নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেয়ালের অপর পীঠ

তব ঘৃণা বক্ষে চাপিনু, হাসিনু মুখে, জঞ্জাল তব চাপিনু পিঠে, চলিনু মহাকালে ।

দি ভয়েস

নিজেকে নিয়ে গবেষণা চলছে । জানলে জানাব ।

দি ভয়েস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সামাজিক ব্যাধিঃ মদ্য পান, সাইড টক ও ভীরের মধ্যে কতিপয় যুবক ।

২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪

দৃশ্য ১



রাত দেড়টা । দরজায় একের পর এক আঘাত পরে যাচ্ছে । রহিমা চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে দিল । দরজা খুলতেই জব্বার তার চুলের মুঠি ধরে বলল, কি রে মা*** দরজা খুলতে এতক্ষণ লাগে নাকি ? সে ঠিক মত দাড়াতে পারছিল না । টলতে টলতে প্রায় পরেই যাচ্ছিল । রহিমা বলে ঊঠলো , ছাড়ো তো এইবার , নিজেই দাড়াতে পারছে না, আবার আমাকে আসছে মারতে । আগে তো নিজে ঠিক হয়ে দাড়াও । কি সব ছাই-পাস খেয়ে আসে । ঘরে যে একটা ছোট ছেলে আছে, তা কি তোমার খেয়াল থাকে না । জব্বারের গায়ে যেন অপমানের আগুন জলে উঠলো । সে রহিমাকে বেধম পেটালো নেশার ঘোরে । তারপর এক্সময় নিজেই হয়রান হয়ে নাক ডেকে ঘুম গেল । আর রহিমা ঘরের এক কোনে নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে লাগলো । পিছে আবার তার ঘুম ভাঙ্গে এই ভয়ে সে বুক ফাটা কান্নার গলা টিপে গুমরে মরছে প্রতি মুহূর্ত । ছেলেটাকে যে যতটা সম্ভব এসব থেকে দূরে রাখতে চায় ।



রহিমা এই গ্রামেরই মাতব্বরের মেয়ে । অনেক আদর যত্নে বড় হয়েছে । সে যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, তখন জব্বারের সাথে তার প্রথম পরিচয় হয় । জব্বার দেখতে বেশ, প্রায় ৬ ফুটের মত লম্বা । গায়ের রঙ ফরসা ও বাপ-দাদার আমলের বেশ জমি-জমা আছে । মা-বাপ মরা ছেলে । এক কথায় গৃহস্থালির সাথে সাথে সে একজন সুপাত্রও বটে কন্যা সমর্পণের জন্য ।

রহিম সাহেব । এ গ্রামের মাতব্বর । তিনি দেখলেন, ছেলে ভাল ও সাথে বিশাল গৃহস্থালি আছে । তাই তিনি বিয়েতে অমত করেননি । মেয়ে খেয়ে-পরে সুখে থাকতে পারবে । এই চিন্তা ধারা থেকে সে মেয়ের অবিয়ে খুব ধুম-ধামের সাথে সম্পূর্ণ করলেন । পুরো গ্রাম শুদ্ধ মানুস দাওয়াত দিলেন । গরু যবেহ হল, খাসী যবেহ হল । গান বাজনার আয়োজন করা হল । পুরো গ্রাম যেন মাতব্বরের মেয়ের বিয়েতে এক উৎসবের আমেজে ভরে গেল । সেদিন রহিম সাহেব খুব খুশি ছিলেন ।



বিয়ের এক বছরের মাথায় কুল আলো করে এলো নবীন । নবীন নামটা রহিমার পছন্দের । প্রথম সন্তান তাই সখের বসেই নামটা রেখে ফেললেন । জব্বারও আপত্তি করলেন না । খুব সুখেই কাটছিল তাদের বিগত সাত বছর।



