নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
২০০৩ সালের কথা। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্য কোন প্রকার আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মারণাস্ত্র থাকার মনগড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে সামরিক আক্রমণ শুরু করলো ইরাকে। জাতিসংঘ ঠুটো জগন্নাথের মতো চেয়ে চেয়ে দেখলো সাধারণ ইরাকীদের উপর তেল-লুটেরা বুশ-ব্লেয়ার সরকারের বিধ্বংসী বর্বরোচিত হামলা। সারা দুনিয়ার সাধারণ মানুষ সেদিন ইরাক হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল। এমনকি হামলাকারী দেশ আমেরিকা-যুক্তরাজ্যেও লক্ষ লক্ষ লোকের প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল।বাংলাদেশেও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সংগঠন রাজপথে বিক্ষোভ করেছিলো জামায়াত-শিবির বাদে। জামায়াত-শিবির যেহেতু আমেরিকার খাস পদলেহী তাই তারা প্রভূভক্তি দেখিয়ে আমারিকার বিরুদ্ধে সেদিন বিক্ষোভ করেনি। কখনই তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলে না যদিও।
গৌরচন্দ্রিকা ছেড়ে আসল কথায় আসি। ৯৭% মুসলমানের দেশ ইরাক। সাথে ছিলো গোটা দুনিয়ার একশতকোটিরও বেশি মুসলমান এবং আরো কয়েকশ কোটি বিভিন্ন ধর্মের-চিন্তার সাধারণ মানুষ। অর্থাত গোটা বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি লোক ছিল ইরাক আক্রমণের সরাসরি বিরুদ্ধে। শতকোটি মুসলমান দুহাত তুলে আল্লার দুয়ারে ফরিয়াদ জানিয়েছিলো তখন, ইরাকের মুসলমানদের রক্ষা করতে। কত নামাজ, কত দোয়া, কত ইবাদত, কত বয়ান, কত খুতবা, কত জিকির, কত কান্না...... যে করেছিলো তাবত দুনিয়ার মুসলমানরা সেদিন ইরাক রক্ষায়, তার কোন ইয়ত্তা নাই।
তখন আমি ঢাকায় হাইকোর্টের একজন বিশিষ্ট আইনজীবীর চেম্বারে পার্ট টাইম চাকরি করতাম। দলিল লিখতাম বিভিন্ন ধরণের বিশেষ করে ব্যাংকে জমি বন্ধক এবং জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত। হঠাত একদিন দেখি আমার উকিল সাহেবের মন খুবই খারাপ। কথা বলছেন না তেমন। তাঁর কয়েকজন পুরনো বন্ধু আড্ডা দিতে এসেছেন তারপরও তিনি আড্ডায় মন বসাতে পারছেন না। কিছুক্ষণ পর মাগরিবের নামাজের সময় হলো। আমার উকিল সাহেব খুবই ধার্মীক লোক এবং যথেষ্ট ভাল মানুষ হিসাবেই আমি জানি। আমি কখনও তাঁর নামাজ কাজা হতে দেখিনি। রোজা ভাঙতেও দেখিনি কখনও। সেই মানুষটা সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললো-আপনারা নামাজে যান- আমি আর নামাজ পড়বো না। সবাই তো থ, কেউই বুঝতে পারছে না ঘটনাটা কি। আমিও স্যারের মুখের দিকে সরাসরি না তাঁকিয়ে এদিক সেদিক তাঁকাচ্ছি এবং ঘটনাটা বোঝার চেষ্টা করছি। উকিল সাহেবের মুখ দিয়ে এবার কথা বেরুলো-তবে অনেকটা কান্না জড়ানো। বল্লেন, আমার মেয়েটা গতকাল থেকে কিছুই খায় নি।সারা রাত শুধু কেঁদেছে আর বলেছে আল্লা তুমি ইরাকের মুসলমানদের রক্ষা কর। উকিল সাহেবের একমাত্র মেয়ের বয়স তখন ছয় কি সাত। ওনার আবেগ জড়ানো কথা তখন থামছিল না। একটা বয়স্ক, শিক্ষিত, ভদ্র মানুষ এভাবে ভেঙে পড়তে পারে আমি আগে কখনও দেখিনি। বল্লেন, মেয়েকে কোনভাবেই সান্তনা দিতে পারছি না। অনেক বলেছি যে, আল্লা নিশ্চয়ই আমাদের কান্না শুনবেন, আমেরিকাকে শাস্তি দিবেন, ইরাককে রক্ষা করবেন। কিন্তু গতকাল থেকে সে আর বুঝ মানছে না। সারাদিন টিভিতে নিউজ দেখে আর নামাজের সময় নামাজ পড়ে- কেঁদে কেঁদে আল্লার কাছে মুসলমানদের রক্ষার কথা বলে। চেম্বারে সব মিলিয়ে জনা আটেক লোক আমরা। এরমধ্যে দুজন ব্যাংকের অফিসার, একজন জুনিয়র উকিলও উপস্থিত। কিন্তু বসের এমন হৃদয়ভাঙ্গা আবেগী কন্ঠে কেউই রা কাড়ছেন না। এরপর উনি একটু শক্ত হলেন, বেশ দৃঢ় কন্ঠে বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর নামাজ পড়বো না। নামাজ পড়বো কেন?? পড়ে কি হবে?? কোটি কোটি মুসলমান নামাজ পড়ছে। আর আল্লার কাছে বলছে- আল্লা তুমি ইরাক রক্ষা কর, নাছারাদের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করো। কৈ! আল্লা তো কোটি কোটি মুসলমানের কান্না শুনছে না। যে আল্লা নাছারাদের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করতে পারে না, সেই আল্লা থাকলেই বা কি, আর না থাকলেই কি!! আর আমি একা নামাজ পড়ে কি করবো, কোটি কোটি মানুষের দোয়াই তো দেখছি কবুল হয় না। বিধর্মীদের হাতে প্রতিদিন হাজার হাজার মুসলমান শহীদ হচ্ছে। কোটি মানুষের নামাজই যখন কবুল হয়না তখন, আমার নামাজ কবুল হবে সেটা আমি কিভাবে বিশ্বাস করি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি..... আপনারা যান নামাজ পড়ে আসুন।
ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে চাকরী ছাড়লেও কয়েকমাস পরে উকিল সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে জানতে পারি উনি আবারও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন।
©somewhere in net ltd.