নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শোষণ-বৈষম্য হীন একটা মানবিক সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনে কাজ করি আমি। বুর্জোয়া আধিপত্যের বিপরীতে রাজেনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক, সাংস্কৃতিক ও মনজাগতিক ক্ষেত্রে শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের পাল্টা আধিপত্য গড়ে তোলাই প্রথম কাজ।
কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি ঈমাম-মোয়াজ্জীনদের বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশে হাইকোর্ট বলেছে, রাজ্য সরকার কর্তৃক ঈমাম-মোয়াজ্জীনদের বেতন-ভাতা দেয়া অসাংবিধানিক। ভারতের সংবিধানের ১৪, ১৫ক এবং ২৮৩ ধারা মতে ধর্মের ভিত্তিতে সরকারি অনুদান নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশের ৭২’এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূল নীতির একটি। পরে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতার জায়গা দখল করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আবার ২০১১ সালে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখেও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে সংবিধানে। অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ এটা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন যে, রাষ্ট্রধর্ম রেখে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা যোগ করলে এর কোন অর্থ হয় কি না!
কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান কি কখনও সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ছিলো? মানুষকে ধর্মের পথে নিয়ে আসতে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে অর্থব্যায়ের বিরুদ্ধে সেখানে কি কোন শব্দ কখনও লেখা হয়েছে?? ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কি ধর্মীয় কাজে উৎসাহ দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি বুঝায়? একটা রাষ্ট্র যখন মসজিদ-মন্দির তৈরীর টাকা দেয়, পূজা-মাহফিলের যৌলুস বাড়াতে অর্থ সহায়তা করে তখন কি সেই রাষ্ট্রের আর কোন ধর্মনিরপেক্ষতা থাকে? অনেক দেশেই ধর্ম আর রাষ্ট্র সম্পূর্ণ আলাদা দুইটি বিষয়। ধর্ম পালন করা এবং ধর্ম পালন না করা, দুটোই মানুষের অধিকার। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা চিন্তার স্বাধীনতা বললেও বিষয়টি একই। ধর্ম একজন ধার্মিকের ইহজগত ও পরজগতের সুখের কথা বলে। বাংলাদেশ তো আর স্বর্গ বা বেহেস্তে যাবে না? বা কোন ধার্মিক বেহেস্তকে বাংদেশের মতো করে গড়ে তোলার চিন্তাও করেন না! বা বাংলাদেশকে বেহস্তের আদলে গড়ে তোলার কথাও ধার্মীকরা কখনও চিন্তা করেন না। তাহলে রাষ্ট্র কেন ধার্মিকের বেহেস্ত চিন্তার শরীক হবে? বা রাষ্ট্র কেন গরীবের হক কেড়ে নিয়ে জনগণের তহবিল থেকে ধর্মীয় কাজে অর্থ ব্যয় করবে? ধর্ম তো হয় মানুষের! রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি? রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাষ্ট্র গঠনের যে চারটি মূল উপাদানের কথা বলা হয়েছে সেখানে ধর্মের কোন অস্তিত্ব নাই। জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখন্ড, সরকার আর স্বার্বভৌমত্ব- এই চারটি উপাদান নিশ্চিত হলেই সেটা একটা যথাযথ রাষ্ট্র। সাম্যবাদী রাষ্ট্র বলেন, কল্যাণমুলক রাষ্ট্র বলেন, শান্তিকামী রাষ্ট্র বলেন, সুখ সমৃদ্ধ রাষ্ট্র বলেন! যে ধরণেরই রাষ্ট্ গঠনের চিন্তা করেন না কেন সেখানে ধর্মের কোন প্রয়োজনীয়তা নাই।