কিন্তু এবার কি হল, ভীষণ বৃষটিতে জমির সব ধান জমিতেই মজে গেল । বন্যায় ভেসে গেল সব ফসল । চারিদিকে দুর্ভিক্ষ সুরু হয়ে গেল । মাথায় হাত দিয়ে বারান্দায় বসে পরল জব্বার । হতাশায় তার চোখ মুখের দিকে তাকানো যায় না । সে যে লোন তুলে ছিল ব্যাংক থেকে তা কিভাবে পরিশোধ করবে ! এই চিন্তায় তার মাথা খারাপ হয়ে যেতে লাগলো । প্রতিবার ফসল বিক্রি করে সে লোন চুকায় । কিন্তু এইবার ! সে হতাশা থেকে মাথায় গেল আবুলের বাসায় । আবুল তার বাল্যকালের বন্ধু । কিন্তু সে মদ্য পায়ী । সারাদিন মদ খেয়ে পরে থাকে গদিতে । হ্যাঁ, গদিতে । সে বাজারের মহাজন । খুব খারাপ লোক । সুদের দুনিয়ার এক জঘন্য নাম । এর কাছে এলেই তাকে মদ খেয়ে বাসায় ফিরতে হয় । এর জন্য রহিমার সাথে তার অনেক ঝগড়া হয়েছে । কিন্তু আজ এই হতাশার দুনিয়ায় সেও চায় একটু প্রশান্তি বয়ে যাক তার উঠুনে । আবুল তাকে ড্রিঙ্কস করতে আহ্বান জানালে সেও মানা করতে পারেনি ।



এর পর থেকে সে দৈনিক রাতে মদ পান করে বাসায় ফিরে এবং রহিমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করে । রহিমা তাতেও কিছু বলেনি এতোদিন । কিন্তু মদের নেশা তার এমনভাবে পেয়ে গেল যে , তার জমিজমা বিক্রি করেও এখন মদ আর জুয়া তার খেলা চাই । জুয়া খেলা আবুল তাকে শিখিয়েছে । প্রথম কয়েকদিন জিতলেও তার পর থেকেই সে হারা সুরু করেছে । এই নিয়ে সংসারে তার অশান্তি প্রতিদিন লেগেই থাকে ।



নবীন দিন দিন বড় হতে লাগলো । রহিমার চিন্তাও বেরে উঠতে লাগলো নবীনের সাথে তাল মিলিয়ে । এক দিন তো রহিমার মাথায় বাজ পরল মনে হয় নবীনের কান্ড দেখে । নবীন সেদিন সকালে বাবার মদের বোতলের ছিপি খুলে অবশিষ্ট টুকুন পান করে যায় যায় অবস্থা । এর পর থেকেই নবীনের মা মদের বোতল সামলে রাখত । না পারত মারের ভয়ে জব্বার কে কিছু বলতে না পারত এসব সহ্য করতে । নবীন বাবার মত ভাব নিয়ে চলতে সুরু করল মাত্র ক্লাশ এইটে পরা অবস্থাতেই । নবীনের মা এ নিয়ে খুবি উদ্বিগ্ন থাকতেন । কিন্তু নবীনের বাবার এক কথা ছেলে মানুষ, ছেলে মানুষের মত থাকবে না তো কি মেয়ে মানুষের মত থাকবে ! জব্বার বারিতে থাকা অবস্থায় নবীনকে সে কিছুই বলতে পারত না । তবে জব্বার বাসা থেকে গেলেই নবীনের খুব কষ্টের কারন হতে লাগলো রহিমা । যেভাবে জব্বার নবীনকে সাধিনতা দিতেন, ঠীক তার উলটোভাবে রহিমা তাকে শাসনে রাখতেন ।



দেখতে দেখতে নবীন ইস্কুল ছাড়িয়ে কলেজে পা দিল । আর তখন থেকেই রহিমার হাত ছাড়া হয়ে গেল নবীন । সে এখন বাবার মত রাত করে বাসায় ফেরে । কিন্তু তাকে কিছু বললেই বলে, বাড়ি ছেড়ে সে চলে যাবে । মুখের ভাসা খারাপ হতে সুরু করল । তার নামে দিন দিন নালিশ আসার পরিমান বেড়ে গেল । বখাটেদের দলের নতুন এক নেতা হয়ে উঠতে লাগলো সে । তার সাথে তাল দিয়ে রহিমার টেনশান ও বাড়তে লাগল ।



