![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে নিয়ে গবেষণা চলছে । জানলে জানাব ।
শ্রদ্ধা রইল সকল মায়ের প্রতি । মায়ের কোন শ্রেনীভেদ হয় না । মা একটি শীতল ছায়া যার নিচে আছে সকল রকম ক্লান্তি ও পেরেশানির প্রশান্তির ছটা । ভালবাসা ও শুভ কামনা রইল মা তোমার জন্য ।
স্নেহাশিস ছোটন,
গত রাতে ঘুমের ঘোরে চিৎকার দিয়ে উঠতেই দেখি পুরো শরীর ঘর্মাক্ত অবস্থায় ক্লান্তিতে অবস প্রায় । বাবা তুই ভাল আছিস তো ? যে দুঃস্বপ্নটা দেখলাম তা বলব না । আমি জানি তা বলেও লাভ নেই । কেননা আমার দোয়া তোর সাথে সবসময় । তুই ভাল থাকবি, তোর ভাল থাকার জন্যই তো আমার শ্বাসপ্রশ্বাস আজও চালিয়ে রেখেছি । বাবা তোর কথা আজ-কাল খুব বেশিই মনে পড়ছে । জানিনা তুই কেমন আছিস । ভালই থাকবি । তোকে না খুব দেখতে ইচ্ছে করে জানিস ! আচ্ছা তুই কি অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস ? কত বড় হয়েছিস রে ! তোর চুল, তোর মায়াময়ী চোখ গুলো আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিল জানিস !
বাবা, তুই কি আমার উপর রাগ করলি তোকে লিখলাম বলে । কী করব বল, সেই ক'বছর আগে একবার দেখছি । আমি কী তা তুই এখন জানিস, কিন্তু এটাও তো বাবা তুই একটু বোঝ যে আমি এক জন মা'ও সাথে সাথে । আর মায়ের মন তো বাবা তুই বুঝিসই । তুই এখন বড় হয়েছিস । ক'দিন পর কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে যাবি । দোয়া করি বাবা তুই অনেক বড় হ ।
জানি আমার উপর তোর রাগ করার কারন যুক্তি যুক্ত । কিন্তু বাবা আমি তো ইচ্ছে করে এই পেশায় নিজের নাম লেখাইনি । সমাজের উচু তলার মানুষ গুলোই আমাকে বাধ্য করেছে এই পেশায় আসতে । তোর বাবা যখন মারা গেলেন, তখন সবার দোয়ারেই কাজের জন্য হন্নে হয়ে ঘুরেছি । চাকরি পেয়েও ছিলাম কয়েক যায়গায় । কিন্তু কিছুদিন যেতেই বুঝতে পারতাম তা আমার দক্ষতা গুণে নয় , আমার অমানিশা রুপের গুণে । ঐ কোর্ট-টাই পরা লোক গুলি বিনা কারনে এই শরীরটাকে ছুবার জন্য নানা পায়তারা করত । আমাকে বাধ্য হতে হতো সেই চাকরিটি ছাড়ার জন্য । তারপর একের পর এক চাকরি আমি ছেড়েছি দু'বছ্র পর্যন্ত । কিন্তু কোথাও আমার এক দন্ডি শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার মতো অবস্থা ছিল না ।
শেষে নিলাম গার্মেন্টসে চাকরি । ওখানকার মেয়েদের থেকে শিখলাম কি করে নিজেকে বাচাতে হয় এই মানুষ নামের পশু গুলার হাত থেকে । বেশ কয়েক মাস ভালই চলল । অফিসের বড় বাবু একদিন সবাইকে নাইট ডিউটি দিয়ে দিলেন । বললেন কাজের অনেক চাপ । আমাকে বলা হল সব হিসেব রাখতে । আমি তাই রাখলাম । কিছু ক্ষন পর আমার ডাক এলো হিসেবের খাতা নিয়ে তার রুমে যেতে । কিন্তু এই পশুটার আক্রমণে মুহূর্তেই আমি বিলীন হলাম সম্ভ্রমের দুনিয়া থেকে ।
কিছু দিন কাজে গেলাম না । অফিস থেকে ফোন এলো, '' কাজে না আসো ভাল কথা, কিন্তু পুলিশের কাছে গেলে খবর আছে ? '' আমি হতাশ হলাম । তোকে নিয়ে চাইলাম এ শহর ছেড়ে দূরে কোথাও পারি জমাতে । সেই রাতের আঁধারেই বাড়ি ছাড়লাম । কিন্তু আমার নারী চিত্তের ভাবনার আগেই তাদের বসবাস । তারা আমাকে পথি মধ্যেই ধরে ফেলল । তোকে আমার কাছ থেকে কেরে নিল ।
জ্ঞান ফিরতেই দেখি আমি কোন এক বন্ধ ঘরের অন্ধকার কামড়ায় পরে আছি । কয়েক ঘন্টা যেতেই এক জন এসে জানিয়ে দিল, '' পালানোর চেষ্টা কর না, লাভ নেই । এখান থেকে বের হওয়া খুবই শক্ত কাজ । বুঝলাম আমি কোথায় আছি । হতাশা ও কান্নায় ভেঙ্গে পরলাম । তোর কথা খুব বেশি করে মনে পরতে লাগলো । আমি সারা রাত্রি ধরে কান্না জুরে দিলাম । সকালে একজন জানিয়ে দিল তুই ভাল আছিস ।
আমি তোকে দেখতে চাইলাম । আমাকে বলা হল, কথা মত চললে কিছু দিন পর তোকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে । আমি নিরবে সব কথা শুনে গেলাম । চলতে থাকল আমার উপর পাশবিক অত্যাচার । দিনের পর দিন আমি তোর অপেক্ষায় কাটাতে লাগলাম । নিরবে ঝড়তে লাগলো আমার আঁখি জল । দীর্ঘ এক মাস পর বাবা, তোকে আমার কাছে এনে দিল । আমি চাইলাম তোকে আমার কাছে রাখতে । বলল পালাবার চেষ্টা করলে জানে শেষ করে দিব, তোলে নয় তোর ছেলেকে । বলেই না, ওরা তোকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেল । আমি বাবা অসহায় ছিলাম । অবলা ও দুর্বল নারী বই আর কিছুই না ।
