নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আল্লা কি তার ঠিকানা বদল করেছেন!!

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৪

এখন পেশাদার ভিক্ষুক। তবে ভিক্ষুক হতে চাইনি দীন ইসলাম। গ্রামের সহজ-সরল নিরক্ষর ভূমিহীন কৃষক দীন ইসলাম।পরের জমিতে কামলা দিয়েই তার সংসার চলতো। ভাল থাকবে ভেবে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ছোট একটা ব্যবসাও শুরু করেছিল সে। গ্রাম থেকে ডিম কিনে শহরে বিক্রি করা। কিন্তু না । ব্যবসার লাভ তার কপালে সইলো না। ডিমভর্তী ঝাকাসহ রাস্তায় একটা আছাড় খেয়েই তাকে ছাড়তে হলো বাপ-দাদার ভিটে-মাটি। সে যে ঋণ পরিশোষের চেষ্টা করেনি তা নয়। কিন্তু যখন দেখলো ঋণ পরিশোধের আর কোন রাস্তা নেই তার হাতে। তখনই বউকে নিয়ে সে পালিয়ে আসলো ঢাকায়। একমাত্র মেয়ে আগেই ঢাকায় এসে গার্মেন্টসে কাজ নিয়েছে। কিছুদিন সব ঠিকঠাক থাকলেও মাস কয়েক হলো মেয়ে আর কোন যোগাযোগও রাখে না বাপ-মার সাথে। দীন ইসলাম পরস্পর শুনেছে এক ঢাকাইয়া পোলার লগে নাকি তার মেয়ে বিয়ে বইছে।

ঢাকায় এসে সারা দিন রিক্সা চালালেও ভালোই চলছিল তার দিন।অন্তত খাওয়ার কোন কষ্ট ছিল না। কিন্তু বস্তির পরিবেশের সাথে তার শরীর নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলো না। হঠাত করেই রোগে একেবারে বিছানায় পড়ে গেলো সে। শরীরটা যেন আর তার নিজের নেই। মেডিকেলে গিয়ে টিকিট কেটে বেশ কয়েকবার ডাক্তার দেখালেও জ্বর আর ছাড়ছে না তাকে। শরীরও খুব দুর্বল। রিক্সা চালানো তো দুরের কথা হাটতেই খুব কষ্ট হয়। ডাক্তার বলেছে- ডান পা টা সমস্যা। ভাল চিকিতসা দরকার। কিন্তু ভাল চিকিতসার টাকা কই। এই খানেও তো ধার-কর্য বাকী নাই। আর বউটাও এই ফাঁকে খাওয়ানোর মুরোদ নেই অপবাদ দিয়ে চলে গেলো আরেক রিক্সাওয়ালার সাথে। দীন ইসলাম তাই এখন একা এবং পেশাদার ভিক্ষুক।

ভিক্ষার বাজারেও খুব মন্দা চলছে এখন দীন ইসলামের। মাথায় নামাজী টুপি পরে আল্লা আল্লা করলেও মানুষ আর টাকা দিতে চায়না তেমন। ওষুধ কিনবে কি! খাওয়া-থাকার পয়সাই যোগাড় হয়না ঠিকমতো। প্রতিদিনই সময়মতো মসজিদের সামনে অন্য ভিক্ষুকদের সাথে বসে থাকে দীন ইসলাম। নামাজীরা এখন আর আগের মতো দান-খয়রাত করে না। কেউ কেউ একটা করে দুইটাকার নোট দেয় যদিও। কিন্তু দুইটাকার কি আর দাম আছে এখন!! বাইতুল মোকারামের সামনেও গিয়েছে কয়েকদিন। কিন্তু মসজিদ যেমন বড় ভিখারীর সংখ্যাও তেমন বেশি। আবার রিক্সা ভাড়াও লাগে সেখানে যেতে। তাই এখন পাড়ার মসজিদই দীন ইসলামের ঠিকানা।

হঠাত এক বুদ্ধি খেললো দীন ইসলামের মাথায়। আচ্ছা বড়লোকের এলাকা গুলশান গিয়ে চেষ্টা করলে কেমন হয়। বড়লোকরা তার মেডিকেলের কাগজ দেখালে হয়তো বড় নোট ছাড়তে পারে। হ্যা গুলশান যেতে রিক্সাভাড়াই লাগবে অনেক। বাসে যেতে পারলে ভাল হতো।কিন্তু সেই শক্তি কি আর হবে কখনও দীন ইসলামের!! ডান পা টা তো একদম চলতে চায়না। একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো দীন ইসলাম। গুলশান সে যাবেই!