এখন নবীনকে দেখা যায় বেশির ভাগ সময় ঐ গার্লস ইস্কুলের সামনে । মেয়েদের সাথে সাইড টক করতে । ভীরের মাঝে তাদের হাত টেনে ধরতে । বখাটেদের এম্ন কোন আচরন নেই যেটা তার মাঝে দেখা যেত না । নবীনের বাবা এ ব্যাপারে ভীষণ উদাসীন একটা ভাব নিয়ে থাকতেন । তার কাছে ছেলের ব্যাপারে কেউ কোন নালিশ করতে সাহস পেতেন না । কারন তাকেই উলটো গালি খেতে হত । তাই এই সরাবির সাথে কথা না বলে নবীনের মায়ের কাছেই সব নালিশ যেতো । আজ বিকেলে কাজলের মা নালিশ করে গিয়েছেন । কাজল ইস্কুলে যাবার সময় নাকি তার হাত টেনে ধরে ছিল নবীন । এ নয়ে কাজলের বাপ ও ভীষণ শাসিয়ে গিয়েছেন । কিন্তু এ ব্যাপারে নবীনের বাবাকে কিছু বললে তার ভ্রুক্ষেপটিও নেই । নবীনের মা নবীনকে রাতে বাসায় ফিরলে খুব শাসন করে । এ খবর তার বাবার কাছে পৌছলে সে খুব রাগ করে নবীনের মায়ের সাথে । মানুষটা বুড়ো না হলে পেটাতোই । কিন্তু সম্প্রতি তার নিজের শরীরও খুব বেশি একটা ভাল থাকে না । তাই রহিমাকে খুব গালি গালাজ করে রেহাই দিলেন । তিনি ঠিক করলেন নবীনকে ঢাকা কোন এক ভাল কলেজে ভর্তি করে দিবেন । যেই ভাবনা, সেই কাজ । নবীনের মা'কে উপেক্ষা করে নবীন ঢাকা কলেজে চলে গেলেন ।

এদিকে পরিবেশ পাল্টালেও, নবীনের চরিত্রের কোন পরিবর্তন ঘটলো না । সে ঢাকা কলেজে পড়ার পাশাপাশি ঢাকার আধুনিকাদের সাথে আরো বেশি করে মিশে যেতে লাগলো । এখানে এসে যেন সে আরো বেশি স্বাধীনতা পেয়ে গেল । নেশার রাজ্যে সে হারিয়ে যেতে লাগলো । বখাটেপনার লাগাম যেন তার ছিরে গেল । কিন্তু মায়ের প্রতি মাসের চিঠির বকুনির গুণে সে পড়ালেখাটা ছাড়তে পারল না ।



আজ তার পড়ালেখা শেষ হল । গ্রামে রহিমা বেগম সকলকে এই খুশির খবর দিলেন । জব্বার মিয়া ও খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন । কেননা, তার মদ্য পানের টাকা যে আর রহিমার কাছ থেকে চেয়ে নিতে হবে না । সে নবীন জানালো, সে যেন খুব শীঘ্রই একটা চাকরির ব্যাবস্থা করে ।



একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে সে সহকারী ম্যানাজার পদে চাকরির জন্য আবেদন করল । বলাবাহুল্য নবীন খুবই ভাল ছাত্র ছিল । তার সাথে খুব কম ছাত্রই ছিল টক্কর দেবার মতো ঐ ব্যাচের । তার সব সার্টীফিকেট দেখার পর তার চাকরিটা হয়েই গেল । কিন্তু কিছু দিতে হবে । সে গ্রামে চিঠি পাঠাল , '' মা, এখানে আমার চাকরিটি একটি বড় কোম্পানিতে হয়ে যাবে যদি আমি তাদের ১ লাখ টাকা দেই । '' মা এই চিঠি পাবার পর তার শেষ সম্বল টুকু বিক্রি করে দিলেন । শেষ সম্বল বলতে বাড়ির উঠুনের পাশের যে জমি টুকরো আছে তা । এদিকে নবীনের চাকরি হয়ে গেল ।



দৃশ্য ২



- কি রে মা ঘুম থেকে উঠবি না ?

