![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজেকে নিয়ে গবেষণা চলছে । জানলে জানাব ।
বাবা আমার জন্য আম আনিস, বাজারে থেকে বড় বড় পাকা পাকা আম আনিস, তুই তো জানিস আমার আম খেতে কত্ত ভাল লাগে, বাবা জানিস, চৌধুরীদের বাগানে না আজকাল আর ঢুকতে দেয় না । কি জানি এক বিদেশী কুকুর আনছে, যা পাজি না বাবা ! দেখলেই তেরে আসে । ওদের বাগানে কত্ত আম পরে থাকে, কিন্তু আনতে দেয় না । পচে যায়, পাখিরা খায়, বাদুরে আধাঁ খাওয়া করে ফেলে যায় । সে কি বাবা , তুই চলে যাচ্ছিস !
ওগো শুনছো, ঘরে কিন্তু চাল-ডাল কিচ্ছু নেই । তেলের বোতলও খালি । বাজারে যাওয়ার পথে করিম চাচার কাছে থেকে কিছুটা দুধ নিয়ে এসো । ছোটন আজকাল কেমন শুঁকিয়ে যাচ্ছে । কিছুটা পুষ্টি ওর দরকার । আলু আনার দরকার নেই । আজ না হয় শাক-ভাত দিয়েই চালিয়ে দিব । আম নিয়ে এসো । ও কিছুদিন ধরে আমের জন্য কেমন যেন উন্মুখ হয়ে আছে । হ্যাঁ গো, পেনসনের টাকাটা কি দেয়নি ? সকালে না গেলে । দিয়ে থাকলে একটা জামা বানাবার কাপড় ও এনো । দেখছোই তো, এ জামাটা পরে আর বাইরে বেরুনো যায় না ।
বাবা,বাবা, আমার জন্য লাল ফিতে এনো । গতকাল ম্যাডাম সবার সামনে আমায় লজ্জা দিয়েছে । বলেছে, '' এই তেল চিটচিটে ফিতা দিয়ে চুল বেধে আসলে তোমাকে লাইনে দাড়াতে দিব না । '' বাবা ইস্কুল থেকে সবাইকে এবছর নতুন জামা বানাতে বলেছে । বলেছে, '' কিছুদিন পর মন্ত্রী আসবেন ইস্কুলে, তাই সকলকে বাধ্যতা মূলক নতুন ইউনিফর্ম বানাতে হবে । '' জানো বাবা, সবাই না আমাকে নিয়ে তামাশা করে ইস্কুলে । কেউ আমার সাথে খেলতে চায় না । বলে নোংরা লেগে যাবে । এই ছেঁড়া জামায় পথের হায়নার দল উঁকিঝুঁকি করে । বাবা পারলে কম দামী জামার কাপড় এনো কিছু ।
কি রে করিম, কোথায় যাচ্ছিস বাজারে ? আমার টাকাটা কবে দিবি ? অনেক দিন তো হল । পিছনে কি লোকাচ্ছিস রে ? ঐ নান্টু দেখ তো, মাস্টার মশায়ের হাতে কি ? ( এক পৃথিবী শক্তি দিয়েও মাস্টার মশায় টাকাটা আটকে ধরে রাখতে পারলেন না । ) মাতবর সাব, এ যে অনেক গুলো টাকা । দেখি, দে তো । মাস্টার তুমি তো দেখি অনেক সেয়ানা । বাজারে গিয়ে ঠিকই ভাল খাবার কিনে পেটপুরে খাচ্ছো, আর এদিকে আমায় টাকা না দেওয়ার নানা অজুহাত দেখাচ্ছো। দিব নাকি কয়টা বেটারে ? না থাক, এলাকার মাষ্টার বলে কথা ।
একটি পাহারসম ব্রীজ । লোহায় মোড়ানো রেল পথ । দূর হতে রেল আসা সাইরেনের করুন শব্দ ভেসে আসছে কানে । বারবার আঘাত করছে অভাবের সংসারের প্রতিচ্ছবি মেশানো ছেলেটার কথাটা, '' বাবা আমার জন্য আম আনিস, বাজারে থেকে বড় বড় পাকা পাকা আম আনিস । '' আজ তার কাছে গত ত্রিশ বছরের মাস্টারি জীবনটাকে খুব ধিক দিতে ইচ্ছে করছে । ধিক দিতে ইচ্ছে করছে লোকদেখানো সম্মান গুলোকে, ধিক দিতে ইচ্ছে করছে ঐ ঘরে ঝুলানো গোল্ড মেডেলটাকে , যা কিনা তাকে দেয়া হয়েছিল শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হয়াতে । আজ তার দুনিয়া খুব বেশি ফ্যাঁকাসে লাগছে । ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানো সেই ভারিভারি বুলি গুলিকে আজ খুব বিবর্ণ লাগছে ।
এসব ভাবতে ভাবতেই আরেকটা সাইরেন পরল । গার্ড লাল নিশান নেড়ে সরে যাবার সংকেত দিচ্ছে । মাষ্টার মশায়ের মনে পরে গেল মেয়ের কথা, '' বাবা লাল ফিতে এনো, ছেঁড়া জামায় হায়নার দলের উঁকিঝুঁকি । '' আরো মনে পরল, ছোটনের মায়ের ছেঁড়া জামার কথা । এখনি তাকে হার মানলে চলবে না, বেঁচে থাকতে হবে, জীবন চলার পথের কঠিন সব পরিক্ষায় পাশ দেওয়া যে আরো বাকি আছে । ঘুরে দাড়াতে হবে । বইয়ের ভারিভারি শব্দরাশিকে যে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে । না, আমি হার মানতে পারি না, আমি হার মানব না ।
কিন্তু ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়েগেছে । লাল নিশানাটা যে চোখের সামনে স্বপ্নের মাঝে একটা পর্দা দাড় করিয়ে দিল । একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল পুরো শরীরে । তার পর সব শেষ । একঝাক কাক হুহুতাস করতে করতে এক পৃথিবীর ঘৃণায় ভরা বীভৎস সুরুদ্ধনি উচ্চারণে বিলাপের বার্তা নিয়ে পৌঁছে গেল মাষ্টার বাড়ির নিম গাছের মাথায় । একটা চিঞ্চিনিয়ে ব্যাথা খেলে গেল মাস্টারনীর বুকে । নীরবে পৌঁছে গেল একটি অপমৃত্যুর শোক বার্তা ।
২| ১২ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
বিষাদ বিষন্ন ৷ গল্পের প্লটটি অনেক ভাল তবে আরো একটু গুছিয়ে লিখলে আরো স্পর্শময় হতো ৷
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:০২
সুমন কর বলেছেন: লেখায় আরো একটু সময় দিলে, ভাল হতো।