শেষ রাতে উঠেই আগে থেকে ঠিক করা রিক্সায় বড়লোকদের আস্তানা গুলশান চলে আসলো দীন ইসলাম। খুব ভোরে রিক্সা ভাড়া যেমন কম তেমনি রাস্তাও ফাকা। বড় রাস্তায়ও রিক্সা থামানোর জন্য ট্রাফিক পুলিশ নেই। ফজরের আযানের আগেই একটা ঝকঝকে মসজিদের সামনে অবস্থান নিলো সে। কিন্তু এ কি অবস্থা। ফজরের আযান হলেও মসজিদে লোক ঢুকছে খুবই কম। বড় লোকরা কি এখনও ঘুমে!!! দীন ইসলামের চিন্তা বাড়তে থাকে। আচ্ছা, আল্লাই তো এদের এত ধন-সম্পদের মালিক বানাইছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লেও কি আল্লা এদের এত বড়লোক বানাইছে! নিশ্চয়ই এরা ঘরের মধ্যে নামাজ আদায় করছে। কিন্তু সব বড়লোকরাই যদি ঘরে নামাজ আদায় করে তাহলে তার কি হবে। অপেক্ষা করতে থাকে দীন ইসলাম। কিছুক্ষণ পর নামাজিরা বেরিয়ে আসতে থাকে। না, তার নছিবই খারাপ। একেতে অল্প কয়েকজন নামাজী, তাতে আবার দানের মানুষ আরো কম। সব মিলিয়ে গোটা দশেক দুই টাকার নোট। দীন ইসলাম ভাবে, নিশ্চয়ই এরা বড়লোকদের চাকর-বাকর। কিন্তু এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সে বাসায় ফিরবে কি করে। যাতায়াতের রিক্সা ভাড়া উঠানোর পরেই না ইনকাম।

এশার নামাজও শেষ। সারাদিনে দীন ইসলাম নিজের গুলশান যাতায়াতের টাকাটাও হাতে পেল না। সিদ্ধান্ত নিলো গুলশানেই রাত কাটাবে। মসজিদে থাকা যায় কি না চেষ্টা করেও দেখলো। কিন্তু না, মসজিদে রাত্রে কোন লোক থাকা নিষেধ। এমনকি মুসল্লি হলেও থাকতে দিবে না। তার মতো ভিখারীতো কোন ছার। রাস্তায়ই তার রাত কাটাতে হবে। মনে মনে আত্মতুষ্টি খোজার চেষ্টা করলো দীন ইসলাম। একটাই তো রাত, নিশ্চয় কাল সে বাসায় ফিরে যেতে পারবে। কষ্ট করে হলেও একটু হাটতে চেষ্টা করলো দীন ইসলাম। ডান পা টা আস্তে আস্তে কেমন শুকিয়ে চিকন হয়ে যাচ্ছে। এখন হাঁটতে অনেক কষ্ট হয় তার। তারপরও আলো ঝলমলে গুলশান। এক জায়গায় বসে থাকতে কি ভাল লাগে!