-ঊঠি মা । আরেকটু ।

- আজ না তোর চাকরীর ইন্টারভিউ আছে ।

মায়ের কথা শুনেই অবনী তাড়াহুড়ো করে চোখ ডলতে ডলতে বিছানা থেকে ঊঠে বসলো । কি যে করোনা মা, আরো আগে বলবা না ! মা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল পাগলি, তোকে অনেক সকাল থেকেই আমি ডাকছি । কিন্তু নবাব নন্দিনীর ঘুম না ভাঙলে আমি কি করব ।



অবনী হচ্ছে জহির সাহেবের একমাত্র মেয়ে । জহির সাহেব একটি সরকারি চাকরি করেন । মোটা অংকের না হলেও যে বেতন পান তা দিয়ে এতোদিন সাচ্ছন্দেই চলে যাচ্ছিল তাদের সংসার । কিন্তু হঠাৎ করেই জিনিস পত্রের দাম আকাশ চুম্বী হওয়াতে খুব বিপাকেই পরতে হয়েছে ভদ্র লোকটিকে । লতা হচ্ছেন অবনীর মা । তিনি গৃহিণী । শুধো গৃহিণী বললে ভুল হবে, সে অংকের মাস্টারের মতো করে হিসেব কষে সংসারটাকে এতো দিন এই ভাবে টিকিয়ে রেখেছেন । কিন্তু এখন আর পারা যাচ্ছে না বলেই জহির সাহেবের সাথে অনেক মন মালিন্য করার পর তিনি রাজি হয়েছেন অবনীকে চাকরি করার অনুমতি দিতে । সকালে খাবার টেবিলে জহির সাহেব মেয়েকে অনেক বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে কথা বলতে হবে । এ নিয়ে তাদের মা মেয়ের সাথে অনেক মজা করা হয়ে গেল যে, মেয়ে কি এখন ইস্কুলে পরে নাকি যে, তুমি কিভাবে পরিক্ষা দিতে হবে শিখিয়ে দিচ্ছ ।



সকালে ১০টায় অবনী ইন্টারভিউ রুমে ঢুকল । অবনীর সব সার্টিফিকেট দেখে সবাই সন্তুষ্ট হলেন এবং তার চাকরিটি হয়ে গেল । সে খুশিতে বাসায় ফিরে সবার আগে খবরটি তার মা'কে দিল । কারন জহির সাহেব তখন বাজারে গিয়েছিলেন । বাজার থেকে ফিরে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে তিনি হাক ছেড়ে বললেন, অবনীর মা, বাজারের যে অবস্থা তাতে আমাদের মত মধ্য বিত্তদের কিছু দিন পর না খেয়ে মরতে...। কথা শেষ হতে না হতেই দেখলেন মা-মেয়ে হাসা হাসি করছে । তিনি বললেন, কি রে অবনী কিছু হল ? অবনী বাবার পা ধরে সালাম করে বলল, '' হ্যাঁ বাবা, আমার চাকরিটা হয়ে গেছে । এবার থেকে বাজারে গিয়ে আর তোমাকে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হবে না । '' বাবা-মেয়ে খুব জমিয়ে গল্প করতে লাগলেন । লতা রান্না করতে গেলেন ।

জহির সাহেব ঠিক করে ফেললেন, তারা সবাই বিকেলে ঘুরতে যাবেন । কেননা একবার অবনী চাকরিতে ঢুকলে খুব বেশি একটা সময় সে পাবে না বেড়ানোর জন্য । এতো বছরের চাকরীর অভিজ্ঞতা তিনি কি কিছু বুঝেন না । দুপুরে খাবার পর হাল্কা একটা ঘুমের পর বিকেলে তারা বেড়িয়ে পরলেন ।



দৃশ্য ৩



সকাল দশটা । অবনীর প্রথম অফিস । সকলের সাথে পরিচয় পর্ব সারার পর অবনী নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলো । পিসি ওপেন করতে না করতেই বসের রুম থেকে ফোণ এলো, '' একবার আমার রুমে আসো । ''

- মে আই কাম ইন স্যার ? ( অবনী দরজায় নক করল । )

