোনো ট্যুরিস্ট উঠেছিল কিনা। এরমধ্যে অমিত নিজেদের মধ্যে একটা আলোচনা সেরে নিল। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে কাউকে বডিতে হাত দিতে দেওয়া হয় না। কিন্তু অতোটা নিচ থেকে বডিটা উপরে তুলতে গেলে স্থানীয়দের সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। কাজেই প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করে উপস্থিত কয়েকজনের স্বাক্ষর নিয়ে কনস্টেবল অমিত বাকিদের উদ্দেশ্য বললেন,
- আপনারা আমাদের আরও একটু সাহায্য করুন।বডিটাকে আমাদের গাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। উপস্থিত প্রায় সবাই একাজে সম্মতি দিল। সঙ্গে পলিথিনের গ্লাভস ছিল। দেওয়া হলো উদ্ধারকারী সদস্যদের। অবশেষে সকলের চেষ্টায় ঐ খাদ থেকে বডিটাকে উপরে তোলা সম্ভব হলো। উপরে উঠতে উঠতে কনস্টেবল অমিত ওসির সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেরে নিলেন।গাড়ি সোজা রওয়ানা দিল শিলিগুড়ি হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
চলবে....
১৬ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:০৬
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: জ্বী একটু গ্যাপ তৈরি হয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: দাদা দীর্ঘ গ্যাপ।
আগে কি পড়েছি মনে নাই।