ধর্মের বহুবিধ অপব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তারমধ্যে রাষ্ট্রের ঘাড়ের উপর ধর্মের বোঝা চাঁপিয়ে দেওয়াটা ধর্মের অন্যতম অপব্যবহার। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিরও একটা ধর্ম আছে। ধর্মব্যবসায়ী আর ক্ষমতালোভীরা মিলে-মিশে তাদের ব্যবসা এবং মসনদ রক্ষার্থে রাষ্ট্রের মাথায় টুপি পরিয়ে দিয়েছেন! মোটেও ধার্মিকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে তারা একাজ করেন নি। জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় দেশের কোটি কোটি গরীব মানুষের হক মেরে ধর্মকে সম্পূর্ণ নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন তারা এবং এই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য যারপরনাই চেষ্টাও করে যাচ্ছে সাম্প্রদায়ীক-ধর্মব্যবসায়ী শাসকশ্রেণী।
বাংলাদেশে বরাবরই ধর্মীয় গোষ্ঠীসমূহ রাষ্ট্রীয় নানাবিধ সুবিধা ভোগ করছে। রাষ্ট্রকর্তৃক ধর্মপালনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যে কাজ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর, রাষ্ট্রের নয়! রাষ্ট্র ধর্মখাতে বিশাল আকারের বাজেট ঘোষণা করছে! ঈমাম-মোয়াজ্জীনরা এখানে সরকারী বেতনভোগী! দেশের উন্নয়নের স্বার্থে যারা উদয়-অস্ত শ্রম দিতে প্রস্তুত সরকার সেইসব বেকারদের কাজ দিতে পারে না। অথচ দেশের উন্নয়নে, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে যাদের অবদান একেবারেই শূন্য! সম্পদ ধ্বংস ছাড়া যাদের অন্য কোন কাজ নেই! রাষ্ট্র তাদের চাকরী দিয়ে বসে আছে।
চরম সাম্প্রদায়ীক একটা রাষ্ট্রকে এখানে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে জনগণের সামনে হাজির করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী গোষ্ঠীসমূহ মিলেমিশে যাই করুক না কেন সংবিধানে বারকয়েক ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি লিখেই তাদের সব কাজ শেষ। হয়ে গেলো ধর্মনিরপেক্ষতা!
বিশ্বে যেগুলো মার্কামারা সাম্প্রদায়িক দেশ তাদের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হানাহানির তেমন কোন পার্থক্য নেই। সেই সব দেশসমূহেও সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বাংলাদেশেও! তারা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা করে! বাংলাদেশেও সেটা হরহামেশা ঘটে! সাম্প্রদায়িক দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরাও বরাবর চোদ্দগোষ্ঠীর ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে অন্য দেশে। তারপরেও বাংলাদেশকে হেড়ে গলায় অসাম্প্রদায়ীক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে প্রমাণ করে চলেছে শাসকগোষ্ঠী! ঐ যে সংবিধানে আছে...!
ধর্মানুভূতি এখানে শুধু সংখ্যাগুরু মুসলমানদেরই একচেটিয়া সম্পত্তি! সংখ্যালঘুদের ধর্মানুভূতিতে তাই কখনও আঘাত লাগে না, লাগার সুযোগও নেই! কারণ একটাই- রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও দেশটা ধর্মনিরপেক্ষ!!
সাম্প্রদায়ীক, ধর্মব্যবসায়ী শাসকশ্রেণীর পক্ষে তাই কখনই সম্ভব নয় প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা করা! রাষ্ট্রীয় অর্থে ধর্ম এবং ধার্মিক না পুষে জনগণের কল্যাণে অর্থগুলো কাজে লাগানো, বেহেস্তের কেনা-ব্যাচায় রাষ্ট্র জড়িত না হয়ে বরং বাংলাদেশকে কিভাবে বেহেস্তের আদলে গড়ে তোলা যায় সেই চিন্তা করার জন্য কোন অসাম্প্রদায়ীক-ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক দল বা গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। তাহলেই কেবল প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা হতে পারে বাংলাদেশে।
নিশ্চয়ই এদেশের শোষিত-নির্যাতিত শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষ একদিন ধর্মনিরপেক্ষতার স্বাদ পাবে!
২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৩
মুহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান শরীফ বলেছেন: ১/ "একটা রাষ্ট্র যখন মসজিদ-মন্দির তৈরীর টাকা দেয়, পূজা-মাহফিলের যৌলুস বাড়াতে অর্থ সহায়তা করে তখন কি সেই রাষ্ট্রের আর কোন ধর্মনিরপেক্ষতা থাকে?"