- কাম ইন । ( উত্তর এলো )

- তিন নাম্বার ডেস্কে কাশিম এন্ড কোম্পানির একটা ফাইল আছে । টেবিলে রাখো ।

- স্যার, এই নিন । ( অবনী ফাইলটি টেবিলে রেখে বলল )

আচ্ছা ঠিক আছে যাও । অবনী দরজা খুলে রুম থেকে বেরুবে , এমন সময় পিছন থেকে ডাক পরল, শুনো...। অবনী পিছু ফিরে বলল, আর কিছু স্যার ! অবনীকে দেখেই মাথা ঘুরে গেল নবীনের । ঈতো সুন্দরী মেয়ে তার অফিসে তার নজর এরিয়ে আছে কি করে ? অবনীএ নবীনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিতে পরল । সে পুনঃরায় জিজ্ঞেস করল, আর কিছু স্যার ! এবার নবীনের হুশ ফেরল । ও হ্যাঁ ! যাবার সময় ফালটি আনোয়ার সাহেবকে দিয়ে যাবেন । '' আচ্ছা '' বলে অবনী ফাইলটি হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ।



দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে অবনী সকলের সাথে কথা বলছিল । এমন সময় নবীন তাকে তার রুমে ডেকে পাঠালেন । অবনী বলল লাঞ্চ সেরে আমি আসছি । পিয়োন জানাল, এখুনি যেতে বলেছেন । বসের অর্ডার, অতএব, লাঞ্চ ফেলেই অবনীকে উঠতে হল ।

- মে আই কাম ইন স্যার ?

- ওহ ! ইয়েস, কাম ইন ।

- আপনাকে এর আগে দেখিনি ।

- আমি আজই জয়েন করেছি ।

- ওহ ! আচ্ছা । তা লাঞ্চ হয়েছে ?

- না স্যার, সবে সুরু করেছিলাম ।

- ওহ ! সরি । পিয়োন ব্যাটাও এমন না । কাউকে খাবার থেকে ডেকে আনতে হয় বুঝি !

- না না ঠিক আছে স্যার বলুন ।

- আপনার খাবার বুঝি নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।

- না স্যার আমার কোণ অসুবিধে হবে না ।

- তা কি করে হয় ! চলুন ।

- কোথায় স্যার ?

- আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন ।

- না মানে !

- আপনার খাবার আমি নষ্ট করলাম । তার খেসারত দিতে হবে না ।

- কি যে বলেন না স্যার !

- এই স্যার করা বাদ দিন তো । আমাকে আপনি নবীন বলেই ডাক্তে পারেন ।

- তা কি করে হয় স্যার ?

- দেখুন আমরা সমবয়সী । তাই এই স্যার বা আপনি বলা ঠিক আমার পছন্দ না । অফিসের সমবয়সী প্রায় সকলকেই আমার এ কথা বলা আছে ।

প্রথম দিন বিধায় এই ব্যাপারে অবনীর কোন ধারনাই ছিল না । তাই সে খুব সহজ সরল ভঙ্গিমায় বলে দিল , '' ঠিক আছে স্যার । '' নবীন বলল, আবার স্যার বলেছেন ! নবনী মাথা নিচু করে বলল, সময় লাগবে । আমি অপরিচিতদের খুব সহজে নামধরে বা তুমি করে ডাক্তে পারি না ।

কিছু দিন পর নবীনের ব্যাবহারে তার উদ্দেশ্য খুব স্পটই ফুটে ঊঠতে লাগলো । এর পর থেকে অবনী নবীনের সাথে খুব বেশি একটা সময় দিতে চাইলো না । কিন্তু অফিসের বস বলে কথা । তাই শত চেষ্টা করেই এরানো প্রায় সময়ই সম্ভব হয়ে ঊঠত না । তাকে কিছু দিন ধরেই খুব হতাশ লাগতে লাগলো ।

শুক্রবার খাবার টেবিলে জহির সাহেব মেয়েকে বলল, কি রে মা তোর চেহারা এমন মলিন কেন ? অফিসে কি খুব কাজের চাপ নাকি ? অবনী কোন মতে নিজেকে লোকিয়ে বলল , না বাবা , কিছু না । এমনিতেই গত রাতে ভাল ঘুম হয়নি বলে । লতা বললেন, না রে মা, আমার কাছেও তুই কিছু বলিস না । তোড় যে কোন একটা সমস্যা হয়ে তা আমরা খুব বুঝতে পারছি । দেখ আমরা তোড় মা-বাবা, আমাদের কাছ থেকে কিছু লোকানো কি ঠিক হবে বলে তোর মনে হচ্ছে । অবনী বলল, না মা, কিছু হলে তোমাদের জানাতাম না !