গভীর রাতে এক গল্লির মুখে কয়েকজন ভিক্ষুক দেখে থমকে গেলো দীন ইসলাম। এত রাতে এখানে ভিখারী কেন? কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো- এখানে কি কোন মসজিদ আছে ভাই? দীন ইসলাম ভাবলো, বড় লোকের ব্যাপার, নিশ্চয়ই এখানে কোন মসজিদে ফজরের নামাজে বড়লোকরা নামাজ পড়ে। খয়রাতীগুলো আগে থাকতে এসে তাই লাইন জুড়ে দিয়েছে এখানে। মুরব্বী গোছের একজন উত্তর দিলো- না ভাই। পাশের এক জন ফোড়ন কাটলো- নতুন পাগলের আমদানী। দীন ইসলাম বুঝাতে চাইলো সেও তাদের মতোই একজন পথের ভিক্ষুক কিন্তু এই বড়লোকের এলাকায় সে নতুন। মুরব্বী বেশ ভালভাবেই কথা বললো- বসেন এই খানে। খানিকটা দুরের অন্ধকার গোছের বাড়ীটা দেখিয়ে বললো- ওই টা একটা বার। ওখান থেকে লোক বেরুলে তারা দান করতে পারে। দীন ইসলাম আস্তে আস্তে জীজ্ঞাসা করলো- বার কি ভাই? এখানে এসে বড়লোকরা পানি-টানি খায়, মানে মদ খায় আর কি! উদাস কন্ঠে উত্তর দিলো মুরব্বি। দীন ইসলাম শুনেছে মদ খাওয়ার জায়গাকে শুড়িখানা বলে। কিন্তু গুলশানের বড়লোকরা শুড়িখানাকে বলে বার!! বুড়োর সাথে দীন ইসলামের ইতিমধ্যে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। অনেকটা প্রশ্নের সুরে দীন ইসলাম বললো- ভাই মদ খাওয়া তো হারাম, সেরেকি গুনা। এরা নামাজ পড়তে মসজিদে যায় না কিন্তু এইখানে আসে মদ খাইতে। তারপরেও আল্লা এদের ধন-সম্পদ দিয়া রাখছে!! মুরব্বি সুন্দর করেই বুঝাইয়া দিল দীন ইসলামরে। মদ তো আর তুমি আমি খাচ্ছি না। আমরা তো এখানে বসে শুধু আল্লা আল্লা করছি। আল্লার যদি দয়া হয় নিশ্চয়ই তিনি আমাদের রিজিক দান করবেন। কার হাত দিয়ে তিনি আমাদের দান করবেন সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।

অনেক দিন পর দীন ইসলাম গভীর চিন্তার মধ্যে ডুবে গেলো। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু দীন ইসলামের চিন্তা আর শেষ হয় না। আল্লা কেন শুধু শুধু তার মতো গরীব মানুষকে এত কষ্টের মধ্যে রাখেন। নামাজ-কালাম না পড়লেও এগুলাকে এত টাকা দেন ক্যান। এদের খাওয়ার কষ্ট নেই ক্যান...

হঠাত করে দীন ইসলাম লক্ষ্য করলো বেশ দুরের অন্ধকার বাড়ীটা থেকে বের হয়ে একটা লোক টলতে টলতে তাদের দিকেই আসছে। আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা একটা রিক্সা এগিয়ে গেলো লোকটার দিকে। এত দুর থেকে গাছের ছায়ায় পরিস্কার দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না দীন ইসলামের! রিক্সার কাছে না আসতেই রাস্তাতেই ঢলে পড়লো লোকটা। রিক্সা ওয়ালা নিচেয় নেমে রিক্সাটাকে টেনে নিয়ে গেলো লোকটার কাছে। লোকটাকে চেষ্টা করছিলো ধরে রিক্সায় তুলতে। কিন্তু পারছিলো না। দীন ইসলাম উঠে দাঁড়ালো। মুরব্বি বললো- সাবধান, মাতাল অবস্থায় এই লোকগুলো অনেক সময় অপরিচিত লোক দেখলেই মারধর করে। দীন ইসলাম তারপরও ভাবলো- না, রিক্সাওয়ালাটাকে একটু সাহায্য করা দরকার। বার কয়েক চেষ্টার পরও রিক্সাওয়ালা লোকটাকে রিক্সায় উঠাতে পারে নি। এবার একেবারে চিত হয়ে শুয়েই পড়েছে লোকটা। আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে লোকটার কাছে বসে পড়ল দীন ইসলাম।রিক্সাওয়ালা বললো- একটু সাহায্য করেন ভাই। এতবড় শরীর, একার পক্ষে টেনে তোলা সম্ভব নয়। দীন ইসলাম বললো- ধরেন, আমি বসেই আপনাকে যেটুকু সাহায্য করতে পারি। এমন সময় লোকটা ঘাড় এদিক সেদিক নাড়াচাড়া করতে করতে উঠে বসলো। জড়ানো গলায় বললো- রিক্সাটা যে কেন এত উঁচু করে তৈরী করেছিস!!

হাত লাগালো দীন ইসলাম। নীচেয় বসেও যথেষ্ট জোর দিয়ে ধাক্কা দিলো লোকটার পাছায়। রিক্সাওয়ালা লোকটাকে একেবারে ধানের বস্তার মতো করে এক হ্যাচকায় টেনে তুললো রিক্সার উপর। বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলো- কোন বাসায় যাবো স্যার? লোকটা এবার বেশ পরিস্কার গলায়ই বললো- লেকের পাড়ের টায় নিয়ে যা।

রিক্সাওয়ালা রিক্সা টান দেয়ার আগেই দীন ইসলাম উঠে দাঁড়ালো। কিছুটা সংকোচ নিয়ে হলেও, হাত বাড়ালো। আল্লার ওয়াস্তে কিছু দ্যান সাব! লোকটা ইসারায় রিক্সাওয়ালাকে দাঁড়াতে বললো। পকেটে হাত ঢুকালো! কি যেন টেনে বার করার চেষ্টা করলো। তারপর এক ঝটকায় হাতটা পকেট থেকে বের হয়ে দীন ইসলামের সামনে চলে আসলো। বললো- নে, ধর। দীন ইসলাম- দুহাত দিয়ে চেপে ধরলো। হ্যা, টাকাই তো মনে হয়। গাছের ছায়ায় ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। নিরক্ষর হলেও দীন ইসলাম কোনটা কতটাকার নোট সেটা ভালই জানে। দেয়ালের গায়ে উপর থেকে একটা আলোর রশ্মি এসে পড়ছে। সেদিকে এগিয়ে গেল দীন ইসলাম। হাতের উপর আলোটা ফেলতেই দীন ইসলামের বুক ধড়পড়ানি শুরু হয়ে গেলো। আরে- এগুলো তো সব হাজার টাকার নোট। গুনে দেখলো আট টা। আট হাজার টাকা। বিশ্বাসে আটছিল না দীন ইসলামের। অবশেষে আল্লার দয়া হলো তার উপর। কেঁদে ফেললো দীন ইসলাম। হে খোদা, পরোয়ার দেগার! আমার চিকিতসার টাকা তুমি শেষ পর্যন্ত মাতালের হাত দিয়ে দান করালে!! তোমার লীলা বোঝা দায়। দীন ইসলাম আবার ভাবলো- কিন্তু ওয়াজ মাহফীলে সে তো শুনেছে, আল্লার ঠিকানা ‘মসজিদ’। এখন তো দেখছি আল্লার কিছমত এই শুড়িখানায়। তাহলে কি আল্লা তার ঠিকানা বদল করলো!! না.. কি হুজুরসাব ভুল ঠিকানা দিয়েছিলো ওয়াজ মাহফীলে!! কোন উত্তরই মাথায় আসছে না দীন ইসলামের। তোমার মহিমা বোঝা দায়! হে আল্লা! দুই টাকার নোট নিয়ে যারা মসজিদে ঢোকে তাদের চেয়ে তো এই মাতালগুলো অনেক দিলখোলা। দুই হাত তুলে দোয়া করলো দীন ইসলাম। আর বললো- আল্লা! এদের মাধ্যমেই তুমি গরীবদের সাহায্য করিও আল্লা। এরা অন্তত হাজার টাকার নোট দিবে। গরীবগুলো বেঁচে যাবে।

দুর থেকে মুরব্বির গলা শুনতে পেলো- কি রে? নতুন পাবলিক! কৈ! ওইখানে না খারাইয়া.. এইখানে আসো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.