বাংলাদেশ যে অনেকটাই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তার প্রমাণ এখানে রাষ্ট্রকর্তৃক সবগুলো ধর্মপালনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এখানে কোন ধর্মের স্বাধীনতা হরণ করা হয়নি। তাছাড়া এখানে সব ধর্মের লোকেরাই সরকারী অর্থ পায়।
যদি কোন একটি বিষেশ এক বা একাধিক ধর্মের লোক সরকারী অর্থ না পেতো বা তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করা হতো, তবে একে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলা যেত না।
এখানে সংখ্যালঘুরাই সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা বেশী পায়।
সাধারণ সাহায্য ছাড়াও তাদের জন্য আলাদা কল্যান ফান্ড আছে।
ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা বা ধর্মবিরোধীতা নয়।
বাংলাদেশকে অনেকটাই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলার কারণ, এর অনেক নিয়ম-কানুন ইসলামী বিধি-বিধানের সাথে মিলে না।
২/ "আবার ২০১১ সালে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রেখেও ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে সংবিধানে।
অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ এটা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন যে, রাষ্ট্রধর্ম রেখে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা যোগ করলে এর কোন অর্থ হয় কি না! "
" ধর্ম তো হয় মানুষের! রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি?"
এমন মনে হলে আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে, বাংলাদেশে বাংলা ভাষা ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ভাষা আছে, তবে কেন বাংলা ভাষা রাস্ট্র ভাষা হবে।
যদি পৃথিবীর সবদেশে সংখ্যাগুরুদের ভাষাই রাষ্ট্র ভাষা হয়, তবে সংখ্যাগুরুদের ধর্ম কেন রাষ্ট্রধর্ম হবে না?
বাংলাদেশে যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তার প্রমাণ এই দেশে কোন সংখ্যালঘুদের কোন ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করা হয়নি বরং এখানে রাষ্ট্রকর্তৃক সবগুলো ধর্মপালনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ইউরোপ এবং বিশ্বের অনেক দেশ ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে গলা ফাটালেও এমন অনেক কিছু করে, যেটা মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করে।
৩/ "কোন ধার্মিক বেহেস্তকে বাংদেশের মতো করে গড়ে তোলার চিন্তাও করেন না!
বা বাংলাদেশকে বেহস্তের আদলে গড়ে তোলার কথাও ধার্মীকরা কখনও চিন্তা করেন না।
তাহলে রাষ্ট্র কেন ধার্মিকের বেহেস্ত চিন্তার শরীক হবে? "
বেহেস্ত আর পৃথিবী এক জিনিস না। বেহেস্ত এমনিতেই শান্তি পূর্ণ যায়গা, কাজেই সেটাকে পরিবর্তনের কথা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
একজন মানুষের ধর্ম যাই হোক না কেন, অবশ্যই সে দেশের উন্নতি ও শান্তির কথা চিন্তা করে।
এটাও মানতে হবে ভালো এবং খারাপ উভয় ধরনের মানুষ পৃথিবিতে ছিল, আছে এবং থাকবে।
লোভী মানুষদের যত সম্পদই থাকুক না কেন, তারা অন্যের সম্পদ হস্তগত করার চেষ্টা করবেই।
কাজেই ইচ্ছা করলেই মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে না।
তাই মানুষের মন থেকে লোভ দুর করে সুস্থতা আনার জন্য ধর্মের প্রয়োজন, কারণ লোভী মানুষের অনিয়ন্ত্রিত মন আরো চায়, এটা শুধু সম্পদের ব্যাবস্থাপনা করলেও সমাধান হবে না।
যদি পৃথিবীর সকলে নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাস থেকে দুরে সড়ে পরে, তবে সমাজের সমস্যা, অপরাধ, বিপর্যয় ইত্যাদি বেড়ে যাবে।
কারণ তারা অবশ্যই এই কথা ভাববে, যে তারা কার কাছে ঠেকা। কোন মানষ নিশ্চই পুথির নীতি কথার কাছে ঠেকা থাকবে না।
বেশীরভাগ মানুষ তখন ভাববে পুলিসকে ফাকি দিতে পারলেই যে কোন অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে। ফলে তারা আরও বেশী করে অপরাধ করবে।
কিন্তু যদি সৃষ্টিকর্তার ভয় থাকে তবে সে ভাববে পুলিসকে ফাকি দিতে পারলেই হবেনা, শেষকালে সৃষ্টিকর্তার মুখোমুখি হতে হবে এবং শাস্তি পেতে হবে।
এর পরও যারা অপরাধ করবে তাদের সংখ্যা অত্যন্ত কম হবে।
এই জন্য রাষ্ট্রকেও ধার্মিকের বেহেস্ত চিন্তার শরীক হতে হবে, যাতে একজন মানুষ যেই ধর্মেরই হোক না কেন, সে যেন তার ধর্মের নীতিকথা বিশ্বাসের সাথে মেনে চলে।
এখন যারা ধর্ম বিশ্বাস করতে চায় না তাদের কথা আলাদা, তাদেরকে পুথির নীতি কথাই শেখাতে হবে, যাতে অপরাধ কমে যায়।
অবশ্য অবিশ্বাসীরা পুথির নীতি কথার কাছে কতটুকু ঠেকা, সেটা তারাই জানে।
৪/ "তাহলেই কেবল প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা হতে পারে বাংলাদেশে।
নিশ্চয়ই এদেশের শোষিত-নির্যাতিত শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষ একদিন ধর্মনিরপেক্ষতার স্বাদ পাবে!"
ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করে কোন রাষ্ট্রই সুখি হতে পারে না, তাই আজ সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রত্যাখ্যাত।
মানুষ যদি নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীন ভাবে পালন করতেই না পারে, তবে তারা ধর্মহীনতা বা ধর্মবিরোধীতার স্বাদ পাবে, কখনোই ধর্মনিরপেক্ষতার স্বাদ পাবে না।
প্রাচিনকালে ইউরোপের সমাজে ছিল শ্রেণিপ্রথা যা কোন ধর্মের সাথে সম্পর্কিত না।
আবার ভারতে ছিল বর্ণপ্রথা যেটা হিন্দু ধর্মের সাথে সম্পর্কিত এবং সেটা এখনও আছে।
মানুষের বড় একটি অংশ শ্রেণিপ্রথা এবং বর্ণপ্রথার মাধ্যমে নির্যাতিত হয়েছে।
কিন্তু ইসলাম ধর্মে এই সব শ্রেণিপ্রথা এবং বর্ণপ্রথা বা অন্য কোন ভেদাভেদের সমস্যা নেই।
ইসলাম ধর্মই শোষিত-নির্যাতিত মানুষের কথা এবং ধনী-গরীবের পার্থক্য যুক্তিযুক্ত ভাবে কমানোর কথা চিন্তা করেছে।
ইসলাম মানুষের বুস্তুগত এবং মানসিক উভয় সমস্যার সমাধান নিয়ে চিন্তা করে।
এখানে গরীবদের এবং অক্ষমদের জন্য রয়েছে হাদিয়া, সাহায্য, দান, রাস্ট্রীয় ভাতা, বিনা সুদে ঋণ, যাকাত, ফেতরা, সদকা, ইত্যাদি ।
কাজেই সাম্যবাদী রাষ্ট্র বলতে যদি শুধু আর্থিক সমস্যা সমাধানের কথা চিন্তা করা হয়, তবে ইসলাম ধর্মের বিরোধীতা করা অত্যান্ত বোকামি।
কারণ আল্লাহ সম্পদশালীদেকে অন্যদের সাথে সম্পদ ভাগাভাগির কথা বলেছেন।
নীচের আয়াত গুলো দেখুন। -
"আল্লাহ জনপদবাসীদের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যা দিয়েছেন,
তা আল্লাহর, রসূলের, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্তদের এবং মুসাফিরদের জন্যে,
যাতে ধনৈশ্বর্য্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়।
রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।
নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (Al-Hashr: 7)"
"তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্নীয়-স্বজনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না।
তাদের ক্ষমা করা উচিত এবং দোষক্রটি উপেক্ষা করা উচিত।
তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। (An-Noor: 22) "
সম্যবাদ ব্যাবস্থায় সম্পদে ব্যাক্তি মালিকানা না থাকলে যা হয় সেটা হল, কারখানা মুজুরী দেয়ার ভান করে আর শ্রমিকরা কাজের ভান করে।
ইসলাম শুধু সম্পদ ব্যবস্থাপনার দিকেই মন দেয়না আধ্যাত্মিক দিকেও নজর দেয়।
পৃথিবীতে শুধু আর্থিক সমস্যাই সব কিছু না, সামাজিক ও মানসিক সমস্যাও আছে।
সামাজিক ও মানসিক সমস্যা সমাধানের জন্য যে নৈতিক এবং সামাজিক মূল্যবোধ দরকার, সেটা ধর্মই করতে পারে, কোন অর্থব্যাবস্থা সেটা পারে না।
৫/ "ধর্মানুভূতি এখানে শুধু সংখ্যাগুরু মুসলমানদেরই একচেটিয়া সম্পত্তি!"