অবনী চায় না এ ব্যাপারে মা-বাবা টেনশনে থাকুক । কিন্তু নবীনের কু-চাপ নিতেই সে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে । সে অন্য এক কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করে রেখেছে । কিন্তু সেখানেও প্রায় আরো এক সপ্তাহ সময় লাগবে । এ কয়টা দিন কোন রকম কাটিয়ে দিতে পারলেই হয় । কিন্তু নবীন যে ভাবে দিন দিন গায়ের উপর এসে পরছে তাতে আর অবনীর পক্ষে চাপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না ।



আজ বৃহস্পতিবার । অবনীর শেষ অফিস । সে নবীনের কু-প্রস্তাবে রাজি হয়নি । এজন্য তাকে এ কয়টা দিন খুব ভয়ে ভয়ে কাটাতে হয়েছে । কিন্তু আজই তার মুক্তি । সে অনেকটা প্রশান্তির সাথেই বাড়ি ফিরছিল । কিন্তু পথি মধ্যে একটা নবীনের গাড়ি এসে থামে । সে অনেক মলামলির পর অবনী শেষ বারের মত নবীনের সাথে লাঞ্চে যেতে রাজি হয় । কিন্তু নবীন তাকে লাঞ্চে না নিয়ে গাড়ি তার বাড়ির সামনে নিয়ে দাড় করায় ।



বনীর যখন ঘুম ভাঙ্গে , সে নিজেকে এক নতুন রুপে আবিস্কার করে । তার পাশে কাউকে সে দেখতে পেয়ে অজ্ঞান প্রায় হবার জোগার হয় । সে সব কিছু বুঝতে পারে ও ভীষণ কান্নায় ভেঙ্গে পরে । অবনী গাড়িতে উঠার পর তাকে ক্লো*** মেশানো রুমাল দিয়ে অজ্ঞান করা হয় । তার পর বাসায় এনে চলে পাশবিক অত্যাচার । আগেই বলা হয়েছে নবীন একজন ড্রাগ এডিক্টেট । তাই নেশার ঘোরে তার কোন হুশ থাকে না । কিন্তু অবনী লজ্জায় অপমানে ও ভীষণ ঘৃণায় ফল কাটার ছুড়ি হাতে নিয়ে নবীনের গ** কেটে হত্যা করার পর নিজের হাতের একটি রগ কেটে তার বাবাকে ফোন করে এবং সরি বলে ফোনটি কেটে দেয় ।



জহির সাহেব যখন অবনীর কাছে পৌছায় তখন সে বেহুঁশ প্রায় । তাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেবার সময় অবনী তার বাবার কানে কানে বলে, এ মানুষ এতো পশু হয় কি করে বাবা বলতে পারো ।



কিছু কথাঃ

১। বাবা মায়ের কারনে অনেক সময় ছেলে মেয়ে খারাপ পথের দিকে ধাবিত হয় ।

২। বখাটে ছেলে যদি অনেক বড় মানুষও হয়ে থাকে তবে কিন্তু তার ভিতরের পশু গুলী মরে যায় না । বরঞ্চ আরো বেশি ভয়ানক সু-কৌশলের ঐ অপরাধ গুলো করতে চেষ্টা করে ।

৩। পথের ধারে বসে যে লোকটা ড্রাগ নিচ্ছে আর পাচ তলা বাসায় বলে যে লোকটা ড্রাগ নিচ্ছে তাদের মধ্যে ড্রাগ নেবার পর কোন পার্থক্য থাকে না । তারা উভই বিপদজনক । কিন্তু আমার মনে হয় ঐ পাচ তলার ব্যাক্তিটিই বেশি বিপদজনক ।

