![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে নিয়ে গবেষণা চলছে । জানলে জানাব ।
কয়েক বছর আগে বড় আপুর একটা অপারেশন হয়েছিল । তো মগ বাজারের কোন হসপিটালে এডমিট করলাম । ডাক্তার জানালেন সব কিছু ঠিক আছে তবে ব্লাড লাগবে । আমি নিচে ল্যাবে গিয়ে ক্রস টেস্ট করানোর কথা বললাম । তো প্রথমেই যথারীতি ব্লাড গ্রুপ চেক করা হল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার সাথে গ্রুপ মিলল না । পরে গেলাম এক টেনশনে । আপার ফার্ম সাইজ একমাত্র পুত্র, বয়সও কম । আর আপা মরে গেলেও তার ব্লাড নিবে না । সব প্রস্তুতি নিয়ে বললাম, '' আপনারা অপারেশনের জন্য তৈরি হোন, ব্লাড নিয়ে ফিরছি কিছুক্ষন পর । ''
গেলাম সন্ধানীতে । ওনারা বললেন ব্লাড নেই । একটি ফর্ম ফিলাপ করে সাবমিট করতে বলল । করে দিলাম । বলল, '' দশ মিনিট বসেন, ব্লাড পাওয়াও যেতে পারে । কিন্তু পনের মিনিটেও কোন ফোন আসলো না । বুঝলাম, এখানে বসে থাকলে কোন কাজ হবে না ।
গেলাম রেড ক্রিসেন্টে । একই ঘটনার প্রতিচ্ছবির প্রতিফলন ঘটলো । এভাবে একে একে আশেপাশের সকল ব্লাড বাংক গুলিতে ঢুঁ মারলাম । কিন্তু কিছুতে কিছু কাজ হল না । শেষে ফিরে এলাম হসপিটালে । জানালাম, '' ব্লাড বাংক গুলো থেকে ফোন আসবে । ''
আমার সাথে পুরান ঢাকার এক ছেলে ছিল । সে জানাল যে, তার বন্ধুদেরকে সে ব্যাপারটি জানিয়েছে । যদি ভাগ্য সদয় হয় তবে সেখান থেকেও খবর আসতে পারে । অনেকটা সময় পার হয়ে গেল কিন্তু ব্লাড ব্যাংক থেকে কোণ ফোন এলো না । হতাশ হয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে পাইচারি করছি । এমন সময় ল্যাব থেকে এক ডাক্তার ডেকে বললেন, '' এই নাম্বারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন । এরা প্রফেশনাল ব্লাড ডোনার ।'' ভেবে দেখলাম, '' যদিও এদের থেকে ব্লাড নেওয়া ঠিক না, কারন এরা নাকি কিছু মেডিসিন সেবনের মাধ্যমে ব্লাড গ্রোউথ বাড়ায় । '' যাই হোক নিত্তান্ত নিরুপায় হয়েই দিলাম ফোন । ওপাশ থেকে বলল,
- কে ?
- জী, আমি অমুক হসপিটাল থেকে বলছিলাম ।
- হ্যাঁ । বলুন ।
- এখানে আমার এক পেসেন্ট আছেন । ওনার জন্য অমুক গ্রুপের ব্লাড লাগবে ।
- আচ্ছা ঠিক আছে । আপনি নাম্বার পেলেন কোথায় থেকে ?
- জী, এখানকার ল্যাবের এক ভাই দিলেন ।
- ব্লাড দেয়া যাবে । কিন্তু প্রতি প্যাক এক হাজার টাকা করে লাগবে ।
- আমি দেখলাম অনিশ্চয়তায় না ভোগে, আনিয়ে নিলেই হয় । আর এখানে তো ক্রস টেস্ট করেই নিবে ।বললাম, '' নিয়ে এতো ব্যাগ নিয়ে আসেন । ''
- আচ্ছা , আমরা বাইক নিয়ে আসছি । আপনি গেটে দাঁড়ান ।
- আচ্ছা ।
ফোন রাখার প্রায় তিন-চার মিনিট পরেই ঐ ছেলে বলল, তার এক ফ্রেন্ড নাকি ব্লাড দিতে পারবে । আমি বললাম, তবে তাই হোক । ঐ ছেলেকে আসতে বলে দাও । প্রফেশনালের চাইতে এটাই উত্তম হবে । আর আমি ও ঐ লোকটাকে আসতে মানা করে দিচ্ছি । ঐ ছেলেকে নিয়ে ল্যাবে গেলাম, দেখলাম ল্যাবের সেই ভাইয়ের মুখ ভাড় । ক্রস টেস্ট করানোর পর বললাম, ব্লাড কালেকশানে রাখেন , আমি ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি ।
সবকিছু ঠিকঠাক । নিচের ফার্মেসিতে গিয়ে বললাম, যাযা লাগবে একটা বিল করেন তো । মেডিসিনের তালিকাটি হাতে ধরিয়ে দিলাম । তার কিছুক্ষন পর সেও আমার হাতে বিশাল বিলের চুতা ধরিয়ে দিলেন । খেয়াল করলাম, আম্র জানা কয়েকটা মেডিসিনের দাম বেশি ধরা হয়েছে । বললাম, ঠিক আছে ভাই কষ্ট দিলাম । '' আমি একটু আসছি । বলে উপরে গেলাম । ওয়েটিং রুমে বসে থেকে নীচে নেমে গেট দিয়ে বেড়িয়ে গেলাম । বাইরের এক ফার্মেসিতে হিসেব করতে বললাম, সে জানালো এতো টাকা হয় । বললাম, '' সব প্যাক করুন । '' কিছুক্ষন পর দেখলাম একটা ঔষধ কম ।
অমুক নামের সেন্সলেস করার ঔষধ নাকি বাইরের ফার্মেসিতে রাখা নিষেধ । তাই তারা দেয়নি । নীচের ফার্মেসিতে গেলাম । তারা জানালো নেই । একজন তো সরাসরি বলেই ফেললেন, '' কেন ? বাইরে থেকে সব আনতে পারলেন, এটাও নিয়ে আসুন । '' গেলাম বাইরে । খুঁজ নিলাম অনেক ফার্মেসিতে । কিন্তু কিছুতে কোন কাজ হল না । মাথায় বুদ্ধি এলো, পাশেই তো মগ বাজার কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র । গেলাম সেখানে, কিন্তু তারাও বলল নেই । লাগেটা কেমন ?
