নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মনের আর ভ্রমনের কথা লেখার জায়গা।

সূত্রধর

সূত্রধর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তাগাছার "আসল পালের" মন্ডার সন্ধানে...

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫১

কথা ছিল পিঠা ঊৎসব হবে, হাঁসের মাংসের সাথে পিঠা, তারিখ ২২শে জানুয়ারী ২০১৬, শুক্রবার। স্থান নিয়ে অনেক "ভাইবার সভা"র পরও যখন ঠিক করা গেল না, তখন "পিঠা ঊৎসব"এর নিমন্ত্রনকর্তা লাবলু ভাইয়ের উপর ছেড়ে দেয়া হল সে ভার। বন্ধু সুমনের প্রবল ক্ষমতার বলে আমরা একটা "নোয়া" গাড়ি নিয়ে বের হলাম অজানা পথে। সাথে শুধু সুরভী ভাবীর রান্না করা হাঁসের মাংস ভরা একটা হটপট। আর যাত্রী হয়ে ছিলাম আমি, লাবলু ভাই, বন্ধু হিমন, সুমন, ভাগিনা গৌতম আর আমাদের ছবি তোলার মডেল ভাইস্তা পলাশ।

চলতে চলতে এক সময় ঠিক হল ময়মনসিংয়ের মুক্তাগাছা যাব আমরা। কেউ কেউ গাইগুই করলেও বিখ্যাত মন্ডার লোভে কেউ আর বিরোধীদলে থাকল না (যদিও সুমন জাতীয় পার্টি ঢংয়ে বিরোধিতা করে যাচ্ছিল অনেক রাত হয়ে যাবে বলে। বৌয়ের ভয় কে না পায়!)।

বেলা ৪টায় বিমানবন্দরের সামনে থেকে রওনা দিয়ে সোয়া সাতটায় পৌছালাম মুক্তাগাছা। রাস্তার কথা বলতে গেলে একে ৮০ মার্কস দিতে হবে ১০০তে। রাস্তায় কোন উল্টাপাল্টা জ্যাম ছিল না, তাই "সদা মনে ভয়, কি হয়, কি হয়" করেও সুস্থ শরীরে মন্ডার ঘ্রানে মুক্তাগাছার বাজারে পৌছালাম। মন্ডার লোভে মাঝে মাঝে পিঠার কথা ভুলেই যাচ্ছিলাম মনে হয়।

বাজারে পৌছানোর আগেই পরিচিত বন্ধু-সহকর্মীদেরকে জ্বালাতন সহকারে জেনে নিয়েছিলাম কোথায় গেলে পাব তারে, আহারে মন্ডারে। ভেবেছিলাম এতেই কাজ হবে, আসল পালের দোকানে ঢুকে মাছির মত কিছু মিস্টি খেয়ে নিতে পারব। কিন্তু আশার মন্ডায় বালি। চারদিকে শুধু পালের দোকান। নারুগোপাল, জয়গোপাল, নন্দগোপালের ভীরে আসল পালের দোকান পাওয়া দায়। স্থানীয়দের কথা মত শুধু সামনেই এগোতে থাকলাম। সামনে, আরো সামনে...

এক সময় পেলাম এই দোকান।
দোকানের জরার্জীণ চেহারা দেখে বুঝলাম এটাই বুঝি আমাদের আসল পালের দোকান। নামতে আর দেরী না করে ঢুকে পড়লাম দোকানে। দোকানে ঠাকুর-দেবতার মুর্তি দেখে শ্রদ্ধায় বিগলিত হয়ে নেমে পড়লাম মন্ডার স্বাদ নিতে। খেতে খেতে ভাবছিলাম কি সুখী আমরা এমন একটা সুস্বাদু খাবার খাচ্ছি এর জন্মভিটায় দাঁড়িয়ে। দোকানী খুবই ভদ্র মনে হল, চাইলেন ৪৪০টাকা প্রতি কেজি, কিন্তু আমরা বলতেই রাজি হয়ে গেলেন ৪০০ তে। আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়লাম "নিজস্বী" আর "গ্রুপফী (এটার বাংলা কি?)" তোলায়।
পান্তা কখনো না খেলে নাকি এর আসল স্বাদ কেও ধরতে পারে না, পচা পান্তাও সুস্বাদু মনে হয়। মন্ডা খেতে খেতে মনে কোথায় যেন একটা খোঁচা খাচ্ছিলাম, কে যেন ভিতরে ভিতরে বলে যাচ্ছিল, "ওরে মুঢ়। কি খাচ্ছিসরে অধ্ম।" রাম যদি সতী-সাধ্ববী সীতাকেই সন্দেহ করে, আর এ তো মন্ডা। তবুও এরই মাঝে সাকুল্যে ১১কেজির অর্ডার দিয়ে ফেললাম। দোকানী বড়ই করিৎকর্মা মনে হল!