৪। কছু রোড সাইড রোমিও আছে যারা সারাদিন পথের ধারে দাড়িয়ে থেকে ইস্কুল কলেজ গামী মেয়েদের উত্যক্ত করতে থাকে । এরা মেয়েদের থেকে পাওয়া একটু অপমানেও অনেক সময় খুব বেশি ভয়ানক হতে পারে । তাই মেয়েদের এদের প্রতি কোন রকম মন্তব্যেই সারা না দেওয়া উচিৎ । কেননা এরা একটু সারা পেলেই পরের দিন হাত ধরার সাহস পেতে পারে ।

৫। সাংসারিক কোলাহল ছোটদের সামনে না করাই ভাল । এতে করে ছোটদের মনে বিরুপ প্রভাব পরতে পারে ।

৬। আপনি ড্রিংক্স করেন এবং তার বোতল বাসায় এনে রাখেন । এটা আপনার ছেলের উপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলতে পারে । তার মনে হতে ড্রিঙ্কস করাটা বুঝি স্বাভাবিক খাবার গুলোর মধ্যে একটা । তাই সে এটার সাথে ছোট বেলা থেকেই আসক্ত হতে পারে ।

৭। ভীরের মধ্যে কিছু ছেলে-পেলে আছে যারা যেখানে মেয়ে দেখতে পায় সেখানেই বেশি করে ভীএর জমায় । আর তাদের হাত কিছু একটা খুজতে থাকে । এসব নিয়ে নাকি তাদের মাঝে প্রতিযোগিতাও চলে । তাই যখন আপনি আপনার পরিবারের মেয়েদের নিয়ে এমন কোন পরিস্থিতিতে পরবেন খুব বেশি সাবধান হবেন ।

মনে রাখবেন এগুলো একটি স্লো সামাজিক ব্যাধি যা এক দু'দিনে সমাধান করা সম্ভব নয় । এজন্য আমাদের চারপাশের মানুষ গুলোকে খুব বেশি সচেতন হওয়া জরুরী ।



ভাল থাকবেন । এতো কষ্ট করে পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ । আজকাল বড় পোস্ট পরার অনিহা অনেক বেশি পরিমানে বেড়ে গিয়েছে । তাই ইচ্ছে না থাকলেও অনেক ছোট করে ফেললাম ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:১৫

পৃথিবীর আলো বলেছেন: খুব ভালো লেখা। পড়ে ভাল লাগল। কিন্তু একটাই আফসোস্, কোন এডিক্টেড লম্পট আপনার এই লেখাটা পুরোটা কখনোই পড়বে না। সত্যিই মুষ্টিমেয় কয়েকজন খারাপের কাছে বিশাল সংখ্যক ভালোরা অসহায়।


২৮ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৫২

দি ভয়েস বলেছেন: '' সত্যিই মুষ্টিমেয় কয়েকজন খারাপের কাছে বিশাল সংখ্যক ভালোরা অসহায়। ''

চমৎকার বলেছেন । ভাল মানুষ গুলোর নিরবতাই খারাপদের এগিয়ে যাওয়ার মূল হাতিয়ার ।


মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

শুভ কামনা রইল ।

২| ২৮ শে মে, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো পোস্ট। মদ এক ভয়ংকর জিনিস। মানুষের খোলনলচে পাল্টে দেয়।

২৮ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮

দি ভয়েস বলেছেন: আজকাল তো মদ্য পান আধুনিকতার একটা অংশ হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে প্রায় । আমি এমন লোকদেরও চিনি যারা বাপ-ছেলে এক সাথে ড্রিঙ্কস করে । তারা বলে, ছেলে বাইরে গিয়ে খাবে কেন ? ঘরে বসে খাবে এবং এতো মর্ডানিজম । আফসোস ঐ বাবা ও ঐ ছেলের প্রতি যারা এই সুন্দর ও সম্মানজনক সম্পর্কটাকে অসুন্দরের মুখে এনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে ।


মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

শুভ কামনা রইল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.