কিছুক্ষন পর এক লোক বলল আছে । আমি এনে দিতে পারব কিন্তু টাকা লাগবে অনেক বেশি । বললাম, লাগবে নারে ভাই । শেষে আবার কোন ঝামেলায় ফেসে যাবো । '' দেশের আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভাল '' কেউ যদি চক্ষে আঙ্গুল দিয়েও বলে, আমিও তাও বিশ্বাস করি না ।
ফিরে এলাম হসপিটালে । এসে দেখলাম সেই ডাক্তার আন্টি হাজির এবং সে মা ও বোনের সাথে গল্প জুরে দিয়েছেন । সে আমায় বলল, '' সব রেডি কিনা ? '' আমি উত্তর করলাম, '' সব রেডি তবে ! '' সে বলল, '' তবে কি ? '' আমি বললাম, '' ঐ সেন্সলেস করার মেডিসিনটি পাওয়া যায়নি । '' সে বলল, '' নীচেই তো আছে । '' আমি বললাম, '' তারা বলছে নেই । '' সে একটি চিরকুটে মেডিসিনের নাম ও তার সই দিয়ে দিলেন । ব্যাস কাজ হয়ে গেল । যদিও আমি তাদের আর কিছু বলিনি । আসোলে ঐ আন্টিই ছিলেন হসপিটালের মালিক এবং সে আমাদের পূর্বপরিচিতা । বেশ মজা লেগেছিল ব্যাপারটা । তবে খুব কষ্টও হচ্ছিল এই রকম একটা বাজে অভিজ্ঞতার জন্য ।
পুনশ্চঃ ১
ব্লাড ব্যাংক গুলোতে ব্লাড পাওয়া যাবে, এমনটা ভবা মোটেই উচিৎ নয় । অপারেশনের আগেই সব প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ । অনেক সময় ইমার্জেন্সি হতে পারে । তখন প্রফেশনালদের খুঁজ না করে আগে আত্মীয়স্বজনদের খুঁজ নেয়া ভাল । কেননা , এদের ব্লাড প্রফেশনালদের চাইতে স্বাস্থ্যবান ও বিশুদ্ধ হয় ।
পুনশ্চঃ ২
আগেই থেকেই হসপিটাল কর্তিপক্ষের সাথে কন্টাক্ট করে নিন যে মেডিসিন আপনি দিবেন এবং তা বাইরে থেকে ক্রয় করবেন । এতে করে পরে কোন মনমালিন্যের সৃষ্টি হবে না । আর মধ্যবিত্ত ঘরের কেউ হলে সার্জঙ্কে বুঝিয়ে বলে রাখুন যেন মেডিসিনের কোন অপচয় না হয় ।
পুশ্চঃ ৩
ব্লাড দেওয়া খারাপ কিছু না । বরঞ্চ আপনার সাস্থের জন্নই উপকারি । তাই ব্লাড দিন জীবন বাঁচান । আপনার এক ব্যাগ ব্লাডে বেঁচে যেতে পারে একটি জীবন । দেখতে পারে এই দুনিয়ার আলো ।
বিঃদ্রঃ ঐ ছেলে কোন টাকা নেয়নি ব্লাড দেবার জন্য । সে সেচ্ছাসেবক ব্লাড ডোনার ছিল । আমরা তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব সবসময় যে, একজন অপরিচিত ছেলে হয়েও এমন একটি মহতকাজ ফেরেশতার মতো করেছেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩২
সুমাইয়া আলো বলেছেন: ভাল বিড়াম্বনা বলতে হবে।