ইসলাম ধর্মে নিয়ম অনুযায়ী অন্য ধর্মের আভ্যন্তরিন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা, ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ করা, মিথ্যা বলা এবং কুটুক্তি করা, ধর্মীয় পুস্তক এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার অবমাননা করা, ধর্মের উপাস্যদের অবমাননা করা ইত্যাদি নিষেধ।
সেই জন্য সংখ্যালঘুদের ধর্মানুভূতিতে তাই কখনও আঘাত লাগে না, লাগার সুযোগও নেই।
সংখ্যালঘুদের ধর্মে এমন নিয়ম আছে বলে মনে হয় না, তাই সাধারণত দেখা যায় সংখ্যালঘুরাই ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে উপরের কাজগুলো করে ধর্মানুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করে।
তবে ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়, এই কথাটা মনে রাখা ভাল।
"তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে।
তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে।
এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি।
অতঃপর স্বীয় পালনকর্তার কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
তখন তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। (Al-An'aam: 108)"
"আমি ঘুরিয়ে দিব তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি
এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব। (Al-An'aam: 110)"
৬/ "তারা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা করে!"
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থাপনায় যারা হামলা চালায়, তারা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল, ইহুদীদের গোপন এজেন্ট মুসলিম নামধারী সন্ত্রাসী, ভুমিদস্যু ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সাধারণ মুসলমানরা কখনোই এদের সাথে মিলেমিশে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা চালায় না।
যদি চালাতো তবে বাংলাদেশেও বাবরী মসজিদ ধংসের মত বড় ধরনের রায়ট লেগে যেত।
ভারতে বাবরী মসজিদ ধংসে রাজনৈতিক দল আর শিবসেনা ছাড়াও সর্ব স্তরের হিন্দুরা এমন কি সন্নাসীরা পর্যন্ত অংশ নিয়েছিল।
৭/ "ধর্মের বহুবিধ অপব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।"
পারমানবিক শক্তি এমন একটা শক্তি, যেটাকে মানব কল্যান এবং ধংস উভয় কাযেই লাগানো যায়।
মানুষ পারমানবিক অস্ত্র মুক্ত বিশ্ব চায়। কিন্তু এটা চায়না, যে পারমানবিক কল্যান থেকে বন্ঞ্চিত হবে।
পারমানবিক শক্তির অপব্যবহার লক্ষ্য করে, মানুষ অপব্যবহারকারী দেশকে ঘৃনা করলেও, পারমানবিক শক্তিকে ঘৃনা করেনা।
আবার ধরুন কোন মানুষ কম্পিউটারের মাধ্যমে অন্য কোন মানুষ, প্রতিস্ঠান বা রাষ্ট্রের ক্ষতি করে।
এখন আপনি কাকে দ্বায়ী করবেন কম্পিউটারকে নাকি ক্ষতিকারী মানুষকে?
তেমনি ধর্মও একটি শক্তি।
এখন কেউ যদি ধর্মের বহুবিধ অপব্যবহার ঘটায়, তবে আমাদের উচিত ওই নিদৃষ্ট অপব্যবহারকারীকে ঘৃনা করা, কোন বিশেষ ধর্মকে না।
৮/ "রাষ্ট্রীয় অর্থে ধর্ম এবং ধার্মিক না পুষে জনগণের কল্যাণে অর্থগুলো কাজে লাগানো,"
"রাষ্ট্র কেন গরীবের হক কেড়ে নিয়ে জনগণের তহবিল থেকে ধর্মীয় কাজে অর্থ ব্যয় করবে? "
সব ধর্মের ধর্মীয় গোষ্ঠীসমূহ যদি সরকারী আর্থিক সুবিধা ভোগ না করতো,
তবে ওই সমস্ত লোকগুলোই গরীব মানুষ আর বেকারদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতো, পাশাপাশি তারা হয়তো চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদিতে লেগে যেত।
তখন আর বাংলাদেশকে কিভাবে বেহেস্তের আদলে গড়ে তোলা যায় সেই চিন্তা করা লাগবে না, বরং নরক থেকে কি ভাবে উদ্ধার পাওয়া যায় সেটাই ভাবার বিষয় হতো।
ধর্মীয় কল্যাণ জনগণের কল্যাণেরই একটা অংশ। শুধু বস্তুগত কল্যাণই সব কিছু না, মানুষের নৈতিক এবং মানসিক কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হয়।
নৈতিক এবং মানসিক কল্যাণের জন্য ধর্মের প্রয়োজন। তাই ধর্মীয় কাজে অর্থ ব্যয় করতে হয়।
কোন বুদ্ধিমান মানুষই নিজেদের তৈরি করা সস্তা পুথিগত নীতি কথা বা আদর্শের কাছে ঠেকা থাকে না।
৯/ "অথচ দেশের উন্নয়নে, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে যাদের অবদান একেবারেই শূন্য! সম্পদ ধ্বংস ছাড়া যাদের অন্য কোন কাজ নেই!
রাষ্ট্র তাদের চাকরী দিয়ে বসে আছে। "
যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, খেলা-ধুলা, অভিনয়, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতো শুধুই চিত্ত বিনোদনে কাজ।
দেশের উন্নয়নে, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে কেন কাজে লাগে?
এগুলো খায় না মাথায় দেয়? মানুষ কেন এইসব করে? আর কেনইবা এই সবের পিছনে অর্থ ব্যায় করে?
ওগুলোর পিছনে অর্থ ব্যায় না করে সেগুলো অভাবী মানুষের পিছনে কেন ব্যায় করা হয়না?
সমাজতন্ত্রীরা ধর্মের বিষয়ে অর্থ ব্যায়ে আপত্তি করলে ঐ সব বিষয়ে কেন আপত্তি করে না? কেন এই বৈষম্য ?
এখন বলুন প্রশ্নের উত্তরে কি বলবেন?
দেশের উন্নয়নে, জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে সকল ধর্মেরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান অবশ্যই আছে।
সকল ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে ধার্মিকরা অভাবী মানুষদের পিছনে প্রচুর দান-খয়রাত করে।
আর এই সব ধর্মীয় উৎসব পরিচালনা করে বিভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় নেতারা, যারা সরকারের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা পায়।
তাছাড়া ইসলাম ধর্মে যাকাত, ফেতরা, সদকা, কোরবানীর মাংস দান ইত্যাদি রয়েছে।
এর ফলে সম্পদের অসম বন্টন দুর হয়।
এছাড়াও ধর্মীয় নেতারা জনগনকে ধর্মীয় নীতি বাক্য এবং বিশ্বাস শিক্ষা দিয়ে সমাজকে দূর্নীতিমুক্ত রাখছে।
আবার তারা অনেক গরীব এবং অনাথ শিশুদের দ্বায়িত্ব নিয়ে সমাজের উপর থেকে বোঝা কমিয়ে দিচ্ছে।
এখন আপনিই বলুন রাষ্ট্র তাদের চাকরী দিয়ে কি কোন ভুল করেছ?
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪১
মামুন রশিদ বলেছেন: বাংলাদেশ কখনো ধর্মহীন রাষ্ট্রও ছিল না । সেক্যুলার মানেই ধর্মহীনতা নয়, এটা যে বুঝেন নি তা পোস্ট পড়েই বোঝা যায় ।
একটা জনপদে মানুষের কিছু ধর্মীয় আচরণ সার্বজননীনতায় রুপ নেয় এবং ক্রমে স্থানীয় সংস্কৃতিতেও মিশে যায় । তাই ধর্মের বেশকিছু আচরণ আমাদের সংস্কৃতিরও অংশ ।
শুধু শুধু এসব লিখে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে মানুষকে ভুল বার্তা দেয়া আলটিমেটলি মৌলবাদিদেরই পক্ষে যায় ।