বিড়ি খাওয়া ছেড়েছিলাম এর মধ্যে ভাল কিছু খুঁজে না পেয়ে, কিন্তু সেদিন প্রথম বুঝলাম বিড়ি খাওয়ার উপকারিতা। ভাগিনা গৌতম বিড়ি খাওয়ার ছলে পাশের দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই জানা গেল এটা আসল পালের দোকান নয়। আর যায় কোথায়। পাত্রপক্ষ যেমন কনের খুঁত খুজে পেয়ে বিয়ে ভেঙ্গে রাগে গর্জাতে গর্জাতে কনের বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে গাল-মন্দ শুরু করে, আমরা তাই করলাম পারতপক্ষে, তবে ঈষৎ (সত্যিই!)। মুখে তখনও কিছু মিষ্টি লেগে ছিল বলে মনে হয় বেচারা বেঁচে গেল এযাত্রা! ভাইস্তা পলাশ এ ব্যাপারে অগ্রনী ভুমিকা রেখেছিল বলে ধন্যবাদ পাবার যোগ্যতা রাখে।

বিশ কদম সামনে আগাতেই পেলাম বহুক্ষনের আরাধ্য সেই দেড়-শতাব্দী প্রাচীন "মন্ডার দোকান"। গোপাল পালের প্রসিদ্ধ মন্ডার দোকান।

মনে তখন অদ্ভুত আনন্দ, মনে হচ্ছিল যেন আমরা ডাইনীর খপ্পর থেকে রেহাই পেয়ে এ যাত্রা বেঁচে গেছি আমরা, পেয়ে গেছি আমাদের গুপ্তধনের সন্ধান। দোকান দেখেই বুঝলাম "এবার আর ভালবেসে ভুল করিনি আমি" ;)। মন্ডা মুখে দিয়ে উপলব্ধি করলাম জিহবা এবার ঝড়ের পরের সমুদ্রের মতো প্রশান্ত আসল মন্ডার স্বাদ পেয়ে। আহ্‌, সে কি তার জ্যোতির্ময় চেহারা, মোহনীয় গন্ধ, আর পরিশেষে, অপূর্ব তার স্বাদ।

মুখে দিয়েই মনে হল, "আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম"।

(ছবি রাতে তোলা মুঠোফোনে, দেখতে অসুবিধা হলে মন্ডা মুখে ক্ষমা করবেন।)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এটা তো রাজবাড়ির সামনে তাই না? প্রথম যেটায় গিয়েছেন সবাই বোধ করি সেখানে গিয়েই ঠকে।

যারা চিনে না, তাঁদের জন্য একটা সঠিক গাইডেন্স দেন কিভাবে যাওয়া যায়।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০

সূত্রধর বলেছেন: ধন্যবাদ কাল্পনিক_ভালোবাসা আপনার সময় করে পড়ার জন্য।

যে কেঊ রাজবাড়ির রাস্তায় গিয়ে প্রথম দোকানে (উপরের দিকের ছবি) না গিয়ে পরের দোকানে (নিচের দিকের ছবি) গেলেই আর কেউ ধোকা খাবে না।

আর মুক্তাগাছা যাওয়ার অনেক বাস আছে মহাখালি থেকে, আর নিজেদের গাড়ি থাকলেতো কথাই নাই।

আবারো ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৫

পুলহ বলেছেন: আমিও দুই/তিন হপ্তা আগে একবার ময়মনসিং সদরে গিয়েছিলাম, ইচ্ছা ছিলো মুক্তাগাছার মন্ডা নিয়ে আসবো- কিন্তু সময় কুলাইতে পারি নাই। :(
আপনার রসিক পোস্ট পড়ে খুব মজা পেয়েছি ভাই। আশা করি খুব দ্রুতই এই জায়গায় গিয়ে গোপাল পালের দোকানের আসল মন্ডা চেখে দেখতে পারবো..
শুভকামনা :)

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৫

সূত্রধর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্যে।

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৪২

রাবার বলেছেন: আসল মুক্তা গাছার মন্ডা কি সত্যই আছে ভাই!! অনেক নাকি মজার আছিল শুনছি :(

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৬

সূত্রধর বলেছেন: চলে যান। গেলে আর ঠকবেন না। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.