আমি ওদের বাধ্য হয়ে গেলাম তোর প্রান রক্ষার্থে । মাস গড়িয়ে বছর হয়ে গেল । ধীরে ধীরে আমিও হয়ে উঠলাম ওদের একজন হিসেবে । ওরা মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পারছিল, তাই তোকে আমার কাছে এনে দিল । চলতে থাকল তোর আর আমার সুখের সংসার অন্ধকার জগতের বাঁকা গলিতে । দিনের বেলা আমাদের ছোট্ট সংসার হয়ে উঠতো স্বর্গরাজ্যে ন্যায় । তুই ইস্কুলে যেতে সুরু করলি । আমার অক্লান্ত পরিশ্রান্ত স্বপ্ন গুলো ডানা মেলতে থাকলো তোকে ঘিরে । দিন গড়িয়ে মাস, মাস গড়িয়ে বছর পার হয়ে গেল । ছোট বেলা থেকেই জ্ঞান চক্ষু প্রখর ছিল । সবাই বলত, তুই বড় হয়ে অনেক নাম করবি । গর্বে আমার বুক ভরে যেত, চোখে জল এসে যেত ।
তুই তখন ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পরিস । একদিন ইস্কুল থেকে ফিরলি মুখ গুমরা করে । আমি তোকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে রে বাবুন, তোর মুখ অমন ভারি কেন ? তুই কোন কথার উত্তর দিলি না । তারপর থেকে প্রায়ই তুই মুখ ভার করে বাড়ি ফিরতি । জিজ্ঞেস করলে বলতি, কিছু হয়নি মা । সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরলি । সে কি কান্না ! আমি তোকে বললাম, বাবুনি, কি হয়েছে তোর ? কেউ কিছু বলেছে ? তুই আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদলি । খুব কাঁদলি । পরে বললি, '' মামুনি ইস্কুলের ছেলেরা আমায় তোমার নামে কি সব বাজে বাজে কথা বলে । আমি ওদের কিছুই বলি না ,তবুও । আজ স্যারের কাছে ওদের নামে নালিশ করলাম । কিন্তু জানো মা, স্যারও ওদের মতো করে আমায় অনেক গুলো পচাঁ পচাঁ কথা বলল তোমায় নিয়ে । আমার ভীষণ কষ্ট হয়েছে মা । আমি বললাম, নিন্দুকেরা পাছে অনেক কথাই বলে বাবা ওসব শুনতে নেই ।
একদিন গেলাম তোর সেই স্যারের কাছে । বললাম সব কথা । কিন্তু কোন ফল হল না । বুঝলাম এই ইস্কুলে আর তোকে রাখা যাবে না । তাই অন্য ইস্কুলে তোলে ভর্তি করিয়ে দিলাম । তারপর কয়েক মাস ভালই চলতে থাকল ।
তোর মনে পরে সেই বারের কথা , ঐ যে তুই সাঁতার কাটতে গিয়ে জলে ডুবে যাচ্ছিলি । কেউ খবর দিলে আমি তোকে সেই নদি থেকে তুলে এনেছিলাম । তুই ঘাব্রে গিয়ে ছিলি । কান্না জুরে দিয়েছিলি । আমার বুকে মুখ গুজে বললি, '' মা, আমায় কখনো তুমি একা ছেড়ো না, তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারব না । '' আমি বলেছিলাম, '' বাবুনি, তোকে ছাড়া আমার আর আছে কে, তোকে ছেড়ে আমি কি নিয়ে থাকব ! বোকা ছেলে কোথাকার । ''
আমরা রাতের খাবার শেষ করলাম । তোকে বিছানায় রেখে আসছি, এমন সময় তুই বললি, '' মা, তুমি কেন আমার পাশে ঘুমাও না ? কমলা বু রাতে আমার এখানে ঘুমায়, কিন্তু তুমি রাতে কোথায় যাও ? তোমাকে তো রাতে বাসায় দেখিনা ! '' আমি সেদিন নিরুত্তর ছিলাম । তোকে বললাম, '' বাবুনি, বড় হলে সব জানতে পারবে । এখন অনেক রাত হয়েছে ঘুমাও । '' জানিস পাশের রুমে এসে সেদিন আমি অনেক কেঁদে ছিলাম । আমার ছেলের প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে আমার প্রচুর লজ্জা লাগছিল । কিন্তু আমি অসহায় ছিলাম রে, অসহায় ছিলাম সেই নাম নাজা চক্রের বন্ধনে ।
ধীরে ধীরে তুই বড় হতে লাগলি, তোর লজ্জা বোধ তোকে গ্রাস করতে লাগলো । দিন-দিন তুই আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে লাগলি । বুঝলাম ভিতরে ভিতরে কোন প্রলয় চলছে । কিন্তু আমি তখন অসহায় ছিলাম অদৃষ্টের কাছে । কিছু দিন যেতে না যেতেই তুই আমাকে এড়িয়ে চলতে সুরু করলি ।
চলবে...
লেখার সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা রাখলাম ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১৪ সকাল ৯:১৩
সকাল হাসান বলেছেন: সমাজই মানুষকে নীচে নামায় আর নীচে নামিয়ে সমাজই তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। এটাই সমাজের কঠিন নিয়ম। আমাদের তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই।