নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐক্য এবং সংগ্রাম= মুক্তি

পাঠক লাল গোলদার

শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।

পাঠক লাল গোলদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

হালারা মাইনষের জাতই না!! আস্তা শয়তান!!

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৮

আরে! হালায় বিয়া হরছে চারডা। হে আবার ভালা মানু হয় কেমনে। আমি ভালভাবে বোঝার চেষ্টা না করেই জিজ্ঞাসা করলাম- চার বিয়ে হলেই যে মানুষ খারাপ, সেটা ঠিক না। শোনার সাথে সাথে বৃদ্ধ তো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। বললো- দুইডা হইলে কোন রহমে মানা যায়, যদি আগের বউ মাইরা থাহে। আর বউ থাকতে নিয়া- ওই ব্যাটা মানুষ ভালা না। তিনডা, চারডা বিয়া- হে হালায় তো মাইনষের জাতই না। আস্তা শয়তান। কোন ভালা মানষে এতগুলা বিয়া হরে না কি!!! আমি তো থ হলে গেলাম।

জনা ত্রিশেক লোক আমরা। তার মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলাও আছে। আমরা দুজন ছাড়া বাকি সবাই চরের বাসিন্দা। ফর্মাল বৈঠক শেষ হয়েছে সন্ধ্যার আগেই। খাওয়া-দাওয়ার পরে রাত্রে বসে চরের নানান অবস্থার কথা, আন্দোলনের কথা, বিভিন্ন পুরানো-দলত্যাগী নেতাদের কথা আলাপ করছিলাম। আমি বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের সাগরধোয়া চরের কথা বলছি। চরে যারা কখনও যাননি তাদের বুঝতে কষ্ট হবে। কারণ মুল ভূখন্ড থেকে বিছিন্ন ওই সব চরে জীবনযাত্রা সম্পূর্ণৃ অন্যরকম। বেশিরভাগ চর থেকে দিনে একবারই নৌকাযোগে মূল ভূখন্ডে যাতায়াত করা যায়।

পুরানো এক নেতার কথা উঠতেই আলোচনার পরিবেশ অন্যরকম হয়ে গেলো। উপস্থিত সবাই কৃষক, কঠিন জীবন সংগ্রামে লিপ্ত। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দু’একজনের থাকলেও সেটা হাইস্কুলের গন্ডি পেরোয়নি। গ্রাম-বাংলার এই খেটে খাওয়া মানুষগুলো খুবই শিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই আমি জিজ্ঞাসা করলাম- কেনো! আপনাদের নবীজীই তো তের-চৌদ্দটা বিয়ে করেছিলেন!! তার জন্য কি তিনি খারাপ মানুষ!! সাথে সাথে আর একজন বয়স্ক কৃষক জিজ্ঞাসা করলেন- কোন নবীজী? আমি বল্লাম- হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আমি জানি গ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের সেন্টিমেন্ট! তার পরও পরিস্থিতি আমার আয়ত্বের বাইরে চলে গেলো। আমার অগ্রজ নেতা সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু কেউই থামতে চাচ্ছে না। অবস্থা যা তাতে আমার মাইর খাওয়ার পালা। একজন যুবক দাঁড়িয়ে আমার দিকে আঙ্গুল ঝাকিয়ে বললো- আমনে চরে আইস্সে নবীজীর বিরুদ্ধে কুতসা রটাইতেছেন ক্যান??

আমার কথা শোনার মানুষ নেই। সবাই জোরে জোরে চিল্লাইতেছে।... আমি হিন্দু হইয়া ক্যান মুসলমানের বিরুদ্ধে কথা কইতাছি? কিসের রাজনীতি করি আমি? নবীজী এত গুলান বিয়া হরছে এইডা তো নাছারাগো কথা!! কয়বরে এক পাও গেছে- বাপের জন্মেও হুনিনাই এরহম অলুক্ষুণে কথা.... ইত্যাদি... ইত্যাদি...। আমি চুপ করে শুধু শুনে গেলাম। সবার কথা বলা একটু কমলে- সবচেয়ে উচ্চ কন্ঠে কথা বলা বৃদ্ধ কৃষককে উদ্দেশ্য করে বললাম- আমি, দুঃখিত। এখানে আমি ধর্ম নিয়ে কোন কথা বলার জন্য আসিনি। আপনাদেরকে বা কারো ধর্মকে অপমান করাও আমার কোন উদ্দেশ্য নেই। শুধু আমি আপনাদের কাছ থেকে এটুকু শুনতে চাই যে, আপনারা কি কেউ জানেন না বা কখনও শোনেননি যে নবীজী তেরটা বিয়ে করেছিলেন? কেউ কেউ ক্রদ্ধ, কেউ কেউ রাগান্নিত কন্ঠে জবাব দিলো- না, তারা কেউ শোনেনি। আমি তাদের ঠান্ডা করার জন্য বললাম- আচ্ছা ঠিক আছে। আপনাদের পরিচিত কোন মাওলানা বা মাদ্রাসায় পড়া অন্তত দাখিল পাশ কোন লোকের সাথে পরিচয় আছে আপনাদের কারো! বেশ কয়েকজন হাত তুললো- হ্যা। আমি বললাম, আপনাদের উত্তেজিত হওয়ার কোন কারণ নেই। আমার কথাও তো শোনা কথা। আমি তো আর সেই নবীজীর সময়ের মানুষ না। আর আমি মুসলমানও না। তাই আমার কথায় ভুল থাকতে পারে। তবে আপনারা দয়া করে যারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ভাল জানে তাদের কাছে একটু প্রশ্নটা রাইখেন। যদি তারা আমার কথা মিথ্যা বলে-আমি পরেরবার এসে মাফ চেয়ে নিবো।

অনেক কষ্টে সেদিন সাধারণ মানুষের ক্ষোভের হাত থেকে বেচেছিলাম। পরেরবার যখন ঐচরে গেলাম- চুলপাকা মুরব্বিকে জিজ্ঞাসা করলাম। উনি বল্লেন, হ্য, ব্যাটা! আমনের কথাই ঠিক! এতগুলান বিয়া করার পরেও মানু ভালা অয় ক্যামনে... তয় হুনছি হেই আমল ওই রহমই আছিল....



আজ আবার সংবাদপত্রে দেখলাম শফি হুজুরেরও তিনখান বিয়া! এই আমলেও তো ওই রহমই আছে!.... ওই বৃদ্ধের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াই মনে পড়লো- হালারা মাইনষের জাতই না!! আস্তা শয়তান!!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.